সংস্কারের কথা বলে নির্বাচনকে দীর্ঘায়িত করছে কিছু মানুষ: তারেক রহমান
Published: 5th, February 2025 GMT
সংস্কারের কথা বলে কিছু মানুষ নির্বাচনকে দীর্ঘায়িত করছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতের জন্য বিএনপি আড়াই বছর আগেই সংস্কারের কথা বলেছে। কারণ বিএনপি বিশ্বাস করতো স্বৈরাচারের বিদায় হবেই। খেয়াল করছি, কিছু মানুষ সংস্কারের কথা বলে নির্বাচনকে দীর্ঘায়িত করছে। আমাদের দেখতে হবে, এই সংস্কার সংস্কার বলা কোনো ষড়যন্ত্র কিনা।
আজ বুধবার বিকেল সাড়ে ৪টায় সোনাগাজী ছাবের পাইলট হাই স্কুল মাঠে অনুষ্ঠিত এক সভায় ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে এসব কথা বলেন তিনি। এ সময় বিচার-বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার ফেনীর সোনাগাজী উপজেলার যুবদল নেতা শহীদ মোহাম্মদ মাসুদের পরিবারকে নতুন বাড়ি উপহার উপহার দেন তারেক রহমান। এছাড়া চব্বিশের ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে নিহত ফেনী, নোয়াখালী ও লক্ষ্মীপুরের শহীদের পরিবারের মাঝেও বিএনপির পক্ষ থেকে আর্থিক অনুদান প্রদান করা হয়েছে।
তারেক রহমান বলেন, হাজার-লক্ষ মানুষের ত্যাগের বিনিময়ে বাংলাদেশ স্বৈরাচারমুক্ত হয়েছে। তারা পালাতে বাধ্য হয়েছে। অবশ্যই হত্যাকাণ্ডের বিচার করতে হবে। যদি বিচার না হয় হয়, তাহলে খুন ও গুমকারীরা আরও উৎসাহ পাবে।
তিনি আরও বলেন, শেখ হাসিনাকে বিচারের আওতায় আনতে হবে। তাকে কোনোভাবে ছেড়ে দেওয়া যাবে না। এই প্রশ্নে সবাইকে এক হতে হবে। বাংলাদেশের মাটিতে এসব হত্যাকাণ্ডের বিচার করতেই হবে।
বিএনপি নেতা বলেন, বাংলাদেশের মানুষ যেভাবে প্রত্যাশা করে, যেখানে মানুষের মত প্রকাশের স্বাধীনতা থাকবে, গণতন্ত্র থাকবে, স্বচ্ছতা থাকবে। এমন একটি দেশ গড়তে কাজ করতে হবে। শহীদদের আত্মার মর্যাদা দিতে হলে নতুন বাংলাদেশ গড়ে তুলতে হবে এবং সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, আব্দুল আউয়াল মিন্টু, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম-মহাসচিব শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি, বিএনপি চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা অধ্যাপক জয়নাল আবেদীন, চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা ও সাবেক চিফ হুইপ জয়নুল আবদিন ফারুক, বিএনপির কোষাধ্যক্ষ এম রশিদুজ্জামান মিল্লাতসহ ‘আমরা বিএনপি পরিবার’ এর উপদেষ্টা, সদস্য সচিব ও অন্যান্য সদস্যরা।
বুধবার দুপুরে সোনাগাজী উপজেলার চরচান্দিয়া গ্রামে শহীদ মোহাম্মদ মাসুদের পরিবারকে ‘আমরা বিএনপি পরিবার’ এর একটি প্রতিনিধি দল নব-নির্মিত বাড়ি উদ্বোধন করেন।
উল্লেখ্য, মোহাম্মদ মাসুদ ফেনীর সোনাগাজী উপজেলার যুবদল নেতা ছিলেন। ২০১৬ সালের ২২ জুন পুলিশের বিচার-বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হন তিনি। তিনি মিথ্যা মামলায় আটকের পর ক্রসফায়ারের শিকার হয়েছিলেন বলে অভিযোগ। তার স্ত্রী আয়েশা আক্তার, নবম শ্রেণিতে পড়ুয়া মুমতাহিনা বিন মাসুদ নামে এক কন্যা সন্তান নিয়ে অসহায় অবস্থায় জীবনযাপন করছেন।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ত র ক রহম ন ত র ক রহম ন ব এনপ র পর ব র
এছাড়াও পড়ুন:
ভোগবাদী যুগে ইসলামে সুখের খোঁজ
আপনার বাড়িতে কি অপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের স্তূপ জমে আছে? জানেন কি, এর থেকে মুক্তির পথ আছে ইসলামের সরল জীবনধারায়? আধুনিক বিশ্বে ভোগবাদের তীব্র ঝড়ে আমরা প্রায়ই নিজেদের দেখি অপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রে ঠাসা ঘরে।
নতুন ফ্যাশনের পোশাক, সর্বশেষ প্রযুক্তির গ্যাজেট বা মধ্যরাতে এক ক্লিকে কেনা অপ্রয়োজনীয় পণ্য—এসব আমাদের জীবনের অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু ইসলাম আমাদের ন্যূনতম একটি সরল জীবনধারার পথ দেখায়, যা পার্থিব লোভ থেকে মুক্ত করে আমাদের আল্লাহর পথে নিবেদিত হতে উৎসাহিত করে।
আয়েশা, তুমি যদি আমার সঙ্গে মিলিত হতে চাও, তবে এই দুনিয়া থেকে একজন পথিকের প্রয়োজনীয় জিনিসের মতো সামান্য গ্রহণ করো।সুনানে তিরমিজি, হাদিস: ১৭,৮০০সংযম কেন জরুরিমিনিমালিজম বা ন্যূনতাবাদ এমন একটি জীবনধারা, যেখানে আমরা শুধু প্রয়োজনীয় জিনিসের ওপর নির্ভর করব এবং অতিরিক্ত ভোগবিলাস থেকে দূরে থাকব। ক্রমাগত কেনাকাটার দিকে প্রলুব্ধ না হয়ে শুধু যেটুকু না হলেই জীবন চলে না, সেটুকু নিজের কাছে রাখব।
আল্লাহ তাআলা বলেছেন, ‘হে আদম সন্তান, প্রত্যেক নামাজের সময় বেশভূষা সৌন্দর্য গ্রহণ করো, খাও এবং পান করো, কিন্তু অপচয় কোরো না। নিশ্চয়ই তিনি অপচয়কারীদের পছন্দ করেন না।’ (সুরা আ’রাফ, আয়াত: ৩১)।
এই আয়াত আমাদের জীবনে সংযম ও সরলতার গুরুত্ব মনে করিয়ে দেয়।
আরও পড়ুনদুনিয়ার ভোগ–বিলাস নিয়ে সুরা তাকাসুরের সতর্কতা১০ এপ্রিল ২০২৩বিজ্ঞাপনের প্রলোভন আজকাল আমাদের অপ্রয়োজনীয় কেনাকাটার দিকে ঠেলে দেয়। প্রায়ই এমন জিনিস কিনে ফেলি, যেমন একটি ইউএসবি মগ হিটার বা জামাকাপড়, যা তারপর বছরের পর বছর অব্যবহৃত পড়ে থাকে।
বাড়িতে জমে থাকে প্যাকেট না খোলা গ্লাস–বক্স, অপঠিত বইয়ের স্তূপ। প্রশ্ন করে দেখি তো, আমাদের আসলেই কি এগুলো প্রয়োজন ছিল?
মহানবী (সা.)-এর সাদাসিধা জীবনমহানবীজি (সা.) এবং তাঁর সাহাবারা সরল জীবনযাপনের উজ্জ্বল উদাহরণ। হজরত আয়েশা (রা.)-কে নবীজি বলেছিলেন, ‘হে আয়েশা, তুমি যদি আমার সঙ্গে মিলিত হতে চাও, তবে এই দুনিয়া থেকে একজন পথিকের প্রয়োজনীয় জিনিসের মতো সামান্য গ্রহণ করো। ধনীদের সঙ্গে মেলামেশা থেকে সাবধান থাকো এবং কোনো পোশাককে তখনই জীর্ণ হয়ে গেছে মনে করো, যখন তুমি তাতে প্যাঁচ লাগিয়েছ (মানে যখন পুরোনো হয়ে যাওয়ার কারণে পেঁচিয়ে যায়)।’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস: ১৭,৮০০)।
এই হাদিসে নবীজি (সা.) স্পষ্টভাবে সরল জীবনযাপন এবং অতিরিক্ত সম্পদ সঞ্চয় থেকে দূরে থাকার পরামর্শ দিয়েছেন।
উপহারের পরিবর্তে আমরা দাতব্য সংস্থায় দানের জন্য অনুরোধ করতে পারি। এমনকি আমাদের একটি অনলাইন সাবস্ক্রিপশন বাতিল করে সেই অর্থ স্থানীয় মসজিদে দান করতে পারি।ইসলাম আমাদের শেখায় যে পার্থিব সম্পদ ক্ষণস্থায়ী এবং এটি আমাদের চিরস্থায়ী জীবনের জন্য প্রস্তুতির পথে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে। নবীজি (সা.) কখনো অপ্রয়োজনীয় সম্পদ সঞ্চয় করেননি এবং সব সময় দানশীলতার মাধ্যমে আল্লাহর পথে ব্যয় করতে উৎসাহিত করেছেন।
দানের সংস্কৃতিআজকের বিশ্বে ভোগবাদী সংস্কৃতি আমাদের জীবনকে জটিল করে তুলেছে। ক্রেডিট কার্ড, সহজলভ্য ঋণ এবং ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মগুলো আমাদের ক্রমাগত কেনাকাটার দিকে প্রলুব্ধ করে। আমাদের পূর্ববর্তী প্রজন্ম, যেমন আমাদের দাদা-দাদিরা, সীমিত সম্পদের মধ্যে সরল জীবন যাপন করতেন। কিন্তু গত কয়েক দশকে বিশ্বব্যাপী মধ্যবিত্ত শ্রেণির উত্থান এবং সহজে ঋণ পাওয়ার সুযোগ আমাদের ভোগবাদী প্রবৃত্তিকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।
আরও পড়ুনখাদ্যনিরাপত্তা নিয়ে ইসলামের নির্দেশনা০৯ জুন ২০২৫কিন্তু ইসলাম আমাদের শেখায়, প্রয়োজনের বাইরে অতিরিক্ত সম্পদ সঞ্চয় করা লোভ ও কৃপণতার দিকে নিয়ে যায়, যা একজন মুমিনের বৈশিষ্ট্য নয়।
ইসলাম আমাদের জীবনকে সরল করার পাশাপাশি আল্লাহর পথে ব্যয় করতে উৎসাহিত করে। আমরা চাইলে মাসিক বাজেটের একটি অংশ দানের জন্য বরাদ্দ করতে পারি।
যে ব্যক্তি নিজের সম্পদে সংযমী হয় এবং আল্লাহর পথে ব্যয় করে, তার জন্য জান্নাতের দরজা খুলে যায়।সহিহ মুসলিম, হাদিস: ৯৯৪বিয়ের মতো উৎসবে আমরা বিলাসবহুল আয়োজনের পরিবর্তে সরলতা বেছে নিতে পারি। উপহারের পরিবর্তে আমরা দাতব্য সংস্থায় দানের জন্য অনুরোধ করতে পারি। এমনকি আমাদের একটি অনলাইন সাবস্ক্রিপশন বাতিল করে সেই অর্থ স্থানীয় মসজিদে দান করতে পারি।
নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি নিজের সম্পদে সংযমী হয় এবং আল্লাহর পথে ব্যয় করে, তার জন্য জান্নাতের দরজা খুলে যায়।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ৯৯৪)।
আমাদের ভালো কাজ এবং দানশীলতা পরকালে যেমন উপকারে আসবে, তেমনি সমাজের জন্যও হবে কল্যাণকর। অপ্রয়োজনীয় খরচ কমিয়ে দানশীলতার দিকে মনোযোগ দিলে সমাজের দরিদ্র ও অভাবী মানুষের জীবন উন্নত হবে।
ভোগবাদী জীবন মানুষকে অস্থির করে তোলে এবং ন্যূনতম খরচের জীবনধারা মানুষকে তৃপ্তির জীবন উপহার দেয়। এটি একই সঙ্গে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনেরও একটি পথ।
আমরা যদি আমাদের অপ্রয়োজনীয় খরচ কমিয়ে আল্লাহর পথে ব্যয় করি, তবে তা আমাদের ব্যক্তিগত ও সামাজিক জীবনকে সমৃদ্ধ করবে। ন্যূনতমবাদ আমাদের মনে করিয়ে দেয়, আমাদের প্রকৃত সুখ পার্থিব সম্পদে নয়, বরং আল্লাহর সন্তুষ্টি ও পরকালের প্রস্তুতিতে নিহিত।
আরও পড়ুনআধুনিক এই প্রবণতার শিকড় ইসলামে২০ মে ২০২৫