মাইলস্টোন স্কুলে প্রবেশ করে প্রথমেই দুটি লাশ দেখতে পাই
Published: 24th, July 2025 GMT
রাজধানীর উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমান বিধ্বস্তের পর উদ্ধারকাজে গিয়ে প্রথমেই দুটি লাশ দেখতে পায় সেনাবাহিনী। আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে ঘটনাস্থলের সামনে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান উদ্ধারকাজে অংশ নেওয়া সেনাবাহিনীর ৪৩ রেজিমেন্টের ব্যাটালিয়নের কমান্ডার মেজর মেহেদী হাসান।
মেজর মেহেদী হাসান বলেন, ‘আমরা এখানে (মাইলস্টোন স্কুল) দুর্ঘটনা সংঘটিত হওয়ার পরে প্রথম রেসপন্ডিং টিম হিসেবে স্কুলে প্রবেশ করি। প্রবেশ করে প্রথমেই দুটি লাশ দেখতে পাই, তার মধ্যে সম্ভবত একজন মা এবং তাঁর ছেলের লাশ ছিল।’
ঘটনাস্থলে এসে আগুনের ভয়াবহতা কেমন দেখলেন, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে এই সেনা কর্মকর্তা বলেন, ‘এখানে এয়ারক্রাফটটা যে জায়গায় ক্রাশ করেছিল, সেখানে আগুনের প্রজ্বালনটা ছিল। তার সামনে দুটি লাশ পড়ে ছিল, স্পটে এসে এটাই প্রথম দেখতে পাই। স্কুলের যে কক্ষে আগুন লেগেছিল, তার সামনেই দুটি লাশ পড়ে ছিল, এটাই আমাদের প্রথম দৃশ্য এই স্পটে এসে, ওটা দেখার পরই আমরা আমাদের উদ্ধার কার্যক্রমটা শুরু করি।’
দুর্ঘটনার কত সময় পর সেনবাহিনীর সদস্য উদ্ধার তৎপরতায় অংশ নেয়, এমন প্রশ্নের জবাবে মেজর মেহেদী হাসান বলেন, ‘আমরা এখানে আনুমানিক দুই থেকে তিন মিনিটের মধ্যে পৌঁছাই। যেহেতু আমাদের ক্যাম্পের অবস্থান ১০০ থেকে ১৫০ গজের মধ্যে, সেহেতু আমাদের আসতে খুব বেশি সময় লাগেনি।’
মেহেদী হাসান বলেন, ‘উদ্ধার কার্যক্রম শেষ করার পর মোট আমাদের (সেনাবাহিনী) ২৫ জনের মতো সৈনিক অসুস্থ হয়েছিল, কিন্তু ক্রিটিক্যাল পর্যায়ে কেউ নেই। বর্তমানে ১১ জন সৈনিক ঢাকার সিএমএইচে (সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল) চিকিৎসাধীন অবস্থায় আছেন।’
‘মৃত্যুর সংখ্যা’
মৃত্যুর সংখ্যা নিয়ে ভিন্নতার বিষয়ে ইঙ্গিত করে মেজর মেহেদী হাসানের কাছে জানতে চাওয়া হয়, তাঁরা কতটা লাশ দেখেছেন? জবাবে তিনি বলেন, ‘আমরা এখানে সবাই কাজ করছিলাম, একেকজনের পক্ষ থেকে যতটুকু সম্ভব আমরা সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়ে চেষ্টা করেছি। এখন সঠিক সংখ্যাটা স্কুল কর্তৃপক্ষ এবং যাঁরা হাসপাতালে আছেন, তাঁদের সমন্বয়ে আসলে আপনারা (সাংবাদিক) পেয়ে যাবেন। আমরা উদ্ধার কার্যক্রমকেই মেইন ফোকাসে রেখে কাজ করেছি, কতজনকে নিয়ে যেতে পেরেছি, আসলে ওই সময় আমাদের ওইটা কাজ করে নাই। আমরা যাদের সামনে পেয়েছি, তাদের একটা নিরাপদ স্থানে নিয়ে যেতে কাজ করেছি।’
এর আগে দুপুরে স্কুল কর্তৃপক্ষ বিবৃতিতে জানায়, তাদের ১৮ জন শিক্ষার্থী, ২ জন শিক্ষক এবং ২ জন অভিভাবকসহ মোট ২২ জন নিহত হন। এরপর তারা আবার আরও একজন শিক্ষার্থীর মৃত্যুর তথ্য হালনাগাদ করে মোট ২৩ জনের তথ্য নিশ্চিত করে।
মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের জনসংযোগ কর্মকর্তা শাহ বুলবুল বলেন, ‘আমরা শুধু আমাদের শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অভিভাবকদের তথ্য দিচ্ছি। বাকিদের তথ্য আইএসপিআর দিচ্ছে। আমরা শুধু আমাদের তথ্য দিচ্ছি।’
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ম ইলস ট ন স ক ল র স মন ক জ কর আম দ র প রথম
এছাড়াও পড়ুন:
লাইলীকে বিশ্ব দরবারে নিয়ে যেতে চান আনোয়ার
বরগুনার বিষখালী নদীর পাড়ে বেড়ে উঠেছেন লাইলী বেগম। বাবার মৃত্যুর পর ভাইয়েরা অসুস্থ মায়ের দায়িত্ব নিতে অস্বীকৃতি জানান, তখন কন্যা হয়েও লাইলী সেই দায়িত্ব কাঁধে তুলে নেন। অভাব, ক্ষুধা আর সমাজের অবহেলা তার নিত্যসঙ্গী হয়। তারপরও থেমে যাননি লাইলী।
জীবনের চাকা ঘুরাতে, মাছ ধরা থেকে বর্গাচাষ—সবই করেছেন লাইলী। গত ২১ বছর ধরে নদী ও সাগরে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করছেন। বরগুনা জেলার সরকারিভাবে নিবন্ধিত একমাত্র নারী জেলে তিনি। এই লাইলীকে নিয়ে নির্মিত হয়েছে প্রামাণ্যচিত্র ‘উত্তরের বৈঠা’। এটি নির্মাণ করেছেন আনোয়ার হোসেন।
পরিচালক আনোয়ার হোসেন
আরো পড়ুন:
জসীমের কবরে রাতুলকে সমাহিত করে দুই ভাইয়ের আবেগঘন পোস্ট
নীনার অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার খবরে কী বলেছিলেন ক্রিকেটার ভিভ?
এ নিয়ে রাইজিংবিডির সঙ্গে কথা বলেন পরিচালক আনোয়ার হোসেন। তরুণ এই নির্মাতা বলেন, “এই চলচ্চিত্র শুধু একজন নারী জেলের গল্প নয়, এটি একজন মানুষের বেঁচে থাকার অদম্য চেষ্টা, একাকিত্বে গড়ে ওঠা সাহসিকতার প্রতিচ্ছবি। লাইলী বেগম যখন নদীতে জাল ছুঁড়ে দেন, সেই মুহূর্তে তিনি শুধু মাছ খোঁজেন না—তিনি খুঁজে ফেরেন নিজের অবস্থান, নিজের সম্মান, আর অস্তিত্বের উত্তর।”
লাইলীর চোখ দিয়ে বাস্তবতা দেখাতে চেয়েছেন নির্মাতা। তার ভাষায়, “এই ফিল্মে আমি কোনো কৃত্রিম কণ্ঠ বা নাটকীয় ভাষা ব্যবহার করিনি। কারণ আমি চেয়েছি দর্শক যেন লাইলীর চোখ দিয়েই এই বাস্তবতা দেখেন। তার নীরবতা, তার কথাবার্তা, তার দৃষ্টি—সবই যেন একেকটি দৃশ্যপট হয়ে ওঠে। একজন নির্মাতা হিসেবে আমার দায়িত্ব ছিল শুধু একটি ফ্রেম তৈরি করে দেওয়া, বাকিটা বলে গেছেন লাইলী নিজেই—তার জীবনযাত্রা, নদী এবং অব্যক্ত যন্ত্রণা দিয়ে।”
‘লাইলী’-কে বিশ্ব দরবারে নিয়ে যেতে চান পরিচালক। তা জানিয়ে আনোয়ার হোসেন বলেন, “এই ফিল্মটি তাদের জন্য, যারা নিঃশব্দে লড়াই করেন এবং যারা কখনো আলোয় আসেন না। এখানে আমি সংক্ষিপ্ত আকারে প্রামাণ্য চিত্রটি তৈরি করেছি, পূর্ণদৈর্ঘ্য আকারে তৈরি করার প্রস্তুতি চলছে। আপনাদের সহযোগিতা ও আগ্রহ আমাকে অনুপ্রাণিত করবে। এই জীবন সংগ্রামের কথা বিশ্ব দরবারে নিয়ে যেতে চাই।”
সমাজের বাঁকা চোখ উপেক্ষা করে লাইলী প্রমাণ করেছেন, নারীর স্থান কেবল ঘরে নয়, সাহস আর সংগ্রামেও। লাইলী কেবল একজন নারী জেলে নন, এক অনুপ্রেরণার নাম। নারী চাইলে সব পারে—লাইলী তা নিঃশব্দে প্রমাণ করেছেন বলেও মনে করেন নির্মাতা।
ঢাকা/শান্ত