সাবেক স্বাস্থ্য সচিবের শতকোটি টাকার সম্পদ
Published: 19th, February 2025 GMT
গ্রেপ্তার হওয়া স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সাবেক সচিব জাহাঙ্গীর আলমের শতকোটি টাকা দামের বিপুল সম্পদের সন্ধান মিলেছে। ঢাকার উত্তরায় ১০ তলা বাড়ি, শেওড়াপাড়ায় ছয়তলা ও রংপুর শহরে ছয়তলা বাড়ি এবং বনানীতে রয়েছে আলিশান ফ্ল্যাট। নিজে ছাড়াও আত্মীয়স্বজনের নামে গড়েছেন সম্পদের পাহাড়। তাঁর বদৌলতে ভাই-ভাতিজাসহ অনেকে হয়েছেন আঙুল ফুলে কলাগাছ। সমকালের অনুসন্ধানে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
গতকাল মঙ্গলবার ভোরে রাজধানী থেকে দাপুটে এই সচিবকে গ্রেপ্তার ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। পরে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আবেদনে তাঁকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে এপিএস হিসেবে চার বছরের বেশি সময় দায়িত্ব পালনকালে জাহাঙ্গীর আলমের দাপট বাড়তে থাকে। গত বছর কয়েক কোটি টাকা খরচ করে আমলাদের অভিজাত ক্লাব অফিসার্স ক্লাব ঢাকার সাধারণ সম্পাদক পদে নির্বাচন করে পরাজিত হন। ২০২৩ সালের অক্টোবরে স্বাস্থ্য সেবা বিভাগে সচিবের দায়িত্ব পাওয়া এই আমলা জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানের সময়ও একই পদে বহাল ছিলেন।
তিন বহুতল বাড়ি, বনানীতে আলিশান ফ্ল্যাট
ঢাকার উত্তরার ৭ নম্বর সেক্টরের ১৮ নম্বর সড়কের পাঁচ কাঠা জমিতে ১০ তলা বাড়ি নির্মাণ করেন জাহাঙ্গীর আলম। প্রতি তলায় রয়েছে চারটি করে ইউনিট। প্রায় সবই ভাড়া দেওয়া। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এপিএস-১ থাকাকালে উত্তরার প্লটটি বরাদ্দ পান তিনি। পরে বাড়ি নির্মাণ করেন। এ বাড়িটির দাম অন্তত ৪০ কোটি টাকা। শেওড়াপাড়ার ছয়তলা বাড়িটির সব ফ্ল্যাট ভাড়া দেওয়া রয়েছে। বনানীতে আড়াই হাজার বর্গফুটের বেশি বড় আলিশান ফ্ল্যাটটিও ৪ কোটি টাকায় কেনেন। বাস্তবে মূল্য আরও বেশি। নিজ বাড়ি রংপুর শহরের পশ্চিম মুলটোল এলাকায় ছয়তলা বাড়িটিতেও কিছু ফ্ল্যাটে স্বজন থাকেন, আর কিছু ফ্ল্যাট ভাড়া দেওয়া। পীরগঞ্জে রয়েছে দৃষ্টিনন্দন ডুপ্লেক্স বাড়ি। এ ছাড়া বগুড়ার সোনাতলা সদরে শ্বশুরবাড়ি এলাকায় একটি বাড়ি রয়েছে সাবেক এই সচিবের। এ ছাড়া মালয়েশিয়া ও কানাডায় বাড়ি রয়েছে বলেও একাধিক সূত্রে নিশ্চিত করেছে।
স্বজনও আঙুল ফুলে কলাগাছ
জাহাঙ্গীর আলমের চার ভাই। বড় ভাই মোস্তাফিজার রহমান সাজু, দ্বিতীয় জন সুলতান মিয়া, জাহাঙ্গীর আলম বুলবুল তৃতীয় এবং চতুর্থ জন দিদারুল আলম বাবলু। রংপুরের পীরগঞ্জের প্রত্যন্ত পল্লি দক্ষিণ জাফরপাড়ায় জাহাঙ্গীরের পুরো পরিবার কৃষির ওপর নির্ভরশীল ছিল। এক ভাই আমলা হওয়ায় সবার কপাল খুলে যায়। নিজের গ্রামের বাড়ি দক্ষিণ জাফরপাড়ায় কোনো সম্পত্তি করেননি। পৈতৃক বাড়িটি এখনও টিনশেড রয়ে গেছে। সেটি কোনো রকমে মেরামত করা। বড় ভাই সাজু এবং সুলতান কৃষিকাজ করতেন। জাহাঙ্গীর যখন প্রধানমন্ত্রীর এপিএস হন, তার পর দক্ষিণ জাফরপাড়া থেকে দুই কিলোমিটার দূরে খালাশপীর হাটে চারতলা ফাউন্ডেশনের তিনতলা নিজস্ব ভবনে দোকান হয় দুই ভাইয়ের।
আত্মীয়স্বজনের মধ্যে ভাগনে ও ভাতিজা অনেককে চাকরি দিয়েছেন। মেজ ভাই সুলতানের ছেলে সোহেল হোসেনকে বেসিক ব্যাংকে চাকরি দেন তিনি। ছোট ভাই বাবলু স্থানীয় একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক। পীরগঞ্জ উপজেলা পরিষদ-সংলগ্ন প্রায় পাঁচ কাঠা জমির ওপর বাবলুর নামে চার তলা ভবন করে দিয়েছেন সাবেক এই আমলা।
চাচাতো ভাই আজিজার রহমানের ছেলে আরিফকে পীরগঞ্জ ভূমি অফিসে চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী হিসেবে চাকরি নিয়ে দেন। আরিফ চাচার নাম ভাঙিয়ে স্থানীয় বালুমহালে প্রভাব খাটিয়ে ব্যবসায় নামেন। চতুর্থ শ্রেণির এই কর্মচারী মোবাইল ফোনের শোরুম দেন এবং প্রায় ৭০ লাখ টাকা দামের প্রাইভেটকারে চলাফেরা করেন।
প্রতিবেশী ভাতিজা উজ্জ্বল সচিব চাচার নাম ভাঙিয়ে বালু ব্যবসা, শ্রমিক ফেডারেশনে জড়িত হয়ে খালাশপীর হাটে চাঁদাবাজিতেও যুক্ত হন। আরিফ ও উজ্জ্বল যুবলীগের রাজনীতিতেও সক্রিয় হন। খালাশপীর হাট দীর্ঘদিন তাদের দখলে ছিল। জাহাঙ্গীরের দূরসম্পর্কের আত্মীয় পীরগঞ্জ উপজেলা বিএনপির নেতা। তাঁর সঙ্গে যোগসাজশ করেই এখনও হাট পরিচালনা করেন আরিফ ও উজ্জ্বল।
নিকটাত্মীয়রা ছাড়াও পীরগঞ্জে প্রভাবশালী কয়েকজন বিশ্বস্ত লোক তৈরি করেছিলেন জাহাঙ্গীর। তারা সরকারি নিয়োগ, বদলিসহ বিভিন্ন বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত। রায়পুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাইদুর রহমান দুলাল চৌধুরী, পীরগঞ্জ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ইসমাইল হোসেন এবং গোপীনাথপুর কওমি মাদ্রাসার মোহতামিম ও পীরগঞ্জ উপজেলা ওলামা লীগের সভাপতি হাফেজ রফিকুল ইসলাম। এই তিনজন মূলত রংপুর ও পীরগঞ্জকেন্দ্রিক সব তদবির জাহাঙ্গীরের কাছে পেশ করতেন। এ ছাড়া গোপীনাথপুরে তাঁর মা মৃত গোলেজা খাতুনের নামে একটি প্রতিবন্ধী স্কুল রয়েছে। সেটিও সচিবালয়ের প্রভাব খাটিয়ে এমপিওভুক্ত করেছেন তিনি।
সচিবালয়ে প্রধানমন্ত্রীর দাপটে চলতেন জাহাঙ্গীর
সাবেক এই সচিবের দাপটে তটস্থ থাকেন অধস্তন-ঊর্ধ্বতন সবাই। খোদ সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা.
এ ছাড়া মন্ত্রী হওয়ার আগে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের পরিচালক থাকাকালে এই সচিবের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে এসে সময় না পেয়ে ক্ষুব্ধ হয়ে ফিরে গিয়েছিলেন সামন্ত লাল। মন্ত্রী হওয়ার পর মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে এক মতবিনিময়ে তিনি ওই সব ঘটনার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন।
গত বছরের জুনে মন্ত্রীর স্বাক্ষর করা বিভাগওয়ারি চিকিৎসা সরঞ্জাম কেনার জন্য ৫০ কোটি টাকার একটি ফাইল স্বাস্থ্য সচিব বেশ কিছুদিন ফেলে রেখেছিলেন। তাঁর কারণে কাজ করতে পারছেন না বলে মন্ত্রণালয়ে একদিন ক্ষোভও প্রকাশ করেন তৎকালীন স্বাস্থ্যমন্ত্রী।
দুদকের মামলা
সাবেক এই সচিবের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুদক। গতকাল মামলাটি করেন দুদকের সহকারী পরিচালক রাকিবুল হায়াত। মামলার এজাহারে বলা হয়, সাবেক সচিব জাহাঙ্গীর আলম ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে ১৩ কোটি ৭৬ লাখ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন করে ভোগ দখলে রেখে দুদক আইন ও দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনে শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: জ হ ঙ গ র আলম মন ত র র স ব ক এই প রগঞ জ
এছাড়াও পড়ুন:
সমালোচনা নিয়ে মুখ খুললেন ভাবনা
ছোটপর্দা থেকে বড়পর্দা—দু’জায়গাতেই নিজের অভিনয়গুণে জায়গা করে নিয়েছেন অভিনেত্রী আশনা হাবিব ভাবনা। পর্দার চরিত্রে যেমন সাহসী, বাস্তব জীবনেও তেমনি সরব ও স্পষ্টভাষী।
বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তার উপস্থিতি সবসময়ই আলোচনায় থাকে। নিয়মিত ছবি ও ভাবনার টুকরো প্রকাশ করায় অনেক সময় কটাক্ষের মুখে পড়েছেন এই অভিনেত্রী। তবে এবার সেই সমালোচনা নিয়ে খোলামেলা মুখ খুললেন ভাবনা।
আরো পড়ুন:
সিনেমায় জুটি বাঁধলেন ইয়াশ-তটিনী
‘বেহুলা দরদী’ রূপে পর্দায় স্নিগ্ধা
এক সাক্ষাৎকারে নিজের অবস্থান জানাতে গিয়ে ভাবনা বলেন, “একজন লুকিয়ে লুকিয়ে লিখছে, যার নামহীন একটা ফেসবুক অ্যাকাউন্ট—না কোনো নাম, না কোনো পরিচয়! এখন সে কোথায় বসে কী লিখছে, তাতে আমার কিছু যায় আসে না।”
তার মতে, ফেক অ্যাকাউন্ট থেকে আসা সমালোচনা বা বিদ্বেষমূলক মন্তব্য কখনো তার মনোযোগ নষ্ট করতে পারে না। ভাবনা বলেন, “যারা নিজেদের মুখ লুকিয়ে কথা বলে, তাদের মতামত আমার কাছে কোনো গুরুত্ব রাখে না।”
অভিনেত্রীর ভাষায়, নিজের কাজ আর ব্যক্তিগত জীবনের মধ্যে পার্থক্য বজায় রাখাই তার মূল নীতি। সমালোচনা বা প্রশংসা—দুটোই তিনি সামলান এক ধরনের ভারসাম্যের সঙ্গে। ভাবনা বলেন, “আমি জানি, আমি কী করছি। কারো ভালো লাগা বা খারাপ লাগা আমার কাজের মান নির্ধারণ করে না। আমি আমার পথেই থাকব, এটাই আমার বিশ্বাস।”
ঢাকা/রাহাত/শান্ত