নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার উপজেলায় একটি টেক্সটাইল মিল ৫ দিন ধরে তালাবদ্ধ। মালিকপক্ষের অভিযোগ, চাঁদা না দেওয়ায় যুবদল কর্মী ইমন, ফজলুল হক ও আবুল কালামের নেতৃত্বে ২৫-৩০ জন মিলে তালা দিয়েছেন। তালা খুলতে গেলে তারা বাধা দিচ্ছেন। এমনকি কি এ বিষয়ে থানায় অভিযোগ দিলে কঠিন পরিণতি ভোগ করতে হবে বলে হুমিক দেওয়া হয়েছে। মিল মালিকের বাসা ও কারখানার আশপাশে পাহারা বসানো হয়েছেও বলে অভিযোগ করেছে মালিকপক্ষ। উপজেলা ব্রাহ্মন্দী ইউনিয়নের মনোহরদী এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। 

ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্য পলক পাল জানান, তার বাবা পল্টন পাল, চাচা সেবা পাল ও আকাশ পালের মালিকানায় মনোহরদী গ্রামে একটি টেক্সটাইল মিল রয়েছে। এই মিলে ৬০টি মেশিন রয়েছে। মিল চালাতে গিয়ে তাদের বেশ কিছু ঋণ নিতে হয়। সেই ঋণ পরিশোধ করতে মিল থেকে ২৫টি মেশিন বিক্রির সিদ্ধান্ত হয়। স্থানীয় এক দালালের মাধ্যমে প্রায় ১৫ লাখ টাকায় মেশিনগুলো বিক্রি করা হয়। গত বুধবার ডেলিভারি দেওয়ার জন্য টেক্সটাইল মিল থেকে মেশিন বের করা শুরু হলে স্থানীয় যুবদল কর্মী নেতা ইমন, ফজলুল হক ও আবুল কালামের নেতৃত্বে ২৫-৩০ জনের একটি দল এসে মেশিন বিক্রির টাকা তাদের হাতের দেওয়ার জন্য চাপ দেন। টাকা দিতে অস্বীকার করায় তারা টেক্সটাইল মিলে তালা ঝুলিয়ে দেন। 

মিলে তালা দেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে আবুল কালাম বলেন, ‘কারাখানায় দেনা-পাওনা নিয়ে ঝামেলা সৃষ্টি হওয়ায় ওইখানে আমি গিয়েছিলাম। বড় ভাইয়েরা এসে কি করেছেন তা আমি বলতে পাবর না।’

উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা যুবদলের সাবেক সভাপতি জুয়েল আহমেদ বলেন, ‘বিএনপি বা এর কোনো অঙ্গ সংগঠনের নাম ভাঙিয়ে কেউ চাঁদাবাজি, দখলদারিত্ব বা কোনো অপরাধ করলে দল তার দায় নেবে না। কেউ যদি অন্যায় অনিয়ম করে, তার দায় তাকেই নিতে হবে।’

অভিযুক্তদের বিষয়ে কোনো দলীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে কি না এ বিষয়ে তিনি বলেন, প্রশাসন নেবে। 

আড়াইহাজার থানার ওসি এনায়েত হোসেন জানান, বিষয়টি তিনি জানেন না। খোঁজ-খবর নিয়ে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাজ্জাত হোসেন বলেন, ‘বিষয়টি আমার জানা নেই। লিখিতভাবে আমাকে জানালে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ন র য়ণগঞ জ য বদল য বদল উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

শালবনে ছেচরা কই ও পাটখই

বিভতিভূষণের আরণ্যক উপন্যাসে একজন যুগলপ্রসাদ ছিলেন, যিনি লবটুলিয়ার জঙ্গলে সরস্বতী কুন্ডের পাড়ে নানা জায়গা থেকে নানা প্রজাতির গাছপালা এনে লাগাতেন। সেসব গাছে ফুল ফুটলে আনন্দে তিনি আত্মহারা হয়ে যেতেন। আমারও একজন যুগলপ্রসাদ ছিলেন, নাম আজাহার। প্রায় আমারই সমবয়সী।

টাঙ্গাইলের সখীপুরে বিভিন্ন শালবনে ঘুরতে গেলে মাঝেমধ্যে তিনি আমার সাথি হতেন। শালবনে কত গাছ! তেমন কিছুই চিনি না। কিন্তু সেই শালবনের কোলে জন্ম নেওয়া ও বেড়ে ওঠা আজাহার ঠিকই সেসব গাছ চিনতেন, আর জিজ্ঞেস করলে টপাটপ নাম বলে দিতেন। কিন্তু গোলমাল বাধত সেসব নাম শুনে। কেননা সেসব নাম বলতেন, তাঁদের স্থানীয় ভাষায়। বইয়ে সেসব নাম খুঁজে পাওয়া যেত না।

একদিন শালবনের মধ্যে একটা ছোট গাছ দেখলাম, গাছের গুঁড়ির চারদিকে তীক্ষ্ণসরু ও সোজা প্রচুর কাঁটা বেরিয়েছে। পাতাগুলো দেখতে কিছুট পেয়ারাপাতার মতো। প্রচুর ডালপালায় গাছটার মাথা ঝাঁকড়া হয়ে আছে। ডালের আগায় শিষের মতো মঞ্জরিতে প্রচুর ঘিয়া ও সাদাটে রঙের খুদে ফুল ফুটেছে। চিনি না। তাই আজাহারকে জিজ্ঞেস করলাম, নাম কী? চট করেই বলে দিলেন, ছেচরা কই। মাছের নাম কই হয় জানি, কিন্তু কোনো গাছের নাম কই হতে পারে? অগত্যা ছবি তুলে ওই নামকেই মনে গেঁথে ফিরে এলাম ঢাকায়।

আজাহার বললেন, এখন ফুল দেখছেন। কদিন পরেই ওসব ফুল থেকে ছোট ছোট গুলির মতো প্রচুর ফল ধরবে। ছোটবেলায় আমরা সেসব কাঁচা ফল নিয়ে বাঁশের কঞ্চি দিয়ে ফটকা বানিয়ে তার চোঙে একটা একটা করে ফল দিয়ে বন্দুকের মতো গুলি গুলি খেলতাম। চোঙের ভেতরে একটা সরু কাঠি ঢুকিয়ে চাপ দিয়ে সেসব ফল গুলির মতো ফাটাতাম। ফটাস করে শব্দ হতো। এ সময় মাসখানেকের জন্য আমরা এ গাছের ফল, পরে জালি খেজুর নিয়ে যুদ্ধ যুদ্ধ খেলতাম। শালবনে সে সময় এ গাছের অভাব ছিল না। এখন তো দেখতে হলে খুঁজে বের করতে হয়।

ফিরে এসে সে ছবি পাঠালাম জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যানের সাবেক বোটানিস্ট সামসুল হক ভাইয়ের কাছে। দুই দিন পরেই তিনি জানালেন, গাছটার স্থানীয় নাম ছেচরা কই, উদ্ভিদতাত্ত্বিক নাম Bridelia retusa, গোত্র ফাইলেনথেসি। বইপত্রে এ গাছের চারটি বাংলা নাম পেলাম—কাঁটাকই, কাঁটাকুশি, কামকই, আকদানা। বাংলাদেশ ছাড়াও এ গাছ আছে নেপাল, ভারত, শ্রীলঙ্কা, চীন, থাইল্যান্ড প্রভৃতি দেশে। সাধারণত উঁচু ও শুষ্ক বনাঞ্চলে এ গাছ দেখা যায়। ছোট বৃক্ষজাতীয় গাছ, প্রায় ১০ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়, দ্রুত বাড়ে। এ গাছের কাঁটা থাকায় বন্য প্রাণীরা এদের ধারে ঘেঁষে না, এমনকি এর বাকল দিয়েও বিষ তৈরি করা হয় বলে শুনেছি।

ফল গোলাকার, ছোট, কাঁচা ফল ময়লা সবুজ, পাকলে খোসায় লাল রং ধরে। ছেচরা কইগাছের কাঠ মাঝারি শক্ত থেকে শক্ত, কাঠের রং ময়লা লাল। রঙে ও গুণে কাঠ উৎকৃষ্ট। নির্মাণকাজ ও গরুর গাড়ির চাকা বানাতে ব্যবহার করা হয়। জ্বালানি কাঠ হিসেবে ব্যবহৃত হলেও শুষ্ক তৃণভূমিতে যদি কোনো গাছ থাকে, তবে সেসব ঘাসে আগুন দিলে এ গাছ পোড়ে না বলে কথিত রয়েছে। বীজ দ্বারা সহজে বংশবৃদ্ধি বা চারা হয়।

পূর্বাচল উপশহরের শালবনে দেখা পাটখই ফল

সম্পর্কিত নিবন্ধ