সন্দ্বীপে যাতায়াত করা শাস্তি দেওয়ার মতো বলে মন্তব্য করেছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান। তিনি বলেন, ‘মানুষকে শাস্তি দিতে চাইলে বলতে পারেন, তুমি একবারের জন্য হলেও সন্দ্বীপে যাও। কারণ সন্দ্বীপে যেতে নারীদের  কোমড় পানিতে পর্যন্ত নামতে হয়। মাথার ওপরে মালপত্র নিয়ে অনেক কষ্টে নৌযানে উঠতে হয়। তাছাড়াও ঘাটে রয়েছে নানা অব্যবস্থাপনাও।’

রোববার বাঁশবাড়িয়া-গুপ্তছড়া ফেরিঘাটের কার্যক্রম পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন তিনি।

উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেন, ‘ সন্দ্বীপ একটি বিচ্ছিন্ন দ্বীপ। তবে এখানে উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি। সন্দ্বীপের মানুষকে জিম্মি করে রাখা হয়েছে। মানুষ বাড়িতে যাওয়া বা আত্মীয়-স্বজনদের সাথে দেখা করতে যাওয়া তো অপরাধ না। আমার বাড়িও সন্দ্বীপ, কিন্তু সেটা মূল বিষয় না। এটি উন্নয়নের ইস্যু। উন্নয়ন সব ঢাকা কিংবা বড় শহরে হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশ অনুযায়ী, যেসব জায়গায় উন্নয়নের ছোঁয়া পৌঁছেনি সেসব জায়গায় পৌঁছাতে হবে।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘অন্যান্য যেসব বিচ্ছিন্ন জেলা যেমন ভোলাতে আমরা ব্রিজের চিন্তা করছি। সন্দ্বীপের ব্যাপারেও ফেরিটা কতটুকু সফল হয় সেটা দেখে পরবর্তীতে আমরা সড়ক যোগাযোগের দিকে ভাববো। তবে মনে রাখতে হবে সড়ক নির্মাণ খুবই ব্যয়বহুল। এজন্য ওখানে যদি কোনো অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড না হয় তবে সড়কের বিনিয়োগ ঠিক হবে না। ভোলাতে গ্যাসের সন্ধান পাওয়া যাওয়ায় ব্রিজ করার চিন্তা করা হচ্ছে। কারণ ওখানে মানুষের যাতায়াতের প্রয়োজনীয়তা বেড়েছে। আপনি চিতল পিঠা খেতে সন্দ্বীপ যাবেন এর জন্য তো ১০ থেকে ১৫ হাজার কোটি টাকা দিয়ে ব্রিজ করবে না। করলে অন্যায় হবে। কারণ সরকারের সম্পদ কিন্তু সীমিত।’

ফেরি চলাচল করা প্রসঙ্গে উপদেষ্টা বলেন, ‘দুইপাশে এপ্রোচ সড়ক যেটি রয়েছে সেই কাজটি এখন করছি। আমরা টার্গেট নিয়েছি মার্চের ১০ তারিখের মধ্যে এটি অপারেশনের জন্য প্রস্তুত হবে। প্রধান উপদেষ্টা প্রতিনিয়ত এ ব্যাপারে খোঁজ নেন। আমরা সেইভাবে কাজটি আগাচ্ছি এবং নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ইনশাআল্লাহ এটির কাজ শেষ করবো।’ এসময় বিআইডব্লিউটিএ’র প্রধান প্রকৌশলী (ড্রেজিং) রকিবুল ইসলাম তালুকদারসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

পরে উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান চট্টগ্রাম কলেজ অডিটোরিয়ামে অধ্যাপক আসিফুল হক খান মেমোরিয়াল ট্রাস্ট বৃত্তি প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত হন। সেখানে শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে ফাওজুল কবির বলেন, ‘বর্তমান প্রজন্মকে প্রকৃত শিক্ষায় শিক্ষিত করতে যে শিক্ষা প্রয়োজন তা শুধু শ্রেণিকক্ষের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। তোমাদের মধ্যে যারা আজকে বৃত্তি পেয়েছো, ভালো রেজাল্ট করেছো সে জন্য অতিরিক্ত খুশি কিংবা অপেক্ষাকৃত কম সিজিপিএ’র জন্য ব্যথিত হওয়ার কোনও কারণ নাই। কারণ, তোমার কাছে কি ডিগ্রি বা সিজিপিএ আছে তার চেয়েও দেশের জন্য তুমি কি করতে পারবে সেটাই বড় কথা।’ 

তিনি বলেন, ‘জুলাই আন্দোলনে যারা পঙ্গুত্ব বরণ করেছে তাদের কাছে গিয়ে জানতে চেষ্টা করো- কেন হাজার হাজার শিক্ষার্থী জীবন দিয়েছে, পঙ্গুত্ব বরণ করেছে। দেশপ্রেম কি, সেটা তাদের কাছে প্রকৃতভাবে শিখতে পারবে।’

চট্টগ্রাম কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক মোহাম্মদ মোজাহেদুল ইসলাম চৌধুরীর সভাপতিত্বে এতে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন সোনালী ব্যাংক পিএলসি এর চেয়ারম্যান, সাবেক কম্পট্রোলার অডিটর জেনারেল ও সাবেক অর্থ সচিব মোহাম্মদ মুসলিম চৌধুরী, চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার ড.

মো. জিয়াউদ্দীন। অনুষ্ঠানে উচ্চ মাধ্যমিক ও স্নাতক পর্যায়ের ৩৪ জন শিক্ষার্থীকে বৃত্তি প্রদান করা হয়।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: উপদ ষ ট র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগে যশোর আইনজীবী সমিতির চার সদস্যকে সাময়িক বহিষ্কার

অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে যশোর আইনজীবী সমিতির চার সদস্যকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। গতকাল বুধবার বিকেলে সমিতির নির্বাহী কমিটির সভায় ওই চারজনের কারণ দর্শানো নোটিশের জবাবের শুনানি শেষে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

বহিষ্কৃত সদস্যরা হলেন আইনজীবী আবদুর রাজ্জাক, সৈয়দ কবির হোসেন, রফিকুল ইসলাম রফিক ও তরফদার আবদুল মুকিত। তাঁদের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার না হওয়া পর্যন্ত আদালতের সব কার্যক্রম থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে।

এ সমিতির সাধারণ সম্পাদক এম এ গফুর বলেন, ‘অভিযোগ প্রমাণিত হওয়াতে তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। কেউ সমিতির নিয়মনীতির ঊর্ধ্বে নন। বৃহস্পতিবার ওই চার সদস্যকে বহিষ্কারের বিষয়টি নোটিশ দিয়ে জানানো হবে।’

সমিতি সূত্রে জানা গেছে, যশোর জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্য সৈয়দ কবির হোসেনের (জনি) কাছে ৩৫ লাখ টাকায় শহরের বারান্দীপাড়া কদমতলা এলাকায় জমি বিক্রি করেন ইমরান হাসান। জমি রেজিস্ট্রির আগে সব টাকা পরিশোধের কথা থাকলেও সৈয়দ কবির হোসেন ১০ লাখ টাকা দিয়েছিলেন। বাকি ২৫ লাখ টাকা না দিয়ে টালবাহানা করতে থাকেন। পরে তিনি আরও ১৭ লাখ টাকা দেন। বাকি ৮ লাখ টাকা চাইলে হুমকি দিতে থাকেন কবির হোসেন। টাকা আদায়ে ব্যর্থ হয়ে ইমরান হাসান আইনজীবী সমিতি বরাবর লিখিত অভিযোগ দেন।

সমিতির নির্বাহী কমিটির সভায় তদন্ত প্রতিবেদনের ওপর শুনানি শেষে কবির হোসেনকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছিল। নোটিশের জবাব সন্তোষজনক না হওয়ায় সমিতির সুনাম ক্ষুণ্ন করায় গঠনতন্ত্র অনুযায়ী কবির হোসেনকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়।

এ বিষয়ে আইনজীবী কবির হোসেন বলেন, ‘বহিষ্কারের বিষয়টি আমি শুনেছি। তবে যে বিষয়ে আমাকে অভিযুক্ত করা হয়েছে, সেই বিষয়ে অভিযুক্ত আমি নই। তারপরও আইনজীবী সমিতি আমার অভিভাবক; তারা যে ব্যবস্থা নিয়েছে, তার বিষয়ে আমার কিছু বলার নেই।’

অন্যদিকে অভয়নগরের নওয়াপাড়ার জয়েন্ট ট্রেডিং করপোরেশন পাওনা টাকা আদায়ে আবদুর রাজ্জাককে মামলার আইনজীবী নিয়োগ দিয়েছিল। ২০১৯ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত আবদুর রাজ্জাক আটটি চেকের মামলা পরিচালনা করেন। এসব মামলার রায় ও আপিল বাদীর অনুকূলে যাওয়ার পর আটটি চেকের ৪১ লাখ ১২ হাজার ৫০০ টাকা ব্যাংক থেকে উত্তোলন করে নেন আবদুর রাজ্জাক। এ টাকা জয়েন্ট ট্রেডিং কর্তৃপক্ষকে না দিয়ে তিনি ঘোরাতে থাকেন। চলতি বছরের ৪ জুন তিনি ১৫ লাখ টাকার একটি চেক দেন। চেকটি ব্যাংকে জমা দিলে পর্যাপ্ত টাকা না থাকায় নগদায়ন করা যায়নি। টাকা আদায়ে ব্যর্থ হয়ে জয়েন্ট ট্রেডিং করপোরেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুল ওহাব গত ২৮ জুলাই আবদুর রাজ্জাকের বিরুদ্ধে যশোর আইনজীবী সমিতি‌ বরাবর অভিযোগ করেন।

এ অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে আবদুর রাজ্জাককে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয় যশোর আইনজীবী সমিতি। নোটিশের জবাব সন্তোষজনক না হওয়ায় আবদুর রাজ্জাককে গঠনতন্ত্র অনুযায়ী সাময়িক বহিষ্কার করা হয়। এ ছাড়া রফিকুল ইসলাম রফিক তাঁর সহকর্মীর সঙ্গে অসদাচরণ ও মামলা করতে টাকা ও কাগজপত্র নিয়ে মামলা না করায় সমিতির সুনাম ক্ষুণ্ন করায় সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। আইনজীবী তরফদার আবদুল মুকিতের বিরুদ্ধেও নানা ধরনের অভিযোগ রয়েছে। এ কারণে তাঁকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ