ক্যারিয়ারের দারুণ সময় পার করছেন দক্ষিণী অভিনেত্রী রাশমিকা মান্দানা। গেলো বছর ‘অ্যানিম্যাল’ ও ‘পুষ্পা টু’-এর মতো পরপর ব্লকবাস্টার দুই সিনেমা উপহার দিয়ে তার বৃহস্পতি এখন তুঙ্গে। দক্ষিণি এই অভিনেত্রী এখন ব্যস্ত সালমান খানের আগামী সিনেমা ‘সিকান্দার’-এর কাজ নিয়ে।

এ সিনেমার মাধ্যমে প্রথমবারের মতো জুটি হয়েছেন বলিউডের ভাইজানের সঙ্গে। এবার জানা গেলো, সিকান্দারের শুটিং শেষ না হতেই এ জুটির নতুন সিনেমার খবর।

ভারতীয় একাধিক সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, ‘জাওয়ান’খ্যাত নির্মাতা অ্যাটলি কুমারের পরবর্তী সিনেমায় সালমানের সঙ্গে থাকবেন রাশমিকা। যদিও বিষয়টি নিয়ে এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো কিছু বলেননি সালমান এবং রাশমিকা।

ভারতীয় গণমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ‘সিকান্দার’ সিনেমার সেটে সালমান ও রাশমিকার দারুণ রসায়ন তৈরি হয়েছে। শুটিং শুরুর পর থেকেই সালমানের প্রশংসায় মেতেছেন রাশমিকা। জানিয়েছেন, সেটে সালমান খান তাঁর খেয়াল রাখেন। বলিউড ভাইজানকে মাটির মানুষ বলে উল্লেখ করেছেন নায়িকা।

রাশমিকা বলেন, ‘শুটিংয়ের সময়ে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলাম; যে মুহূর্তে তিনি এটি জানতে পারলেন, নিয়মিত আমার খোঁজ করতেন। কলাকুশলীদের বলতেন, আমাকে যেন পুষ্টিকর খাবার, গরম পানি দেওয়া হয়।’ ফলে সালমান ও রাশমিকার এ রসায়ন কাজে লাগাতে চান অ্যাটলি। 

এ ছাড়া পুষ্পা টু সিনেমায় রাশমিকার অভিনয় সালমান ও অ্যাটলিকে মুগ্ধ করেছে। তাই নির্মাতা সালমানের বিপরীতে রাশমিকাকেই বেছে নিয়েছেন। ইতোমধ্যে রাশমিকার সঙ্গে চুক্তিও সম্পন্ন হয়েছে বলে দাবি করছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলো। 

তবে এ বিষয়ে এখনও কোনো মন্তব্য করেননি নির্মাতা অ্যাটলি। নাম চূড়ান্ত না হওয়া অ্যাটলির এ সিনেমায় আরও আছেন রজনীকান্ত ও কমল হাসানের মতো বর্ষীয়ান তারকারা। চলতি বছরেই সিনেমার শুটিং শুরু হওয়ার কথা রয়েছে।

এদিকে সিকান্দারের শুটিংয়ের সময় জিম করতে গিয়ে পায়ে ব্যথা পান রাশমিকা। সেই ব্যথা পা নিয়েই ছুটে বেড়াচ্ছেন মুক্তিপ্রতীক্ষিত ‘ছাভা’ সিনেমার প্রমোশনে। লক্ষ্মণ উতেকর পরিচালিত ছাভা তৈরি হয়েছে মারাঠি সাম্রাজ্যের গল্প নিয়ে। এতে শিবাজি মহারাজের চরিত্রে অভিনয় করছেন ভিকি কৌশল। রাশমিকা করেছেন রানী যশুবাইয়ের চরিত্র। আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পাবে সিনেমাটি।

.

উৎস: Samakal

এছাড়াও পড়ুন:

মে দিবস ২০২৫ : শ্রমিক-মালিক ঐক্যে গড়বে নতুন বাংলাদেশ

১৮৮৬ সালের ১ মেÑএকটি দিন, একটি দাবি, আর হাজারো শ্রমিকের আত্মত্যাগের মাধ্যমে ইতিহাসে রক্তাক্ত দাগ কেটে দিয়েছিল যে মুহূর্ত, তা আজ বিশ্বব্যাপী ‘মে দিবস’ হিসেবে পালিত হয়। তখনকার দাবিটি ছিল স্রেফ ৮ ঘণ্টা শ্রমের অধিকার। কিন্তু আজ ২০২৫ সালে দাঁড়িয়ে শ্রমিকের দাবি শুধু সময়
নয়Ñমর্যাদা, সুরক্ষা ও ন্যায্যতার প্রশ্নও।

এবারের মে দিবসের প্রতিপাদ্য “শ্রমিক-মালিক এক হয়ে, গড়বো এদেশ নতুন করে”Ñএ যেন সময়ের এক গুরুত্বপূর্ণ পাঠ। উন্নয়নশীল বাংলাদেশের বাস্তবতায় এই বার্তা কেবল প্রাসঙ্গিক নয়, বরং তা রাষ্ট্র, প্রতিষ্ঠান ও সমাজের জন্য এক যৌথ দিকনির্দেশনা।

বাংলাদেশের শ্রমচিত্র ও বাস্তবতা

বাংলাদেশের অর্থনীতি মূলত শ্রমনির্ভর। তৈরি পোশাক শিল্পে প্রায় ৪০ লাখ, কৃষি ও নির্মাণ খাতে আরও কয়েক কোটি মানুষ নিয়োজিত। পরিসংখ্যান বলছে, দেশের মোট রপ্তানি আয়ের ৮০ শতাংশের বেশি আসে শ্রমনির্ভর খাত থেকে। কিন্তু যাঁরা এই অর্থনীতির ইঞ্জিন হিসেবে কাজ করছেন, সেই শ্রমিকরা কি পেয়েছেন তাদের প্রাপ্য অধিকার ও মর্যাদা?

দুঃখজনক হলেও সত্য, এখনও বহু শ্রমিক পান না ন্যূনতম মজুরি, কর্মস্থলে নিরাপত্তা, স্বাস্থ্য সেবা কিংবা ছুটি সংক্রান্ত মৌলিক সুবিধা। নারী শ্রমিকদের পরিস্থিতি আরও জটিলÑযত্রতত্র হয়রানি, মাতৃত্বকালীন সুবিধার অভাব, কিংবা নারীবান্ধব কর্মপরিবেশ গড়ে না তোলার ফলে এই খাতেও স্থিতিশীলতা আসছে না।

মালিক-শ্রমিক সম্পর্ক: দ্বন্দ্ব নয়, দরকার সহমর্মিতা

এক সময় শ্রমিক-মালিক সম্পর্ক মানেই ছিল দ্বন্দ্ব, ধর্মঘট ও হুমকি। তবে বর্তমান বৈশ্বিক বাস্তবতা বলছেÑসহযোগিতাই টেকসই উৎপাদনের চাবিকাঠি। মালিকপক্ষ যখন শ্রমিককে কেবল “ব্যয়” হিসেবে না দেখে “সম্পদ” হিসেবে  বিবেচনা করেন, তখন প্রতিষ্ঠান লাভবান হয়। একইভাবে শ্রমিকও যদি বুঝেন প্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন মানে তার কর্মস্থলের স্থায়িত্বÑতাহলে দুপক্ষের মধ্যে বিশ্বাসের
ভিত্তি গড়ে ওঠে।

এই বিশ্বাস গঠনের জন্য প্রয়োজন তিনটি স্তম্ভ: 

নীতিগত স্বচ্ছতা Ñ ন্যায্য মজুরি, নির্ধারিত কর্মঘণ্টা ও চুক্তিভিত্তিক নিরাপত্তা দায়িত্বশীল মালিকপক্ষ Ñ কর্মপরিবেশ, স্বাস্থ্যসেবা ও প্রশিক্ষণ নিশ্চিতে উদ্যোগ সচেতন শ্রমিকশ্রেণি Ñ অধিকার আদায়ের পাশাপাশি কর্তব্য পালনের মানসিকতা

নীতি ও রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ

বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬ ও সংশোধিত ২০১৮ সংস্করণ অনুযায়ী শ্রমিকের অধিকার স্বীকৃত হলেও বাস্তবায়নের জায়গায় ঘাটতি রয়েছে। বিশেষ করে  অনানুষ্ঠানিক খাতে (যেমন কৃষি, গৃহপরিচারিকা, গিগ-ওয়ার্কার) শ্রমিকদের অধিকারের বিষয়টি এখনও প্রায় উপেক্ষিত।

এছাড়া, কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা, দুর্ঘটনা বীমা, এবং পুনঃপ্রশিক্ষণের ব্যবস্থাপনা আরও জোরদার হওয়া জরুরি। সরকার শ্রমিক কল্যাণ তহবিল গঠন করলেও তা অধিকতর স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার আওতায় আনতে হবে।

এই প্রেক্ষাপটে ‘শ্রমিক-মালিক এক হয়ে’ দেশ গড়ার বার্তাটি যেন শুধুই স্লোগানে সীমাবদ্ধ না থাকে। বরং এটি হোক রাজনৈতিক সদিচ্ছা, আর্থিক বিনিয়োগ ও মানবিক বিবেচনার এক বাস্তব প্ল্যাটফর্ম।
প্রযুক্তির চ্যালেঞ্জ ও নতুন শ্রম বাস্তবতা

চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের প্রেক্ষাপটে শ্রমবাজার দ্রুত বদলে যাচ্ছে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, অটোমেশন ও গিগ-ইকোনমি অনেক চাকরি বিলুপ্ত করছে, আবার নতুন দক্ষতা চাচ্ছে। বাংলাদেশ যদি সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে চায়, তাহলে  শ্রমিকদের প্রশিক্ষণ, পুনঃস্কিলিং এবং ডিজিটাল অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করতে হবে।

এখানে মালিক ও রাষ্ট্র উভয়ের উচিত হবে, শ্রমিককে প্রতিযোগিতায় টিকিয়ে রাখতে বিনিয়োগ করা, কারণ দক্ষ শ্রমিক ছাড়া কোনো শিল্পই টিকে থাকে না।

মে দিবস: উৎসব নয়, দায়বদ্ধতার প্রতীক

মে দিবস কেবল লাল পতাকা হাতে শোভাযাত্রার দিন নয়, এটি আমাদের মানবিক চেতনার প্রতিফলন। যে শ্রমিক ঘাম ঝরিয়ে ভবন গড়ে, কৃষি জমি চষে, রপ্তানি পণ্য তৈরি করেÑতার জন্য আমাদের উচিত মর্যাদাপূর্ণ জীবন নিশ্চিত করা।

এবছর, আসুন আমরা সবাই রাষ্ট্র, মালিকপক্ষ ও শ্রমিকÑএকটি মানবিক, উৎপাদনশীল ও  শীদারিত্বভিত্তিক সমাজ গঠনের পথে এগিয়ে যাই। শ্রমিকের হাতে গড়া এই বাংলাদেশ হোক তার জন্যই গর্বের জায়গা। 


লেখক পরিচিতি:

মীযানুর রহমান
সাংবাদিক ও সমাজ বিশ্লেষক
মোবাইলঃ ০১৭৫৪১০৯০৭২
যোগাযোগ: : [email protected]

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • র‍্যাংকিংয়ে মিরাজ-জাকেরদের অগ্রগতি
  • চিনি-লবণের অনুপম পাঠ
  • মে দিবস ২০২৫ : শ্রমিক-মালিক ঐক্যে গড়বে নতুন বাংলাদেশ
  • বিদ্যালয়ের ১৮টি গাছ বিক্রি করলেন প্রধান শিক্ষক 
  • কর্ণাটকে ক্রিকেট খেলার সময় বচসা, যুবককে পিটিয়ে হত্যা
  • দেশে আন্তর্জাতিক পেমেন্ট গেটওয়ে চালুর দাবি 
  • রাখাইন রাজ্যে ‘মানবিক করিডোর’ বিষয়ে ব্যাখ্যা দিলেন প্রেস সচিব
  • কানাডায় আবারও লিবারেল পার্টির সরকার গঠনের আভাস