পলো হাতে মাছ ধরতে দলে দলে শৌখিন শিকারিরা গোমতীতে, মাছ পেলেই হইহুল্লোড়
Published: 18th, February 2025 GMT
মাঘ পেরিয়ে ফাগুনের শুরু। প্রকৃতিতে এখনো শীতের আবহ। এমন সময় দলে দলে কুমিল্লার গোমতী নদীর দিকে ছুটছিলেন কিছু শৌখিন মানুষ। তাঁদের সবার হাতে পলো। শখের বশেই তাঁরা নদীতে এসেছেন মাছ ধরতে। নদীতে নামার পর কারও পলোতে মাছ আটকালে চারদিকে হইহুল্লোড় পড়ছিল। আবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত চেষ্টা করেও মাছ না পেয়ে শূন্য হাতেই কাউকে কাউকে ঘরে ফিরতে হয়েছে। এমন দৃশ্যই দেখা গেছে কুমিল্লা আদর্শ সদর উপজেলার ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া গোমতী নদীতে।
শৌখিন মাছশিকারিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রতিবছর শীতের শেষ সময়ে গোমতী নদীর পানি কমে এলে শৌখিন মাছশিকারিরা দূরদূরান্ত থেকে ছুটে আসেন পলো দিয়ে মাছ ধরার ঐতিহ্য আর উৎসবে মিলিত হতে। গতকাল সোমবার এবং আগের দিন রোববার পাঁচ শতাধিক শৌখিন মাছশিকারি একসঙ্গে নেমে গোমতীতে মেতে ওঠেন পলো উৎসবে।
গতকাল সকালে কুমিল্লা আদর্শ সদর উপজেলার টিক্কারচর সেতুর নিচ থেকে শুরু হয় পলো উৎসব, শেষ হয় প্রায় পাঁচ কিলোমিটার দূরে একই উপজেলার বানাসুয়া এলাকায় গিয়ে। এর আগের দিন রোববার ভারত সীমান্তের জিরো পয়েন্ট কুমিল্লা আদর্শ সদর উপজেলার কটকবাজার এলাকা থেকে শুরু হয়ে টিক্কারচর এলাকায় গোমতী নদীর সেতু পর্যন্ত প্রায় চার কিলোমিটার এলাকায় চলে পলো দিয়ে মাছ শিকার। পলো ছাড়াও অনেক শৌখিন মাছশিকারির কাছে ছিল ঝাঁকিজাল ও ঠেলাজাল। দুই দিনই অনেক শিকারির পলোতে ধরা পড়েছে বড় বড় রুই, কাতলা, বোয়াল, গজার, আইড়, মৃগেলসহ নানা ধরনের মাছ। এ ছাড়া হাতে ও জালে ধরা পড়ছে ট্যাংরা, বইচা, বাইম, কাচকিসহ নানান ধরনের ছোট মাছ। কারও পলো বা জালে বড় মাছ ধরা পড়লেই হইহুল্লোড়ে মেতে ওঠেন শৌখিন মাছশিকারিরা।
নদীর এক দিক থেকে সারিবদ্ধ হয়ে মাছ ধরেন শিকারিরা। ছবি: এম সাদেক ছবি-৩: কেউ মাছ ধরছেন, কেউ রাখছেন.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: উপজ ল র
এছাড়াও পড়ুন:
আষাঢ়ের প্রথম দিন আজ
ঝমঝম বৃষ্টি, কর্দমাক্ত পথঘাট, খাল-বিলে থৈ থৈ পানি- এমন দৃশ্যপট সামনে না থাকলেও ভেবে নিতে দোষ কি। কারণ, আজ পহেলা আষাঢ়।
রবি ঠাকুরের ভাষায়— ‘আবার এসেছে আষাঢ় আকাশও ছেয়ে... আসে বৃষ্টিরও সুবাসও বাতাসও বেয়ে...’।
অবশ্য একেবারে নিরাশ করেনি আষাঢ়। রাজধানীতে সকাল থেকেই আকাশে মেঘের আনাগোনা আর কোথাও হালকা বৃষ্টি জানান দিচ্ছে প্রকৃতিতে বর্ষার আগমন। বর্ষার আগমন যেন স্বস্তি-শান্তি ও আনন্দের। তীব্র গরমে হাঁসফাঁস নগরবাসীর জীবনে এক আনন্দের বার্তা।
বাংলার প্রকৃতিতে আলাদা বৈশিষ্টময় বর্ষা ঋতুর আজ যাত্রা শুরু হলো।
বলা হয়, গ্রীষ্মের খরতাপের ধূসর নাগরিক জীবন আর রুদ্র প্রকৃতিতে প্রাণের স্পন্দন জাগায় বর্ষা। জ্যৈষ্ঠের প্রচণ্ড খরতাপে রুক্ষ প্রকৃতি সজীব হয়ে উঠবে বর্ষার বর্ষণের মৃদঙ্গ-ছোঁয়ায়, এটাই যে সকল বাঙালির চাওয়া।
আষাঢ়ের রিমঝিম বৃষ্টি গ্রীষ্মের ধুলোমলিন জীর্ণতাকে ধুয়ে ফেলে গাঢ় সবুজের সমারোহে প্রকৃতি সাজে পূর্ণতায়। রঙিন হয়ে পুকুর-বিলে ফোটে শাপলা-পদ্ম। বর্ষা ঋতু তার বৈশিষ্ট্যের কারণে স্বতন্ত্র। বর্ষার প্রবল বর্ষণে নির্জনে ভালোবাসার সাধ জাগে, চিত্তচাঞ্চল্য বেড়ে যায়। বর্ষার নতুন জলে স্নান সেরে প্রকৃতির মনও যেন নেচে ওঠে। ফুলে ফুলে শোভিত হয় প্রকৃতি। তাই বর্ষাবিহীন বাংলাদেশ ভাবাই যায় না।
বর্ষা বাঙালি জীবনে নতুন প্রাণসঞ্চারকারী। বৃষ্টিস্নাত কদম ফুলের সৌন্দর্য্য যে দেখেছে, মুগ্ধ নয়নে চেয়ে না থেকে পারেনি। এর বর্ণনায় পল্লীকবি জসীমউদদীন লিখেছেন- ‘বনের ঝিয়ারি কদম্বশাখে নিঝঝুম নিরালায়, / ছোট ছোট রেণু খুলিয়া দেখিছে, অস্ফুট কলিকায়।’
বৃষ্টি হলে গ্রামের নদী নালা পুকুরে জল জমে থৈ থৈ করে। বর্ষা আনন্দ-বেদনার সারথী। সবুজের সমারোহে, মাটিতে নতুন পলির আস্তরণে বর্ষা আনে জীবনেরই বারতা।
উন্নয়নের নামে চলমান প্রাণ-প্রকৃতি ধ্বংসের প্রক্রিয়া বন্ধের দাবি নিয়ে প্রতি বছরের মতো এ বছরও বর্ষা ঋতুকে বরণ করে নিতে ‘বর্ষা উৎসব’ আয়োজন করেছে বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী।
রবিবার (১৫ জুন) আষাঢ়ের প্রথমদিনে বাংলা একাডেমির নজরুল মঞ্চে এ উৎসব অনুষ্ঠিত হচ্ছে। সকালে সুর-সংগীতে প্রকৃতি-বন্দনার মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে উৎসবের কর্মসূচি।
ঢাকা/টিপু