চট্টগ্রাম নগরীর কোতোয়ালী থানার হত্যা চেষ্টা মামলায় চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগ নেতা ফখরুল আনোয়ার চৌধুরীকে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত। আজ রোববার চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আবু বক্করের আদালত এই আদেশ দেন।

ছেলের বিয়েতে গতকাল শনিবার রাতে তাকে অবরুদ্ধ করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কয়েক শ’ নেতাকর্মী। পরে নগরীর খুলশী থানা পুলিশ এসে তাকে আটক করে নিয়ে যায়। পরে কোতোয়ালী থানার মামলায় আজ রোববার তাকে আদালতে পাঠায় পুলিশ।

ফখরুল ফটিকছড়ি আসনের সাবেক সংসদ সদস্য রফিকুল আনোয়ার চৌধুরী ওরফে সোনা রফিকের ভাই এবং ফটিকছড়ির সাবেক সংসদ সদস্য খাদিজাতুল আনোয়ার সনির চাচা।

চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার মফিজ উদ্দিন বলেন, কোতোয়ালী থানার মামলায় ফখরুল আনোয়ারকে আদালতে তোলা হলে বিচারক তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

চট্টগ্রাম নগরীর টাইগারপাস এলাকায় নৌ বাহিনীর মালিকানাধীন অভিজাত নেভি কনভেনশন সেন্টারে ফখরুল আনোয়ার চৌধুরীর ছেলে সৈয়দ মিনহাজুল আনোয়ারের সঙ্গে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র মোহাম্মদ মনজুর আলমের নাতনি সৈয়দা মাহবুবা হোসনে আরা মনজুরের বিবাহোত্তর সংবর্ধনার আয়োজন করা হয়। মাহবুবা মনজুর আলমের বড় ছেলে নিজামুল আলমের মেয়ে। বিয়ের অনুষ্ঠানে নগরীর নামীদামি অতিথিরা অংশ নেন। বিয়েতে চট্টগ্রাম সিটি মেয়র বিএনপি নেতা ডা.

শাহাদাত হোসেনও উপস্থিত ছিলেন। বিয়েতে অতিথি আসার পর রাত ১০টার দিকে ফখরুল আনোয়ারের উপস্থিতি দেখে তা চারদিকে ছড়িয়ে দেন। 

ফ্র্যান্স থেকে পিনাকি ভট্টাচার্য ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে কমিউনিটি সেন্টারে শত শত মানুষকে ঘিরে ফেলার আহ্বান জানান। তারপর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা কমিউনিটি সেন্টারে গিয়ে ফখরুল আনোয়ারকে অবরুদ্ধ করেন। রান্নাঘর, বাথরুমে নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী ও খাদিজাতুল আনোয়ার সনিকে খোঁজাখুজি করেন। তখন বিয়ের অনুষ্ঠানে চরম বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়। খবর পেয়ে পুলিশ ও নৌ বাহিনীর সদস্যরা কনভেনশন সেন্টারে হাজির হয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারীদের আটক করে লাঠিপেটা করেন। পুলিশ ও ছাত্ররা ফখরুল আনোয়ারকে খুলশী থানায় নিয়ে যান। 

ছড়িয়ে পড়া অনুষ্ঠানের একটি ভিডিওতে দেখা গেছে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কয়েকজন সদস্য কনভেনশন সেন্টারের ভেতরে থাকা তিন থেকে দুই তরুণকে লাঠিপেটা করছেন। এ সময় কিলঘুসিও  দেন। এতে এক তরুণের পরনের পোশাক ছিঁড়ে যায়। তাদের টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যেতে দেখা যায়। মারধরের শিকার ব্যক্তিরা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মী বলে জানান কেন্দ্রীয় কমিটির সমন্বয়ক রাসেল আহমেদ।

তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ নেতারা বিয়ে অংশ নিয়েছেন, খবর পেয়ে তাৎক্ষণিকভাবে পুলিশকে জানানো হয়। নিজেরাও সেখানে ছুটে যাই। আওয়ামী লীগের নেতারা দেশ নিয়ে ষড়যন্ত্র করছেন। জুলাই আন্দোলনে অংশ নেওয়া ছাত্র-জনতাকে হুমকি দিয়ে যাচ্ছেন। আওয়ামী লীগের নেতারা জুলাই গণহত্যার সঙ্গে জড়িত। এমন পরিস্থিতিতে আওয়ামী লীগের নেতারা স্বাধীনভাবে সামাজিক অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন, চলাফেরা করবেন, ছাত্র-জনতা তা মেনে নেবে না। ফখরুল আনোয়ারকে আটক করতে পারলেও অন্য দু’জন পালিয়ে যান।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: আওয় ম ল গ সদস য আওয় ম নগর র

এছাড়াও পড়ুন:

বৃষ্টিস্নাত রমনায় সবুজের উল্লাস

রমনা উদ্যানের গাছগুলো বৃষ্টিতে ভিজছে, ভিজছে মাটি ও মাটির ওপরের ঘাসগুলো। বর্ষায় রমনার রূপ হয় দেখার মতো। চারদিকে কেবল সবুজ আর সবুজ। বসন্তের মতো ফুল নেই তো কী হয়েছে? আছে শ্যামল রূপ, আছে অপার স্নিগ্ধতা। বুকভরে ধুলাহীন নিশ্বাস নেওয়ার অবকাশ, প্রকৃতির উদার আমন্ত্রণ।

‘পাগলা হাওয়ার বাদল-দিনে’ ঢাকার রমনা পার্কের গাছের পাতাগুলো এখন আরও সবুজ। টলটলে জলের নয়নাভিরাম ঝিলটা টইটম্বুর। ধুলাময়লাহীন পায়ে চলার পথ। আর গাছের পাতার ফাঁকে রয়েছে অজস্র ফুল। কোনোটা লাল, কোনোটা বেগুনি আবার কোনোটা সাদা। বৃষ্টির মধুর আশকারা পেয়ে রমনা পার্কে এখন সবুজের উল্লাস।

এই পার্কটিকে ঢাকার ফুসফুস বলা হয়। এর যথেষ্ট কারণ আছে অবশ্য। এ রকম প্রগাঢ় নিরেট সবুজ এ শহরে কমই আছে। রমনা তাই ঢাকার জনজীবনের স্পন্দন। এটি কেবল একটি পার্ক নয়, বরং নাগরিক জীবনের পরম আনন্দ-আশ্রয়।

সম্প্রতি ‘বৃষ্টি নেশাভরা’ এক বিকেলে অরুণোদয় ফটক দিয়ে রমনা পার্কে প্রবেশ করলাম। অনেকে শরীরচর্চায় ব্যস্ত। কেউ দল বেঁধে করছেন, কেউ একাকী। কোনো দল ব্যায়াম করে ভোরে, কেউ আবার বিকেলে বা সন্ধ্যায়। আবার অনেকে আছেন দুই বেলাই হাঁটাহাঁটি করেন। হাঁটা সেরে কেউ কেউ লেকের পাশে এসে দুদণ্ড জিরিয়ে নেন। লেকে চলছিল বোট।

বর্ষার ফুলের উৎসব

বর্ষা এলেই রমনা পার্ক যেন রঙের নতুন ভাষা শেখে। আমাদের ঋতুচক্র অনুযায়ী, বসন্ত ও গ্রীষ্মকালেই এ দেশে ফোটে অধিকাংশ ফুল। তবে বর্ষারও নিজস্ব কিছু ফুল আছে, আর গ্রীষ্মের কিছু ফুল টিকে থাকে বর্ষা পর্যন্ত। সেদিন রমনায় গিয়ে এমনই কিছু ফুল চোখে পড়ল—বৃষ্টিভেজা পাতার ফাঁকে তাদের রং যেন আরও উজ্জ্বল হয়ে উঠেছিল। মনে হলো, প্রকৃতির এই নিঃশব্দ উৎসবেও কত কথা লুকিয়ে থাকে!

রমনার গোলাপবিথি সেদিন দর্শনার্থীদের সবচেয়ে বেশি মনোযোগ কাড়ছিল। সারি সারি ঝোপে ফুটে আছে হরেক রঙের গোলাপ—লাল, সাদা, হলুদ, কমলা, গাঢ় গোলাপি। বর্ষার ভেজায় যেন আরও সতেজ, আরও তাজা হয়ে উঠেছে প্রতিটি পাপড়ি। নরম আলো আর বৃষ্টিজলে ভেজা ফুলগুলোর সৌন্দর্য মোহিত করেছে পথচলার মানুষকে। কেউ থেমে দাঁড়িয়ে ছবি তুলছেন, কেউ ভিডিও করছেন—মুঠোফোনে বন্দী হচ্ছে বর্ষার রঙিন রমনা।

এটি কেবল একটি পার্ক নয়, বরং নাগরিক জীবনের পরম আনন্দ-আশ্রয়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ