ভিন্ন কিছু উপসর্গ

অত্যধিক ক্লান্তি বা অবসন্নতাকে খুব সাধারণ উপসর্গ হিসেবেই চিহ্নিত করা হয়ে থাকে। তবে এমন উপসর্গ দেখা দিতে পারে হার্ট অ্যাটাকেও।

তাই খুব ক্লান্ত বা অবসন্ন হয়ে পড়ার অন্য কোনো কারণ না থাকলে এ ধরনের উপসর্গকে একদম অবহেলা করবেন না। স্বাভাবিক কাজকর্ম করতে গিয়ে হাঁপিয়ে উঠলে বা শ্বাসকষ্ট হলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

অন্য কোনো কারণ ছাড়াই হঠাৎ খুব ঘাম হতে পারে হার্ট অ্যাটাকের সময়।

হার্ট অ্যাটাক হলে পেটের ওপরের অংশে ব্যথা হয় অনেকের। এই ব্যথাকে সাধারণভাবে গ্যাসের ব্যথা ধরে নেওয়ার ভুল করেন অনেকেই।

পেটের ওপরের অংশে মাঝারি বা হালকা ধরনের ব্যথা হলে গ্যাসের ওষুধ খেয়ে দেখতে পারেন। তাতে উন্নতি না হলে হাসপাতালে যান। ব্যথার তীব্রতা বেশি হলে শুরুতেই হাসপাতালে যেতে হবে।

বাহু, কাঁধ, হাত, চোয়াল বা পিঠের দিকেও ব্যথা হতে পারে কারও কারও।
মাথা হালকা হয়ে গেছে বলে মনে হতে পারে।

আরও পড়ুনঅল্প বয়সেও কেন হার্ট অ্যাটাক হয়৩০ মার্চ ২০২৫না বুঝলে বাড়বে বিপদ

হৃৎপিণ্ড সারা শরীরে রক্ত সঞ্চালন করে। তবে হৃৎপিণ্ডের নিজেরও তো রক্তের প্রয়োজন। সেই রক্ত হৃৎপিণ্ডে পৌঁছায় কিছু নির্দিষ্ট ধমনির মাধ্যমে। একজন ব্যক্তির হার্ট অ্যাটাক হওয়ার অর্থ হলো তাঁর এসব ধমনির মধ্যে কোনো এক বা একাধিক ধমনির রক্তপ্রবাহ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।

ওই ধমনি হৃৎপিণ্ডের যে নির্দিষ্ট জায়গায় রক্ত পৌঁছে দিত, সেই জায়গা তখন অক্সিজেনের অভাবে ভুগছে। তাই ওই অংশের স্বাভাবিক কাজ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
এ অবস্থায় দ্রুত চিকিৎসা করানো না হলে হৃৎপিণ্ডের ওই অংশ আরও বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হতে থাকে। ফলে হৃৎপিণ্ড আর আগের মতো ঠিকঠাক কাজ করতে পারে না।

এভাবে একসময় হৃৎপিণ্ড বিকল হতে পারে। হৃৎপিণ্ডের স্বাভাবিক ছন্দেও ব্যাঘাত ঘটতে পারে। রক্তচাপ বিপজ্জনক পর্যায়ে নেমে যেতে পারে। রোগী জ্ঞান হারাতে পারেন। এমনকি হতে পারে মৃত্যুও।

আরও পড়ুনলাল মাংস বা চর্বিজাতীয় খাবার না খেলেও যে পাঁচ অভ্যাসে বাড়ে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫খেয়াল রাখুন

অস্বাভাবিক ঘাম হওয়া হার্ট অ্যাটাকের উপসর্গ হতে পারে। তবে ডায়াবেটিস আক্রান্ত ব্যক্তিদের রক্তের সুগার কমে গেলে অর্থাৎ হাইপোগ্লাইসেমিয়া হলেও ঘাম হতে পারে। তাই তাঁদের ক্ষেত্রে প্রথমে জরুরি ভিত্তিতে সুগার মেপে দেখতে হবে।

সুগার কমে গিয়ে থাকলে চিনি মেশানো পানি খাইয়ে দিতে হবে আক্রান্ত ব্যক্তিকে। তবে তারপরও চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। কারণ, তাঁর ডায়াবেটিসের ওষুধের মাত্রা পরিবর্তন করার প্রয়োজনও হতে পারে।

আরও পড়ুনবাড়িতে একা থাকার সময় হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণ দেখা দিলে কী করবেন১১ অক্টোবর ২০২৫.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: উপসর গ

এছাড়াও পড়ুন:

শিশুর খাবারে অ্যালার্জিতে করণীয়

প্রায় ৬ শতাংশ শিশু খাবারের অ্যালার্জিতে ভোগে। এর অর্ধেক শিশুর অ্যালার্জি হয় গরুর দুধ, ডিম ও বাদামে। গমজাত খাবার, বিভিন্ন ধরনের বাদাম, মাছ প্রভৃতিতে অ্যালার্জি হয়।

জন্মের পর প্রথম এক বছর শিশুর দুধ ও ডিমের অ্যালার্জি হয়। বাদামজাত খাবারে আক্রান্ত হয় একটু দেরি করে। গাভির
দুধ বা ডিমের অ্যালার্জি ৫ থেকে ৭ বছর বয়সে আপনা-আপনি সেরে যায় ৭৫ শতাংশ ক্ষেত্রে। প্রায় ২০ শতাংশ শিশু বাদামজাত অ্যালার্জিতে সারা জীবন ভোগে।

খাবারে অ্যালার্জির কারণে পেটের অসুখ দীর্ঘস্থায়ী রূপ নেয়। এক বছরের কমবয়সী শিশুর অ্যালার্জিজনিত অসুখের অন্যতম কারণ গরুর দুধে এক বিশেষ ধরনের প্রোটিন।

কীভাবে বুঝবেন

ত্বকে লালচে ভাব, চুলকানো, র‌্যাশ।

চোখ লাল হয়ে যাওয়া।

নাক দিয়ে সর্দি ঝরা।

সংকুচিত শ্বাসনালি, শ্বাসকষ্ট, হাঁপানি।

মুখের ভেতর ঘা বা ত্বকের প্রদাহ।

বমি, ডায়রিয়া বা রক্ত আমাশয়।

অ্যালার্জিতে রক্তচাপ কমে যাওয়া।

শনাক্ত ও চিকিৎসা

‘ফুড উইথড্রোল ও চ্যালেঞ্জ’ পদ্ধতি ব্যবহার করে রোগটি শনাক্ত করা যায়। যে খাবারে অ্যালার্জি হচ্ছে বলে সন্দেহ, সে খাবার দুই থেকে আট সপ্তাহ বন্ধ রাখা। আবার খেতে দিয়ে যদি উপসর্গ থাকে, তবে নিশ্চিত বলা যায় সেসব খাবারে শিশুর অ্যালার্জি আছে। এখানে ল্যাব টেস্টের ভূমিকা গৌণ।

যে খাবারে অ্যালার্জি আছে, সেটি খাদ্যতালিকা হতে বাদ দিতে হবে। যেসব শিশু বুকের দুধের ওপর নির্ভরশীল, তাকে পূর্ণ দুই বছর পর্যন্ত বুকের দুধ খাওয়ান। টাটকা গরুর দুধ সহ্য না হলে, তা রূপান্তরিত করে (যেমন পাউডার দুধ) ব্যবহার। তবে কোনো খাবারে একবার অ্যালার্জি দেখা গেলে, তা আবার দিতে হবে অল্প পরিমাণে। ধীরে ধীরে পরিমাণ বাড়ানো যেতে পারে।

খাবারের প্রোটিন অংশজাত অ্যালার্জির উপসর্গ ক্ষণস্থায়ী। শিশুকে পূর্ণ ছয় মাস বয়স পর্যন্ত শুধু মাতৃদুগ্ধ পান করাতে হবে। এরপর কম অ্যালার্জির পরিপূরক খাবার একেক করে আলাদাভাবে খাদ্যতালিকায় যোগ করতে হবে। এতে বোঝা যায় কোন খাবারে তার অ্যালার্জি। শিশুর অ্যালার্জি প্রতিরোধে গর্ভবতী বা প্রসূতি মায়ের খাবারে বিধিনিষেধ আরোপ যুক্তিযুক্ত নয়।

ডা. প্রণব কুমার চৌধুরী, সাবেক বিভাগীয় প্রধান, শিশুস্বাস্থ্য বিভাগ, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • শিশুর খাবারে অ্যালার্জিতে করণীয়