বিএনপি ও জামায়াতের ডাকে দোটানায় ইসলামি দলগুলো
Published: 18th, February 2025 GMT
বিএনপির সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হওয়ার পর আগামী জাতীয় নির্বাচনে ইসলামপন্থী দলগুলোকে নিয়ে মৈত্রী গড়ার চেষ্টা করছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। একইভাবে বিএনপিও তৎপর নির্বাচনী যাত্রায় ইসলামপন্থীদের পাশে পেতে।
সংশ্লিষ্ট একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, নির্বাচন ঘিরে এ দুটি দলের তৎপরতায় ইসলামি দলগুলোর মধ্যে দোটানা ভাব দেখা দিয়েছে। আগামী নির্বাচনে কী ধরনের ভূমিকা নেওয়া সঠিক হবে, তা নিয়ে আলোচনা আছে এসব দলে। যদিও দলগুলোর সব উদ্যোগই এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে।
বিএনপি তৎপর ইসলামপন্থী দলগুলোকে পাশে রেখে প্রয়োজনে ‘আসন সমঝোতা’ করে নির্বাচনী মাঠে যেতে। অন্যদিকে ইসলামপন্থীদের ভোট ‘এক বাক্সে’ আনার চিন্তা নিয়ে অগ্রসর হচ্ছে জামায়াত ও চরমোনাই পীরের দল ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। এ লক্ষ্যে দুই পক্ষই পৃথক তৎপরতা শুরু করেছে। ইতিমধ্যে ইসলামী আন্দোলন ও খেলাফত মজলিসের সঙ্গে আলাদা বৈঠক করেছে বিএনপি। শিগগির অন্যান্য ইসলামপন্থী দলের সঙ্গে বৈঠক হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানা গেছে।
বিএনপির উচ্চপর্যায়ের দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানিয়েছে, বিগত ফ্যাসিবাদবিরোধী যুগপৎ আন্দোলনে সেভাবে সক্রিয় ছিল না, এমন ইসলামি দলগুলোর সঙ্গেও বৈঠক করার সিদ্ধান্ত রয়েছে বিএনপির। এ জন্য স্থায়ী কমিটির একজন জ্যেষ্ঠ সদস্যকে বিশেষভাবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে জামায়াত প্রকাশ্যে তৎপরতা না চালালেও নির্বাচন ঘিরে ভেতরে-ভেতরে বিভিন্ন দলের সঙ্গে রাজনৈতিক মৈত্রী গড়ার চেষ্টা করছে। দলটির এই ঐক্য প্রচেষ্টার সঙ্গে ইসলামী আন্দোলনের সম্পৃক্ততা রয়েছে বলে ইসলামপন্থীদের মধ্যে আলোচনা আছে।
গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পরপরই জামায়াতের আমির বিভিন্ন ইসলামি দল ও সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে কয়েক দফায় শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। এরপর দলটি বিভিন্ন ইসলামি বক্তা, আলেম-ওলামা ও পীর-মাশায়েখদের সঙ্গেও পৃথক মতবিনিময় করে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, পরবর্তী রাজনৈতিক লক্ষ্য স্থির করেই জামায়াত এ কার্যক্রম শুরু করে। দীর্ঘদিনের বিরোধ এড়িয়ে চরমোনাই পীরের বাড়িতে গিয়ে সৌজন্য সাক্ষাৎ ও আতিথেয়তা গ্রহণের ঘটনা ওই কার্যক্রমেরই অংশ।
বিএনপি তৎপর ইসলামপন্থী দলগুলোকে পাশে রেখে প্রয়োজনে ‘আসন সমঝোতা’ করে নির্বাচনী মাঠে যেতে। অন্যদিকে ইসলামপন্থীদের ভোট ‘এক বাক্সে’ আনার চিন্তা নিয়ে অগ্রসর হচ্ছে জামায়াত ও চরমোনাই পীরের দল ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ।এ বিষয়ে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা মামুনুল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘আপাতত যেটা মনে করছি, বিএনপি জোট করবে কি না, সন্দেহ আছে। তারা বিভিন্ন ইসলামি দলের বড় নেতাদের আসন দিয়ে সমঝোতার চেষ্টা করবে; কিন্তু তাতে বিএনপি তাদের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারবে বলে মনে হয় না। অন্যদিকে জামায়াত ও ইসলামী আন্দোলন অতীতের তিক্ততা মিটিয়ে এখন ঘনিষ্ঠ। তারা ইসলামপন্থীদের ভোট “এক বাক্সে” দেওয়ার যে উদ্যোগ নিয়েছে, এটার সম্ভাবনা উজ্জ্বল হয়ে উঠছে। সব ইসলামি দল ঐক্যবদ্ধ হলে এটা অসম্ভব মনে করি না।’
দেশের ধর্মভিত্তিক প্রধান ইসলামি দল জামায়াত। এর পরেই রয়েছে ইসলামী আন্দোলন। নির্বাচন সামনে রেখে দল দুটি ঘনিষ্ঠ হয়েছে। সম্প্রতি ইসলামী আন্দোলনের প্রধান নেতা সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীমের বরিশালের বাড়িতে যান জামায়াতের আমির শফিকুর রহমান। এরপর বিভিন্ন বিষয়ে দল দুটির শীর্ষ নেতৃত্বের বক্তব্য এবং আগামী নির্বাচন ও সংস্কার প্রশ্নে প্রায় অভিন্ন অবস্থান প্রকাশ পায়। পরে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও পুরানা পল্টনে ইসলামী আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে গিয়ে দলের আমিরের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। ‘ফ্যাসিবাদবিরোধী শক্তিগুলো পরস্পর আঘাত করে কথা না বলা’সহ ১০টি বিষয়ে একমত হন তাঁরা। কার্যত এ দুটি ঘটনার মধ্য দিয়েই নির্বাচন সামনে রেখে বিএনপি ও জামায়াতের পৃথক তৎপরতা প্রকাশ পায়।
তারা ইসলামপন্থীদের ভোট “এক বাক্সে” দেওয়ার যে উদ্যোগ নিয়েছে, এটার সম্ভাবনা উজ্জ্বল হয়ে উঠছে। সব ইসলামি দল ঐক্যবদ্ধ হলে এটা অসম্ভব মনে করি না।বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা মামুনুল হকজামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক মৈত্রী ছিল বিএনপির। দল দুটি একসঙ্গে জোটবদ্ধ আন্দোলন, নির্বাচন ও সরকারেও ছিল; কিন্তু জুলাই-আগস্টের গণ–অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগের পতনের পর বিএনপির সঙ্গে জামায়াতের দূরত্ব দেখা দেয়। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, আগামী জাতীয় নির্বাচনই এর মূল কারণ। জামায়াত এবার অন্যান্য ইসলামি দলের সঙ্গে সখ্য গড়ে ঐক্যবদ্ধ নির্বাচন করতে চায়।
কথা বলে জানা গেছে, জামায়াতে ইসলামী ছাড়া অন্য ইসলামি দলগুলোর সঙ্গে সমঝোতা করে নির্বাচন করার পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে বিএনপিও। দুটি দলের পৃথক তৎপরতায় ইসলামপন্থী দলগুলোর অনেকে দোটানায় পড়েছে। এমন প্রেক্ষাপটে বিএনপি ও জামায়াতের পাশাপাশি ইসলামি দলগুলোও পরস্পর বৈঠকে মিলিত হচ্ছে। ইতিমধ্যে আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টির সঙ্গে খেলাফত মজলিস বৈঠক করেছে। তার আগে ইসলামী আন্দোলন ও বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের বৈঠক হয়েছে। দল দুটির নেতারা জানিয়েছেন, বৈঠকে আগামী নির্বাচনে ইসলামী দলের ভোট ‘এক বাক্সে’ করার বিষয়ে তাঁরা মতবিনিময় করেছেন। এ ছাড়া ইসলামি ও দেশপ্রেমী দলগুলোর ঐক্যবদ্ধ প্ল্যাটফর্ম তৈরি করে আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য তাঁরা নিজ নিজ অবস্থান থেকে কাজ করার বিষয়ে একমত হয়েছেন।
এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু প্রথম আলোকে বলেন, নির্বাচনে একটি বড় জোট করা যায় কি না, সংস্কার ও নির্বাচন নিয়ে প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে যে দূরত্ব তৈরি হয়েছে, তা নিরসনে কোনো ভূমিকা রাখা যায় কি না, এসব বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।
অবশ্য জামায়াত ও বিএনপির পৃথক তৎপরতার মধ্যে অন্য ইসলামি দলগুলোর তৎপরতা নিয়ে ইসলামপন্থীদের মধ্যে নানা আলোচনা আছে। কেউ কেউ মনে করছে, পৃথক তৎপরতা চালিয়ে কোনো কোনো দল নির্বাচনকেন্দ্রিক রাজনীতিতে একটা অবস্থান তৈরি করতে চাইছে। এমন কথাও বলাবলি আছে, যেহেতু বিএনপির সঙ্গে জামায়াতের একটা দূরত্ব তৈরি হয়েছে, তাতে আগামী নির্বাচনে বিএনপির সমর্থনে থাকলে সমঝোতায় কিছু আসন পাওয়া যেতে পারে। এ কারণে কোনো কোনো দলের বিএনপির সমর্থনে থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
যদিও একমাত্র ইসলামী আন্দোলন ছাড়া একসময় জামায়াতে ইসলামী, খেলাফত মজলিস ও বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস বিএনপির সঙ্গে জোটে ছিল। বিভিন্ন সময়ে ভিন্ন ভিন্ন প্রেক্ষাপটে তারা জোট থেকে বেরিয়ে যায়।
এ বিষয়টির উল্লেখ করে ইসলামী আন্দোলনের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব গাজী আতাউর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘কেন তারা (ইসলামি দল) বিএনপির জোট থেকে বেরিয়ে এল, নিশ্চয়ই প্রতিকূল অবস্থা তৈরি হয়েছিল। আবার বিএনপি আন্তরিক হলে তাদের তো বের হয়ে আসারও কথা না। ইসলামি দলগুলোকে অতীত থেকে শিক্ষা নেওয়া উচিত। প্রকৃত সত্য হচ্ছে, বিএনপি বা আওয়ামী লীগের সঙ্গে গিয়ে কোনো দলই শক্তিশালী হয়নি; বরং দুর্বল হয়েছে। আমরা মনে করি, এখন ইসলামি দলগুলোকে নিজেদের স্বার্থেই ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।’
নির্বাচনে একটি বড় জোট করা যায় কি না, সংস্কার ও নির্বাচন নিয়ে প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে যে দূরত্ব তৈরি হয়েছে, তা নিরসনে কোনো ভূমিকা রাখা যায় কি না, এসব বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জুআগামী জাতীয় নির্বাচনের সময়ক্ষণ নিয়ে প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে নানা বিতর্ক চলছে। এর মধ্যেই বিএনপি এবং জামায়াতের পাশাপাশি ইসলামপন্থী রাজনৈতিক দলগুলোও পরস্পর মতবিনিময় করছে।
এতে ইসলামি দলগুলোতে কোনো ধরনের দোটানা অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে মনে করেন না জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমান। ১৩ ফেব্রুয়ারি প্রথম আলোকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি না এতে কোনো দোটানা অবস্থার তৈরি করছে। কারণ, সবাইকে (ইসলামি দলগুলো) আমি যথেষ্ট ইন্টেলিজেন্ট মনে করি, ম্যাচিউরড মনে করি। সবাই সবকিছু দেখে, চিন্তাভাবনা করে সিদ্ধান্ত নেবে।’
অবশ্য বিএনপি রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পেলে জাতীয় সরকার গঠনের ধারণা নিয়েই এগোচ্ছে বলে জানান বিএনপির লিয়াজোঁ কমিটির অন্যতম নেতা ও দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘গণতন্ত্র সম্পর্কে বিএনপির ধারণা অত্যন্ত পরিষ্কার। গণতন্ত্র মানে হলো সবার মতপ্রকাশের স্বাধীনতা। ওই বিশ্বাস থেকে মনে করি, যাঁরা ইসলামকে পছন্দ করেন, তাঁরা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় ইসলামি রাজনীতি করতে পারেন। বিগত দিনে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলনে কোনো জোট ছিল না। অনেকে যুগপৎ আন্দোলনে ছিল। আমরা বলেছি, তাদের সঙ্গে নিয়েই আমরা রাষ্ট্র পরিচালনা করব।’
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ন য ইসল ম এক ব ক স য় ইসল ম র রহম ন দলগ ল ক ল ইসল ম ন ইসল ম দল র স দল দ ট র আম র সমঝ ত অবস থ
এছাড়াও পড়ুন:
৬ নভেম্বর প্রধান উপদেষ্টাকে স্মারকলিপি দেবে ৮ দল
জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশ জারি, সংশোধিত গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) বহাল এবং নির্বাচনের আগে গণভোটসহ পাঁচ দফা দাবিতে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন, খেলাফত মজলিসসহ আন্দোলনরত আট দল।
সোমবার (৩ নভেম্বর) দুপুরে রাজধানীর পুরনো পল্টনে খেলাফত মজলিসের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত যৌথ প্রেস ব্রিফিংয়ে এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা মামুনুল হক।
আরো পড়ুন:
৩০০ আসনে প্রার্থী বাছাই প্রায় চূড়ান্ত: তারেক রহমান
বরগুনায় জামায়াতে যোগ দিলেন বিএনপির বহিষ্কৃত নেতা মামুন
কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে, আগামী বৃহস্পতিবার (৬ নভেম্বর) বেলা ১১টায় প্রধান উপদেষ্টা বরাবর গণমিছিল সহকারে স্মারকলিপি প্রদান। এতে সন্তোষজনক অগ্রগতি না হলে আগামী ১১ নভেম্বর (বুধবার) ঢাকায় গণসমাবেশ কর্মসূচি পালন করা হবে। তবে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশ জারি, গণভোটসহ বিষয়গুলোর সুন্দর সমাধানে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপের আয়োজন করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে।
এ সময় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম, পীর সাহেব চরমোনাই ও বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ডা. আব্দুল্লাহ মুহাম্মাদ তাহের।
এর আগে খেলাফত মজলিসের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বৈঠকে বসেন আট দলের শীর্ষ নেতারা। দলগুলো হলো বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, খেলাফত মজলিস, খেলাফত আন্দোলন, নেজামে ইসলাম পার্টি, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা) ও ডেভেলপমেন্ট পার্টি।
নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করে মামুনুল হক বলেন, “বাংলাদেশ ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনের দ্বারপ্রান্তে উপনীত। তবে জুলাই সনদ নিয়ে দেশের মানুষ যে স্বপ্ন দেখেছিল এবং নতুন বন্দোবস্তের স্বপ্ন এখনো অধরা।’’
পূর্ব ঘোষিত ৫ দফা দাবি আদায়ে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করে তিনি বলেন, “আমাদের আটটি দলের পাঁচ দফা দাবিতে সংগ্রাম অব্যাহত থাকবে। আমরা জুলাই সনদের আইনিভিত্তি দেওয়ার দাবি জানিয়ে আসছি। অবিলম্বে জুলাই সনদ বাস্তবায়নের আদেশ জারি করতে হবে। জাতীয় নির্বাচনের আগেই পৃথকভাবে জুলাই সনদ বাস্তবায়নে গণভোট করতে হবে। আরপিও সংশোধন করা হলে আমরা সেটা মানব না। অর্থাৎ আরপিও আগের মতোই রাখতে হবে। এগুলোই এখন আমাদের মূল দাবি।
“আশা করি আলোচনার ভিত্তিতে সকল রাজনৈতিক দল সমাধান করতে পারব এবং জুলাই সনদের আইনি ভিত্তির মাধ্যমে আগামী নির্বাচন হবে’’ বলেন তিনি।
জুলাই সনদ বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া ও গণভোট আয়োজন নিয়ে মতপার্থক্য নিরসনে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সংলাপ আয়োজন করে সেই আলোচনায় প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসকে ‘রেফারির’ ভূমিকায় থাকার আহ্বান জানিয়েছেন জামায়াতে ইসলামের নায়েবে আমির সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো. তাহের।
সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো. তাহের বলেন, ‘‘আমরা যে ঐকমত্যে পৌঁছেছিলাম, তাতে হঠাৎ করে একটি দল বিরোধিতা করছে। আমরা আশা করি, তারা তাদের দলীয় অবস্থান স্পষ্ট করবে। জুলাই সনদ বাস্তবায়ন না হলে গণভোট আগে আর পরে করে লাভ নেই। বরং গণভোটের মাধ্যমে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন করতে হবে। কারণ নির্বাচনের দিন ‘হ্যাঁ’ বা ‘না’ ভোটে কারও মনযোগ থাকবে না।’’
তাহের বলেন, “আমি গতকালকে (২ নভেম্বর) দলগুলোর মধ্যে একটি আলোচনার আহ্বান করেছিলাম। আজকে উপদেষ্টা পরিষদও সেই রকম একটি আহ্বান দলগুলোর কাছে জানিয়েছে। আমরাও দেখতে চাই, মেইন স্টেক হোল্ডার দলগুলো এই আহ্বানে যেন সাড়া দেয়। তারাও যদি আমাদের মতো একইভাবে সাড়া দেয়, তাহলে একটা রাস্তা বেরিয়ে আসবে।’’
জামায়াতের এই সিনিয়র নেতা বলেন, “উপদেষ্টা পরিষদ যে মনে করেছে, তাদের আর কোনো দায়িত্ব নেই, তারা আর কিছুই করবে না, দলগুলো মিলে করবে… তাহলে এখানে একটা রেফারির অভাব হতে পারে। উপদেষ্টা পরিষদের পক্ষ থেকে, বিশেষ করে প্রধান উপদেষ্টা এখানে একটা রেফারির ভূমিকা পালন করবেন আগের মতো, এটা আমরা আশা করি।’’
মুফতি রেজাউল করীম বলেন, ‘‘জুলাই সনদের আইনিভিত্তি হলো প্রধান বিষয়। এটা না হলে এই সরকার, জুলাই গণঅভ্যুত্থান সবকিছু আইনি প্রশ্নের মুখে পড়বে। ৫ আগস্টের পরে সংস্কার, বিচার ও নির্বাচনের দায়িত্ব নিয়ে সরকার গঠিত হয়েছিল। সেই লক্ষ্যে সংস্কার কমিশন হয়েছে, ঐকমত্য কমিশন হয়েছে। গণভোটের বিষয়ে সবাই একমতও হয়েছে। এখন গণভোটের দিনক্ষণ নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে যে বিভেদ তৈরি হয়েছে, তা দুঃখজনক। এই ক্ষেত্রে বিএনপির আচরণের কোনো অর্থ আমি বুঝি না।’’
উপদেষ্টা পরিষদের আজকের বক্তব্যের প্রেক্ষিতে সকল রাজনৈতিক দলের একত্রে বসে চলমান বিভেদ দূর করে শান্তিপূর্ণ অবস্থা তৈরির আহ্বান জানান পীর সাহেব চরমোনাই।
বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ-এর আমীর মাওলানা সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম (পীর সাহেব চরমোনাই), বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসে আমীর মাওলানা মুহাম্মাদ মামুনুল হক, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর ডা. আব্দুল্লাহ আবু তাহের, খেলাফত মজলিসের আমীর মাওলানা আব্দুল বাসিত আজাদ, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ-এর প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের নায়েবে আমির মাওলানা মাহবুবুল হক ও মাওলানা কুরবান আলী কাসেমী, খেলাফত মজলিসের নায়েবে আমীর মাওলানা সাখাওয়াত হুসাইন, জাগপার সহ-সভাপতি ও মুখপাত্র রাশেদ প্রধান, খেলাফত মজলিসের মহাসচিব ড. আহমদ আবদুল কাদের, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ-এর মহাসচিব অধ্যক্ষ মাওলানা ইউনুছ আহমাদ, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মহাসচিব মাওলানা জালালুদ্দিন আহমাদ, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ড. হামিদুর রহমান আজাদ, বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টির মহাসচিব মাওলানা মুসা বিন ইজহার, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের মহাসচিব মাওলানা ইউসুফ সাদিক হক্কানী, খেলাফত মজলিসের যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর আলম, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ-এর যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমান, বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টির মহাসচিব মো. কাজী নিজামুল হক নাঈম।
ঢাকা/নঈমুদ্দীন/বকুল