ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পলায়নের এক বছর উপলক্ষে 'ফ্যাসিস্টের পলায়নের ক্ষণ' পালন করেছে ছাত্রজনতা। রাজধানীর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে '৩৬ জুলাই উদযাপন' অনুষ্ঠানে প্রতীকী গ্যাস বেলুনের 'হেলিকপ্টার' ওড়ানোর মাধ্যমে তাঁরা অনুষ্ঠান পালন করা হয়।

আজ মঙ্গলবার বেলা ২টা ২৫ মিনিটে এই ক্ষণ উদযাপন করা হয়। '৩৬ জুলাই উদ্‌যাপন' অনুষ্ঠানটির আয়োজক সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়। ব্যবস্থাপনায় রয়েছে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি।

প্রতীকী গ্যাস বেলুনের 'হেলিকপ্টার' উড়িয়ে 'ফ্যাসিস্টের পলায়নের ক্ষণ' উদযাপন করা হয়। আজ মঙ্গলবার দুপুরে.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ: প্রস্তাব, বিতর্ক ও সুশাসনের সম্ভাবনা

এই প্রবন্ধে সংবিধান সংস্কারের প্রস্তাব এমনভাবে সন্নিবেশিত করা হয়েছে, যাতে পরবর্তী নির্বাচনের পর কোনো রাজনৈতিক দল অত্যধিক ক্ষমতার মালিক হতে না পারে।

এর মাধ্যমে অনেক উদ্বেগজনক বিষয়ের মোকাবিলা করা সম্ভব, যা বাংলাদেশের সাধারণ জনগণ অনেক দিন ধরে উপলব্ধি করে আসছে। সংবিধানের কাঠামোর পরিবর্তন করা না হলে, ক্ষমতার অপব্যবহারের যে চিত্র আমরা আগে দেখেছি, তা আবার ঘটার আশঙ্কা আছে।

বর্তমানে বাংলাদেশে সংস্কার আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হচ্ছে দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ কাঠামো। আমরা বিগত রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট বিচার করলে দেখতে পাই যে সরকারপ্রধান বা প্রধানমন্ত্রী অতিরিক্ত ক্ষমতাসম্পন্ন হয়ে ওঠেন।

এটাই আমাদের সংবিধানের প্রধানতম সমস্যা, যার মূলে রয়েছে আমাদের এককক্ষবিশিষ্ট জাতীয় সংসদ। যিনি যেকোনো সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা হোন না কেন, কোনো রকম অর্থপূর্ণ প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছাড়াই নিজের ইচ্ছেমতো কাজ করার অপরিসীম সুযোগ তৈরি করে ফেলেন। ফলে ক্ষমতার অপব্যবহারের সূত্রপাত ঘটে।

আরও পড়ুনদ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ: ঢাকাকেন্দ্রিক অলিগার্কি থেকে তৃণমূলের মুক্তি কীভাবে১৯ জুন ২০২৫

এই সমস্যার সমাধান কেবল ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর প্রতিশ্রুতিতে নয়, বরং সংসদের মূল কাঠামোর পরিবর্তনের মাধ্যমে সম্ভব। এখানে ‘চেক ও ব্যালান্স’ বা ভারসাম্য রক্ষার তত্ত্বের প্রয়োগ অপরিহার্য।

এই তত্ত্ব অনুযায়ী ক্ষমতা দুই বা ততোধিক সংস্থার মধ্যে বণ্টিত হবে; কোনো সংস্থা আপনা–আপনি নিজের মতো করে পূর্ণ স্বাধীনতা পাবে না, বরং একে অপরকে নজরদারির মধ্যে রাখবে। বর্তমানে এককক্ষবিশিষ্ট সংসদ এই ভারসাম্যের অভাব তৈরি করে, যা প্রধানমন্ত্রীর স্বেচ্ছাচারিতা এবং নিয়ম ভেঙে যা খুশি তা করতে পারার সুযোগ তৈরি করেছে।

উদাহরণস্বরূপ, গত বছর ক্ষমতাচ্যুত সরকারের নিরঙ্কুশভাবে ক্ষমতার অপব্যবহার, নির্বাচনের কারচুপি থেকে শুরু করে ব্যাংক থেকে অর্থ আত্মসাৎ এবং সম্ভাব্য প্রতিপক্ষদের হত্যা করার মতো ঘটনাগুলো প্রধানমন্ত্রীর অতিরিক্ত ক্ষমতা প্রয়োগের বহিঃপ্রকাশ।

এই অস্থিতিশীল পরিস্থিতি এড়াতে ক্ষমতার কাঠামোর বিকেন্দ্রীকরণ একটি জরুরি পদক্ষেপ। বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট ও চাহিদার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে সংসদের একটি উচ্চকক্ষ প্রতিষ্ঠা করা সবচেয়ে সহজ ও বাস্তবসম্মত সমাধান, যা বিদ্যমান জাতীয় সংসদের (নিম্নকক্ষ) পাশাপাশি কাজ করবে।

‘চেকস এবং ব্যালান্স’ তত্ত্বের আলোকে দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ প্রস্তাবটি যুক্তিযুক্ত। কিন্তু কাঠামোব্যবস্থা সুচারুভাবে গঠিত না হলে এর আশানুরূপ ফল আমরা পাব না। দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ কাঠামো নিয়ে আলোচনা ও নানামুখী প্রস্তাব দেশের রাজনৈতিক ও গণতান্ত্রিক ভবিষ্যৎ নিয়ে নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। বিভিন্ন সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে এই পরিবর্তনের সুপারিশ উঠে এসেছে, যেখানে একটি উচ্চকক্ষ (সিনেট) এবং একটি নিম্নকক্ষ (জাতীয় সংসদ) রাখার কথা বলা হয়েছে।

এই প্রস্তাবের মূল উদ্দেশ্য হলো বিদ্যমান ক্ষমতার কেন্দ্রীকরণ রোধ করা এবং সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা। এই সংস্কারপ্রক্রিয়া অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে গঠিত কমিশন দ্বারা পরিচালিত হয়েছে এবং জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের মাধ্যমে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ব্যাপক সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়েছে; যেখানে অন্তত ১৪টি রাজনৈতিক দল নীতিগতভাবে দ্বিকক্ষবিশিষ্ট আইনসভার পক্ষে মত দিয়েছে, যদিও গঠনপ্রণালি নিয়ে মতপার্থক্য বিদ্যমান।

সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবিত কাঠামো অনুযায়ী, নিম্নকক্ষ বা জাতীয় সংসদের সদস্যরা সরাসরি জনগণের ভোটে নির্বাচিত হবেন। তবে মূল আলোচনা কেন্দ্রীভূত হয়েছে উচ্চকক্ষের গঠনপ্রক্রিয়া ঘিরে। আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বপদ্ধতি (প্রপোরশনাল রিপ্রেজেন্টেশন বা পিআর) কেন্দ্রীয় প্রস্তাব হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

এই পদ্ধতি অনুযায়ী, সিনেটের ১০০টি আসন নিম্নকক্ষে নির্বাচনে প্রাপ্ত মোট ভোটের শতাংশের ভিত্তিতে বণ্টন করা হবে, যেখানে ন্যূনতম এক শতাংশ ভোট পাওয়ার শর্ত রাখা হয়েছে। এর ফলে আসনভিত্তিক নির্বাচনে পিছিয়ে পড়া ছোট দল বা প্রান্তিক জনগোষ্ঠীও আইনসভায় অন্তর্ভুক্ত হওয়ার সুযোগ পাবে।

কিছু রাজনৈতিক দল এই পদ্ধতিকে সমর্থন করেছে। আবার কিছু সমালোচক মনে করেন, এই প্রস্তাব উচ্চকক্ষকে নিম্নকক্ষের ‘প্রতিলিপি’তে পরিণত করবে। অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করার জন্য শিক্ষাবিদ, বিজ্ঞানী, শ্রমিক, নারী অধিকারকর্মী এবং অনগ্রসর জনগোষ্ঠী থেকে নির্দলীয় প্রতিনিধি অন্তর্ভুক্তির সুপারিশ করা হয়েছে। সংস্কারপ্রক্রিয়ায় রাষ্ট্রপতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অথচ নিয়ন্ত্রিত ভূমিকা রাখা হয়েছে। রাষ্ট্রপতি সিনেটের পাঁচটি আসনে রাজনীতিনিরপেক্ষ বিশিষ্ট নাগরিক মনোনয়ন দেবেন, যা আইনসভায় দলীয় রাজনীতির বাইরে থেকে দক্ষতা ও অভিজ্ঞতার সম্মিলন ঘটাবে।

জাতীয় সংসদ ভবন

সম্পর্কিত নিবন্ধ