সাংবাদিক শিমুল হত্যা: দ্রুত বিচারের দাবি সহকর্মীদের
Published: 3rd, February 2025 GMT
দৈনিক সমকাল পত্রিকার শাহজাদপুর উপজেলা প্রতিনিধি আব্দুল হাকিম শিমুল হত্যাকাণ্ডের বিচার দ্রুততম সময়ের মধ্যে সম্পন্ন করার জন্য দাবি জানিয়েছেন তার সহকর্মীরা।
সোমবার সকালে প্রয়াত সাংবাদিক শিমুলের অষ্টম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষ্যে শাহজাদপুর প্রেস ক্লাব চত্বরে আয়োজিত এক প্রতিবাদ সমাবেশে এ দাবি জানানো হয়।
প্রতিবাদ সভায় শাহজাদপুর প্রেস ক্লাবের সভাপতি আবু জাফর লিটনের সভাপতিত্বে সাধারণ সম্পাদক আল আমিন হোসেন, সাবেক সভাপতি বিমল কুন্ডু, সাংবাদিক আবুল কাশেম, রাসেল সরকার, মির্জা হুমায়ুন, জহুরুল ইসলাম, জাকারিয়া মাহমুদ বক্তব্য রাখেন।
বক্তারা বলেন, বিচার প্রক্রিয়া বিলম্বিত হলে পরবর্তী সময়ে ন্যায্য বিচার পাওয়া দুষ্কর হয়ে দাঁড়ায়। দীর্ঘসূত্রিতার কারণে আসামিপক্ষের মাধ্যমেও বিচার প্রক্রিয়া প্রশ্নবিদ্ধ ও প্রভাবিত হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হয়। গত আট বছরে বিচার প্রক্রিয়া সম্পন্ন না হওয়ায় আসামিপক্ষ নানা কুটকৌশল-ফন্দি ফিকিরের মাধ্যমে বিচার প্রক্রিয়া ঝুলিয়ে দেয় বলে অভিযোগ উঠেছে।
এর আগে শিমুলের প্রতিকৃতিতে মাল্যদান ও তার রুহের মাগফেরাত কামনা করা হয়। এ সময় নিহতের স্ত্রী বেগম নুরুন্নাহার, মেয়ে তামান্না-ই ফাতেমা, ছেলে আল নোমান নাজ্জাশি সাদিক ও শিমুলের মামা আব্দুল মজিদসহ স্বজন ও তার সহকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
প্রসঙ্গত, ২০১৭ সালের ২ ফেব্রুয়ারি শাহজাদপুর পৌর এলাকায় পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে আওয়ামী লীগের দু’পক্ষের সংঘর্ষের মধ্যে গুলিবিদ্ধ হন তিনি। পরদিন ৩ ফেব্রুয়ারি তার মৃত্যু হয়। হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় পৌরসভার সাবেক মেয়র হালিমুল হক মিরুসহ ৪০ জনকে আসামি করে মামলা করেন শিমুলের স্ত্রী। ২০১৭ সালের ২ মে ৩৮ জনকে আসামি করে পুলিশ অভিযোগপত্র দেয়।
পরে মামলাটি শাহজাদপুর আমলি আদালত থেকে সিরাজগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ আদালতে স্থানান্তর করা হয়। আসামিদের নানা পদক্ষেপের কারণে অভিযোগ গঠন বিলম্বিত হতে থাকে। এর মধ্যে উচ্চ আদালতের আদেশে আসামি অনেক আগেই জামিনে ছাড়া পান। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের মামলার জামিনপ্রাপ্ত আসামিরা শাহজাদপুর ছেড়ে পালিয়ে যায়।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
দুই বন্ধু ও দুটি স্বপ্নের বিদায়
উত্তরার ১৭ নম্বর সেক্টরের ৬ নম্বর অ্যাভিনিউতে বিজিএমইএ ভবন। রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাকশিল্প প্রতিষ্ঠান টিম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুল্লাহ হিল রাকিবের জানাজায় শোকাবহ পরিবেশ। প্রিয় মানুষকে চিরবিদায় জানাতে এসেছেন দীর্ঘদিনের সহকর্মী, বন্ধু, পরিবারের সদস্য ও পরিচিতজন। শোক ও অশ্রুতে তারা রাকিবকে নিয়ে স্মৃতিচারণ করছিলেন। রাকিবের অসমাপ্ত কাজ ও স্বপ্ন এগিয়ে নেওয়ার অঙ্গীকার করেন সহকর্মীরা।
৯ জুন কানাডায় একটি লেকে ভ্রমণের সময় নৌকাডুবে মারা যান আবদুল্লাহ হিল রাকিব ও তাঁর বন্ধু বাংলাদেশ বিমানের ক্যাপ্টেন মো. সাইফুজ্জামান। কানাডায় বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া মেয়ের সঙ্গে সাইফুজ্জামান ঈদের ছুটি কাটাতে স্ত্রী ও আরেক মেয়েকে নিয়ে গিয়েছিলেন। সেখানে বন্ধু ব্যবসায়ী রাকিব ও তাঁর ছেলের সঙ্গে একটি লেকে ঘুরতে গিয়েছিলেন। অন্টারিও প্রদেশের স্টারজিয়ন লেকে ক্যানুতে (সরু লম্বা ছোট্ট নৌকা) চড়ে ভ্রমণে বের হন। নৌকাটি উল্টে গেলে পানিতে ডুবে প্রাণ হারান দু’জন। বিদেশের মাটিতে একসঙ্গে দুই বন্ধুর মৃত্যু, একই ফ্লাইটে ফেরা, দেশে ফিরে একই কবরস্থানে শেষ শয্যা!
অশ্রুসজল চোখে রাকিবের কানাডাপ্রবাসী মেয়ে লামিয়া তাবাসসুম বলেন, ‘বাবা স্বপ্ন দেখতেন, দেখাতেন। তিনি যেসব স্বপ্ন আমাদের দেখিয়েছেন, যেসব কাজ রেখে গেছেন, আমরা যেন সুন্দরভাবে তা বাস্তবায়ন করতে পারি। পরিবারের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে কানাডায় গিয়েছিলেন বাবা।’
রাকিব ও সাইফুজ্জামান ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন। তাদের মরদেহ বিমানের একই ফ্লাইটে শুক্রবার রাতে ঢাকায় আনা হয়। জানাজা শেষে ঢাকায় বিমানবাহিনীর কবরস্থানে দু’জনকে সমাহিত করা হয়। তাদের সহকর্মী ও বন্ধুরা বলছেন, এর মধ্য দিয়ে অকালে দুটি স্বপ্ন বিদায় নিল।
রাকিবের সহকর্মীরা বলেন, বাংলাদেশের তৈরি পোশাক পণ্য রপ্তানিকে ১০০ বিলিয়ন বা ১০ হাজার কোটি ডলারে উন্নীত করার স্বপ্ন দেখতেন রাকিব। তারা সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নে সর্বাত্মক সহায়তা করবেন বলে জানান।
উত্তরায় জানাজার আগে বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, ‘আবদুল্লাহ হিল রাকিবের সঙ্গে বেশ কয়েক বছর কাজ করেছি। সব সময়ই দেখেছি, তিনি নিজের পরিবার, বন্ধু, ব্যবসা ও বিজিএমইএকে সমান অগ্রাধিকার দিয়েছেন। তৈরি পোশাকশিল্প খাতের যে কোনো সমস্যা ও চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় তিনি সামনে চলে যেতেন। রাকিবের দর্শন ছিল– সফলতার মাত্রা নেই। তবে একজন ব্যক্তি কতটা সফল, সেটি তাঁর কর্মযজ্ঞ দেখলে বোঝা যায়।’
বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি এস এম ফজলুল হক বলেন, রাকিব উজ্জ্বল প্রদীপ। স্বপ্ন ছিল অনেক। ঝোড়ো হাওয়ায় সেই প্রদীপ নিভে গেছে। সবাই তাঁর জন্য দোয়া করবেন।
রাকিবের জন্য সবার কাছে দোয়া চান বিজিএমইএর সর্বশেষ নির্বাচনে বিজয়ী রাইজিং ফ্যাশনসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহমুদ হাসান খান। স্মৃতিচারণা করে বক্তব্য দেন রাকিবের বড় ভাই আবদুল্লাহ হিল নকীব।
ক্যাপ্টেন সাইফুজ্জামানের সহকর্মীরা জানান, শুক্রবার তাঁর মরদেহ কানাডা থেকে ঢাকায় আনার সময় তাঁর সঙ্গে স্ত্রী, দুই মেয়ে, বোন এবং ভগ্নিপতি ছিলেন। মরদেহ পৌঁছার পর উপস্থিত পাইলটরা সহকর্মীর মরদেহে স্যালুট দেন। এর পর বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স ও পাইলটস অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে কফিনে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয়। পরে মরদেহ ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালের (সিএমএইচ) মর্গে রাখা হয়। সেখান থেকে মরদেহ নেওয়া হয় তাঁর বনানীর ডিওএইচএসের বাসায়। বেলা ১১টার দিকে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর ঘাঁটি বাশারের কেন্দ্রীয় মসজিদে জানাজা হয়। সাবেক বিমানবাহিনী প্রধান এয়ার মার্শাল মোহাম্মদ ইনামুল বারীসহ পাইলট, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা এতে অংশ নেন। পরে জোহরের নামাজ শেষে ডিওএইচএস মাঠে একসঙ্গে ক্যাপ্টেন সাইফুজ্জামান ও রাকিবের জানাজা হয়। সাইফুজ্জামানকে বাবা-মায়ের কবরের পাশে দাফন করা হয়। একই কবরস্থানে দাফন করা হয় রাকিবকে। তাঁর বাবা বিমানবাহিনীর সদস্য ছিলেন।