দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) আজ সোমবার লেনদেনে একক আধিপত্য ছিল গ্রামীণফোনের। এদিন ঢাকার বাজারের মোট লেনদেনের ৯ শতাংশই ছিল কোম্পানিটির দখলে। লেনদেন বৃদ্ধির পাশাপাশি বেড়েছে শেয়ারের দামও।

ডিএসইতে সোমবার গ্রামীণফোনের ৪০ কোটি টাকার বেশি লেনদেন হয়, যা ডিএসইর মোট লেনদেনের ৯ শতাংশ। ডিএসইতে এদিন লেনদেনের পরিমাণ ছিল ৪৪৪ কোটি টাকা। লেনদেনের পাশাপাশি ঢাকার বাজারে এদিন গ্রামীণফোনের শেয়ারের দাম ৫ টাকা ২০ পয়সা বা প্রায় দেড় শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৪৬ টাকায়। গত তিন মাসের মধ্যে শেয়ারবাজারে এটিই গ্রামীণফোনের সর্বোচ্চ দাম। গ্রামীণফোনের শেয়ারের মূল্যবৃদ্ধি বাজারের সূচকবৃদ্ধিতেও ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। ব্রোকারেজ হাউস লংকাবাংলা সিকিউরিটিজের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ঢাকার বাজারে সোমবার গ্রামীণফোনের শেয়ারের মূল্যবৃদ্ধিতে ডিএসইএক্স সূচকটি বেড়েছে প্রায় ৩ পয়েন্ট।

বাজার–সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সম্প্রতি গ্রামীণফোন গত বছরের লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে। সারা বছরের জন্য দুই ধাপে কোম্পানিটি মোট ৩৩০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করে। অর্থাৎ প্রতি শেয়ারের বিপরীতে একজন শেয়ারধারী পাবেন ৩৩ টাকা। তার মধ্যে ১৬০ শতাংশ বা ১৬ টাকা অন্তর্বর্তীকালীন লভ্যাংশ হিসেবে বিতরণ করা হয়েছে। বাকি ১৭০ শতাংশ বা শেয়ারপ্রতি ১৭ টাকা লভ্যাংশ বার্ষিক সাধারণ সভা বা এজিএম শেষে বিতরণ করা হবে। এই লভ্যাংশ কারা পাবেন সেটি নির্ধারণের জন্য ২৬ ফেব্রুয়ারি রেকর্ড তারিখ রয়েছে। এই তারিখে যাদের হাতে কোম্পানিটির শেয়ার থাকবে, তারা ১৭০ শতাংশ লভ্যাংশ পাবেন। এই রেকর্ড তারিখকে সামনে রেখে বিনিয়োগকারীদের একটি অংশের মধ্যে কোম্পানিটির শেয়ারের প্রতি আগ্রহ বেড়েছে। বিশেষ করে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের মধ্যে এই আগ্রহ বেশি। কারণ, বাজারের বর্তমান পরিস্থিতিতে অন্য শেয়ারে বিনিয়োগ করে ভালো মুনাফা বা লভ্যাংশ পাওয়ার সম্ভাবনা কম। আবার নগদ লভ্যাংশে করসুবিধাও পাওয়া যায়।

এ বিষয়ে ডিএসইর পরিচালক শাকিল রিজভী প্রথম আলোকে বলেন, বেশ কিছুদিন শেয়ারবাজারে খারাপ বা বাজে কোম্পানির দাপট ছিল। সেখান থেকে লেনদেন ও মূল্যবৃদ্ধিতে গত কয়েক দিন ভালো কোম্পানিগুলোর দাপট কিছুটা বেড়েছে। এটি বাজারের জন্য ইতিবাচক দিক। সামনে গ্রামীণফোনের শেয়ারের রেকর্ড তারিখ রয়েছে। এ কারণে প্রাতিষ্ঠানিক ও ব্যক্তিশ্রেণির বড় বিনিয়োগকারীরা ভালো লভ্যাংশের আশায় কোম্পানিটির শেয়ারের প্রতি আগ্রহী হয়েছেন। এতে লেনদেনে শীর্ষে উঠে এসেছে গ্রামীণফোন।

এদিকে আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত বছর শেষে গ্রামীণফোন ৩ হাজার ৬৩১ কোটি টাকা মুনাফা করেছে, যা ২০২৩ সালের তুলনায় ৩২৪ কোটি টাকা বা ১০ শতাংশ বেশি। গত বছরের জন্য কোম্পানিটি যে লভ্যাংশ দিচ্ছে, তা কোম্পানিটির মুনাফার চেয়েও বেশি। সব মিলিয়ে ২০২৪ সালের জন্য লভ্যাংশ হিসেবে কোম্পানিটি শেয়ারধারীদের মধ্যে ৪ হাজার ৪৫৬ কোটি টাকা বিতরণ করবে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

পুঁজিবাজারে ধারাবাহিক পতনের কারণ অনুসন্ধানে তদন্ত কমিটি

পুঁজিবাজারে সাম্প্রতিক সময়ে ধারাবাহিক নিম্নমুখী প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে, যা পর্যবেক্ষণে অস্বাভাবিক এবং সন্দেহজনক বলে মনে করছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।

তাই বিষয়টি বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষার্থে তদন্ত করে খতিয়ে দেখা প্রয়োজন বলে করে কমিশন। ফলে সাম্প্রতিক সময়ে পুঁজিবাজার নিম্নমুখী প্রবণতার কারণ খতিয়ে দেখতে বেশ কিছু শর্ত নির্ধারণ করে চার সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। গঠিত তদন্ত কমিটিকে ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে নির্দেশ দিয়েছে বিএসইসি।

গত রবিবার (২৭ এপ্রিল) এ সংক্রান্ত একটি আদেশ জারি করা হয়েছে। বিএসইসির সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তারা রাইজিংবিডি ডটকমকে এই তথ্য জানিয়েছেন।

আরো পড়ুন:

‘অরেঞ্জ বন্ড অন্তর্ভুক্তিমূলক পুঁজিবাজার তৈরির সুযোগ দিচ্ছে’

যমুনা অয়েলের ৯ মাসে মুনাফা বেড়েছে ৩৭.৭৮ শতাংশ

তদন্তের বিষয়টি ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই), চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই) ও সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেডকে (সিডিবিএল) অবহিত করা হয়েছে।

গঠিত তদন্ত কমিটির সদস্যরা হলেন-বিএসইসির অতিরিক্ত পরিচালক মোহাম্মদ শামসুর রহমান, উপ-পরিচালক মুহাম্মদ ওরিসুল হাসান রিফাত, ডিএসইর সহকারী মহাব্যবস্থাপক মাহফুজুর রহমান এবং সিডিবিএলের সহকারী ব্যবস্থাপক কাজী মিনহাজ উদ্দিন।

বাজার বিশ্লেষণে দেখা গেছে, গত বছরের জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানে রাজনৈতিক ক্ষমতার পট পরিবর্তনের পর পুঁজিবাজারের হাল ধরেন নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ। ওই দিন অর্থাৎ ১৯ আগস্ট ডিএসইর প্রধান ডিএসইএক্স সূচক ছিল ৫৭৭৫.৪৯ পয়েন্টে। তিনি কাজে যোগ দেওয়ার ৮ মাস অতিবাহিত হলেও পুঁজিবাজারে গতিশীলতা ফিরে আসেনি। বরং, ক্ষেভে বিনিয়োগকারীরা সড়কে নেমে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন।

সর্বশেষ সোমবার (২৮ এপ্রিল) ডিএসইর ডিএসইএক্স সূচক কমে দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ৯৫২.৭৯ পয়েন্টে। ফলে প্রায় ৮ মাসে ডিএসইএক্স সূচক ৮২২.৭০ পয়েন্ট কমেছে।

এমন পরিস্থিতি বিএসইসির গঠিত তদন্ত কমিটি সাম্প্রতিক সময়ে পুঁজিবাজার নিম্নমুখী প্রবণতার কারণ খতিয়ে দেখবে। এ কাজে কোনো কারসাজি চক্র জাড়িত আছে কি-না এবং বাজারে চক্রান্তকারী গুজব রটিয়েছে কিনা-তা খতিয়ে দেখা হবে বলে জানা গেছে।

বিএসইসির তদন্তের আদেশ
সাম্প্রতিক সময়ে পুঁজিবাজারের নিম্নমুখী প্রবণতা পর্যবেক্ষণ করেছে বিএসইসি, যা অস্বাভাবিক এবং সন্দেহজনক বলে মনে করা হচ্ছে। তাই কমিশন বিষয়টি পুঁজিবাজার এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের বৃহত্তর স্বার্থে তদন্ত করে দেখা প্রয়োজন বলে মনে করছে। এরই ধারাবাহিকতায় সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অধ্যাদেশ, ১৯৬৯ (১৯৬৯ সালের অধ্যাদেশ নম্বর XVII) এর ২১ ধারা এবং বাংলাদেশ সিকিউরিটিও অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন আইন, ১৯৯৩ (১৯৯৩ সনের ১৫ নম্বর আইন) এর ১৭(ক) ধারার প্রদত্ত ক্ষমতাবলে কমিশন আলোচ্য বিষয়ে তদন্ত করার নির্দেশ দিয়েছে। উক্ত তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনা করার জন্য বিএসইসি, ডিএসই এবং সিডিবিএলের ৪জন কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হলো। গঠিত তদন্ত কমিটির কর্মকর্তারা এই আদেশ জারির তারিখ থেকে ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত সম্পন্ন করে এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন কমিশনে দাখিল করবে।

যেসব বিষয় খতিয়ে দেখবে তদন্ত কমিটি
ডিএসইএক্স সূচকের সাম্প্রতিক পতনের কারণ চিহ্নিত করা। বাজারে গুজব ছড়ানোর সাথে জড়িত ব্যক্তিদের চিহ্নিত করা অন্য কোনো আনুষঙ্গিক বিষয় থাকলে তা চিহ্নিত করা। গঠিত তদন্ত কমিটি বিনিয়োগকারীদের আস্থা বাড়ানোর জন্য সুপারিশ প্রদান করা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএসইসির পরিচালক ও মুখপাত্র মো. আবুল কালাম রাইজিংবিডি ডটকমকে বলেন, “বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে সাম্প্রতিক সময়ে পুঁজিবাজার নিম্নমুখী প্রবণতার কারণ খতিয়ে দেখতে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। গঠিত তদন্ত কমিটি কি কি কারণে বাজার পতনমুখী প্রবণতায় রয়েছে তা খতিয়ে দেখবে। একইসঙ্গে বিনিয়োগকারীদের আস্থা বাড়ানোর জন্য কি কি করা প্রয়োজন সে বিষয়েও সুপারিশ প্রদান করবে তদন্ত কমিটি।”

ঢাকা/এনটি/এসবি

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • পুঁজিবাজারে পতন, বৃষ্টিতে ভিজে বিনিয়োগকারীদের বিক্ষোভ
  • চার মাস পর লেনদেন ৩শ কোটির নিচে
  • বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে চীনা বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার আহ্বান 
  • পুঁজিবাজারে পতন অব্যাহত, বিনিয়োগকারীদের বিক্ষোভ
  • পুঁজিবাজারে ধারাবাহিক পতনের কারণ অনুসন্ধানে তদন্ত কমিটি
  • পুঁজিবাজারে সূচকের পতন, বেড়েছে লেনদেন
  • অস্বাভাবিক বাড়ছে ইস্টার্ন লুব্রিকেন্টসের শেয়ার দর, তদন্তের নির্দেশ