জুলাই আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার তদন্তে আওয়ামীপন্থি শিক্ষক
Published: 4th, August 2025 GMT
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার মদতে জড়িত শিক্ষকদের বিচারের জন্য প্রশাসন একাধিক তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। তবে কমিটিতে আওয়ামীপন্থি শিক্ষকরা অন্তর্ভুক্ত থাকায় তদন্তের নিরপেক্ষতা নিয়ে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সূত্রে জানা গেছে, গত ১৭ মার্চ সিন্ডিকেট সভায় শিক্ষার্থীদের ওপর হামলায় মদদ দেওয়ার অভিযোগে প্রাথমিকভাবে নয়জন শিক্ষককে সাময়িক বরখাস্ত করে মোট ১৯ শিক্ষকের বিরুদ্ধে ‘স্ট্রাকচার্ড কমিটি’ গঠন করা হয়। এই কমিটি গঠিত হয়েছে ‘কর্মচারী দক্ষতা ও শৃঙ্খলা অধ্যাদেশ, ১৯৮০’ এর ৫(ক)(২) ধারা অনুসারে।
এর সদস্যরা হলেন– উপাচার্য (সভাপতি), অভিযুক্ত শিক্ষকের অনুষদের ডিন, সংশ্লিষ্ট বিভাগের চেয়ারম্যান, বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে থেকে একজনসহ দুইজন সিন্ডিকেট সদস্য এবং রেজিস্ট্রার।
আরো পড়ুন:
স্থায়ী ক্যাম্পাসের দাবিতে মহাসড়কে রবি শিক্ষার্থীদের পথনাটক
‘সেপ্টেম্বরের মধ্যে ১৬৫ উপজেলায় স্কুল ফিডিং কার্যক্রম শুরু হবে’
যদিও এই কমিটি গঠন প্রক্রিয়া নিয়ম অনুযায়ী হয়েছে। কিন্তু বাস্তবে অধিকাংশ অনুষদ ডিন ও বিভাগীয় চেয়ারম্যান আওয়ামী মতাদর্শে বিশ্বাসী হওয়ায় স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। বিচারপ্রার্থীদের অভিযোগ, এদের অনেকেই বঙ্গবন্ধু শিক্ষক পরিষদের সদস্য এবং তদন্ত পক্ষপাতদুষ্ট হতে পারে। এছাড়া অভিযুক্তদের দায় এড়াতে এসব শিক্ষক পর্দার আড়ালে তৎপর।
জানা গেছে, ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের সাময়িক বরখাস্ত সহযোগী অধ্যাপক মেহেদী ইকবালের তদন্ত কমিটিতে রয়েছেন তার বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো.
অভিযোগ রয়েছে, ১৫ জুলাই রাতে উপাচার্যের বাসভবনে অবস্থানরত শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগ হামলার আগে মেহেদী ইকবাল বন্দুক বের করে ফাঁকা গুলি ছোড়েন এবং হামলার সময় শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করেও গুলি করেন। তাকে রক্ষায় চেয়ারম্যান শাহেদুর রশিদ ও অন্যান্য আওয়ামীঘনিষ্ঠ শিক্ষকরা নানাভাবে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। একইসঙ্গে তিনি ছাত্রলীগের কয়েকজন হামলাকারী শিক্ষার্থীকে বাঁচাতেও চেষ্টা করছেন। এছাড়া মেহেদী ইকবাল বিরুদ্ধে প্রত্যক্ষদর্শী কর্মচারীদের সাক্ষ্য না দিতে বলেছিলেন।
আইবিএ’র সহকারী অধ্যাপক পলাশ সাহার তদন্ত কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত রয়েছেন বিভাগের পরিচালক অধ্যাপক আইরীন আক্তার। তিনি বঙ্গবন্ধু শিক্ষক পরিষদের হয়ে শিক্ষক নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন। নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ইস্রাফিল আহমেদ, ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক হোসনে আরা, বাংলা বিভাগের অধ্যাপক নাজমুল হাসান তালুকদার ও নাট্যতত্ত্বের সহকারী অধ্যাপক মহিবুর রৌফ শৈবালের বিরুদ্ধে হওয়া তদন্ত কমিটির সদস্য হিসেবে রয়েছেন কলা ও মানবিকী অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মোজাম্মেল হক।
অভিযোগ রয়েছে, ড. মোজাম্মেল হামলাকারী শিক্ষকদের পক্ষে শিক্ষক সমিতির কাছে চিঠি দিয়েছেন এবং অভিযুক্ত সাবেক উপ–উপাচার্য মোস্তফা ফিরোজের এনওসি দিতে উপাচার্যের ওপর চাপ প্রয়োগ করেছেন। এছাড়া সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অধ্যাপক বশির আহমেদ ও সহযোগী অধ্যাপক আ স ম ফিরোজ উল হাসানকে বাঁচাতে জীববিজ্ঞান অনুষদ এবং কলা ও মানবিকী অনুষদের প্রভাবশালী দুই শিক্ষক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, আওয়ামীপন্থিরা থাকায় এসব তদন্ত কমিটি থেকে নিরপেক্ষতা আশা করা কঠিন। কারণ, সংশ্লিষ্ট শিক্ষকরা রাজনৈতিকভাবে অভিযুক্তদের ঘনিষ্ঠ।
বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের জাবি শাখার আহ্বায়ক আরিফুজ্জামান উজ্জ্বল বলেন, “অভিযুক্তরা সবাই আওয়ামী মতাদর্শে বিশ্বাসী এবং তদন্ত কমিটির অনেক সদস্যও একই ঘরানার হওয়ায় তদন্ত প্রভাবিত হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। যেসব বিভাগের চেয়ারম্যান আওয়ামীঘনিষ্ঠ, তাদের কমিটি থেকে বাদ দিতে হবে এবং নিরপেক্ষ তদন্ত নিশ্চিত করতে হবে।
শাখা ছাত্রশিবিরের সভাপতি মুহিবুর রহমান মুহিব বলেন, “আওয়ামীপন্থি শিক্ষকদের অন্তর্ভুক্তির কারণে এই তদন্ত কখনোই নিরপেক্ষ হতে পারে না। সুষ্ঠু বিচারের স্বার্থে অবিলম্বে এসব সদস্যদের বাদ দেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।”
আন্দোলন চলাকালে পুলিশের গুলিতে আহত ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক খোন্দকার লুৎফুল এলাহী বলেন, “যখন অভিযুক্ত শিক্ষকের বিচারক হিসেবে থাকেন তার রাজনৈতিকভাবে ঘনিষ্ঠ কেউ, তখন ন্যায্যতা আশা করা যায় না। এ অবস্থায় বিতর্কিতদের তদন্ত থেকে সরে দাঁড়ানো উচিত।”
এ বিষয়ে জানতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মোহাম্মদ কামরুল আহসানের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
সাময়িক বরখাস্ত হওয়া শিক্ষকদের মধ্যে রয়েছেন- মোহাম্মদ মোস্তফা ফিরোজ (সাবেক উপ-উপাচার্য), অধ্যাপক আলমগীর কবির (সাবেক প্রক্টর), সহযোগী অধ্যাপক আ স ম ফিরোজ-উল-হাসান (সরকার ও রাজনীতি বিভাগ), অধ্যাপক বশির আহমেদ (সাবেক ডিন, সমাজবিজ্ঞান অনুষদ), অধ্যাপক ইস্রাফিল আহমেদ (নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগ), সহযোগী অধ্যাপক মেহেদী ইকবাল (ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগ), অধ্যাপক হোসনে আরা (ইতিহাস বিভাগ), অধ্যাপক নাজমুল হাসান তালুকদার (বাংলা বিভাগ) ও অধ্যাপক মোহাম্মদ তাজউদ্দীন সিকদার (পাবলিক হেলথ অ্যান্ড ইনফরমেটিক্স বিভাগ)।
এছাড়া তদন্তের আওতায় থাকা অন্যান্য শিক্ষকদের মধ্যে রয়েছেন— কানন কুমার সেন (হিসাববিজ্ঞান),পলাশ সাহা (আইবিএ), শফি মোহাম্মদ তারেক (পরিবেশ বিজ্ঞান), জহিরুল ইসলাম খোন্দকার (পদার্থবিজ্ঞান), মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম (অর্থনীতি), মনির উদ্দিন শিকদার ও মোহাম্মদ ছায়েদুর রহমান (লোকপ্রশাসন), আনোয়ার খসরু পারভেজ (মাইক্রোবায়োলজি), মহিবুর রৌফ শৈবাল (নাট্যতত্ত্ব) ও এ এ মামুন (পদার্থবিজ্ঞান)।
ঢাকা/আহসান/মেহেদী
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর শ ক ষ র থ দ র ওপর ন ট যতত ত ব শ ক ষকদ র উপ চ র য র তদন ত ঘন ষ ঠ র জন ত আহম দ ইকব ল সহয গ সদস য
এছাড়াও পড়ুন:
নারায়ণগঞ্জে ৪টি আসনে বিএনপির মনোনয়ন পেলেন যারা
আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জের ৫টি আসনের মধ্যে চারটি আসনে বিএনপির দলীয় মনোনীত প্রার্থীদের তালিকা প্রকাশ করেছে বিএনপির হাইকমান্ড। শুধু নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়নি।
সোমবার (৩ নভেম্বর) সন্ধ্যায় গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এসময় বিএনপির জাতীয় স্থানীয় কমিটির একাধিক সদস্য উপস্থিত ছিলেন।
বিএনপির ঘোষিত প্রার্থী তালিকায়, নারায়ণগঞ্জ-১ আসনে মোস্তাফিজুর রহমান দিপু ভূঁইয়া, নারায়ণগঞ্জ-২ আসনে নজরুল ইসলাম আজাদ, নারায়ণগঞ্জ-৩ আজহরুল ইসলাম মান্নান এবং নারায়ণগঞ্জ-৫ মাসুদুজ্জামান মাসুদ ধানের শীষ প্রতীকের সম্ভাব্য প্রার্থী।
এদিকে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে (সদর-বন্দর) মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে ছিলেন তিনবারের সংসদ সদস্য আবুল কালাম, মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক সাখাওয়াত হোসেন খান, সাবেক সহসভাপতি আতাউর রহমান মুকুল, সাবেক যুগ্ম সম্পাদক আব্দুস সবুর খান সেন্টু, বর্তমান সদস্যসচিব আবু আল ইউসুফ খান টিপু এবং বিএনপিপন্থী ব্যবসায়ী আবু জাফর আহমেদ বাবুল।
নারায়ণগঞ্জ-৪ (ফতুল্লা) আসনটি এখনো ফাঁকা রেখেছে দলটি। ধারণা করা হচ্ছে এ আসনটিতে গতবারের মতো জোটের প্রার্থী ছাড় পাবেন। তবে এ আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে রয়েছে সাবেক সংসদ সদস্য মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দিন, ফতুল্লা থানা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও ব্যবসায়ী শাহ্ আলম, জেলা কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক মাশুকুল ইসলাম রাজিব, ফতুল্লা থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল বারী ভূঁইয়া, সদ্য সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক রিয়াদ মোহাম্মদ চৌধুরীও রয়েছেন।
নারায়ণগঞ্জ-৩ (সিদ্ধিরগঞ্জ-সোনারগাঁ) আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে ছিলেন জেলা বিএনপির আহ্বায়ক অধ্যাপক মামুন মাহমুদ, সদস্য মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দিন, সাবেক প্রতিমন্ত্রী রেজাউল করিম ও যুব উন্নয়নের সাবেক মহাপরিচালক এসএম ওলিউর রহমান আপেল।
নারায়ণগঞ্জ-২ (আড়াইহাজার) আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে ছিলেন সাবেক সংসদ সদস্য আতাউর রহমান খাঁন আঙ্গুর ও তার ভাতিজা বিএনপির সহঅর্থনৈতিক বিষয়ক সম্পাদক মাহমুদুর রহমান সুমন।
নারায়ণগঞ্জ-১ (রূপগঞ্জে) আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে ছিলেন দলটির নির্বাহী কমিটির সদস্য কাজী মনিরুজ্জামান মনির, মোস্তাফিজুর রহমান ভূঁইয়া দিপু ও জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক গোলাম ফারুক খোকন।
এদিকে মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, “দীর্ঘ ১৬ বছর পর ২৩৮ আসনে আমাদের সম্ভাব্য প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করছি। আমাদের সঙ্গে যারা আন্দোলন করেছেন, তারা যে সমস্ত আসনে আগ্রহী সে সমস্ত আসনে প্রার্থী দেই। আমরা আলোচনার মাধ্যমে প্রার্থী ঘোষণা করবো। এটা আমাদের সম্ভাব্য প্রার্থী তালিকা, এর মধ্যেই পরিবর্তন হতে পারে।
বিশেষ করে, আমাদের শরিক দলগুলোর সাথে আলোচনা এবং স্থায়ী কমিটি যদি মনে করে কোনো আসনে পরিবর্তন আনবে, সেক্ষেত্রে নিয়ম মেনে পরিবর্তন আনবেন।”