রাজধানীর উত্তরার একটি বাসা থেকে এক চীনা নাগরিকের রক্তাক্ত লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার বেলা আড়াইটার দিকে খবর পেয়ে উত্তরা ১৪ নম্বর সেক্টরের ১৬ নম্বর সড়কের বাসা থেকে মরদেহটি উদ্ধার করা হয়। নিহত চীনা নাগরিকের নাম ওয়াং বু (৩৭)।

পুলিশ জানিয়েছে, নিহত ওই চীনা নাগরিকের বাসাটিতে সহকর্মীদের সঙ্গে বসবাস করতেন। ওই ভবনের সিসি ক্যামেরার ফুটেজে নিহত ওয়াং বুর সঙ্গে আরও দু-তিনজন চীনা নাগরিককে ওই বাসায় প্রবেশ করতে দেখা গেছে। বুধবার দিবাগত রাত ১২টার পর ওই ব্যক্তিরাই হত্যার ঘটনা ঘটিয়ে থাকতে পারেন বলে ধারণা পুলিশের।

তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো আরও জানিয়েছে, এক মাস আগে সহকর্মীদের নিয়ে ওই বাসায় ভাড়ায় ওঠেন নিহত চীনা নাগরিক ওয়াং বু। তিনি বাংলাদেশে ৯ বছর ধরে পার্টনারশিপে পাথরের ব্যবসা করতেন। ওয়াং বু–কে হত্যার পর তাঁর সহকর্মীরা বিদেশে পালিয়ে গেছেন বলে ধারণা করছে পুলিশ।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ওয়াং বুর সঙ্গে আরও দুই চীনা নাগরিকের ওই বাসায় প্রবেশের সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ পাওয়া গেছে। ফুটেজে ওই দুই ব্যক্তিকে কিছু সময় পর ভবনটি থেকে বের হতে দেখা গেছে। তবে প্রাথমিকভাবে দুই ব্যক্তির পরিচয় শনাক্ত করতে পারেনি পুলিশ।

ঢাকা মহানগর পুলিশের উপকমিশনার (মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশনস) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ধারালো অস্ত্র দিয়ে চীনা নাগরিক ওয়াং বু–কে হত্যা করা হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। এ ঘটনায় আলামত সংগ্রহ করছে পুলিশ। পাশাপাশি আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ এবং হত্যার পুরো রহস্য উদ্ঘাটনে কাজ চলছে।

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

দুই বন্ধু ও দুটি স্বপ্নের বিদায় 

উত্তরার ১৭ নম্বর সেক্টরের ৬ নম্বর অ্যাভিনিউতে বিজিএমইএ ভবন। রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাকশিল্প প্রতিষ্ঠান টিম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুল্লাহ হিল রাকিবের জানাজায় শোকাবহ পরিবেশ। প্রিয় মানুষকে চিরবিদায় জানাতে এসেছেন দীর্ঘদিনের সহকর্মী, বন্ধু, পরিবারের সদস্য ও পরিচিতজন। শোক ও অশ্রুতে তারা রাকিবকে নিয়ে স্মৃতিচারণ করছিলেন। রাকিবের অসমাপ্ত কাজ ও স্বপ্ন এগিয়ে নেওয়ার অঙ্গীকার করেন সহকর্মীরা। 

৯ জুন কানাডায় একটি লেকে ভ্রমণের সময় নৌকাডুবে মারা যান আবদুল্লাহ হিল রাকিব ও তাঁর বন্ধু বাংলাদেশ বিমানের ক্যাপ্টেন মো. সাইফুজ্জামান। কানাডায় বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া মেয়ের সঙ্গে সাইফুজ্জামান ঈদের ছুটি কাটাতে স্ত্রী ও আরেক মেয়েকে নিয়ে গিয়েছিলেন। সেখানে বন্ধু ব্যবসায়ী রাকিব ও তাঁর ছেলের সঙ্গে একটি লেকে ঘুরতে গিয়েছিলেন। অন্টারিও প্রদেশের স্টারজিয়ন লেকে ক্যানুতে (সরু লম্বা ছোট্ট নৌকা) চড়ে ভ্রমণে বের হন। নৌকাটি উল্টে গেলে পানিতে ডুবে প্রাণ হারান দু’জন। বিদেশের মাটিতে একসঙ্গে দুই বন্ধুর মৃত্যু, একই ফ্লাইটে ফেরা, দেশে ফিরে একই কবরস্থানে শেষ শয্যা! 

অশ্রুসজল চোখে রাকিবের কানাডাপ্রবাসী মেয়ে লামিয়া তাবাসসুম বলেন, ‘বাবা স্বপ্ন দেখতেন, দেখাতেন। তিনি যেসব স্বপ্ন আমাদের দেখিয়েছেন, যেসব কাজ রেখে গেছেন, আমরা যেন সুন্দরভাবে তা বাস্তবায়ন করতে পারি। পরিবারের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে কানাডায় গিয়েছিলেন বাবা।’ 

রাকিব ও সাইফুজ্জামান ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন। তাদের মরদেহ বিমানের একই ফ্লাইটে শুক্রবার রাতে ঢাকায় আনা হয়। জানাজা শেষে ঢাকায় বিমানবাহিনীর কবরস্থানে দু’জনকে সমাহিত করা হয়। তাদের সহকর্মী ও বন্ধুরা বলছেন, এর মধ্য দিয়ে অকালে দুটি স্বপ্ন বিদায় নিল। 

রাকিবের সহকর্মীরা বলেন, বাংলাদেশের তৈরি পোশাক পণ্য রপ্তানিকে ১০০ বিলিয়ন বা ১০ হাজার কোটি ডলারে উন্নীত করার স্বপ্ন দেখতেন রাকিব। তারা সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নে সর্বাত্মক সহায়তা করবেন বলে জানান। 

উত্তরায় জানাজার আগে বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, ‘আবদুল্লাহ হিল রাকিবের সঙ্গে বেশ কয়েক বছর কাজ করেছি। সব সময়ই দেখেছি, তিনি নিজের পরিবার, বন্ধু, ব্যবসা ও বিজিএমইএকে সমান অগ্রাধিকার দিয়েছেন। তৈরি পোশাকশিল্প খাতের যে কোনো সমস্যা ও চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় তিনি সামনে চলে যেতেন। রাকিবের দর্শন ছিল– সফলতার মাত্রা নেই। তবে একজন ব্যক্তি কতটা সফল, সেটি তাঁর কর্মযজ্ঞ দেখলে বোঝা যায়।’ 

বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি এস এম ফজলুল হক বলেন, রাকিব উজ্জ্বল প্রদীপ। স্বপ্ন ছিল অনেক। ঝোড়ো হাওয়ায় সেই প্রদীপ নিভে গেছে। সবাই তাঁর জন্য দোয়া করবেন। 

রাকিবের জন্য সবার কাছে দোয়া চান বিজিএমইএর সর্বশেষ নির্বাচনে বিজয়ী রাইজিং ফ্যাশনসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহমুদ হাসান খান। স্মৃতিচারণা করে বক্তব্য দেন রাকিবের বড় ভাই আবদুল্লাহ হিল নকীব। 

ক্যাপ্টেন সাইফুজ্জামানের সহকর্মীরা জানান, শুক্রবার তাঁর মরদেহ কানাডা থেকে ঢাকায় আনার সময় তাঁর সঙ্গে স্ত্রী, দুই মেয়ে, বোন এবং ভগ্নিপতি ছিলেন। মরদেহ পৌঁছার পর উপস্থিত পাইলটরা সহকর্মীর মরদেহে স্যালুট দেন। এর পর বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স ও পাইলটস অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে কফিনে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয়। পরে মরদেহ ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালের (সিএমএইচ) মর্গে রাখা হয়। সেখান থেকে মরদেহ নেওয়া হয় তাঁর বনানীর ডিওএইচএসের বাসায়। বেলা ১১টার দিকে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর ঘাঁটি বাশারের কেন্দ্রীয় মসজিদে জানাজা হয়। সাবেক বিমানবাহিনী প্রধান এয়ার মার্শাল মোহাম্মদ ইনামুল বারীসহ পাইলট, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা এতে অংশ নেন। পরে জোহরের নামাজ শেষে ডিওএইচএস মাঠে একসঙ্গে ক্যাপ্টেন সাইফুজ্জামান ও রাকিবের জানাজা হয়। সাইফুজ্জামানকে বাবা-মায়ের কবরের পাশে দাফন করা হয়। একই কবরস্থানে দাফন করা হয় রাকিবকে। তাঁর বাবা বিমানবাহিনীর সদস্য ছিলেন। 
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • দুই বন্ধু ও দুটি স্বপ্নের বিদায় 
  • কানাডায় নৌকা উল্টে মারা যাওয়া ক্যাপ্টেন সাইফুজ্জামানের দাফন সম্পন্ন
  • টিম গ্রুপের এমডি আবদুল্লাহ হিল রাকিবকে শেষ বিদায় জানালেন সহকর্মীরা