‘দ্রুত আইসিইউ সেবা পেলে হয়তো ওকে বাঁচানো যেত’
Published: 19th, February 2025 GMT
সাংবাদিক মাসুমা ইসলামের (২৭) শ্বশুরবাড়ি কুমিল্লায়। সেখানে তাঁর শাশুড়ি অসুস্থ। তাঁকে দেখতে স্বামীকে নিয়ে রাজশাহী থেকে রওনা হন মাসুমা। গত শুক্রবার ভোরে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে একটি হোটেলের উল্টোদিকে বাস থেকে নামেন তারা। সিএনজিচালিত অটোরিকশার ভাড়া ঠিক করার সময় দ্রুতগামী একটি গাড়ি ধাক্কা দেয়। এতে মাসুমা, তাঁর স্বামী সৈকত ইসলাম এবং অটোরিকশার চালক গুরুতর আহত হন।
প্রথমে মাসুমাকে কুমিল্লা সদরে একটি হাসপাতালে নেওয়া হয়। অবস্থার অবনতি হলে তাঁকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে পাঠানো হয়। চিকিৎসকরা তাঁকে জরুরি ভিত্তিতে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) রাখার নির্দেশনা দেন। তবে ঢামেকে আইসিইউ বেড ফাঁকা ছিল না। এ ছাড়া শুক্র ও শনিবার ঢামেক হাসপাতালে কোনো বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক না থাকায় তাঁর শরীরে যেসব গুরুতর আঘাত ছিল, তা নিরূপণ করা যায়নি।
পরে নারায়ণগঞ্জের সাইনবোর্ড এলাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে তাঁকে ভর্তি করা হয়। সেখানে আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মঙ্গলবার ভোরে না-ফেরার দেশে চলে যান এ সংবাদকর্মী।
মাসুমা ইসলাম ‘এখন টেলিভিশন’-এর রাজশাহী ব্যুরো অফিসের নিজস্ব প্রতিবেদক ছিলেন। তাঁর গ্রামের বাড়ি নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলার নারায়ণপুরে। স্বামীর সঙ্গে রাজশাহীতে বাস করছিলেন। তাঁর মৃত্যুতে শোকাচ্ছন্ন পরিবারের সদস্য ও সহকর্মীরা। তাঁর স্বামী দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, ‘দুর্ঘটনার পর মাসুমার অবস্থা খুবই খারাপ ছিল। শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত লাগে। ঢাকা মেডিকেলে আসার পর দ্রুত আইসিইউতে সেবা পেলে হয়তো তার অবস্থা এতটা খারাপ হতো না। তা ছাড়া বিশেষজ্ঞ ডাক্তার না থাকায় তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে যে গুরুতর আঘাত পেয়েছিল, তা জানা যায়নি। পরে নারায়ণঞ্জে আমার মামার বেসরকারি একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। কিন্তু ততক্ষণে তার কিডনি প্রায় বিকল হয়ে যায়। ঘাড়ের রগ ও হাড় ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এসব চিকিৎসা দিতে অনেক সময় চলে যায়। এসব কারণে তাকে বাঁচানো গেল না।’
মাসুমা পড়াশোনা করেছেন রাজশাহীর নর্থ বেঙ্গল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে। ২০১৮ সাল দৈনিক সমকালের পাঠক সংগঠন সুহৃদ সমাবেশের সঙ্গে যুক্ত হন তিনি। এ সময় সমকাল সুহৃদ সমাবেশ নর্থ বেঙ্গল বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। এরপরই তিনি সাংবাদিকতায় যুক্ত হন।
এখন টিভির রাজশাহী ব্যুরো প্রধান রাকিবুল হাসান রাজিব বলেন, মাসুমার মরদেহ নাটোরের গুরুদাসপুরে গ্রামের বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়। মঙ্গলবার আসর নামাজের পর পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে।
স্বজন ও সহকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অনেক প্রতিকূল পরিস্থিতি মোকাবিলা করেই ঘুরে দাঁড়িয়েছিলেন মাসুমা ইসলাম। ২০১২ সালে নাটোরের সাইফুজ্জামান সুজনকে বিয়ে করেন। বিয়ের দুই বছরের মাথায় মাসুমা যখন সন্তানসম্ভবা, ঠিক সেই সময় দুর্বৃত্তদের গুলিতে নিহত হন সুজন। এরপর সন্তানকে নিয়ে দুঃখ-হতাশায় কেটে যায় আরও চার বছর। শিশুপুত্রকে দাদা-দাদির কাছে রেখে জীবনের নতুন স্বপ্নে, নতুন লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য রাজশাহী নর্থ বেঙ্গল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে সাংবাদিকতা বিভাগে অনার্সে ভর্তি হন ২০১৬ সালে। ২০২২ সালে সাংবাদিকতা বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করে যুক্ত হন রাজশাহীর স্থানীয় পত্রিকা বাংলার জনপদে যোগ দেন প্রতিবেদক হিসেবে। নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলার শ্রীরামপুর এলাকার বাসিন্দা সৈকত ইসলামের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন তিনি। বাধা-বিপত্তি কাটিয়ে যখন স্বামীকে নিয়ে সুখের সংসার করছিলেন মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় না-ফেরার দেশে চলে গেলেন তিনি।
মাসুমার মা রেহেনা বেগম বলেন, ‘আমার মেয়ের জীবনটাই দুর্ঘটনাময়। ভালোবেসে বিয়ে করেও প্রথমে মেয়েটা স্বামীকে হারায়। যখন নতুন করে ছোট সন্তান ও নতুন সংসার সাজাতে ব্যস্ত, তখনি ঘাতক বাস কেড়ে নিল তার স্বপ্ন। মেয়ের স্মৃতি বলতে এখন শুধু তার সপ্তম শ্রেণিপড়ুয়া ছাত্র মেঘ।’
এখন টেলিভিশনে মাসুমা ইসলামের সহকর্মী মাহবুব হোসাইন বলেন, দীর্ঘ সময় বাংলার জনপদে কাজ করেছেন মাসুমা। টেলিভিশনে যুক্ত হয়ে ভালো কাজের মাধ্যমে সবার মন জয় করেছিলেন।
হাইওয়ে কুমিল্লা রিজিয়নের অ্যাডিশনাল ডিআইজি মো.
এখন টিভির সিনিয়র রিপোর্টার মুজাহিদ শুভ বলেন, ঢাকার বেশ কয়েকটি হাসপাতালে আইসিইউ খোঁজাখুঁজি করেও পাওয়া যায়নি। তাই নারায়ণগঞ্জে আত্মীয় বাড়ি থাকায় সেখানে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছিল মাসুমাকে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: দ র ঘটন ব দ কত অবস থ ইসল ম এখন ট
এছাড়াও পড়ুন:
অফিসে প্রেম করার আগে জেনে রাখুন
আমরা যাঁরা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কাজ করি, তাঁদের দিনের বড় একটি অংশ সহকর্মীদের সঙ্গেই কাটে। আসা–যাওয়া আর ঘুমের সময়টুকু বাদ দিলে দেখা যাবে, পরিবারের সদস্যদের চেয়ে তাঁদের সঙ্গেই কাটছে বেশি সময়। স্বাভাবিকভাবেই সহকর্মীদের সঙ্গে একধরনের সম্পর্ক তৈরি হয়ে যায়, তাঁরা হয়ে ওঠেন বন্ধু, মনের কথা ভাগ করে নেওয়ার সঙ্গী। কখনো কখনো এই সম্পর্ক পেশাগত সীমারেখাও ছাড়িয়ে যায়।
প্রশ্ন হলো, সহকর্মীদের সঙ্গে আচরণের ক্ষেত্রে এই সীমারেখা কোথায় টানতে হবে? অফিসে বা বাইরে বিপরীত লিঙ্গের সহকর্মীর সঙ্গে কোন কথাটা বলা যাবে, কোন ঠাট্টাটা করা যাবে, মোটের ওপর কতটা মেলামেশা করা যাবে?
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের বোস্টনে কোল্ডপ্লের কনসার্ট দেখতে গিয়ে অন্তরঙ্গ অবস্থায় ক্যামেরায় ধরা পড়েন মার্কিন সফটওয়্যার সংস্থা অ্যাস্ট্রোনোমার প্রধান নির্বাহী অ্যান্ডি বায়রন ও সংস্থাটির এইচআর প্রধান ক্রিস্টিন ক্যাবট। যাঁদের দুজনেরই রয়েছে আলাদা পরিবার। তাঁদের সম্পর্কের বিষয়টি প্রকাশ্যে আসতেই অফিসের ক্ষেত্রে সহকর্মীর সঙ্গে সম্পর্ক কেমন হবে, একটি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ব্যক্তিদের মধ্যের সম্পর্ক নৈতিকতার কোন মানদণ্ড মেনে চলবে, তা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে।
সহকর্মীর সঙ্গে কেমন আচরণ করবেন সেসব নিয়ে প্রতিটি ভালো অফিসেই আচরণবিধি থাকে