সংস্কারের নামে নির্বাচন বানচালের চেষ্টা করবেন না: আমীর খসরু
Published: 20th, February 2025 GMT
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলছেন, ‘সংস্কারের নামে নির্বাচনব্যবস্থাকে ধ্বংস করার চেষ্টা করা হচ্ছে। তাঁদেরকে বলছি, আমরা জনগণের ভোটে ক্ষমতায় গিয়ে সংস্কার করব। আমরা সকলে মিলে ৩১ দফা সংস্কার বাস্তবায়ন করব। জাতির কাছে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ আমরা। সংস্কারের নামে নির্বাচন বানচালের চেষ্টা করবেন না।’
আজ বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে লক্ষ্মীপুর আউটার স্টেডিয়ামে আয়োজিত বিএনপির সমাবেশে আমীর খসরু এ কথা বলেন। এর আগে বেলা তিনটা থেকে এ সমাবেশ শুরু হয়।
নিত্যপণ্যের দাম সহনীয় রাখা, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি ঘটানো এবং দ্রুত নির্বাচনী রূপরেখা ঘোষণাসহ বিভিন্ন দাবিতে কেন্দ্রঘোষিত চলমান কর্মসূচির অংশ হিসেবে এ সমাবেশের আয়োজন করে লক্ষ্মীপুর জেলা বিএনপি।
দ্রুত নির্বাচনের দাবি জানিয়ে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব হচ্ছে একটাই, নির্বাচিত সরকারের হাতে শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা তুলে দিয়ে বাংলাদেশে আবার গণতন্ত্র পুনঃপ্রবর্তন করা। আবার বাংলাদেশের মানুষের মালিকানা ফিরিয়ে দেওয়া। বাংলাদেশের মানুষের গণতান্ত্রিক, সাংবিধানিক অধিকার ফিরিয়ে দেওয়া। সব সংস্কার জাতীয় সংসদে হবে।’
আমীর খসরু আরও বলেন, বাংলাদেশের যেকোনো পরিবর্তনের ক্ষমতা জনগণের। জনগণের ম্যান্ডেট ছাড়া কোনো অন্তর্বর্তী সরকারের ক্ষমতা নেই। তাঁরা যদি মনে করেন নির্বাচিত সরকারের জায়গায় অধিষ্ঠিত হয়েছেন, এর চেয়ে বড় ভুল আর কিছু হবে না।
আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘আমরা ১৬ বছর যুদ্ধ করেছি বাংলাদেশের মানুষের মালিকানা ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য। যখনই মালিকানা ফিরিয়ে দেওয়ার সময় এসেছে, তখন দেখছি কিছু শক্তি বাংলাদেশের মালিকানা বিশ্বাস করে না। তাদের বিশ্বাস হচ্ছে ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসা, ক্ষমতায় থাকা এবং ক্ষমতার অপব্যবহার করা। তারা চাচ্ছে আনুপাতিক হারে নির্বাচন হতে হবে। আনুপাতিক হারের যদি নির্বাচন হতে হয় সে সিদ্ধান্ত তো জনগণ নেবে।’
জেলা বিএনপির আহ্বায়ক শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানির সভাপতিত্বে সমাবেশে প্রধান বক্তা ছিলেন কেন্দ্রীয় যুবদলের সভাপতি আবদুল মোনায়েম।
জেলা বিএনপির সদস্যসচিব সাহাব উদ্দিনের সঞ্চালনায় সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন বিএনপির চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবুল খায়ের ভূঁইয়া, চট্টগ্রাম বিভাগীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক হারুনুর রশীদ, লক্ষ্মীপুর-৪ (রামগতি-কমলনগর) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য এ বি এম আশরাফ উদ্দিন প্রমুখ।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: সরক র র ব এনপ র ক ষমত
এছাড়াও পড়ুন:
জুলাই ঘোষণাপত্র হঠাৎ হয়ে গেল জুলাই সনদ, আপত্তি ফরহাদ মজহারের
কবি ও চিন্তক ফরহাদ মজহার বলেছেন, ‘জুলাই ঘোষণাপত্র জনগণের অধিকার। এটা নিয়ে কোনো আপস করব না, এটা আমাদেরকে পেতেই হবে। গণ-অভ্যুত্থানের পর তাৎক্ষণিকভাবে জুলাই ঘোষণাপত্র দেওয়ার কথা। জুলাই ঘোষণাপত্র হঠাৎ হয়ে গেল জুলাই সনদ। আমরা তো কেউ জুলাই সনদ চাইনি। যারা জীবন দিয়েছে—আমাদের ঘোষণাপত্র কই?’
গতকাল শুক্রবার রাতে ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের শিল্পকলা একাডেমিতে ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থান ও আগামীর বাংলাদেশ’ শীর্ষক আলোচনা ও ভাবগানের আসরে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন ফরহাদ মজহার।
গণ-অভ্যুত্থানের অভিপ্রায় ছিল গণ সার্বভৌমত্ব কায়েম করা মন্তব্য করে ফরহাদ মজহার বলেন, ক্ষমতার মালিক হবে জনগণ। যদি রাষ্ট্রের কাছে ক্ষমতা রেখে রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব রাখা হয়, তাহলে রাষ্ট্র আমলাতান্ত্রিকতা দিয়ে চলবে। বিভিন্ন বাহিনীসহ প্রশাসকেরা তখন শাসক হবে, ঠিক যেমন ইংরেজ শাসকেরা আমাদেরকে শাসন করেছে। তাই এই রাষ্ট্রব্যবস্থা চললে জুলাই গণ-অভ্যুত্থান ব্যর্থ হয়ে যাবে।’
ফরহাদ মজহার বলেন, ‘তথাকথিত জাতীয় ঐকমত্য—এটা হচ্ছে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানকে নস্যাৎ করার পরিকল্পনা। জাতীয় ঐক্য ছিল—সেই জাতীয় ঐক্যের নাম গণঐক্য। গণঐক্য ছাড়া গণ-অভ্যুত্থান হয়নি। যদি জনগণ ঐক্যবদ্ধ না থাকত, তাহলে গণ-অভ্যুত্থান সম্ভব ছিল না। এখন যারা জাতীয় ঐক্যের কথা বলছে, তারা গণঐক্যকে ধ্বংস করতে জাতীয় ঐক্যের কথা বলছে। এখন এটা দিয়ে ছাত্রদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে। গণঐক্য ছাড়া গণ-অভ্যুত্থান হয়নি।’ তিনি বলেন, ‘গণ-অভ্যুত্থান করেছে জনগণ। এর পেছনে কোনো মাস্টারমাইন্ড কিংবা তথাকথিত বিশেষ কোনো গ্রুপের নেতৃত্ব ছিল না। গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে জনগণের দুটি চাওয়া ছিল—ব্যক্তির অধিকার ও ব্যক্তির মর্যাদা নিশ্চিত করা, আর দ্রুত অর্থনৈতিক বিকাশ ত্বরান্বিত করা এবং তরুণদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা। তা বাস্তবায়ন করতে হলে রাষ্ট্রকে সংস্কার নয় বরং নতুনভাবে গঠন করতে হবে।’
জুলাই ঘোষণাপত্র জনগণের অধিকার মন্তব্য করে ফরহাদ মজহার বলেন, ‘গণ-অভ্যুত্থানের পর তাৎক্ষণিকভাবে জুলাই ঘোষণাপত্র দেওয়ার কথা। কিন্তু ৫ আগস্টের পর জনগণ যে ক্ষমতা পেয়েছিল, তা আবারও ফিরিয়ে নেওয়া হয়েছে, যেহেতু জুলাই ঘোষণাপত্র দিতে দেওয়া হয়নি। এ অবস্থায় জুলাই ঘোষণাপত্র হঠাৎ হয়ে গেল জুলাই সনদ। আমরা তো কেউ জুলাই সনদ চাইনি। আমাদের অভিপ্রায় আছে, আমাদের যারা জীবন দিয়েছে, আমাদের ঘোষণাপত্র কই?’
এ সময় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ভাব বৈঠকীর প্রধান সমন্বয়কারী মোহাম্মদ রুমেল, জেলা শিল্পকলা একাডেমির সংস্কৃতি কর্মকর্তা সুদীপ্তা চক্রবর্তী, জাতীয় নাগরিক কমিটির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলীয় যুগ্ম-মুখ্য সংগঠক মো. আতাউল্লাহ, এনসিপির কেন্দ্রীয় সংগঠক আবদুল্লাহ আল মাহমুদ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সমন্বয়ক আজিজুর রহমান এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া শিল্পী সংসদের সভাপতি আল আমিন শাহিন প্রমুখ। পরে একটি মনোজ্ঞ ভাবগানের আসর অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতারা ও বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ উপস্থিত ছিলেন।