মালয়েশিয়া যাওয়া হয়নি কারও বিক্ষোভের পর ফের আশ্বাস
Published: 23rd, January 2025 GMT
সব প্রক্রিয়া শেষ করেও উড়োজাহাজের টিকিট না পাওয়াসহ বিভিন্ন কারণে আটকেপড়া প্রায় ১৭ হাজার বাংলাদেশি কর্মীর একজনও মালয়েশিয়া যেতে পারেননি। গত ৪ অক্টোবর মালয় প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম ঢাকায় এসে এসব কর্মীকে নিয়োগের ঘোষণা দিলেও তা কার্যকর হয়নি।
রিক্রুটিং এজেন্সিগুলো টাকা ফেরত দিচ্ছে, তবে তা মাত্র ১০ শতাংশের কাছাকাছি। এতে ক্ষুব্ধ কর্মীরা গতকাল বুধবার সকাল ১০টার দিকে রাজধানীর কারওয়ান বাজার সার্ক ফোয়ারা মোড় অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন। এর পর প্রবাসীকল্যাণ সচিব রুহুল আমিন ফের তাদের মালয়েশিয়া পাঠানোর আশ্বাস দিয়েছেন।
গতকাল বিক্ষুব্ধ কয়েকশ কর্মী কারওয়ান বাজার থেকে ইস্কাটনের প্রবাসীকল্যাণ ভবনের সামনে যান। কাফনের কাপড় পরে ভবনের সামনে শুয়ে প্রতিবাদ জানান অনেকে। আন্দোলনের নেতৃত্ব দেওয়া মাইন উদ্দীন এ সময় বলেন, গত বছরের ৩১ মের মধ্যে যারা মালয়েশিয়া যেতে পারেননি, তাদের ফেব্রুয়ারির ২০ তারিখের মধ্যে পাঠাতে হবে। জমি-গরু বিক্রি করে, ঋণ করে প্রত্যেকে পাঁচ ছয় লাখ টাকা দিয়েছেন রিক্রুটিং এজেন্সিকে। এখন টাকা না পেয়ে মানবেতর দিন কাটাচ্ছেন। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত কর্মসূচি চলবে।
পরে পুলিশ চারজনের প্রতিনিধি দলকে দুপুর দেড়টার দিকে মন্ত্রণালয়ে নিয়ে যায়। এর পর কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা শেষে প্রবাসীকল্যাণ সচিব রুহুল আমিন বলেন, যেতে না পারা কর্মীদের মালয়েশিয়া পাঠাতে ইতিবাচক অগ্রগতি হয়েছে। বাংলাদেশ-মালয়েশিয়ার কারিগরি কমিটি ও মালয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কারিগরি কমিটির দুই দফা বৈঠক হয়েছে। ফেব্রুয়ারিতে আবার বৈঠকের কথা রয়েছে। প্রাথমিকভাবে মালয়েশিয়া একমত। আগামী এপ্রিলে এটি চূড়ান্ত হতে পারে। এর পর ধাপে ধাপে মালয়েশিয়া যাবেন ওই কর্মীরা।
তিনি আরও বলেন, মালয়েশিয়ার কাছে তালিকা পাঠানো হয়েছে। প্রক্রিয়া চূড়ান্ত হলে কর্মীদের জানানো হবে। চেষ্টা করা হচ্ছে, কর্মীদের যাতে আর টাকা খরচ না হয়।
এদিকে রিক্রুটিং এজেন্সিগুলো যেতে না পারা কর্মীদের টাকা ফেরত দেবে বলে গত জুনে সরকার জানালেও তা বাস্তবায়ন হয়নি। প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয় ৮১ শতাংশ কর্মীকে টাকা ফেরত দেওয়ার দাবি করলেও ভুক্তভোগীদের ভাষ্য, চার থেকে ছয় লাখ টাকা নিয়ে এজেন্সি ফেরত দিচ্ছে ৫০ থেকে ৭০ হাজার।
প্রবাসীকল্যাণ সচিব রুহুল আমিন গতকাল বলেন, ২০ জানুয়ারি পর্যন্ত ৮১ শতাংশ কর্মীর টাকা ফেরত দিয়ে সইসহ তালিকা জমা দিয়েছে এজেন্সিগুলো। ২৩ জানুয়ারির মধ্যে টাকা পরিশোধ না করলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে বিক্ষোভে অংশ নেওয়া কর্মী রফিকুল ইসলাম সমকালকে বলেন, এজেন্সি পাঁচ লাখ টাকা নিয়ে ৫০ হাজার ফেরত দিয়ে সই নিয়েছে।
‘সিন্ডিকেটে’ কর্মীরা ক্ষতিগ্রস্ত হলেও ২০২১ সালে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠাতে এ সুযোগ রেখে চুক্তি করে। মালয় সরকার প্রথমে ২৫ এজেন্সিকে কর্মী পাঠানোর কাজ দেয়। সিন্ডিকেট নামে পরিচিত এ এজেন্সির বেশির ভাগের মালিক ছিলেন ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের এমপি, মন্ত্রীসহ নেতারা। এ নিয়ে সমালোচনার পর মালয় সরকার আরও ৭৫ এজেন্সিকে কাজ দেয়। সূত্রের খবর, তৎকালীন প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী ইমরান আহমদ সিন্ডিকেটের বিরোধী ছিলেন। কিন্তু ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে সিন্ডিকেটে সম্মত হয় বাংলাদেশ।
মালয়েশিয়ায় পাঠাতে কর্মীপ্রতি ওই সময় ৭৮ হাজার ৯৯০ টাকা ব্যয় নির্ধারণ করেছিল সরকার। তবে সিন্ডিকেট নেয় সাড়ে চার থেকে ছয় লাখ টাকা পর্যন্ত। এ নিয়ে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক অঙ্গনের সমালোচনার মুখে বিদেশি কর্মী নিয়োগ বন্ধ করে মালয়েশিয়া। এতে বাংলাদেশ সরকার ৪ লাখ ৯৩ হাজার ৬৪২ কর্মীকে ছাড়পত্র দিলেও বেঁধে দেওয়া সময় ৩১ মের মধ্যে যেতে পারেন ৪ লাখ ৭৬ হাজার ৬৭২ জন। বাকি ১৬ হাজার ৯৭০ জন আটকা পড়েন।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: কর ম দ র মন ত র কর ম র সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত হলো ‘জনপদের বর্ষবরণ ১৪৩২’
কক্সবাজার জেলার লোকসংগীত শিল্পী বুলবুল আক্তার। এই শিল্পী নিজের মধ্যে ধারণ করেছেন চট্রগ্রাম ও কক্সবাজারের নিজস্ব ভাষা, সুর ও সংস্কৃতি। কালো বোরকার ফ্যাশনে সাধারণ ও সরল চেহারার এই শিল্পীর দরদি কণ্ঠে ফুটে ওঠে প্রেম, বিরহ, সমাজ ও প্রান্তিক জীবনের গল্প। বুধবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি গেয়েছেন ‘মধু হইহই বিষ খাওয়াইলা’ ও ‘হালাসান গলার মালা’।
রসিক আড্ডার আয়োজনে এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ফোকলোর অ্যাসোসিয়েশনের সহযোগিতায় আয়োজিত হয় জনপদের বর্ষবরণ ১৪৩২। দুপুর ১২টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি মাঠে এই আয়োজন চলে। দুপুরে বৃষ্টি এলে ভিজে বৃষ্টিবিলাসে মেতে ওঠেন আয়োজক এবং অনুষ্ঠান দেখতে আসা অনেকে।
অনুষ্ঠানে মঞ্চে ছিল বাঙালি সংস্কৃতির ছোঁয়া। দূর থেকে মঞ্চে তাকালে বাঙালির ঐতিহ্যই চোখে ভেসে ওঠে। মঞ্চ তৈরি করা হয় প্রতীকী গ্রামবাংলার দৃশ্য কলাগাছ ও খড়ের ঘর দিয়ে। তা ছাড়া বাংলাদেশের বিভিন্ন জনপদের বর্ষবরণকে ফুটিয়ে তুলতে এই আয়োজনে ছিল ধামাইল নাচ, চাকমা, মারমা ও খুমি জনগোষ্ঠীর নৃত্য ও আধুনিক নৃত্য। ব্যান্ডের মধ্যে ছিল ফিরোজ জঙ, আপনঘর, Sacrament-গারো ব্যান্ড, ব্যান্ড লাউ।
এই আয়োজনে গ্রামীণমেলায় ছিল নাগরদোলা, বানরখেলা, রণপা, বায়োস্কোপ ও পুতুলনাচ। এ ছাড়া বাংলাদেশের বিভিন্ন জনপদের খাবার ও পোশাকের স্টল ছিল।
আয়োজকদের একজন নাহিয়ান ফারুক বলেন, রসিক আড্ডা বাংলাদেশের সংস্কৃতি পাঠ ও তা চর্চা করে। রসিক আড্ডার তিনটি ম্যাগাজিন রণপা, কলন্দর ও সিনেযোগ বাংলাদেশের সমাজ ও সংস্কৃতি–নির্ভর আলোচনা করে এবং তা জনপরিসরে ফুটিয়ে তোলে। এরই ধারাবাহিকতায় এই আয়োজন করা হয়েছে।