মস্কোতে বাংলাদেশ-রাশিয়া কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫৩ বছর উদযাপন
Published: 26th, January 2025 GMT
আলোচনা অনুষ্ঠান ও এক অনাড়ম্বর সাংস্কৃতিক আয়োজনের মধ্য দিয়ে মস্কোতে উদযাপন করা হয়েছে বাংলাদেশ-রাশিয়া কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫৩ বছর। শুক্রবার সন্ধ্যায় মস্কোর ঐতিহ্যবাহী ‘গোস্টনি দিভর’ হলে এই জমকালো আয়োজন করা হয়।
আয়োজক রাশিয়ান ফ্রেন্ডশিপ সোসাইটি উইথ বাংলাদেশ ও রাশিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ফর ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন।
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ-রাশিয়া দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে দৃঢ় করা, বাণিজ্যিক সম্পর্ক উন্নয়ন, সাংস্কৃতিক বিনিময়, দুই দেশের পাবলিক ডিপ্লোমেসি এবং রাশিয়াকে বাংলাদেশের উন্নয়ন অংশীদার করার প্রত্যয় নিয়ে কাজ করার উপর গুরুত্বারোপ করা হয়।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন রাশিয়ার ডেপুটি ফরেন মিনিষ্ট্রার আন্দ্রে ইউরিভিচ রুডেনকো, আন্তর্জাতিক বিষয়ক রাশিয়ান ফেডারেশনের ফেডারেল অ্যাসেম্বলির স্টেট ডুমা কমিটির প্রথম ডেপুটি চেয়ারম্যান এবং বাংলাদেশের সঙ্গে সংসদীয় বন্ধুত্ব গ্রুপের চেয়ারম্যান ঝুরোভা স্বেতলানা সের্গিয়েভনা, রাশিয়ান ফ্রেন্ডশিপ সোসাইটি উইথ বাংলাদেশের সভাপতি মিয়া সাত্তার, রাশিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ফর ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশনের মহাসচিব ভ্লাদিমির মিখাইলোভিচ পোলোজকভ। ভিডিও বার্তায় বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশে নিযুক্ত রাশিয়ার নতুন রাষ্ট্রদূত আলেকজান্ডার জি খোজিন।
অনুষ্ঠানে বক্তারা দুই দেশের মধ্যকার দীর্ঘদিনের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের কথা উল্লেখ করে রাশিয়াকে বাংলাদেশের ‘সব মৌসুমের বন্ধু’ হিসেবে আখ্যায়িত করেন। বৈরী পরিস্থিতিতেও রাশিয়া যেমন বাংলাদেশের পাশে থাকে, তেমনি অনুকূল সময়েও থাকে। আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধের দিন থেকেই বাংলাদেশ ও রাশিয়ার মধ্যে অত্যন্ত সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে। রাশিয়া, তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন আমাদের মুক্তিযুদ্ধকে শুধু সমর্থনই করেনি, আমাদের যুদ্ধ-বিধ্বস্থ দেশের পুনর্গঠনেও যোগ দিয়েছে। তাদের নৌবাহিনী চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরের মাইন অপসারণ করে আমাদের সমুদ্র বাণিজ্য আবার খুলে দিয়েছে। স্বাধীনতার পরপরই বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেওয়া প্রথম কয়েকটি দেশের মধ্যে সোভিয়েত ইউনিয়ন ছিল।
রাশিয়ান ফ্রেন্ডশিপ সোসাইটি উইথ বাংলাদেশের সভাপতি মিয়া সাত্তার বলেন, রাশিয়া-বাংলাদেশ সম্পর্ক জোরদার করতে সেতুবন্ধনের ভূমিকা পালন করছে আমাদের সংগঠন। দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক বৃদ্ধি, রাশিয়ায় বাংলাদেশি পণ্যের বাজার তৈরিসহ বন্ধুপ্রতীম দেশ দুটির মধ্যে সম্পর্ক আরও দৃঢ় করতে নিরলসভাবে কাজ করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন তিনি।
অনুষ্ঠানে রাশিয়ান পার্লামেন্ট ডুমার আন্তর্জাতিক বিষয়ক কমিটির প্রথম ডেপুটি চেয়ারম্যান, রুশ পার্লামেন্ট মেম্বার, বাংলাদেশ থেকে সদ্য বিদায়ী রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত রাষ্ট্রদূত আলেক্সান্ডার মান্টিটস্কি, রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি এবং গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত প্রতিরোধ চলবে: হামাস
স্বাধীন ও সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়ার প্রতিরোধ চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে হামাস। গত মঙ্গলবার জাতিসংঘের সদর দপ্তর থেকে দেওয়া এক ঘোষণাপত্রের অস্ত্র ত্যাগের আহ্বানের জবাবে সংগঠনটি এই প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।
বৃহস্পতিবার হামাসের সংক্ষিপ্ত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, দখলদারির অবসান এবং জেরুজালেমকে রাজধানী করে একটি স্বাধীন ও সম্পূর্ণ সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত প্রতিরোধ থামবে না তারা।
মঙ্গলবার জাতিসংঘের সদর দপ্তর থেকে দেওয়া ঘোষণায় বলা হয়েছিল, ‘গাজায় যুদ্ধ বন্ধে হামাসকে (এই উপত্যকায়) তার শাসনের অবশ্যই অবসান ঘটাতে হবে এবং আন্তর্জাতিক অংশগ্রহণ ও সমর্থনের মাধ্যমে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের কাছে অস্ত্র সমর্পণ করতে হবে। সার্বভৌম ও স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যের সঙ্গে এটি সংগতিপূর্ণ।’
সৌদি আরব, কাতার, ফ্রান্স ও মিসরসহ ১৭টি দেশ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও আরব লিগ ঘোষণাপত্রটি সমর্থন করেছে। এটি ‘দ্য নিউইয়র্ক’ ঘোষণাপত্র হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।
বৃহস্পতিবার আলাদা এক বিবৃতিতে প্রতি শুক্রবার, শনিবার ও রোববার বিশ্বব্যাপী যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েল ও তাদের মিত্র দেশগুলোর দূতাবাসের বাইরে বিক্ষোভ করার আহ্বান জানিয়েছে হামাস। ইসরায়েলের আগ্রাসন বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত তা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানিয়েছে তারা।
অনাহারে মৃত্যু ১৫৪গাজায় কর্মরত চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, উপত্যকাটিতে অনাহারে আরও দুই শিশু এবং এক তরুণ মারা গেছে। এ নিয়ে সেখানে অনাহারে মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ১৫৪ জনে। তাদের মধ্যে শিশু ৮৯টি।
গাজায় প্রায় ২১ লাখ মানুষের বসবাস। উপত্যকাটিতে গত মার্চ থেকে নতুন করে অবরোধ শুরু করে ইসরায়েল। ফলে সেখানে ত্রাণবাহী কোনো ট্রাক প্রবেশ করতে পারছিল না। আন্তর্জাতিক চাপের মুখে সম্প্রতি কিছুদিন ধরে গাজায় সীমিত পরিমাণে ত্রাণ প্রবেশ করতে দিচ্ছে ইসরায়েল। এই ত্রাণ প্রয়োজনের তুলনায় অত্যন্ত নগণ্য।
ত্রাণ নিতে প্রাণহানি ১৩৭৩জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় জানিয়েছে, গাজায় গত মে মাস থেকে এখন পর্যন্ত ত্রাণ আনতে গিয়ে মোট ১ হাজার ৩৭৩ জন প্রাণ হারিয়েছেন। এর মধ্যে ৮৫৯ জন মারা গেছেন বিতর্কিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশনের (জিএইচএফ) ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রে। গত মে মাসের শেষ থেকে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংস্থাটি ইসরায়েলি সেনাদের সহায়তায় গাজার কয়েকটি স্থানে ত্রাণ দিচ্ছে।
বাকি ৫১৪ জন মারা গেছেন ত্রাণবাহী ট্রাকের আশপাশে। তাঁরা ত্রাণের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। অধিকাংশই ইসরায়েলের সেনাদের গুলিতে নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয়।
আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শুক্রবার সকালে গাজায় অন্তত আরও ৪২ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ত্রাণ আনতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন ১৫ জন। এই নিয়ে প্রায় ২২ মাসের সংঘাতে গাজায় ইসরায়েলি সেনাদের হামলা নিহত হয়েছেন অন্তত ৬০ হাজার ৩৩২ জন।
গাজায় স্টিভ উইটকফশুক্রবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ গাজা সফর করেছেন। তিনি উপত্যকাটির রাফা এলাকায় জিএইচএফের একটি ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রও ঘুরে দেখেন। এ সময় ইসরায়েলে নিয়োজিত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মাইক হুকাবি তাঁর সঙ্গে ছিলেন। তাঁরা পাঁচ ঘণ্টার বেশি গাজায় ছিলেন।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে উইটকফ নিজেই এই কথা জানিয়েছেন। আগের দিন তিনি ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। উইটকফ বলেছেন, ‘মাঠের পরিস্থিতি বুঝতে ও তথ্য সংগ্রহ করতে আমরা গাজায় গিয়েছিলাম। গাজার মানবিক পরিস্থিতির একটি স্পষ্ট ধারণা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কাছে পৌঁছে দেওয়াই আমার উদ্দেশ্য, যাতে করে গাজাবাসীর জন্য খাদ্য ও চিকিৎসা সহায়তা পৌঁছাতে পরিকল্পনা প্রণয়নে সহায়তা করা যায়।’
গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য-বিষয়ক বিশেষ দূত ও আবাসন খাতের সাবেক আইনজীবী উইটকফের আন্তর্জাতিক নীতি ও মানবিক সহায়তা-সংক্রান্ত কোনো অভিজ্ঞতা নেই। তা সত্ত্বেও তিনি মধ্যপ্রাচ্যের সংকট সমাধানের চেষ্টার পাশাপাশি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধেও কূটনীতি চালাচ্ছেন। এরই মধ্যে তিনি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক করেছেন।