জেন জিদের হাত ধরে বড় হচ্ছে পুরোনো বিলাসী পণ্যের বৈশ্বিক বাজার
Published: 20th, October 2025 GMT
পুরোনো বিলাসী পণ্যের বৈশ্বিক বাজার দ্রুত বাড়ছে। তার সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে আরেকটি বিষয়—অথেনটিকেশন; অর্থাৎ পণ্য আসল না নকল, তা যাচাই করা। এই বিষয়ই এখন নির্ভরযোগ্য প্ল্যাটফর্মগুলোর সঙ্গে অন্যদের পার্থক্য গড়ে দিচ্ছে। এসব পণ্যের ক্রেতাদের বড় একটি অংশ জেন জি ও মিলেনিয়াল প্রজন্ম।
বস্টন কনসালটিং গ্রুপ (বিসিজি) ও বিলাসী পণ্য পুনর্বিক্রয় প্ল্যাটফর্ম ভেস্তিয়ার কালেকটিভের যৌথ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ফ্যাশন ও বিলাসী পণ্যের পুনর্বিক্রয় বাজার প্রতিবছর প্রায় ১০ শতাংশ হারে বাড়ছে—নতুন পণ্যের বাজারের চেয়ে তিন গুণ দ্রুত। প্রতিবেদনের হিসাবে, বর্তমানে প্রায় ২১০ বিলিয়ন বা ২১ হাজার কোটি ডলারের এই বৈশ্বিক বাজার ২০৩০ সালের মধ্যে ৩৬০ বিলিয়ন বা ৩৬ হাজার কোটি ডলারে পৌঁছাতে পারে।
২১০ বিলিয়ন বা ২১ হাজার কোটি ডলারের এই বৈশ্বিক বাজার ২০৩০ সালের মধ্যে ৩৬০ বিলিয়ন বা ৩৬ হাজার কোটি ডলারে পৌঁছাতে পারে।ব্যবহৃত বিলাসী পণ্য কেনাবেচার সঙ্গে সবচেয়ে বড় বিষয় হয়ে উঠছে বিশ্বাস। দক্ষিণ কোরিয়ার অনলাইন মার্কেটপ্লেস বুনজাংয়ের প্রধান নির্বাহী জে-হোয়া চোই বলেন, ‘নকল পণ্য তৈরির প্রযুক্তি এতটাই নিখুঁত হয়ে গেছে যে অনেক সময় বিলাসবহুল ব্র্যান্ডগুলো নিজেরাই আসল–নকল বুঝতে ভুল করে। এমনকি অনেকে অজান্তেই নকল পণ্য মেরামত করে দেয়।’
ইন্টারনেটে এমন বহু ঘটনার বিবরণ পাওয়া যায়—কেউ হাজার হাজার ডলার দিয়ে নকল হারমেস ব্যাগ বা যন্ত্রাংশ বদলানো রোলেক্স ঘড়ি কিনেছেন। অনেক নকল এতটাই নিখুঁত যে সেগুলোকে বলা হয় ‘সুপারফেকস’—আসল ব্র্যান্ড পণ্য সরবরাহকারীদের উপকরণই তাতে ব্যবহৃত হয়।
কিন্তু পুনর্বিক্রয়ের বাজার যত বাড়ছে, ততই সত্যতা যাচাইয়ের বিষয়টি চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠছে। দীর্ঘদিন ধরেই পুরোনো পণ্যের ব্যবসায় প্রচলিত কথা ‘ক্যাভিয়াট এম্পটর’, অর্থাৎ ‘ক্রেতা সাবধান’।
এই সুপারফেকস মোকাবিলায় এখন বিভিন্ন পুনর্বিক্রয় প্ল্যাটফর্ম যাচাইকরণে বিপুল বিনিয়োগ করছে। সিঙ্গাপুরভিত্তিক অনলাইন মার্কেটপ্লেস ক্যারোসেল এ বছর শহরের কেন্দ্রস্থলে বিলাসী পণ্যের প্রথম দোকান খুলেছে। এখানে বিক্রেতারা তাঁদের পণ্য কোম্পানির নির্ধারিত বিশেষজ্ঞদের মাধ্যমে যাচাই করিয়ে বিক্রির তালিকায় তুলতে পারেন।
ক্যারোসেল লাক্সারির বিক্রয় ও বিপণন পরিচালক ট্রেসর টান সিএনবিসিকে বলেন, ‘আমরা শুধু ব্যাগের উপকরণ নয়—সেলাই, ছাপ, স্ট্যাম্প—সব খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখি। এটাই তাঁদের সুনাম উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘এই আত্মবিশ্বাস থেকেই আমরা ক্রেতাদের আসল–নকল যাচাইয়ে অর্থ ফেরতের নিশ্চয়তা দিই।’
ক্যারোসেল প্রায় ৫০০ ধরনের পণ্যের তথ্যভান্ডার তৈরি করেছে। দামি পণ্যের ক্ষেত্রে একাধিক ধাপে পরীক্ষা হয়। কোনো পণ্যের সত্যতা নিয়ে সামান্য সন্দেহ থাকলে তা বিক্রির তালিকায় ওঠে না।
একইভাবে দক্ষিণ কোরিয়ার বুনজাং তৈরি করেছে নিজস্ব যাচাই ব্যবস্থা। তারা চোখের দেখা–নির্ভর প্রচলিত যাচাইয়ের সঙ্গে বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা যুক্ত করেছে। চোই জানান, তাঁদের এআই লাখ লাখ তথ্যের ভিত্তিতে প্রশিক্ষিত। নতুন জালিয়াতির কৌশলের সঙ্গে এটি খাপ খাইয়ে নিতে পারে। বুনজাং দাবি করছে, তাদের যাচাইয়ের নির্ভুলতা ৯৯ দশমিক ৯ শতাংশ।
বিশ্বাসই বিক্রির চালিকা শক্তি
বুনজাং ও ক্যারোসেল—দুই প্রতিষ্ঠানই বলছে, যাচাইয়ের এই ব্যবস্থার কল্যাণে ব্যবসায় গতি এসেছে। বুনজাংয়ের হিসাবে, বর্তমানে তাদের মোট বার্ষিক ১ দশমিক ১ বিলিয়ন বা ১১০ কোটি ডলারের লেনদেনের এক-চতুর্থাংশের বেশি আসে বিলাসী পণ্য থেকে। শুধু ২০২৫ সালের প্রথমার্ধেই বিলাসী পণ্যের লেনদেন ও মোট মূল্য ৩০ শতাংশ বেড়েছে।
ক্যারোসেলের টান নির্দিষ্ট সংখ্যা প্রকাশ না করলেও জানান, ‘বিলাসী পণ্যের প্রতি মানুষের আগ্রহ খুব বেশি, আমাদের প্রবৃদ্ধিও হচ্ছে দ্রুতগতিতে।’
২০১২ সালে অনলাইন প্ল্যাটফর্ম হিসেবে যাত্রা শুরু করা ক্যারোসেল এখন দোকান চালু করেছে। টান বলেন, ‘যখন কেউ প্ল্যাটফর্মে এক লাখ ডলারের ঘড়ি কেনাবেচা করছে, সেটা আমাদের নজরে আসে।’
যাচাইকরণের পাশাপাশি দোকানটি অর্থ ফেরতের নিশ্চয়তাও দেয়। টান বলেন, ‘আমাদের পণ্যের দাম হয়তো সব সময় সবচেয়ে কম নয়, কিন্তু আমরা ন্যায্যমূল্য দিতে চাই। কেউ যদি ২০০ ডলার কমে অন্য কোথাও পান, তবু তিনি ভাবেন—আমরা যে নিশ্চয়তা দিচ্ছি, সেটাই কি বেশি মূল্যবান নয়?’
বিলাসী পণ্যের নতুন প্রজন্ম
বিসিজির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ব্যবহৃত বিলাসী পণ্য কেনার সবচেয়ে বড় কারণ হলো সাশ্রয়ী মূল্য—৮০ শতাংশ উত্তরদাতা এ কথা বলেছেন।
শুধু টাকার সাশ্রয় নয়, অনেক ক্রেতা এখন বিরল বা বাজারে আর পাওয়া যায় না—এমন পুরোনো পণ্য খোঁজেন। ভেস্তিয়ার কালেকটিভের মার্কেটিং প্রধান সামান্থা ভার্ক বলেন, ‘গত কয়েক বছরের তুলনায় এই বিষয়গুলো এখন আরও শক্তিশালী। এখন ব্যবহৃত পণ্য কেনা ফ্যাশনের অংশ হয়ে গেছে।’
বুনজাংয়ের চোইয়ের ভাষায়, তরুণ ক্রেতারা—বিশেষ করে মিলেনিয়াল (জন্ম আনুমানিক ১৯৮১ থেকে ১৯৯৬ সালের মধ্যে) ও জেন–জি (জন্ম আনুমানিক ১৯৯৭ থেকে ২০১২ সালের মধ্যে) প্রজন্ম—সীমিত বাজেটে বিলাসী পণ্য কিনে ব্যবহার করেন, তারপর দ্রুত বিক্রি করে দেন।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: প ল য টফর ম ব যবহ ত ব যবস
এছাড়াও পড়ুন:
সিলেট নগরে দখলমুক্ত সাত ফুটপাত
সিলেট নগরের গুরুত্বপূর্ণ সাতটি এলাকার ফুটপাত ও প্রধান সড়কের একাংশ হকারদের দখলে ছিল। প্রতিদিনই হাজারো হকার বিভিন্ন পণ্যের পসরা সাজিয়ে বসতেন। এতে যানজট হতো, পথচারীরাও নির্বিঘ্নে চলাচল করতে পারতেন না। অবশেষে প্রশাসনের তৎপরতায় ভোগান্তির অবসান হয়েছে। জেলা প্রশাসন, পুলিশ ও সিটি করপোরেশনের তৎপরতায় ফুটপাতগুলো দখলমুক্ত করা হয়েছে।
স্থানীয় প্রশাসন জানিয়েছে, গত ১৩ সেপ্টেম্বর জেলা প্রশাসন, পুলিশ ও সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ হকার উচ্ছেদে অভিযান শুরু করে। সে সময় নগরের লালদিঘির পাড় এলাকায় হকারদের জন্য আগে থেকে নির্ধারিত স্থানটি আবার সংস্কারের পর ব্যবসার উপযোগী করে পুনর্বাসনের যাবতীয় উদ্যোগ নেওয়া হয়।
সিটি করপোরেশন জানিয়েছে, হকার পুনর্বাসন প্রক্রিয়ার যাবতীয় প্রস্তুতি এরই মধ্যে শেষ করেছে সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ। এরপর হকারদের ফুটপাত ছেড়ে ওই নির্দিষ্ট স্থানে চলে যাওয়ার আহ্বান জানানো হয়। আহ্বানে সাড়া দিয়ে অনেকে সেখানে চলে গেছেন। যাঁরা যাননি, তাঁদের উচ্ছেদে গতকাল রোববার বেলা আড়াইটা থেকে অভিযান শুরু হয়। এ অবস্থায় কোনো হকারকেই ফুটপাতে বসতে দেওয়া হয়নি। আজ সোমবারও পুলিশের তৎপরতার কারণে কোনো হকার ফুটপাতে বসেননি।
সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (গণমাধ্যম) মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম জানান, নগরের কিনব্রিজ, সুরমা পয়েন্ট, তালতলা, বন্দরবাজার, জিন্দাবাজার, মহাজনপট্টি ও চৌহাট্টা এলাকায় সাতজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে পুলিশের কয়েক শ সদস্য গতকাল রোববার অভিযানে নামেন। আজ সোমবারও পুলিশের তৎপরতা আছে। এখন থেকে যাঁরাই ফুটপাত দখল করবেন, তাঁদের বিরুদ্ধেই আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আজ দুপুরে সরেজমিন দেখা গেছে, গতকালের অভিযানসংশ্লিষ্ট স্থানগুলোয় হকার নেই। পথচারীরা ফুটপাত দিয়ে নির্বিঘ্নে যাতায়াত করছেন। দোকানমালিকদেরও তাঁদের সামনের ফুটপাতের অংশ দখল করে পণ্য রাখতে বাধা দেয় পুলিশ। গতকালের মতো আজও যানজট ছিল সহনীয় পর্যায়ে। তবে পর্যায়ক্রমে অন্যান্য এলাকাও হকারমুক্ত করার দাবি জানান নগরের বাসিন্দারা।
গতকাল বিকেলে বন্দরবাজার এলাকার পথচারী মমতাজুর রহমান বলেন, এখন ফুটপাত ও সড়কের একাংশ হকারমুক্ত থাকায় ভোগান্তি ও যানজট কমেছে। তবে আগে কালেক্টরেট মসজিদের সামনের সড়কের আশপাশের যে অংশে হকারেরা বসতেন, এখন তা দখলমুক্ত হওয়ায় সিএনজি, অটোরিকশা ও লেগুনা দাঁড় করিয়ে যাত্রী ওঠানামা চলছে। এটাও রোধ করতে হবে। তবেই ভোগান্তি পরিপূর্ণভাবে নিরসন হবে।
সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ রেজাই রাফিন সরকার বলেন, অন্তত আড়াই হাজার হকার পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। কোনো হকারকে ফুটপাত কিংবা রাস্তায় ব্যবসা করতে দেখলেই কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আর অস্থায়ী স্ট্যান্ডগুলোতে কতটি সিএনজি, অটোরিকশা ও লেগুনা একসঙ্গে যাত্রী পরিবহন করতে পারবে, সেটা ট্রাফিক পুলিশ নির্ধারণ করে দিয়েছে। এর বেশি সড়কে থাকলেই সংশ্লিষ্ট চালকদের বিরুদ্ধে পুলিশ ব্যবস্থা নেবে।
সিলেটের জেলা প্রশাসক মো. সারওয়ার আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘শহরটা আমাদের সবার। এই শহর যদি সুশৃঙ্খল থাকে, তাহলে এর সুফল আমরা সবাই পাব। শহরের ফুটপাত দখল করা হকারদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা হয়েছে। তাই কোনো ধরনের অজুহাত আর মানা হবে না। নগরের ফুটপাত ও রাস্তাঘাট এখন থেকে হকারমুক্ত থাকবে। এ জন্য প্রশাসনের জিরো টলারেন্স থাকবে।’