Samakal:
2025-05-01@04:59:00 GMT

আগামীর নারী গ্র্যান্ডমাস্টার

Published: 25th, January 2025 GMT

আগামীর নারী গ্র্যান্ডমাস্টার

নোশিন আনজুম। ফিদে ওয়ার্ল্ড র‍্যাপিড ও ব্লিটজ দাবা চ্যাম্পিয়নশিপ ২০২৪-এ অংশ নিয়ে সাফল্যের দেখা পান দেশের জাতীয় নারী চ্যাম্পিয়ন ও ফিদে মাস্টার নোশিন আনজুম। প্রতিযোগিতার ওপেন বিভাগে ৫৬ দেশের ১৮০ জন গ্র্যান্ডমাস্টার ও আন্তর্জাতিক মাস্টার এবং নারী বিভাগে ৩৫ দেশের ১১০ জন দাবাড়ু অংশ নেন। আন্তর্জাতিক এই প্রতিযোগিতায় নোশিনের সাফল্য ও দাবা নিয়ে তাঁর স্বপ্নের কথা শুনেছেন আশিক মুস্তাফা

গত ২৬ ডিসেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে অনুষ্ঠিত হয় ফিদে ওয়ার্ল্ড র‍্যাপিড ও ব্লিটজ দাবা চ্যাম্পিয়নশিপস। এই প্রতিযোগিতায় অংশ নেন বাংলাদেশের জাতীয় চ্যাম্পিয়ন আন্তর্জাতিক মাস্টার মনন রেজা নীড় এবং জাতীয় নারী চ্যাম্পিয়ন, নারী ফিদে মাস্টার নোশিন আনজুম। প্রতিযোগিতার ওপেন বিভাগে ৫৬ দেশের ১৩৪ জন গ্র্যান্ডমাস্টার ও ৩২ জন আন্তর্জাতিক মাস্টারসহ ১৮০ জন এবং নারী বিভাগে ৩৫ দেশের ২১ জন গ্র্যান্ডমাস্টার, ২৩ জন নারী গ্র্যান্ডমাস্টার, ৩৬ জন আন্তর্জাতিক মাস্টার ও ১০ জন নারী আন্তর্জাতিক মাস্টারসহ মোট ১১০ জন দাবাড়ু অংশ নেন। নোশিন নারী ওয়ার্ল্ড র‍্যাপিড দাবা চ্যাম্পিয়নশিপে ৯ খেলায় ৪ পয়েন্ট নিয়ে ১১০ জনের মধ্যে ১০০তম এবং ব্লিটজে ১০৫তম স্থান অর্জন করেন। দশম রাউন্ডে মোনাকোর নারী ক্যান্ডিডেট মাস্টার বেরেজোভস্কি ফিওরিনাকে পরাজিত করেন নোশিন। একাদশ রাউন্ডের খেলায় চীনের আন্তর্জাতিক মাস্টার লু মিয়ায়ির সঙ্গে ড্র করেন এবং কাজাখস্তানের নারী আন্তর্জাতিক মাস্টার সেরিকবে আসিলের কাছে হেরে যান। ওপেন বিভাগে রাশিয়ার গ্র্যান্ডমাস্টার মারজিন ভোলোদার ১৩ খেলায় ১০ পয়েন্ট পেয়ে চ্যাম্পিয়ন হন। নারী বিভাগে ভারতের গ্র্যান্ডমাস্টার কোনিরু হাম্পি চ্যাম্পিয়ন হন।
উইমেন ক্যান্ডিডেট মাস্টার খেতাব
২০১৮ সালের কথা। শ্রীলঙ্কায় অনুষ্ঠিত এশিয়ান স্কুল চেস চ্যাম্পিয়নশিপে নোশিন আনজুম নিজের প্রথম খেতাব অর্জন করেন। টুর্নামেন্টে সবাই মোটামুটি নিশ্চিত ছিল যে স্ট্যান্ডার্ডে অন্তত দ্বিতীয় স্থান, অর্থাৎ রৌপ্য পদক পাবেন নোশিন। সবাইকে অবাক করে দিয়ে শেষ ম্যাচে পরাজিত হয়ে ব্রোঞ্জ পেয়ে বসেন। নোশিনের চমক তখনও বাকি। সেদিনই ছিল ব্লিটজ সেকশনের খেলা। স্ট্যান্ডার্ডে হারার  কারণেই কিনা, ব্লিটজে প্রাণপণ লড়ে শেষ পর্যন্ত স্বর্ণপদক অর্জন করেন। একই প্রতিযোগিতায় ব্রোঞ্জ পেয়ে নিজের প্রথম খেতাব অর্জন করেন– ‘উইমেন ক্যান্ডিডেট মাস্টার’।
কিংবদন্তি দাবাড়ু রানী হামিদকে হারানো এবং ‘উইমেন ইন্টারন্যাশনাল মাস্টার’ নর্ম অর্জন
এর পরের সময়ে একে একে নোশিনের স্বপ্নের পাখায় যুক্ত হতে থাকে নতুন পালক। পরবর্তী খেতাব পেতেও তাঁকে বেগ পেতে হয় না। কিছুদিন পরেই, ২০১৯ সালে ঢাকায় অনুষ্ঠিত হয় ‘এশিয়ান জোনাল চেস চ্যাম্পিয়নশিপ, জোন ৩.

২’। টুর্নামেন্টটিতে রানারআপ হয়ে নোশিন অর্জন করেন ‘উইমেন ফিদে মাস্টার’ খেতাব। এখানেই শেষ নয়; রানারআপ হওয়ার পথে নোশিন হারিয়ে দেন বাংলাদেশের কিংবদন্তি দাবাড়ু উইমেন ইন্টারন্যাশনাল মাস্টার রানী হামিদকে। টুর্নামেন্টের শেষ দিকে আরেক উইমেন ফিদে মাস্টার শারমিন সুলতানা শিরিনের কাছে না হারলে চ্যাম্পিয়নই হয়ে যেতেন তিনি। টুর্নামেন্টটিতে উইমেন ফিদে মাস্টার খেতাবের পাশাপাশি ‘উইমেন ইন্টারন্যাশনাল মাস্টার’ খেতাবের একটা নর্মও অর্জন করেন নোশিন।
জাতীয় মহিলা দাবায় অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন
২০২২ সালে আসে ক্যারিয়ারের সবচেয়ে বড় সাফল্য। বাংলাদেশ দাবা ফেডারেশন কর্তৃক আয়োজিত ৪১তম জাতীয় নারী দাবা চ্যাম্পিয়নশিপে নোশিন অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হয়ে তাক লাগিয়ে দেন। প্রতিযোগিতায় ১১ খেলায় সাড়ে ৮ পয়েন্ট পেয়ে শিরোপা জিতে নেন। রানারআপ হন উইমেন 
ইন্টারন্যাশনাল মাস্টার রানী হামিদ। 
যেভাবে এলেন দাবায়
সেই এইটুকুন বয়সে দাবায় হাতেখড়ি নোশিনের। দাবায় মেয়ের পাগলামি দেখে নোশিনের মা আফরোজা ইসরাত জাহান ২০১৩ সালের শেষের দিকে ঢাকায় এসে একটি দাবা টুর্নামেন্টে খেলার সুযোগ করে দেন মেয়েকে। ২০১৪ সালের শুরুতে নোশিন ভিকারুননিসা নূন স্কুল ভর্তি হন চতুর্থ শ্রেণিতে। মূলত ওই বছরই আয়োজিত হয়েছিল বাংলাদেশ দাবা ফেডারেশনের ঠিক পাশের বিল্ডিংয়েই সেই টুর্নামেন্ট। তাতেই তাঁর প্রথম অংগ্রহণ। একই বছর ডিপিএস এসটিএস স্কুলে দাবা টুর্নামেন্টেও অংশ নিয়ে রানারআপ হন নোশিন। প্রথম টুর্নামেন্টে কোনো পুরস্কার না পেলেও দাবা ফেডারেশনে যাওয়ার রাস্তা খুলে যায় নোশিনের সামনে। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি, এগিয়ে চলছেন নোশিন। 
শৈশব ও দাবার বোর্ডের বাইরে…
একটু বড় হওয়ার পর একমনে দাবা খেললেও ছোটবেলায় কিন্তু নোশিন একদমই শান্ত ছিলেন না। দাবা খেলতে দরকার ধৈর্য, ঘণ্টার পর ঘণ্টা একই জায়গায় বসে থাকার মানসিকতা। ছোট কারও জন্য চুপ করে বসে থাকা বেশ কঠিনই। ছোটবেলায় দুরন্ত নোশিনের জন্য তো বসে থাকা ছিল অসম্ভবের মতো। নিজের শৈশবের কথা জানতে চাইলে নোশিন আনজুম বলেন, ‘নরসিংদী শহরেই আমার জন্ম ও বেড়ে ওঠা। ছোটবেলায় খুব চঞ্চল ছিলাম। জন্মের পর তৃতীয় শ্রেণিতে উঠেই চলে আসি ঢাকায়। চতুর্থ শ্রেণি থেকে শুরু দাবা ফেডারেশনে যাওয়া। তখন আসলে কিছুই বুঝতাম না। তারপর অনেক কষ্ট করে ধীরে ধীরে সামনে এগিয়েছি। ভিকারুননিসা নূন স্কুল থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করে এখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পুষ্টি ও খাদ্যবিজ্ঞান অনুষদে প্রথম বর্ষে পড়ছি। দিনের অনেকটা সময় দাবা নিয়েই থাকি। অবসর তেমন পাই না। তারপরও যতটুকু পাই, গান শুনি, বই পড়ি।’ 
আগামীর স্বপ্ন
তাঁর স্বপ্নের কথা জানতে চাইলে নোশিন বলেন, ‘বাংলাদেশে আজও কেউ নারী গ্র্যান্ডমাস্টার হতে পারেননি। সেই স্বপ্ন দেখি। এর জন্য দেশের বাইরে আরও বেশি বেশি খেলতে হবে। বাড়াতে হবে স্পন্সরশিপও। ২০২০ থেকে আমি বাংলাদেশ নৌবাহিনীর সঙ্গে যুক্ত। বেতন যা পাই, তার বড় একটা অংশ চলে যায় খেলার পেছনে। করোনার সময়ের আগে এলিগেন্ট ইন্টারন্যাশনাল দাবা একাডেমিতে গ্র্যান্ডমাস্টারদের কাছে 
ক্লাস করতাম। করোনার সময় সেই ক্লাস বন্ধ হয়ে যায়। 
আসলে বিদেশি কোচ প্রয়োজন খুব। সেই সঙ্গে বেশি বেশি টুর্নামেন্টও চাই। তবেই স্বপ্ন পূরণের পথে এগিয়ে যেতে পারব বলে আমার বিশ্বাস।’
সেই বিশ্বাস আমাদেরও, সেদিন বেশি দূরে নয়; যেদিন দেশের প্রথম নারী গ্র্যান্ডমাস্টারের খেতাব নামের সঙ্গে জড়িয়ে নিজের এবং মায়ের স্বপ্নেরও বাস্তবায়ন ঘটাবেন এই স্বপ্নবাজ! 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: র প রথম পর জ ত

এছাড়াও পড়ুন:

অফিসে আপনি কি ১১ ঘণ্টার বেশি কাজ করেন

প্ল্যান ওয়ান জার্নালে প্রকাশিত একটি গবেষণা নিয়ে চলছে আলোচনা। সেখানে দুই হাজার ফুলটাইম কর্মজীবীর ওপর একটা জরিপ পরিচালনা করা হয়। পেশাগত কাজ বা চাপের সঙ্গে মানসিক স্বাস্থ্যের সম্পর্ক নিয়ে পরিচালিত গবেষণাটি থেকে পাওয়া গেছে চমকপ্রদ তথ্য।

বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, যাঁরা কর্মক্ষেত্রে ১১ ঘণ্টা বা তার বেশি কাজ করেন, তাঁদের খাদ্যাভ্যাস তুলনামূলকভাবে অস্বাস্থ্যকর, তাঁরা অন্যদের তুলনায় মানসিক চাপে ভোগেন বেশি। ঠিকমতো পানি খাওয়ার প্রবণতা কম। পরিবার, প্রকৃতি ও পোষা প্রাণীর সঙ্গে সময় কাটানোর প্রবণতাও কম। কম ঘুমান। আর যেকোনো মানসিক আঘাত থেকে সেরে ওঠার পর্যাপ্ত সময় বা সুযোগ পান না। এই মানুষেরাই বেশি হতাশায় ভোগেন।

শুধু তা-ই নয়, দ্রুত বুড়িয়ে যাওয়া এবং হৃদ্‌রোগ ও স্ট্রোকের মতো কার্ডিওভাস্কুলার রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিও বেশি। যাঁরা ১১ ঘণ্টা বা তার বেশি সময় অফিস করেন, তাঁদের মধ্যে কর্মক্ষেত্রে অসুস্থ হয়ে যাওয়ার সংখ্যাও অনেক।

আরও পড়ুন২৫ বছর ধরে অফিসে যাননি তিনি১৩ মার্চ ২০২৫যদি ১১ ঘণ্টা কর্মক্ষেত্রে থাকতেই হয়, তাহলে যেসব বিষয় খেয়াল রাখবেন

রাতে ৮ ঘণ্টা ঘুমাতেই হবে। তাতে শরীর ও মস্তিষ্ক দিনের শারীরিক ও মানসিক পরিশ্রমের ধকল কাটিয়ে ওঠার সুযোগ পাবে।

কাজের ফাঁকে ফাঁকে বিরতি নিন। সবুজের দিকে তাকান। ডেস্কে গাছ রাখতে পারেন। উঠে একটু হাঁটুন। ব্যায়াম করুন। সহকর্মীর সঙ্গে চা খেতে খেতে গল্প করুন। গবেষণা জানাচ্ছে, ছোট ছোট বিরতি কাজে মনোযোগ পুনঃস্থাপন করতে সাহায্য করে এবং কাজের গুণমান বাড়ায়।

দুপুরে খাওয়ার পর একটা ন্যাপ নিতে পারেন।

২ লিটারের একটা বোতলে পানি রাখবেন। প্রতিদিন ১ বোতল পানি অবশ্যই শেষ করবেন। তা ছাড়া পানি, শরবত, জুস, ডাবের পানি, তরমুজ, শসা, আনারস ইত্যাদি খাবেন। হাইড্রেটেড থাকলে এনার্জি ধরে রেখে কাজ করা সহজ হয়।

প্রক্রিয়াজাত খাবার, কার্বোনেটেড ড্রিংক, চিনিযুক্ত খাবার বাদ দিন। এসব কেবল আপনার ক্লান্তি বাড়াবে।

আর সম্ভব হলে কর্মক্ষেত্রে কথা বলে আপনার কর্মঘণ্টা ৮ ঘণ্টায় নিয়ে আসতে পারলে তো কথাই নেই।

সূত্র: এনবিসি নিউজ

আরও পড়ুনঅফিসের বাড়তি কাজকে যেভাবে ‘না’ বলবেন১৩ মার্চ ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ