চট্টগ্রাম নগরীর কোতোয়ালি থানায় করা হত্যাচেষ্টা মামলায় গ্রেপ্তার চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগ নেতা ফখরুল আনোয়ার চৌধুরীর দু’দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। আদালতে শুনানি শেষে সোমবার চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আবু বক্কর এ আদেশ দেন। পুলিশ ফখরুলের ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করেছিল।

অন্যদিকে নগরের ডবলমুরিং থানার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের করা খুনের মামলায় স্বর্ণ চোরাচালানের গডফাদার আবু আহম্মদকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। পরে তাঁকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন আদালত।

গত শনিবার রাতে ছেলের বিয়েতে আওয়ামী লীগ নেতা ফখরুল আনোয়ারকে অবরুদ্ধ করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী। পরে খুলশী থানা পুলিশ এসে তাঁকে আটক করে। ফখরুল ফটিকছড়ি আসনের সাবেক সংসদ সদস্য রফিকুল আনোয়ার চৌধুরী ওরফে সোনা রফিকের ভাই এবং ফটিকছড়ির সাবেক সংসদ সদস্য খাদিজাতুল আনোয়ার সনির চাচা।

চট্টগ্রাম নগরের টাইগারপাস এলাকায় নৌবাহিনীর মালিকানাধীন অভিজাত নেভি কনভেনশন সেন্টারে ফখরুল আনোয়ারের ছেলে সৈয়দ মিনহাজুল আনোয়ারের সঙ্গে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র মোহাম্মদ মনজুর আলমের নাতনি সৈয়দা মাহবুবা হোসনে আরা মনজুরের বিবাহোত্তর সংবর্ধনার আয়োজন করা হয়। মনজুর আলমের বড় ছেলে নিজামুল আলমের মেয়ে মাহবুবা। বিয়েতে চট্টগ্রাম সিটি মেয়র বিএনপি নেতা ডা.

শাহাদাত হোসেনও উপস্থিত ছিলেন।

তবে একটি ভিডিওতে দেখা গেছে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কয়েকজন সদস্য কনভেনশন সেন্টারের ভেতরে থাকা দু-তিন তরুণকে লাঠিপেটা করতে থাকেন। এতে এক তরুণের পরনের পোশাক ছিঁড়ে যায়। তাদের টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যেতে দেখা যায়। মারধরের শিকার ব্যক্তিরা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মী বলে জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক রাসেল আহমেদ। 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ফখর ল

এছাড়াও পড়ুন:

খুলনায় এক মাসে ১৩ লাশ উদ্ধার, বাড়ছে উদ্বেগ

বাড়িতে ঝগড়া চলছিল বড় ভাই ও ভাবির। ছোট ভাই এসে ঝগড়া থামানোর চেষ্টা করেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে বড় ভাই ছোট ভাইয়ের মাথায় শাবল দিয়ে আঘাত করেন। মাটিতে লুটিয়ে পড়লে ধারালো বঁটি দিয়ে ছোট ভাইকে হত্যা করেন। পরে বড় ভাই শহিদুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তিনি এখন কারাগারে। ঘটনাটি ঘটেছে গত ৩০ মে, খুলনার কয়রা উপজেলার বাগালী ইউনিয়নের উলা গ্রামে।

এর আগে ২৭ মে কয়রার ইসলামপুর গ্রামের কয়রা নদীর চর থেকে শিকলে বাঁধা অবস্থায় আবদুল মজিদ (৬২) নামের এক বৃদ্ধের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ছাড়া ৮ জুন কয়রার কাছারিবাড়ি বাজার-সংলগ্ন পুকুর থেকে নমিতা (৪০) নামের এক নারীর লাশ উদ্ধার করা হয়।

১০ জুন কয়রা সদরের গোবরা সড়কে এক ভ্যানচালকের সঙ্গে এক মোটরসাইকেলচালকের কথা-কাটাকাটিকে কেন্দ্র করে দুই গ্রামের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এতে আহত হন অন্তত ১৫ জন। ঘটনায় ১২ জনকে আসামি করে থানায় মামলাও হয়েছে। এ ছাড়া কথা-কাটাকাটির জেরে কয়রার পল্লীমঙ্গল গ্রামে গত তিন দিনে কয়েক দফা মারামারি, হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে।

অসন্তোষ-দ্বন্দ্বের জেরে কয়রা উপজেলাসহ বিভিন্ন এলাকায় হত্যা–সংঘর্ষের ঘটনা ঘটছে। ১০ মে থেকে ৯ জুন পর্যন্ত এক মাসে খুলনার ১০টি থানা এলাকায় হত্যাকাণ্ডের ঘটনাসহ ১৩টি লাশ উদ্ধার হয়েছে। এ নিয়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বাড়ছে।

কয়রা কপোতাক্ষ মহাবিদ্যালয়ের সমাজকর্ম বিভাগের শিক্ষক বিদেশ রঞ্জন মৃধা বলেন, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক উপাদান কমে যাওয়ায় মানুষ অসহিষ্ণু হয়ে উঠছে। মূল্যবোধ ও ভারসাম্য নষ্ট হয়ে মানুষের মধ্যে মনুষ্যত্ব ও ভালোবাসা কমে যাচ্ছে। এতে খুনখারাবি বাড়ছে। একসময় সমাজের একজনের ভালোতে সবাই আনন্দ পেতেন। নেতিবাচক দিকগুলো ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিরোধ করতেন। এখন সেই ব্যবস্থা উঠেই গেছে বলা যায়। পাশাপাশি রাজনৈতিক আধিপত্যের লড়াইয়ে প্রভাববলয় সৃষ্টি করতেও সহিংসতার ঘটনা ঘটছে।

৩ জুন খুলনা শহরে দুর্বৃত্তের ছুরিকাঘাতে সবুজ হাওলাদার (৩০) নামের এক যুবকের মৃত্যু হয়। ৪ জুন খুলনা সদর থানার মতিয়াখালী খালের মধ্যে আটকে ছিল এক নারীর মরদেহ। পরে পুলিশ গিয়ে মরদেহ উদ্ধার করে। ওই নারীর পরিচয় না পেয়ে বেওয়ারিশ হিসেবে আঞ্জুমান মুফিদুলে দাফন করা হয়। গত ৯ জুন বিকেলে রূপসা উপজেলার আঠারোবেকী নদীতে পাওয়া যায় অজ্ঞাতনামা যুবকের মরদেহ। মরদেহের শ্বাসনালিতে গভীর ক্ষতচিহ্ন ছিল। রূপসা নৌ পুলিশের ওসি আবুল খায়ের বলেন, ধারণা করা হচ্ছে, এটি একটি হত্যাকাণ্ড।

এ বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে রহস্য উদ্‌ঘাটন ও অপরাধী শনাক্তে দীর্ঘসূত্রতার কারণেই অপরাধ বেড়ে চলেছে বলে মনে করেন বাংলাদেশ মানবাধিকার ব্যুরোর কয়রা উপজেলা শাখার সভাপতি তরিকুল ইসলাম। তাঁর ভাষ্য, প্রতিটি ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত শেষে দোষীদের আইনের আওতায় এনে উপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা করতে পারলে অপরাধপ্রবণতা কমে আসবে। আইনি প্রক্রিয়ায় দীর্ঘসূত্রতার কারণে অপরাধ বেড়ে চলেছে।

কয়রা উপজেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রুলী বিশ্বাস বলেন, সম্প্রতি ঘটে যাওয়া কয়েকটি ঘটনায় এলাকার মানুষের মধ্যে উৎকণ্ঠা বাড়ছে, এটা ঠিক। তবে প্রতিটি ঘটনায় পুলিশও তাৎক্ষণিকভাবে আইনি ব্যবস্থা নিয়েছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। যে বিষয়গুলো পারস্পরিক সৌহার্দ্য ও সামাজিক ভ্রাতৃত্ববোধের মধ্য দিয়ে সমাধান করা যায়, সেখানে খুনাখুনি, অস্থিরতা, মামলা-হামলার মধ্য দিয়ে একধরনের বিভীষিকাময় পরিবেশ সৃষ্টি করা হচ্ছে; যা সবার জন্যই অকল্যাণকর ও ভয়ানক।

সম্পর্কিত নিবন্ধ