প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞ প্যানেলে ঢাবি অধ্যাপক
Published: 22nd, July 2025 GMT
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক মো. আহসান হাবীব প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে জাতিসংঘের ইনডিপেনডেন্ট সায়েন্টিফিক প্যানেল অন ইফেক্টস অব নিউক্লিয়ার ওয়ারের (আইএসপিইএসডব্লিও) ২১ সদস্যবিশিষ্ট প্যানেলে বিশেষজ্ঞ পরিবেশ রসায়নবিদ হিসেবে মনোনীত হয়েছেন।
পারমাণবিক যুদ্ধ এবং পারমাণবিক দুর্ঘটনা–পরবর্তী পরিস্থিতি মোকাবিলা এবং এর প্রতিক্রিয়ার বাস্তব চিত্র অনুধাবনে জাতিসংঘের দিকনির্দেশনা অনুযায়ী নিউইয়র্কভিত্তিক এই গবেষণা প্যানেল কাজ করবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তরের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
পারমাণবিক যুদ্ধ ও নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্ল্যান্ট দুর্ঘটনায় পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যের ওপর সৃষ্ট সম্ভাব্য বিরূপ প্রভাব বিশ্লেষণ ও তার প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা উদ্ভাবনে জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞ প্যানেলে বাংলাদেশি পরিবেশ রসায়নবিদ হিসেবে কাজ করবেন অধ্যাপক আহসান হাবীব।
অধ্যাপক আহসান হাবীব ২০০৫ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে যোগদান করেন। রসায়ন বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি শেষে তিনি জাপানের সাগা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি টোকিও বিশ্ববিদ্যালয়, ইকোহামা বিশ্ববিদ্যালয়সহ জাপানের বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় এবং চীনের চায়নিজ একাডেমি অব সায়েন্সেসের গবেষণা ফেলো হিসেবে কাজ করছেন। এ ছাড়া তিনি চীন ও জাপানের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিজিটিং প্রফেসর হিসেবে অধ্যাপনা করছেন। তিনি ২০২৪ সাল থেকে জাতিসংঘের পারমাণবিক অস্ত্র নিষিদ্ধকরণ আন্তর্জাতিক চুক্তির জন্য গঠিত প্যানেলের বিশেষজ্ঞ সদস্য হিসেবে কাজ করছেন।
মৌলিক রসায়ন, পরিবেশ রসায়ন, জৈবদূষণ, জীবজগতের ওপর ভারী ধাতুসমূহের প্রভাব, ধূলিকণাসহ বিভিন্ন বিষয়ে তিনি গবেষণা করেন। তাঁর ৮১টি গবেষণা প্রবন্ধ জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: পর ব শ
এছাড়াও পড়ুন:
মাঝরাতে সরকারি কর্মকাণ্ড কতটা স্বাভাবিক
বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের রাতের কর্মকাণ্ড নিয়ে বোধকরি একটা মহাকাব্য লিখে ফেলা সম্ভব। তাঁরা যেভাবে গভীর কিংবা শেষ রাতে নানা সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন, ফেসবুকে বার্তা দিচ্ছেন; তাতে তো মনে হচ্ছে সরকারের কর্তা-ব্যক্তিরা দিনে কাজ না করে রাতেই মনে হয় বেশি কাজ করেন! কয়েকটা উদাহরণ বরং দেওয়া যাক।
মাস কয়েক আগে যখন দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অস্বাভাবিক ভাবে খারাপ হয়ে গেল, আমাদের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী রাত তিনটার সময় সংবাদ সম্মেলন ডাকলেন! বাংলাদেশের ইতিহাসে রাত তিনটার সময় আর কোনো মন্ত্রী এ ধরনের সম্মেলনের আয়োজন করেছেন কি না, আমার অন্তত জানা নেই। আমরা সবাই ভাবলাম, তিনি হয়তো বড় কোনো ঘোষণা দেবেন। এরপর কী দেখলাম?
তিনি খুব সাধারণভাবে বললেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার জন্য সরকার নিজেদের উদ্যোগকে কঠিন ও শক্তিশালী করার চেষ্টা করবে।
সপ্তাহখানেক আগে হঠাৎ আকাশ থেকে একটি যুদ্ধবিমান ঢাকা শহরের উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল বিল্ডিংয়ে ভেঙে পড়ল। আগুনে দগ্ধ শিশুরা ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে নিজেরা উঠে এসে হাঁটছে; এমন দৃশ্যও আমাদের দেখতে হয়েছে। যে দৃশ্য দেখলে যে কেউ হয়তো ট্রমায় চলে যাবে। ওই স্কুলের এইচএসসি পরীক্ষার্থীরা হয়তো সরাসরি সেই দৃশ্য দেখেছে। খুব স্বাভাবিকভাবেই চলতে থাকে—এইচএসসি পরীক্ষা পিছিয়ে দেওয়া সময়ের দাবি ছিল। এ সিদ্ধান্ত সরকার দিনের বেলাতেই নিতে পারত। অথচ আমরা কী দেখলাম?
সরকারের পক্ষ থেকে রাত তিনটার দিকে ফেসবুকে এসে ঘোষণা করা হলো, পরের দিনের এইচএসসি পরীক্ষা পেছানো হয়েছে।
যখনই আপনি সরকারের অস্বাভাবিক আচরণ নিয়ে প্রশ্ন করবেন কিংবা আপনার মনে এই প্রশ্ন জাগবে; তখনই কিন্তু রাষ্ট্র ভালো আছে কি না; সেই প্রশ্নও সামনে আসবে।দিন দু-এক আগে এ সরকারকেই যাঁরা চাকরি দিয়েছেন, এ কথা বলছি কারণ, সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নিজেই বলেছিলেন, ‘ছাত্ররা আমার নিয়োগকর্তা’—সেই ছাত্রদের সংগঠন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক মুখপাত্র উমামা ফাতেমা গভীর রাতে ফেসবুক এসে লাইভ করেন প্রায় আড়াই ঘণ্টা।
এই আড়াই ঘণ্টার লাইভে মূল যে বক্তব্য তিনি তুলে ধরেছেন, সারমর্ম করলে দাঁড়ায়: বৈষম্যবিরোধী প্ল্যাটফর্ম মানি মেকিং মেশিনে পরিণত হয়েছে এবং অনেকেই এর সঙ্গে জড়িত। তিনি এটাও বলেছেন, এই সংগঠনের সব সিদ্ধান্ত হেয়ার রোড থেকে আসে। অর্থাৎ উপদেষ্টারা যেখানে থাকেন।
এদিকে সোমবার দিবাগত রাত তিনটার দিকে উপদেষ্টা মাহফুজ আলম একটা ফেসবুক পোস্ট করেছেন। যদিও ফেসবুক স্ট্যাটাসটি তিনি বেশ কয়েকবার এডিট করেছেন। তবে প্রথমে যা লিখেছেন, সেটা হচ্ছে, নতুন একটি দলের মহারথীদের কয়েকজন দুর্নীতিতে জড়িত। এ ছাড়া তিনি এটাও বলেছেন, একটা সার্কেলের সবাই দুর্নীতিগ্রস্ত!
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, তাহলে তাঁদের কেন প্রশ্রয় দেওয়া হলো? আপনারা যদি জানেনই কিছু মানুষ দুর্নীতিগ্রস্ত। তাহলে সরকারের অংশ হিসেবে আপনাদের তো দায়িত্ব তাঁদের আইনের আওতায় আনা। সেটা না করে ফেসবুকে পোস্ট করতে হচ্ছে কেন? তা–ও আবার রাত তিনটায়!
এই সরকার কি মাঝরাতের ফেসবুকীয় সরকারে পরিণত হয়েছে? পরীক্ষা পেছানোর মতো সিদ্ধান্ত যখন মাঝরাতে নিতে হয়, সংবাদ সম্মেলন যখন রাত তিনটায় করতে হয়, তখন তো প্রশ্ন জাগতেই পারে। কারণ এটা তো স্বাভাবিক কোনো বিষয় নয়।
যখনই আপনি সরকারের অস্বাভাবিক আচরণ নিয়ে প্রশ্ন করবেন কিংবা আপনার মনে এই প্রশ্ন জাগবে; তখনই কিন্তু রাষ্ট্র ভালো আছে কি না; সেই প্রশ্নও সামনে আসবে।
রাষ্ট্র যদি ভালো না থাকে তবে তার মাত্রা কতটুকু, সেটা নির্ণয় এবং সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া এখন জরুরি হয়ে পড়েছে।
আমিনুল ইসলাম প্রভাষক, এস্তোনিয়ান এন্ট্রাপ্রেনিউরশিপ ইউনিভার্সিটি
[email protected]