সাটুরিয়ার গাজীখালী নদীর দুই পাশে গড়ে উঠেছে অনেক প্রতিষ্ঠান ও আবাসিক ভবন। এসব স্থাপনার ময়লা-আবর্জনা ফেলার জন্য ‘টোকাই প্রকল্প’ হাতে নেওয়া হয়। সেই অনুযায়ী, সরকারি কোষাগার থেকে ২৫ লাখ টাকা খরচ করে দুটি গাড়ি কেনা হয় এক বছর আগে। দুই ‘টোকাই’ এখন গ্যারেজে বন্দি। এর সঙ্গে ৯টি ছোট ব্যাটারিচালিত যানও ইউনিয়নে পড়ে আছে।
ময়লা-আবর্জনা ফেলার স্থায়ী ডাম্পিং স্টেশন নির্মাণ না করে এভাবে লাখ লাখ টাকা অপচয় করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। উন্নয়ন প্রকল্পের বরাদ্দ থেকে টোকাই প্রকল্পের নামে দুটি ডাম্পিং গাড়ি ক্রয় করা হয় ২০২৩-২৪ অর্থবছরে। এতে ব্যয় করা হয় ২৫ লাখ টাকার বেশি। এ প্রকল্পে সহযোগিতা করার জন্য ইউনিয়নগুলোয় ব্যয় করা হয় আরও ১০ লাখ ৮০ হাজার টাকা।
ময়লা-আবর্জনা ফেলার ডাম্পিং স্টেশন না করে গাড়ি কেনা হয়েছে বলে জানান সাটুরিয়া সদর ইউপি চেয়ারম্যান মো.
উপজেলা প্রকৌশলীর কার্যালয় থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ক্লিন ও গ্রিন সাটুরিয়া নির্মাণে উপজেলা উন্নয়ন বরাদ্দ (এডিপি) থেকে টোকাই ‘প্রকল্প’ নেওয়া হয়। দরপত্রের মাধ্যমে কোনো গাড়ির ক্রয়-বিক্রয় প্রতিষ্ঠান কাজটি পায়নি। কাজটি পেয়েছিল রাস্তা নির্মাণের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আর কে এন্টারপ্রাইজ।
জানা গেছে, উপজেলা প্রশাসন কিছু ময়লা-আবর্জনা সংগ্রহ করে গাড়িতে ভরে এনেছিল বালিয়াটি ঈশ্বরচন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠে। গত ৫ জুন এর উদ্বোধন করেন তৎকালীন জেলা প্রশাসক রেহেনা আক্তার। এর পর থেকে গাড়িগুলো গ্যারেজে বন্দি রয়েছে। প্রকল্পটি গ্রহণ করেছিলেন তৎকালীন ইউএনও শান্তা রহমান।
উপজেলার ঘনবসতিপূর্ণ এলাকার ময়লা-আবর্জনা ফেলার জন্য ইউপি চেয়ারম্যানরা ডাম্পিং স্টেশন করার জন্য প্রস্তাব করেন। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে মাসিক সমন্বয় সভায় এর অনুমোদন দেয় উপজেলা পরিষদ। কিন্তু ডাম্পিং স্টেশন নির্মাণ না করে ২৫ লাখ টাকা দিয়ে কেনা হয় দুটি গাড়ি। এক বছর ধরে সেগুলো গ্যারেজে পড়ে রয়েছে। এতে গাড়ির যন্ত্রাংশ ও ব্যাটারি নষ্ট হচ্ছে।
সাটুরিয়া সদরে দুই শতাধিক আবাসিক ভবন রয়েছে। এসব ভবনের ময়লা-আবর্জনা গাজীখালী নদীতে ফেলা হয়। ফলে নদীটি ভরাট হয়ে নাব্য হারাচ্ছে। নদী বাঁচাতে এই উদ্যোগ নেওয়া হলেও তা এক বছরেও আলোর মুখ দেখেনি। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ কয়েকটি ক্লিনিকের ময়লা-আবর্জনা যত্রতত্র ফেলা হচ্ছে। জনবহুল স্থান থেকে বর্জ্য সংগ্রহ করে রিসাইকেল করে বিভিন্ন পণ্য তৈরি করাও এ প্রকল্পের উদ্দেশ্য ছিল। অভিযোগ উঠেছে, অহেতুক এ প্রকল্পে ব্যয় করা হয়েছে প্রায় ৩৬ লোখ টাকা। এটি কোনো কাজেই আসছে না।
সংশ্লিষ্টরা জানান, উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের ময়লা-আবর্জনা ফেলার জন্য ভূমি উন্নয়ন কর থেকে দুই ভাগ টাকা ইউএনওর হিসাব নম্বরে জমা হয়। এর দুই ভাগের এক ভাগ টাকা ইউপি চেয়ারম্যানদের হিসাব নম্বরে দেওয়া হয়। সেই টাকায় চেয়ারম্যানরা প্রকল্প নেন। টোকাই প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে ৯টি ইউনিয়নের
প্রতিটিতে ১ লাখ ২০ হাজার টাকার ব্যাটারিচালিত ভ্যান ট্রলি তৈরি করা হয় ময়লা-আবর্জনা আনা-নেওয়ার জন্য।
টোকাই প্রকল্পের ‘ক্লিন সাটুরিয়া ও গ্রিন সাটুরিয়া’র জন্য এসব গাড়ি তৈরি করা হলেও তা কোনো কাজে আসছে না, অবহেলায় নষ্ট হচ্ছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, এক বছরে ময়লা-আবর্জনা নেওয়ার জন্য এক দিনও টোকাই গাড়ি আসেনি। যে প্রকল্প মানুষের উপকারে আসবে না, তা হাতে নেওয়ার চিন্তাভাবনা করা উচিত নয়।
স্থানীয় বাসিন্দা মোহাম্মদ সজল হোসেনের ভাষ্য, অহেতুক প্রকল্প গ্রহণ করেছে। বাড়ির ময়লা-আবর্জনায় বিভিন্ন স্থানে ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। আরেক বাসিন্দা মো. লুৎফুর রহমানের ভাষ্য, ডাম্পিং স্টেশন না করায় টোকাই প্রকল্প কাজে আসছে না। ময়লা-আবর্জনা নদী ও সড়কের পাশে ফেলায় দুর্গন্ধ ছড়ানোর পাশাপাশি পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে।
সরকারি কোষাগারের টাকা খরচ হলেও স্থানীয় বাসিন্দাদের কোনো উপকারে আসেনি বলে মনে করেন দরগ্রাম ইউপি চেয়ারম্যান মো. আলিনূর বকস রতন। তাঁর ভাষ্য, অহেতুক টাকা অপচয় করা হয়েছে। ইউএনও মো. ইকবাল হোসেন বলেন, ‘দুই মাস হলো সাটুরিয়ায় যোগদান করেছি। এ বিষয়ে আমার তেমন কিছু জানা নেই। টোকাই প্রকল্প কীভাবে বাস্তবায়ন করা যায়, সে জন্য খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ট ক ই প রকল প প রকল প র এ প রকল প এক বছর র জন য র ময়ল উপজ ল
এছাড়াও পড়ুন:
সুদ পরিশোধে ব্যয় বাড়ছে
সুদ পরিশোধে সরকারের ব্যয় বাড়ছে। এ ব্যয় বহন করতে রীতিমত হিমশিম খেতে হচ্ছে। বাজেটে সরকারের সুদ পরিশোধ সংক্রান্ত পূর্বাভাসে দেখা যাচ্ছে, আগামী বছরগুলোতে সুদ ব্যয় ক্রমাগত বৃদ্ধি পাবে।
পরিচালন ও উন্নয়ন বাজেটের প্রায় ১৫ ভাগ অর্থই সুদ খাতে খরচ করতে হচ্ছে এখন। এ পরিস্থিতিতে আগামী তিন অর্থবছরে সুদ খাতেই ব্যয় করতে হবে চার লাখ ১০ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। পাঁচ অর্থবছরের ব্যবধানে সুদ ব্যয় বাড়ছে ৩৩ শতাংশ। এর মধ্যে শতাংশের হিসাবে বৈদেশিক ঋণের সুদ ব্যয় সবচেয়ে বেশি বাড়বে।
অর্থ বিভাগের করা ‘মধ্যমেয়াদি সামষ্টিক অর্থনৈতিক নীতি বিবৃতি-২০২৫-২০২৬ থেকে ২০২৭-২০২৮’ এ তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে।
পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে সুদ খাতে ব্যয় হয়েছিল এক লাখ ১৪ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে অভ্যন্তরীণ খাতে সুদ ব্যয় ছিল ৯৯ হাজার ৬০০ কোটি টাকা এবং বিদেশি ঋণের সুদ ব্যয় গেছে ১৫ হাজার ১০০ কোটি টাকা।
চলতি ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে (যা চলতি জুনের ৩০ তারিখে শেষ হয়ে যাবে) মূল বাজেটে সুদ খাতে ব্যয় বরাদ্দ ছিল এক লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু বছর শেষে এই সীমায় সুদ ব্যয় ধরে রাখা সম্ভব হয়নি। ফলে সংশোধিত বাজেটে এ খাতে ব্যয় বাড়িয়ে ধরা হয়েছে এক লাখ ২১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। এ হিসাবের মধ্যে ছিল অভ্যন্তরীণ ঋণের সুদ ব্যয় ৯৯ হাজার ৫০০ কোটি টাকা এবং বিদেশী ঋণের ২২ হাজার কোটি টাকা।
একইভাবে আগামী তিন অর্থবছরে সুদ খাতে ব্যয়েরও একটি প্রক্ষেপণ করেছে অর্থ বিভাগ। এই হিসেবে দেখা যায় আগামী ১ জুলাই থেকে শুরু হওয়া ২০২৫-২০২৬ অর্থবছরে সুদ খাতে ব্যয় হবে এক লাখ ২২ হাজার কোটি টাকা (অভ্যন্তরীণ এক লাখ কোটি টাকা , বিদেশি ঋণের সুদ ব্যয় ২২ হাজার কোটি টাকা)। একইভাবে এর পরের অর্থবছর ২০২৬-২০২৭ অর্থবছরে একলাখ ৩৬ হাজার ২০০ কোটি টাকা(অভ্যন্তরীণ এক লাখ ১২ হাজার কোটি টাকা এবং বিদেশি ঋণের ২৪ হাজার ২০০ কোটি টাকা) এবং ২০২৭-২০২৮ অর্থবছরে সুদ খাতে ব্যয়ের প্রক্ষেপণ করা হয়েছে ১ লাখ ৫২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা।
অর্থ বিভাগ থেকে বলা হয়েছে, মোট সুদ ব্যয়ের সিংহভাগই অভ্যন্তরীণ ঋণের সুদ পরিশোধ। অভ্যন্তরীণ ঋণের সুদ পরিশোধ ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে ৯৯ হাজার ৬০০ কোটি টাকা থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ২০২৭-২০২৮ অর্থবছরে এক লাখ ২৫ হাজার ৫০০ কোটি টাকা গিয়ে পৌঁছাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। কিন্তু মোট বাজেটের অনুপাতে অভ্যন্তরীণ সুদ পরিশোধের হার ২০২৩ -২০২৪ অর্থবছরে ১৬ দশমিক ২৯ শতাংশ থেকে কমে ২০২৭-২০২৮ অর্থবছরে ১২ দশমিক ৭৫ শতাংশে হ্রাস পাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। যদিও বৈদেশিক ঋণের সুদ পরিশোধ মোট সুদ ব্যয়ের তুলনায় কম, তবে এটি উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পাবে বলে অনুমান করা হচ্ছে। ফলে এটি ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে ১৫ হাজার ১০০ কোটি টাকা থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ২০২৭-২০২৮ অর্থবছরে ২৭ হাজার ১০০ কোটি টাকায় উন্নীত হতে পারে। মোট বাজেটের অনুপাতে বৈদেশিক ঋণের সুদ পরিশোধ এ সময়কালে ২ দশমিক ৪৭ শতাংশ থেকে বেড়ে ২ দশমিক ৭৬ শতাংশে উন্নীত হতে পারে।
বিদেশি ঋণের সুদ ব্যয় নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে অর্থ বিভাগ থেকে বলা হয়েছে, বৈদেশিক ঋণের সুদ পরিশোধের কার্যকর ব্যবস্থাপনা শুধু আর্থিক শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্যই নয়, বরং এটি সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ রক্ষা, টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করা, আন্তর্জাতিক ঋণমান বজায় রাখা এবং ভবিষ্যতের উন্নয়ন সম্ভাবনা সুরক্ষিত রাখার জন্য অপরিহার্য।