বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থায় পুতুলের দায়িত্ব পালন দেশের জন্য মর্যাদাহানিকর: দুদক
Published: 26th, January 2025 GMT
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) সম্মানজনক পদে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের দায়িত্ব পালন দেশের জন্য মর্যাদাহানিকর বলে মন্তব্য করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
রোববার দুদকের উপ-পরিচালক ও জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. আকতারুল ইসলাম গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এ মন্তব্য করেন।
বিবৃতিতে তিনি জানান, রাষ্ট্রীয় সম্পদের অপব্যবহার এবং নিয়মবহির্ভূত কার্যকলাপের আশ্রয় নিয়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলকে ডব্লিউএইচওর আঞ্চলিক পরিচালক নিয়োগ দেওয়ার অভিযোগে বেশকিছু পদক্ষেপ নিয়েছে দুদক। দুর্নীতি দমন কমিশনের পাওয়া অভিযোগের ওপর পরিচালিত অনুসন্ধানে পাওয়া প্রাথমিক তথ্য থেকে জানা গেছে, সায়মা ওয়াজেদ পুতুলকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার আঞ্চলিক পরিচালক হিসেবে বাংলাদেশের মনোনয়নের ভিত্তিতে পদায়নের জন্য রাষ্ট্রীয় সম্পদের অপব্যবহার এবং নিয়মবহির্ভূত কার্যকলাপের আশ্রয় নেওয়া হয়েছে।
আকতারুল ইসলাম বলেন, বিভিন্ন সূত্র থেকে পাওয়া তথ্য পর্যালোচনায় দেখা গেছে- যুক্তিযুক্ত কোনও কারণ ছাড়াই সায়মা ওয়াজেদ পুতুলকে বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় সফরে সঙ্গী করা হয়। তাছাড়া, সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের ক্ষেত্রে প্রার্থীর যোগ্যতা হিসেবে প্রদত্ত তথ্যাদি যথাযথ ছিল না। ওই মনোনয়নকালে তিনি কানাডার পাসপোর্টধারী তথা কানাডার নাগরিক ছিলেন বলেও তথ্য পাওয়া গেছে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ৭৬তম সম্মেলন উপলক্ষ্যে ২০২৩ সালের ৩০ অক্টোবর থেকে ২ নভেম্বর পর্যন্ত দিল্লিতে বাংলাদেশ থেকে রাষ্ট্রীয় অর্থ অপচয় করে শতাধিক কর্মকর্তা ও প্রতিনিধি দল উপস্থিত হয়। এক্ষেত্রে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল নিজের পারিবারিক প্রভাব এবং তার নিকটাত্মীয়দের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার অপব্যবহার করে বাংলাদেশ সরকারের বিপুল অর্থ ক্ষতিসাধন করেছেন।
দুর্নীতি দমন কমিশনের পাওয়া ভিন্ন একটি অভিযোগের ওপর পরিচালিত অনুসন্ধানকালে জানা গেছে, সায়মা ওয়াজেদ পুতুল দুর্নীতির আশ্রয় নিয়ে এবং তার পরিবারিক রাজনৈতিক প্রভাবের অপব্যবহারের মাধ্যমে বেআইনিভাবে ঢাকার পূর্বাচল নতুন শহর আবাসিক প্রকল্পের ডিপ্লোমেটিক জোনে ১০ কাঠা প্লট করায়ত্ব করেন। সে কারণে তার ও অন্যদের বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে দুর্নীতি দমন কমিশন মামলা দায়ের করেছে।
এছাড়াও সায়মা ওয়াজেদ পুতুল ‘সূচনা ফাউন্ডেশন’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান খুলে বিভিন্ন সামাজিক ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান থেকে জোরপূর্বক উপঢৌকন আদায় এবং অর্থ আত্মসাৎ করেন। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য বিভাগের আওতায় অটিস্টিক সেলকে ব্যবহার করে ভুয়া প্রকল্প দেখিয়ে রাষ্ট্রের বিপুল অর্থ আত্মসাৎ করে নিজে লাভবান হয়েছেন। ওই অভিযোগ মতে, তিনি জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের ওপর অবৈধ প্রভাব বিস্তার করে বর্ণিত ফাউন্ডেশনের নামে পাওয়া অর্থ করমুক্ত করিয়ে নেন। যাতে সরকারের বিপুল অর্থের ক্ষতিসাধন হয়।
দুদক কর্মকর্তা আরও বলেন, সার্বিকভাবে দেখা গেছে- সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের বিরুদ্ধে দুর্নীতির বিশ্বাসযোগ্য অভিযোগ রয়েছে। এমন একজন ব্যক্তি বাংলাদেশের মনোনীত হয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার একটি সম্মানজনক পদে দায়িত্ব পালন করে যাওয়া দেশের জন্য মর্যাদাহানিকর। এতে বিশ্বে দেশের সুনাম ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: র অপব যবহ র ব যবহ র র জন য পর চ ল
এছাড়াও পড়ুন:
আদাবরে কুপিয়ে হত্যা: তিনজনকে গ্রেপ্তারের তথ্য দিল সেনাবাহিনী
রাজধানীর আদাবরে আধিপত্য বিস্তার ও মাদক ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে বিরোধে রিপন সরদার (৪২) খুনের ঘটনায় তিনজন গ্রেপ্তার হয়েছে বলে জানিয়েছে সেনাবাহিনী। গতকাল মঙ্গলবার রাত নয়টার দিকে অভিযান চালিয়ে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়।
সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়, রিপন হত্যার ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে ইমন ওরফে ভাইগ্না ইমন ওরফে দাঁতভাঙা ইমনকে তাঁর দুই সহযোগীসহ গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁদের কাছ থেকে দুটি সামুরাই উদ্ধার করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে ইমন হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন। তাঁদের সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।
সেনাবাহিনী জানায়, গতকাল ভোরের দিকে রাজধানীর আদাবর থানার বালুর মাঠ এলাকায় বাসায় ঢুকে রিপন নামের এক যুবককে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। কিশোর গ্যাং এই হত্যাকাণ্ড ঘটায় বলে অভিযোগ। পরে আহত অবস্থায় রিপনকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় সন্ধ্যা পৌনে ছয়টার দিকে তিনি মারা যান।
৪৬ স্বতন্ত্র পদাতিক ব্রিগেডের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, গতকাল সকালে বালুমাঠ এলাকায় একটি হত্যাকাণ্ডের খবর পাওয়া যায়। বিভিন্নভাবে তথ্য সংগ্রহ করে জানা যায় এলেক্স সবুজ, মনির ও ইমন এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত। পরে তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় অবস্থান নির্ণয় করে অভিযান চালিয়ে ইমন ও তাঁর দুই সহযোগীকে দুটি সামুরাইসহ গ্রেপ্তার করা হয়। অভিযান চালানোর কিছুক্ষণ আগে সবুজ ও মনির সেই জায়গা থেকে পালিয়ে যান। তাই তাঁদের গ্রেপ্তার করা যায়নি। বাকিদের গ্রেপ্তারে বিভিন্ন জায়গায় অভিযান অব্যাহত রয়েছে। গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।
এদিকে পুলিশ জানায়, মঙ্গলবার সকাল সাতটার দিকে আদাবরের ১০ নম্বরের বালুর মাঠ এলাকায় ‘বেলচা মনির’ ও ‘রাজু গ্রুপে’র মধ্যে এ মারামারি হয়। ‘বেলচা মনিরের’ লোকজন ‘রাজু গ্রুপের’ রিপনকে হাঁসুয়া দিয়ে কুপিয়ে আহত করে। সন্ধ্যা সাতটার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রিপন সরদারের মৃত্যু হয়।
আদাবর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস এম জাকারিয়া প্রথম আলোকে বলেন, স্থানীয় মাদক ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ ও বিরোধকে কেন্দ্র করে মারামারির ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় একজনের মৃত্যু হয়েছে। ঘটনাটির বিষয়ে বিস্তারিত তদন্ত চলছে।
আরও পড়ুনআদাবরে মাদক ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে মারামারিতে নিহত ১১৮ ঘণ্টা আগেতবে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রিপন সরদারের ছেলে ইমন সরদার গতকাল দাবি করেন, রিপন মাদক ব্যবসায়ী ছিলেন না। রিপন পেশায় চা–দোকানি। বেলচা মনিরের লোকজনের সঙ্গে দুই দিন আগে তাঁর বাবার কথা-কাটাকাটি হয়। এর জেরে তাঁর বাবাকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় তাঁর মা আরজু বেগমও আহত হয়েছেন। তাঁদের বাড়ি ভোলার বোরহানউদ্দিন উপজেলায়।
পুলিশের ভাষ্য, নিহত রিপন সরদার মাদক কারবারি রাজুর চাচাতো ভাই। ‘রাজু গ্রুপ’ ও ‘বেলচা মনিরের’ নেতৃত্বে আদাবরের ১০ ও ১৭ নম্বর এলাকায় মাদক ব্যবসা হয়। ওই বিরোধের জেরেই এই হত্যাকাণ্ড হয়েছে বলে প্রাথমিক অনুসন্ধানে জানা গেছে। নিহত রিপনের বিরুদ্ধে ভোলায় একাধিক মামলা থাকার তথ্য পাওয়া গেছে।