আগামী ফেব্রুয়ারিতে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। রাজনৈতিক দলগুলো ইতোমধ্যে ভোটের মাঠের চূড়ান্ত প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে।
আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নতুন রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) ৩০০টি আসনের মধ্যে ১৫০ আসনে জয়ী হওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। ছাত্র-গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত এই দলটি তাদের এই লক্ষ্য পূরণের মাধ্যমে সরাসরি সরকার গঠনের প্রত্যয় ব্যক্ত করেছে।
আরো পড়ুন:
সংসদ নির্বাচন নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক সোমবার
ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে তফসিল: সিইসি
রাজনৈতিক মহলে এনসিপির এই ‘বিশাল লক্ষ্যমাত্রা' ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। সাধারণত সরকার গঠনের জন্য সংসদীয় নির্বাচনে ১৫১টি আসন বা তার বেশি আসনে জয়লাভের প্রয়োজন হয়। এনসিপির দেড়শ আসনের টার্গেট সেই সংখ্যাগরিষ্ঠতার খুবই কাছাকাছি।
আগামী জাতীয় নির্বাচনে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) ৩০০ আসনেই প্রার্থী দেবে বলে জানিয়েছেন দলের মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী। সম্প্রতি প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সাথে এনসিপির বৈঠকের পর এক ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের তিনি বলেছেন, “১৫০ আসনে এনসিপি জয়ী হবে। এ ব্যাপারে আমরা আত্মবিশ্বাসী।”
যদিও এখন পর্যন্ত অনুষ্ঠানিকভাবে কোন আসনে কোন নেতারা প্রার্থী হবে সেই ঘোষণা দেওয়া হয়নি। তবে এনসিপি নেতারা নিজ নিজ আসনে নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছেন।
এনসিপির একাধিক সূত্র বলছে, এখনো তারা গণপরিষদ নির্বাচন, নতুন সংবিধান, বিচার ও সংস্কারের দাবিতে অনড়। তবে নির্বাচনকে সামনে রেখে সবুজ সংকেত পাওয়া নেতারা নিজ নিজ উদ্যোগে গণসংযোগ চালাচ্ছেন।
প্রস্তুতি ও গণসংযোগে ব্যস্ত নেতারা
জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ইতোমধ্যে প্রস্তুতি শুরু করেছে জাতীয় নাগরিক পার্টি। দলীয় সবুজ সংকেত পাওয়ার পর এনসিপির নেতারা নিজ নিজ নির্বাচনী এলাকায় গণসংযোগে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। তারা স্থানীয়দের সঙ্গে উঠান বৈঠকসহ নানা কর্মসূচির মাধ্যমে নিজেদের অবস্থান জানান দিচ্ছেন।
দলের দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ তার নিজ এলাকা কুমিল্লা-৪ (দেবিদ্বার) সংসদীয় আসনে পুরোদমে গণসংযোগ ও নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছেন। দল থেকে সবুজ সংকেত পাওয়ার পর থেকে নিয়মিতভাবে নিজ এলাকায় গণসংযোগ করে যাচ্ছেন তিনি। তার উদ্যোগে স্থানীয় এনসিপি নেতা-কর্মীরা উঠান বৈঠক, পথসভা এবং স্থানীয় সমস্যা নিয়ে মানুষের দ্বারে দ্বারে যাচ্ছেন।
জাতীয় নাগরিক পার্টির উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম এয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে তার নিজ জেলা পঞ্চগড়ের আটোয়ারী উপজেলার ধামোর ইউনিয়নসহ বিভিন্ন এলাকায় ব্যাপক নির্বাচনী তৎপরতা শুরু করেছেন। উত্তরাঞ্চলে এনসিপির অবস্থান সুসংহত করতে নানা কর্মসূচিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন তিনি।
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে উঠে আসা আরেক এনসিপি নেতা আব্দুল হান্নান মাসুদ নোয়াখালী-৬ আসনে নির্বাচন করতে পারেন বলে জানা গেছে। ইতোমধ্যে তিনি ব্যাপক প্রচারণা শুরু করেছেন।
নির্বাচনী মাঠে জাতীয় নাগরিক পার্টির যেসব নেতারা প্রচারণা চালাচ্ছেন তাদের মধ্যে রয়েছেন দলটির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। তিনি রাজধানীর রামপুরা-বনশ্রী এলাকা নিয়ে গঠিত ঢাকা-১১ আসনে নির্বাচনে লড়বেন বলে জানা গেছে। সদস্য সচিব আখতার হোসেন প্রার্থী হবেন রংপুর-৪ আসনে। মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারীর চাঁদপুর-৫ (হাজীগঞ্জ-শাহরাস্তি) বা ঢাকার যে কোনো আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সম্ভাবনা রয়েছে। সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব ঢাকা-১৪, কিংবা বরিশাল-৪ আসন থেকে লড়বেন বলে দলীয় সূত্র জানিয়েছে।
এনসিপির সিনিয়র যুগ্ম সদস্য সচিব ডা.
এর বাইরে দলটির যুগ্ম মুখ্য সংগঠক এস এম শাহরিয়ার ঢাকা-৫ (ডেমরা) আসনে, যুগ্ম আহ্বায়ক জাবেদ রাসিন ঢাকা-৯ এবং সংগঠক মো. রাসেল আহমেদ ঢাকা-১ থেকে লড়তে পারেন। রাজধানী ঢাকার পার্শ্ববর্তী জেলাগুলোর মধ্যে যুগ্ম সদস্য সচিব আবদুল্লাহ আল আমিন নারায়ণগঞ্জ থেকে নির্বাচন করবেন। যুগ্ম মুখ্য সংগঠক আলী নাছের খান প্রার্থী হতে চান গাজীপুর-১ আসনে।
দলটির আরেক যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার নির্বাচনি প্রস্তুতি হিসেবে নরসিংদীতে দলীয় কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছেন বলে জানা যায়। সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন ভোলা-১ কিংবা ঢাকা-৯ এই দুই আসনের যেকোনো একটি থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সম্ভাবনা রয়েছে। যুগ্ম আহ্বায়ক মাহবুব আলম মাহির লক্ষ্মীপুর-১, যুগ্ম আহ্বায়ক আশরাফ উদ্দীন মাহাদী ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২, যুগ্ম আহ্বায়ক অনিক রায় সুনামগঞ্জ-২, যুগ্ম সদস্য সচিব জয়নাল আবেদীন শিশির লড়বেন কুমিল্লা-১০ (সদর দক্ষিণ, লালমাই, লাঙ্গলকোট) এবং যুগ্ম সদস্য সচিব প্রীতম দাশ মৌলভীবাজার থেকে দলীয় প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন বলে জানা গেছে।
পটুয়াখালী-২ (বাউফল) যুগ্ম আহ্বায়ক হওয়া মুজাহিদুল ইসলাম শাহিন, ঝালকাঠি-১ আসনে যুগ্ম সমন্বয়কারী আরিফুর রহমান তুহিন, কুড়িগ্রাম-১ আসনে যুগ্ম আহ্বায়ক ড. আতিক মুজাহিদ, টাঙ্গাইল-১ মধুপুর আসনে নির্বাচন করার কথা রয়েছে।
চট্টগ্রাম-১৬ যুগ্ম সদস্য সচিব মীর আরশাদুল হক, যুগ্ম সদস্য সচিব মুশফিক উস সালেহীন নোয়াখালী-২ অথবা ঢাকা-১২ আসনের সম্ভাব্য প্রার্থী।
চুয়াডাঙ্গা-১ যুগ্ম সদস্য সচিব মোল্লা মোহাম্মদ ফারুক এহসান, কক্সবাজার আবু সাঈদ সুজাউদ্দীন, টাঙ্গাইল-৩ যুগ্ম মুখ্য সংগঠক সাইফুল্লাহ হায়দার, মেজর (অব.) আবদুল্লাহ মাহমুদ খান গাজীপুর-৩, মুখ্য সংগঠক আবু সাঈদ লিওন নীলফামারী-৩, যুগ্ম মুখ্য সংগঠক ডা. মাহমুদা মিতু বরিশাল-৫, সংগঠক আবদুল্লাহ আল মামুন ফয়সাল ভোলা-৪ আসনে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। অর্পিতা শ্যামা দেব ও এহতেশাম হক সিলেটে, যুগ্ম আহ্বায়ক নুসরাত তাবাসসুম কুষ্টিয়া-১ (দৌলতপুর), নেত্রকোনা-২ নির্বাহী সদস্য ফাহিম রহমান খান পাঠান এবং চট্টগ্রাম-১৪ হাসান আলী সম্ভাব্য প্রার্থী।
নেতারা যা বললেন
এয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সংসদীয় আসন সম্পর্কে জানতে চাইলে জাতীয় নাগরিক পার্টির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব রাইজিংবিডি ডটকমকে বলেন, “এ বিষয়ে দল থেকে এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। তবে নির্বাচনে সব রাজনৈতিক দলেরই টার্গেট থাকে বড় একটাসংখ্যক আসনে জয় পেতে। আমরাও এর ব্যতিক্রম না।”
ঢাকা/এসবি
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর জ ত য় ন গর ক প র ট এনস প য গ ম ম খ য স গঠক আবদ ল ল হ প রস ত ত র জন ত ক গণস য গ এনস প র দশ জ ত ১ আসন ইসল ম আসন র
এছাড়াও পড়ুন:
ঠাকুরগাঁওয়ে সার সংকট নিরসনে এনসিপির স্মারকলিপি
দেশের উত্তরাঞ্চলের অন্যতম কৃষি উৎপাদনকারী ঠাকুরগাঁও জেলায় সার সংকট, সিন্ডিকেট দূরীকরণ ও কৃষকের মাঝে সারের ন্যায্য সরবরাহ নিশ্চিতকরণে বিশেষ বরাদ্দসহ সাত দফা দাবিতে কৃষি মন্ত্রণালয়ে স্মারকলিপি দিয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতারা।
সোমবার (২০ অক্টোবর) দুপুরে ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে গিয়ে জেলা প্রশাসকের পক্ষে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) নাজমুল হক সুমনের কাছে স্মারকলিপি হস্তান্তর করেন তারা।
আরো পড়ুন:
মেহেরপুরে ২ কোটি টাকার সারের মালিক নিয়ে ধুম্রজাল
সারের দাম বাড়বে না: কৃষি উপদেষ্টা
স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা হয়, ঠাকুরগাঁও জেলার মোট আবাদি জমির পরিমাণ প্রায় ১ লাখ ৫১ হাজার ৫৯৩ হেক্টর। কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে কৃষকের চাহিদার মাত্র এক-চতুর্থাংশ থেকে দুই-চতুর্থাংশ সার বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে। ফলে কৃষক অতিরিক্ত দামে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে সার কিনতে বাধ্য হচ্ছে।
তারা আরো উল্লেখ করেন, সাম্প্রতিক সময়ে জেলায় টিএসপি, ডিএপি ও এমওপি সারের সংকট দেখা দিয়েছে। এতে কৃষকের উৎপাদন ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে এবং ক্ষতির আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
তাদের ৭ দফা দাবিগুলো হলো, ১. বাৎসরিক চাহিদার আলোকে নির্দিষ্ট মৌসুমে পর্যাপ্ত সার বরাদ্দ ও তার সুষ্ঠু বণ্টন নিশ্চিত করা। ২. সার সরবরাহ ব্যবস্থায় কঠোর তদারকি জোরদার করা। ৩. নির্ধারিত দামে সার বিক্রয় নিশ্চিত করতে স্থানীয় প্রশাসন ও কৃষি অফিসের তৎপরতা বৃদ্ধি করা। ৪. সার আমদানি, পরিবহন ও গুদামজাতকরণে সিন্ডিকেট ও কালোবাজারি বন্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া। ৫. চলতি অর্থবছরের কৃষি বাজেট অনুযায়ী দ্রুত বাস্তবায়ন শুরু করা। ৬. কৃষকের ক্ষতি পূরণে সহায়তা প্রদান ও দীর্ঘমেয়াদি সার নীতি প্রণয়ন করা। ৭. সার ব্যবস্থাপনায় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ও স্থানীয় প্রশাসনের সমন্বয় আরো সুদৃঢ় করা।
এনসিপির যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক ও ঠাকুরগাঁও–৩ আসনের দলের প্রার্থী গোলাম মর্তুজা সেলিম সাংবাদিকদের বলেন, “আমরা সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছি, সার সরবরাহে সিন্ডিকেট যেন বন্ধ হয়, কৃষক যেন নির্ধারিত দামে পর্যাপ্ত সার পায়। ঠাকুরগাঁও কৃষিনির্ভর জেলা, তাই সার সংকট নিরসনে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।”
এ সময় এনসিপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
ঢাকা/হিমেল/বকুল