ভারতের জন্য বরাদ্দ ২১ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের আর্থিক সহায়তা বন্ধের পক্ষে সরাসরি অবস্থান নিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি জানিয়েছেন, ভারত ও দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির প্রতি তার শ্রদ্ধা রয়েছে, তবে ভোটারদের উপস্থিতি বাড়ানোর জন্য ভারতকে অর্থ অনুদান দেওয়ার যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।

বুধবার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি।

যুক্তরাষ্ট্র সম্প্রতি বিভিন্ন দেশের জন্য নির্ধারিত বড় অঙ্কের সহায়তা বাতিল করেছে, যার মধ্যে ভারতের জন্য বরাদ্দ ২১ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের অনুদানও অন্তর্ভুক্ত। ইলন মাস্কের নেতৃত্বাধীন নতুন দপ্তর ডিপার্টমেন্ট অব গভর্নমেন্ট ইফিসিয়েন্সি (ডিওজিই) এই ঘোষণা দেয়।

ফ্লোরিডার মার-এ-লাগো বাসভবনে এক বক্তব্যে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেন, “কেন আমরা ভারতকে ২১ মিলিয়ন ডলার দিচ্ছি? তারা ইতোমধ্যেই অনেক বেশি অর্থ পেয়েছে। তারা আমাদের দৃষ্টিতে বিশ্বের সর্বোচ্চ কর প্রদানকারী দেশগুলোর মধ্যে একটি, অথচ আমাদের পক্ষে ভারতের বাজারে প্রবেশ করা বেশ কঠিন, কারণ তাদের শুল্ক হার অত্যন্ত বেশি। আমি ভারত এবং প্রধানমন্ত্রী মোদির প্রতি শ্রদ্ধাশীল, তবে ভোটারদের উপস্থিতি বাড়ানোর জন্য ২১ মিলিয়ন ডলার? ভারতে? এর প্রয়োজনীয়তা কী?”

যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রশাসন বাজেট কমানোর লক্ষ্যে ভারত, বাংলাদেশসহ একাধিক দেশের জন্য নির্ধারিত মিলিয়ন মিলিয়ন ডলারের তহবিল বাতিল করছে। এরই অংশ হিসেবে ইলন মাস্কের ডিওজিই গত রোববার ঘোষণা দেয় যে, ভারতের নির্বাচনে ভোটারদের অংশগ্রহণ বাড়ানোর লক্ষ্যে বরাদ্দকৃত ২১ মিলিয়ন ডলারের অনুদান বাতিল করা হবে।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই অর্থ মূলত ভারতের নির্বাচনে ভোটারদের উপস্থিতি বৃদ্ধির জন্য নির্ধারিত ছিল। তবে সহায়তা বাতিলের ফলে এই কর্মসূচি আর বাস্তবায়িত হবে না।

প্রসঙ্গত, ট্রাম্প ও মোদির সাম্প্রতিক এক বৈঠকের কয়েকদিন পরেই এই সহায়তা বাতিলের ঘোষণা আসে। যদিও ওই বৈঠকে মার্কিন-ভারত সম্পর্ক শক্তিশালী করার বিষয়ে আলোচনা হয়েছিল, তবে এই সিদ্ধান্ত নিয়ে কোনো যৌথ বিবৃতি প্রকাশ করা হয়নি বা সংবাদ সম্মেলনেও এ বিষয়ে কিছু উল্লেখ করা হয়নি।

এদিকে, মার্কিন প্রশাসনের বাজেট কাটছাঁট নীতি অনুসারে ভবিষ্যতে আরও কয়েকটি দেশের জন্য অনুদান বাতিল হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: অন দ ন র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

দ্বিজাতিতত্ত্বের কবর দিয়েই বাংলাদেশের জন্ম, এখানে সাম্প্রদায়িকতার জায়গা নেই: জেড আই খান পান্না

মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর দ্বিজাতিতত্ত্বের কবর দিয়েই বাংলাদেশের জন্ম হয়েছে মন্তব্য করে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জেড আই খান পান্না বলেছেন, এই দেশে সাম্প্রদায়িকতার কোনো স্থান নেই।

আজ শুক্রবার সুপ্রিম কোর্ট বারের হলরুমে ‘বাংলাদেশে মানবাধিকার সংকট ও আইনি প্রতিকার পাওয়ার পথ’ শীর্ষক এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন জেড আই খান পান্না। সেমিনারটির আয়োজন করে আন্তর্জাতিক সংস্থা হিউম্যান রাইটস কংগ্রেস ফর বাংলাদেশ মাইনোরিটিস (এইচআরসিবিএম), বাংলাদেশ চ্যাপ্টার।

বক্তব্যে জেড আই খান পান্না বলেন, ‘এখানে সংখ্যালঘুর কথা বলা হচ্ছে। একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে এখন আমি সবচেয়ে বেশি সংখ্যালঘু। আজ মুক্তিযোদ্ধার গলায় জুতার মালা দেখি, জুতা দিয়ে বাড়ি দিতে দেখি, কিন্তু কিছু করতে পারি না। তাই আমি সবচেয়ে বড় অসহায়।’

এসব কথা বলতে বলতে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জেড আই খান পান্না কেঁদে ফেলেন। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, জীবনে কখনো জেনে-বুঝে অন্যায়ের সঙ্গে আপস করেননি। যাঁরা মুক্তিযুদ্ধকে ধারণ করেন, তাঁদের অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান তিনি।

জেড আই খান পান্না আরও বলেন, ৩০ লাখ শহীদ আর ২ লাখ মা-বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে, কারও সঙ্গে এর তুলনা চলে না। এটা সাম্প্রদায়িকতার দেশ না। সংবিধানে যেন কেউ হাত না দেয়। সরকারের অনেকেই বিদেশি হয়েও স্বদেশি ভাব দেখাচ্ছেন।

সেমিনারে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী সুব্রত চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের মৌলিক অধিকার ও মানবাধিকার যেন নিঃশেষ হয়ে গেছে। সমাজে ন্যায়বিচার বা সুবিচার পাওয়ার কথা থাকলেও তা মিলছে না। সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার বিচার হয় না। কেউ কেউ ধরা পড়লেও পরে বেরিয়ে যায়।

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সুমন কুমার রায় বলেন, সব সরকারের আমলেই বাংলাদেশের সংখ্যালঘুরা নির্যাতিত। বর্তমান নিরপেক্ষ অন্তর্বর্তী সরকারের আমলেও সবচেয়ে বেশি উপেক্ষিত সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী। সংস্কার কমিশনে সংখ্যালঘুদের কোনো প্রতিনিধিত্ব নেই। রংপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় হামলা হলেও সরকারের কোনো প্রতিক্রিয়া আসে না, এমনকি দুঃখও প্রকাশ করে না।

গত বছরের ৫ আগস্টের পর সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতনের প্রেক্ষিতে প্রতিবাদ শুরু হলে তা দমন করতেই ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে উল্লেখ করে সুমন কুমার দাবি করেন, বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে মিথ্যা মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সনাতনী সম্প্রদায়ের বাক্‌স্বাধীনতা বন্ধ করতে, নেতৃত্ব দমন করতে এসব করা হচ্ছে।

সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী জে কে পাল। সঞ্চালনায় ছিলেন এইচআরসিবিএমের বাংলাদেশ চ্যাপটারের আহ্বায়ক লাকি বাছাড়। সেমিনারে আরও বক্তব্য দেন সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মনজিল মোরশেদ ও মো. গোলাম মোস্তফা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ