সব প্রক্রিয়া শেষ করেও উড়োজাহাজের টিকিট না পাওয়াসহ বিভিন্ন কারণে আটকেপড়া প্রায় ১৭ হাজার বাংলাদেশি কর্মীর একজনও মালয়েশিয়া যেতে পারেননি। গত ৪ অক্টোবর মালয় প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম ঢাকায় এসে এসব কর্মীকে নিয়োগের ঘোষণা দিলেও তা কার্যকর হয়নি।

রিক্রুটিং এজেন্সিগুলো টাকা ফেরত দিচ্ছে, তবে তা মাত্র ১০ শতাংশের কাছাকাছি। এতে ক্ষুব্ধ কর্মীরা গতকাল বুধবার সকাল ১০টার দিকে রাজধানীর কারওয়ান বাজার সার্ক ফোয়ারা মোড় অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন। এর পর প্রবাসীকল্যাণ সচিব রুহুল আমিন ফের তাদের মালয়েশিয়া পাঠানোর আশ্বাস দিয়েছেন। 

গতকাল বিক্ষুব্ধ কয়েকশ কর্মী কারওয়ান বাজার থেকে ইস্কাটনের প্রবাসীকল্যাণ ভবনের সামনে যান। কাফনের কাপড় পরে ভবনের সামনে শুয়ে প্রতিবাদ জানান অনেকে। আন্দোলনের নেতৃত্ব দেওয়া মাইন উদ্দীন এ সময় বলেন, গত বছরের ৩১ মের মধ্যে যারা মালয়েশিয়া যেতে পারেননি, তাদের ফেব্রুয়ারির ২০ তারিখের মধ্যে পাঠাতে হবে। জমি-গরু বিক্রি করে, ঋণ করে প্রত্যেকে পাঁচ ছয় লাখ টাকা দিয়েছেন রিক্রুটিং এজেন্সিকে। এখন টাকা না পেয়ে মানবেতর দিন কাটাচ্ছেন। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত কর্মসূচি চলবে।

পরে পুলিশ চারজনের প্রতিনিধি দলকে দুপুর দেড়টার দিকে মন্ত্রণালয়ে নিয়ে যায়। এর পর কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা শেষে প্রবাসীকল্যাণ সচিব রুহুল আমিন বলেন, যেতে না পারা কর্মীদের মালয়েশিয়া পাঠাতে ইতিবাচক অগ্রগতি হয়েছে। বাংলাদেশ-মালয়েশিয়ার কারিগরি কমিটি ও মালয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কারিগরি কমিটির দুই দফা বৈঠক হয়েছে। ফেব্রুয়ারিতে আবার বৈঠকের কথা রয়েছে। প্রাথমিকভাবে মালয়েশিয়া একমত। আগামী এপ্রিলে এটি চূড়ান্ত হতে পারে। এর পর ধাপে ধাপে মালয়েশিয়া যাবেন ওই কর্মীরা।

তিনি আরও বলেন, মালয়েশিয়ার কাছে তালিকা পাঠানো হয়েছে। প্রক্রিয়া চূড়ান্ত হলে কর্মীদের জানানো হবে। চেষ্টা করা হচ্ছে, কর্মীদের যাতে আর টাকা খরচ না হয়। 

এদিকে রিক্রুটিং এজেন্সিগুলো যেতে না পারা কর্মীদের টাকা ফেরত দেবে বলে গত জুনে সরকার জানালেও তা বাস্তবায়ন হয়নি। প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয় ৮১ শতাংশ কর্মীকে টাকা ফেরত দেওয়ার দাবি করলেও ভুক্তভোগীদের ভাষ্য, চার থেকে ছয় লাখ টাকা নিয়ে এজেন্সি ফেরত দিচ্ছে ৫০ থেকে ৭০ হাজার। 

প্রবাসীকল্যাণ সচিব রুহুল আমিন গতকাল বলেন, ২০ জানুয়ারি পর্যন্ত ৮১ শতাংশ কর্মীর টাকা ফেরত দিয়ে সইসহ তালিকা জমা দিয়েছে এজেন্সিগুলো। ২৩ জানুয়ারির মধ্যে টাকা পরিশোধ না করলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে বিক্ষোভে অংশ নেওয়া কর্মী রফিকুল ইসলাম সমকালকে বলেন, এজেন্সি পাঁচ লাখ টাকা নিয়ে ৫০ হাজার ফেরত দিয়ে সই নিয়েছে। 

‘সিন্ডিকেটে’ কর্মীরা ক্ষতিগ্রস্ত হলেও ২০২১ সালে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠাতে এ সুযোগ রেখে চুক্তি করে। মালয় সরকার প্রথমে ২৫ এজেন্সিকে কর্মী পাঠানোর কাজ দেয়। সিন্ডিকেট নামে পরিচিত এ এজেন্সির বেশির ভাগের মালিক ছিলেন ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের এমপি, মন্ত্রীসহ নেতারা। এ নিয়ে সমালোচনার পর মালয় সরকার আরও ৭৫ এজেন্সিকে কাজ দেয়। সূত্রের খবর, তৎকালীন প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী ইমরান আহমদ সিন্ডিকেটের বিরোধী ছিলেন। কিন্তু ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে সিন্ডিকেটে সম্মত হয় বাংলাদেশ। 

মালয়েশিয়ায় পাঠাতে কর্মীপ্রতি ওই সময় ৭৮ হাজার ৯৯০ টাকা ব্যয় নির্ধারণ করেছিল সরকার। তবে সিন্ডিকেট নেয় সাড়ে চার থেকে ছয় লাখ টাকা পর্যন্ত। এ নিয়ে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক অঙ্গনের সমালোচনার মুখে বিদেশি কর্মী নিয়োগ বন্ধ করে মালয়েশিয়া। এতে বাংলাদেশ সরকার ৪ লাখ ৯৩ হাজার ৬৪২ কর্মীকে ছাড়পত্র দিলেও বেঁধে দেওয়া সময় ৩১ মের মধ্যে যেতে পারেন ৪ লাখ ৭৬ হাজার ৬৭২ জন। বাকি ১৬ হাজার ৯৭০ জন আটকা পড়েন। 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: কর ম দ র মন ত র কর ম র সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

প্রেমিকার বিয়ের দিনে প্রেমিকের লাশ উদ্ধার, হত্যার অভিযোগ পরিবারের

নড়াইলের লোহাগড়ায় প্রেমিকার বিয়ের দিনে প্রেমিক সৈয়দ মাসুম বিল্লাহর (২০) মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। মাসুমের বাম হাতের একটি আঙুলের নখ উপড়ে ফেলার আলামত থাকায় তার পরিবার অভিযোগ করছে, এটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। 

শুক্রবার (১ আগস্ট) দুপুরে কালনা মধুমতি সেতুর পশ্চিম পাশে রাস্তার ওপর মাসুমকে অচেতন অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে ইজিবাইকের চালক সুজন শেখ তাকে উদ্ধার করে লোহাগড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসেন। বিকেলে অবস্থার অবনতি হলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে তার মৃত্যু হয়।

মাসুম বিল্লাহ লোহাগড়া উপজেলার শালনগর ইউনিয়নের মাকড়াইল গ্রামের মৃত সৈয়দ রকিবুল ইসলামের ছেলে। 

আরো পড়ুন:

জুলাই হত্যাকাণ্ডের মামলায় চট্টগ্রামে প্রথম অভিযোগপত্র দাখিল

সিলেটে স্কুলছাত্র সুমেল হত্যা: ৮ জনের মৃত্যুদণ্ড, ৭ জনের যাবজ্জীবন

মাসুমের স্বজনরা জানিয়েছেন, শালনগর ইউনিয়নের এক কিশোরীর সঙ্গে মাসুমের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। মেয়েটির বিয়ের খবর পেয়ে শুক্রবার (১ আগস্ট) সকালে তিনি ঢাকা থেকে লোহাগড়ায় আসেন। সকালে পরিবারের সঙ্গে তার শেষবার কথা হয়, এরপর থেকে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন ছিল।

মাসুম বিল্লাহর চাচা শরিফুল ইসলাম বলেছেন, “আমরা শুনেছি, সকালে লোহাগড়া বাজারের একটি পার্লারে মেয়েটির সঙ্গে মাসুমের কথা হয়। এর পর মেয়েটির বাবার কাছ থেকে হুমকি পায় সে। পরে হাসপাতাল থেকে ফোন পেয়ে মাসুমের মৃত্যুর খবর জানি। তার বাম হাতের  নখ উপড়ানো ছিল। সব মিলিয়ে মনে হচ্ছে, তাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে।”

মাসুমকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়া ইজিবাইক চালক সুজন বলেছেন, “ঘটনাস্থলে কোনো দুর্ঘটনার চিহ্ন ছিল না। তবে মনে হয়েছে, কেউ মাসুমকে গাড়ি থেকে ফেলে দিয়েছে।”

লোহাগড়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শরিফুল ইসলাম শনিবার (২ আগস্ট) সকালে সাংবাদিকদের বলেছেন, “আমরা মাসুম বিল্লাহকে মৃত অবস্থায় লোহাগড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে থানায় নিয়ে আসি। মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য নড়াইল আধুনিক সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। প্রতিবেদন পেলে মৃত্যুর আসল কারণ জানা যাবে।” 

ঢাকা/শরিফুল/রফিক

সম্পর্কিত নিবন্ধ