Samakal:
2025-09-18@02:32:07 GMT

আগামীর নারী গ্র্যান্ডমাস্টার

Published: 25th, January 2025 GMT

আগামীর নারী গ্র্যান্ডমাস্টার

নোশিন আনজুম। ফিদে ওয়ার্ল্ড র‍্যাপিড ও ব্লিটজ দাবা চ্যাম্পিয়নশিপ ২০২৪-এ অংশ নিয়ে সাফল্যের দেখা পান দেশের জাতীয় নারী চ্যাম্পিয়ন ও ফিদে মাস্টার নোশিন আনজুম। প্রতিযোগিতার ওপেন বিভাগে ৫৬ দেশের ১৮০ জন গ্র্যান্ডমাস্টার ও আন্তর্জাতিক মাস্টার এবং নারী বিভাগে ৩৫ দেশের ১১০ জন দাবাড়ু অংশ নেন। আন্তর্জাতিক এই প্রতিযোগিতায় নোশিনের সাফল্য ও দাবা নিয়ে তাঁর স্বপ্নের কথা শুনেছেন আশিক মুস্তাফা

গত ২৬ ডিসেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে অনুষ্ঠিত হয় ফিদে ওয়ার্ল্ড র‍্যাপিড ও ব্লিটজ দাবা চ্যাম্পিয়নশিপস। এই প্রতিযোগিতায় অংশ নেন বাংলাদেশের জাতীয় চ্যাম্পিয়ন আন্তর্জাতিক মাস্টার মনন রেজা নীড় এবং জাতীয় নারী চ্যাম্পিয়ন, নারী ফিদে মাস্টার নোশিন আনজুম। প্রতিযোগিতার ওপেন বিভাগে ৫৬ দেশের ১৩৪ জন গ্র্যান্ডমাস্টার ও ৩২ জন আন্তর্জাতিক মাস্টারসহ ১৮০ জন এবং নারী বিভাগে ৩৫ দেশের ২১ জন গ্র্যান্ডমাস্টার, ২৩ জন নারী গ্র্যান্ডমাস্টার, ৩৬ জন আন্তর্জাতিক মাস্টার ও ১০ জন নারী আন্তর্জাতিক মাস্টারসহ মোট ১১০ জন দাবাড়ু অংশ নেন। নোশিন নারী ওয়ার্ল্ড র‍্যাপিড দাবা চ্যাম্পিয়নশিপে ৯ খেলায় ৪ পয়েন্ট নিয়ে ১১০ জনের মধ্যে ১০০তম এবং ব্লিটজে ১০৫তম স্থান অর্জন করেন। দশম রাউন্ডে মোনাকোর নারী ক্যান্ডিডেট মাস্টার বেরেজোভস্কি ফিওরিনাকে পরাজিত করেন নোশিন। একাদশ রাউন্ডের খেলায় চীনের আন্তর্জাতিক মাস্টার লু মিয়ায়ির সঙ্গে ড্র করেন এবং কাজাখস্তানের নারী আন্তর্জাতিক মাস্টার সেরিকবে আসিলের কাছে হেরে যান। ওপেন বিভাগে রাশিয়ার গ্র্যান্ডমাস্টার মারজিন ভোলোদার ১৩ খেলায় ১০ পয়েন্ট পেয়ে চ্যাম্পিয়ন হন। নারী বিভাগে ভারতের গ্র্যান্ডমাস্টার কোনিরু হাম্পি চ্যাম্পিয়ন হন।
উইমেন ক্যান্ডিডেট মাস্টার খেতাব
২০১৮ সালের কথা। শ্রীলঙ্কায় অনুষ্ঠিত এশিয়ান স্কুল চেস চ্যাম্পিয়নশিপে নোশিন আনজুম নিজের প্রথম খেতাব অর্জন করেন। টুর্নামেন্টে সবাই মোটামুটি নিশ্চিত ছিল যে স্ট্যান্ডার্ডে অন্তত দ্বিতীয় স্থান, অর্থাৎ রৌপ্য পদক পাবেন নোশিন। সবাইকে অবাক করে দিয়ে শেষ ম্যাচে পরাজিত হয়ে ব্রোঞ্জ পেয়ে বসেন। নোশিনের চমক তখনও বাকি। সেদিনই ছিল ব্লিটজ সেকশনের খেলা। স্ট্যান্ডার্ডে হারার  কারণেই কিনা, ব্লিটজে প্রাণপণ লড়ে শেষ পর্যন্ত স্বর্ণপদক অর্জন করেন। একই প্রতিযোগিতায় ব্রোঞ্জ পেয়ে নিজের প্রথম খেতাব অর্জন করেন– ‘উইমেন ক্যান্ডিডেট মাস্টার’।
কিংবদন্তি দাবাড়ু রানী হামিদকে হারানো এবং ‘উইমেন ইন্টারন্যাশনাল মাস্টার’ নর্ম অর্জন
এর পরের সময়ে একে একে নোশিনের স্বপ্নের পাখায় যুক্ত হতে থাকে নতুন পালক। পরবর্তী খেতাব পেতেও তাঁকে বেগ পেতে হয় না। কিছুদিন পরেই, ২০১৯ সালে ঢাকায় অনুষ্ঠিত হয় ‘এশিয়ান জোনাল চেস চ্যাম্পিয়নশিপ, জোন ৩.

২’। টুর্নামেন্টটিতে রানারআপ হয়ে নোশিন অর্জন করেন ‘উইমেন ফিদে মাস্টার’ খেতাব। এখানেই শেষ নয়; রানারআপ হওয়ার পথে নোশিন হারিয়ে দেন বাংলাদেশের কিংবদন্তি দাবাড়ু উইমেন ইন্টারন্যাশনাল মাস্টার রানী হামিদকে। টুর্নামেন্টের শেষ দিকে আরেক উইমেন ফিদে মাস্টার শারমিন সুলতানা শিরিনের কাছে না হারলে চ্যাম্পিয়নই হয়ে যেতেন তিনি। টুর্নামেন্টটিতে উইমেন ফিদে মাস্টার খেতাবের পাশাপাশি ‘উইমেন ইন্টারন্যাশনাল মাস্টার’ খেতাবের একটা নর্মও অর্জন করেন নোশিন।
জাতীয় মহিলা দাবায় অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন
২০২২ সালে আসে ক্যারিয়ারের সবচেয়ে বড় সাফল্য। বাংলাদেশ দাবা ফেডারেশন কর্তৃক আয়োজিত ৪১তম জাতীয় নারী দাবা চ্যাম্পিয়নশিপে নোশিন অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হয়ে তাক লাগিয়ে দেন। প্রতিযোগিতায় ১১ খেলায় সাড়ে ৮ পয়েন্ট পেয়ে শিরোপা জিতে নেন। রানারআপ হন উইমেন 
ইন্টারন্যাশনাল মাস্টার রানী হামিদ। 
যেভাবে এলেন দাবায়
সেই এইটুকুন বয়সে দাবায় হাতেখড়ি নোশিনের। দাবায় মেয়ের পাগলামি দেখে নোশিনের মা আফরোজা ইসরাত জাহান ২০১৩ সালের শেষের দিকে ঢাকায় এসে একটি দাবা টুর্নামেন্টে খেলার সুযোগ করে দেন মেয়েকে। ২০১৪ সালের শুরুতে নোশিন ভিকারুননিসা নূন স্কুল ভর্তি হন চতুর্থ শ্রেণিতে। মূলত ওই বছরই আয়োজিত হয়েছিল বাংলাদেশ দাবা ফেডারেশনের ঠিক পাশের বিল্ডিংয়েই সেই টুর্নামেন্ট। তাতেই তাঁর প্রথম অংগ্রহণ। একই বছর ডিপিএস এসটিএস স্কুলে দাবা টুর্নামেন্টেও অংশ নিয়ে রানারআপ হন নোশিন। প্রথম টুর্নামেন্টে কোনো পুরস্কার না পেলেও দাবা ফেডারেশনে যাওয়ার রাস্তা খুলে যায় নোশিনের সামনে। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি, এগিয়ে চলছেন নোশিন। 
শৈশব ও দাবার বোর্ডের বাইরে…
একটু বড় হওয়ার পর একমনে দাবা খেললেও ছোটবেলায় কিন্তু নোশিন একদমই শান্ত ছিলেন না। দাবা খেলতে দরকার ধৈর্য, ঘণ্টার পর ঘণ্টা একই জায়গায় বসে থাকার মানসিকতা। ছোট কারও জন্য চুপ করে বসে থাকা বেশ কঠিনই। ছোটবেলায় দুরন্ত নোশিনের জন্য তো বসে থাকা ছিল অসম্ভবের মতো। নিজের শৈশবের কথা জানতে চাইলে নোশিন আনজুম বলেন, ‘নরসিংদী শহরেই আমার জন্ম ও বেড়ে ওঠা। ছোটবেলায় খুব চঞ্চল ছিলাম। জন্মের পর তৃতীয় শ্রেণিতে উঠেই চলে আসি ঢাকায়। চতুর্থ শ্রেণি থেকে শুরু দাবা ফেডারেশনে যাওয়া। তখন আসলে কিছুই বুঝতাম না। তারপর অনেক কষ্ট করে ধীরে ধীরে সামনে এগিয়েছি। ভিকারুননিসা নূন স্কুল থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করে এখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পুষ্টি ও খাদ্যবিজ্ঞান অনুষদে প্রথম বর্ষে পড়ছি। দিনের অনেকটা সময় দাবা নিয়েই থাকি। অবসর তেমন পাই না। তারপরও যতটুকু পাই, গান শুনি, বই পড়ি।’ 
আগামীর স্বপ্ন
তাঁর স্বপ্নের কথা জানতে চাইলে নোশিন বলেন, ‘বাংলাদেশে আজও কেউ নারী গ্র্যান্ডমাস্টার হতে পারেননি। সেই স্বপ্ন দেখি। এর জন্য দেশের বাইরে আরও বেশি বেশি খেলতে হবে। বাড়াতে হবে স্পন্সরশিপও। ২০২০ থেকে আমি বাংলাদেশ নৌবাহিনীর সঙ্গে যুক্ত। বেতন যা পাই, তার বড় একটা অংশ চলে যায় খেলার পেছনে। করোনার সময়ের আগে এলিগেন্ট ইন্টারন্যাশনাল দাবা একাডেমিতে গ্র্যান্ডমাস্টারদের কাছে 
ক্লাস করতাম। করোনার সময় সেই ক্লাস বন্ধ হয়ে যায়। 
আসলে বিদেশি কোচ প্রয়োজন খুব। সেই সঙ্গে বেশি বেশি টুর্নামেন্টও চাই। তবেই স্বপ্ন পূরণের পথে এগিয়ে যেতে পারব বলে আমার বিশ্বাস।’
সেই বিশ্বাস আমাদেরও, সেদিন বেশি দূরে নয়; যেদিন দেশের প্রথম নারী গ্র্যান্ডমাস্টারের খেতাব নামের সঙ্গে জড়িয়ে নিজের এবং মায়ের স্বপ্নেরও বাস্তবায়ন ঘটাবেন এই স্বপ্নবাজ! 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: র প রথম পর জ ত

এছাড়াও পড়ুন:

ঋণ নেওয়ার আগে যে ১০টি বিষয় অবশ্যই জানা উচিত

নানা কারণে আপনার ঋণ নেওয়ার প্রয়োজন হতে পারে। অনেক সময় মানুষ ব্যক্তিগত ঋণ, গৃহঋণ নেয়। আবার গাড়ি কেনার জন্যও অনেকে ঋণ নেন। ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমেও ঋণ নেওয়া হয়।

কিন্তু অনেকেই ঋণের সঙ্গে সম্পৃক্ত কিছু মৌলিক শব্দ সম্পর্কে জানেন না। ব্যাংকের কর্মকর্তারা যখন এসব শব্দ বলেন, তখন অনেক কিছুই বোঝেন না ঋণ নিতে ইচ্ছুক গ্রাহকেরা। ফলে নিয়মকানুন না জেনেই ঋণ নেন। এতে নানা অপ্রত্যাশিত ঝামেলা তৈরি হয়। তাই ঋণ নেওয়ার আগে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বোঝা খুব দরকার।

১. আসল টাকা (প্রিন্সিপাল)

আপনি যে পরিমাণ টাকা ঋণ নিচ্ছেন, সেটিই আসল। এর ওপরই সুদ ধরা হয়। কিস্তি পরিশোধের সঙ্গে আসল ধীরে ধীরে কমতে থাকে।

২. সুদের হার (ইন্টারেস্ট রেট)

ঋণ নেওয়ার আগে সবচেয়ে ভাবতে হয় সুদের হার নিয়ে। সুদের হার বেশি হলে খরচ বেড়ে যায়। ঋণের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো সুদের হার। এটি স্থিরও হতে পারে, আবার বাজারদরের ওপর নির্ভর করে বাড়তে-কমতেও পারে।

৩. মাসিক কিস্তি (ইএমআই)

ঋণের সুদ ও আসল পরিশোধ বাবদ প্রতি মাসে যে নির্দিষ্ট টাকা আপনাকে দিতে হবে। সেটি হলো ইএমআই বা ঋণের কিস্তি।

৪. ঋণের মেয়াদ

কত বছরের মধ্যে ঋণ শোধ করতে হবে, সেটিই হলো ঋণের মেয়াদ। মেয়াদ বেশি হলে কিস্তি ছোট হয়। কিন্তু মোট সুদের টাকা বেড়ে যায়। ছোট মেয়াদে কিস্তি বড় হয়। কিন্তু মোট সুদের টাকা কমে।

৫. অ্যানুয়াল পারসেন্টেজ রেট (এপিআর)

শুধু সুদ ও আসল নয়, বরং ঋণের সব খরচ (যেমন ফি, চার্জ) মিলিয়ে আসল ব্যয় কত হবে, তার হিসাব হলো অ্যানুয়াল পারসেন্টেজ রেট (এপিআর)। এটিই প্রকৃত খরচ বোঝায়।

৬. আগাম পরিশোধ (প্রিপেমেন্ট)

ঋণের বোঝা কমাতে অনেকে ঋণের সুদ ও আসলের টাকা আগেই শোধ করে দিতে চান। এতে সুদের খরচ কমে যায়।

৭. প্রসেসিং ফি

আপনি ঋণের জন্য কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানে আবেদন করলেন। কিন্তু ঋণ আবেদন মঞ্জুর থেকে শুরু করে ছাড় কার্যক্রম পরিচালনার জন্য কিছু মাশুল দিতে হয়। এটিই প্রসেসিং ফি। এটি কখনো ঋণের টাকা থেকে কেটে নেওয়া হয়, আবার কখনো আলাদা দিতে হয়।

৮. স্থগিতকাল (মোরাটোরিয়াম)

বিশেষ পরিস্থিতিতে কিছুদিনের জন্য কিস্তি বন্ধ রাখার সুযোগকেই বলে স্থগিতকাল। তবে এই সময়েও সুদ জমতে থাকে। অনেক সময় ঋণ পরিশোধের জন্য বিশেষ কিস্তি ভাগও করে দেওয়া হয়।

৯. জামানত (কোলেটারাল)

ঋণের নিরাপত্তা হিসেবে আপনার সম্পদ (যেমন বাড়ি, সোনা, জমি) ব্যাংকে বন্ধক রাখা হয়। কিস্তি না দিলে ব্যাংক ওই সম্পদ বিক্রি করে টাকা তুলে নেয়।

১০. লোন-টু-ভ্যালু রেশিও

আপনি যত টাকা ঋণ নিচ্ছেন আর জামানতের মূল্য কত—এই অনুপাতকে বলে লোন টু ভ্যালু রেশিও (এলটিভি)। এর অনুপাত যত কম হয়, ব্যাংকের ঝুঁকি তত কম।

সম্পর্কিত নিবন্ধ