বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বাকৃবি) ছিনতাইয়ের উপকরণসহ সন্দেহভাজন বহিরাগত পাঁচজনকে আটক করা হয়েছে। আটকদের কাছ থেকে ধারালো অস্ত্র ও মাদক সেবনের বিভিন্ন উপকরণ জব্দ করা হয়েছে।

শনিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় বিনার সামনের এলাকা থেকে তাদেরকে আটক করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তায় নিয়োজিত পুলিশ সদস্যরা। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বাকৃবি পুলিশ ক্যাম্পের দায়িত্বরত সাব-ইন্সপেক্টর মিজানুর রহমান।

আটকরা হলেন, ময়মনসিংহ সদরের ভাঁটিকেশর (পলাশপুর রোড) এলাকার রিফাত ইসলাম (২৮), বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন বয়ড়া পশ্চিম পাড়ার সুপারি বাগান এলাকার রাজীব (১৬), মো.

কাওসার মিয়া (১৭), মো নাঈন (১৪) ও শামীন (১৩)।

পুলিশ জানায়, সন্ধ্যা ৭টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের আমবাগান এলাকায় টহল দিচ্ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তায় নিয়োজিত পুলিশ বাহিনী। এ সময় একটি অটোরিকশার মধ্যে চারজনকে সন্দেহভাজন মনে হলে অটোরিকশা চালকসহ ওই চারজনকে আটক করে পুলিশ ক্যাম্পে নিয়ে আসা হয়।

পরে জিজ্ঞাসাবাদ ও তল্লাশি করে তাদের কাছে থেকে চাইনিজ ছুরি, ক্ষুর, জন্ম নিরোধকের উপকরণ, মাদক সেবনের উপকরণ, কাঁচি, দিয়াশলাই এবং তাদের ব্যবহৃত মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়। পরে তাদের অধিকতর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানা হেফাজতে নেওয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর অধ্যাপক ড. মো. আনিছুর রহমান মজুমদার বলেন, “আমরা খবর পেয়েছি, সন্দেহভাজন পাঁচজনকে আটক করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় পুলিশ ক্যাম্পের সাব-ইন্সপেক্টরকে জানিয়েছি, তাদের যেন কোতোয়ালি থানার পুলিশে সোপর্দ করে দেওয়া হয়।”

বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক নিরাপত্তার বিষয়ে তিনি বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তায় নিয়োজিতদের আরো বেশি সজাগ থাকার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের পুলিশ ক্যাম্পে কর্মরত পুলিশ সদস্যদের বলা হয়েছে, তারা যেন তাদের টহল কার্যক্রম বাড়িয়ে দেন।”

সাব-ইন্সপেক্টর মিজানুর রহমান বলেন, “বিভিন্ন সময় ক্যাম্পাসে চুরি ও ছিনতাইয়ের অভিযোগ আসলেও উপযুক্ত প্রমাণের অভাবে আমরা অভিযুক্তদের ধরতে ব্যর্থ হই। আজ আমাদের টহল বাহিনী বিনা থেকে একটু সামনের এলাকা থেকে এদের আটক করে। পরে তল্লাশি করে আমরা তাদের থেকে ধারালো অস্ত্রসহ বেশ কিছু সরঞ্জাম জব্দ করি।”

তিনি বলেন, “তাদের থেকে পাওয়া মোবাইলে আমরা নানা মাদকদ্রব্য ও অস্ত্রের ছবি পেয়েছি। আমরা কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) এ বিষয়ে অবগত করেছি। সেখান থেকে টিম এসে তাদের থানায় নিয়ে যাবে।”

ঢাকা/লিখন/মেহেদী

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর

এছাড়াও পড়ুন:

‘লিচুর বাগানে’ যে কারণে ‘পিরিতের বেড়া’ দিতে হয়

‘তাণ্ডব’ সিনেমার গান ‘লিচুর বাগানে’ প্রকাশের পর রীতিমতো হইচই পড়ে গেছে। কফি শফ থেকে বাস, মেট্রোরেল আশপাশে কান পাতলে গানটা শোনা যাচ্ছে। কেউ না কেউ শুনছেন। সামাজিক মাধ্যমের স্টোরি ও রিলসেও গানটি ভেসে বেড়াচ্ছে। চরকি ও এসভিএফের অফিশিয়াল ইউটিউব চ্যানেলে প্রকাশিত গানটির আজ পর্যন্ত (১২ এপ্রিল ২০২৫) ভিউ হয়েছে যথাক্রমে ১২ মিলিয়ন ও ৩ দশমিক ৬ মিলিয়ন।

উচ্ছ্বসিত অনেক দর্শক গানটি নিয়ে মন্তব্যও করেছেন। তাহসিন নামের এক শ্রোতা লিখেছেন, ‘গানটির প্রতিটি সুর, দৃশ্য ও পরিবেশনায় বাঙালির ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির অপূর্ব রূপ ফুটে উঠেছে। যাত্রাপালার ফিল্মের আবহে তৈরি এই গানটি যেন গ্রামীণ বাংলার প্রাণস্পন্দন তুলে ধরেছে। লোকেশন থেকে শুরু করে কস্টিউম, প্রতিটি ডিটেইলে আছে নিখুঁত যত্ন।’

গানটি নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে বন্ধুদের মধ্যে খুনসুটিও চলছে। বন্ধুকে মেনশন দিয়ে কেউ যেমন প্রশ্ন করছেন, ‘কী রে, বেড়া ডিঙাতে পারলি?’ আবার কেউ জিজ্ঞেস করছেন বল তো, ‘“লিচুর বাগানে” কেন “পিরিতের বেড়া” দিতে হয়?’

প্রশ্নটির উত্তর খোঁজার চেষ্টা করা যাক। শুরুতেই ‘লিচুর বাগানে’ গানটি দিয়ে আলোচিত, ‘কে এই ছত্তার পাগলা’ শীর্ষক প্রথম আলোর প্রতিবেদন থেকে কিছু তথ্য জেনে নেওয়া যাক। গবেষক সরোজ মোস্তফার মতে ‘কে দিল পিরিতের বেড়া লিচুরও বাগানে’ পঙ্‌ক্তির রচয়িতা ও সুরকার ছত্তার পাগলা। তবে সংগীতগবেষক গৌতম কে শুভর মত ভিন্ন। তাঁর মতে, ‘এটি মূলত প্রচলিত ঘেটু গান। “কে দিল পিরিতির বেড়া লিচুর বাগানে?” অংশটি মূল গানের অংশ। ছত্তার পাগলা নিজের মতো করে এর সঙ্গে কথা সংযোজন করেছেন। নেত্রকোনায় ছত্তার পাগলার লেখা রূপটিই বিখ্যাত হয়েছে।’ ২০১৪ সালের এপ্রিলে মারা গেছেন ছত্তার পাগলা। জীবদ্দশায় রচনা ও সুরারোপ করেছেন কয়েক শ গান। মৃত্যুর বছর তিনেক আগে তাঁর কাছ থেকে গানটি শুনে হাতে লিখে রেখেছিলেন আল মামুন চৌধুরী।

আল মামুন চৌধুরীর লেখা অনুযায়ী গানটির কথা:
কে দিল পিরিতের বেড়া, লিচুরও বাগানে
লিচুরও বাগানে গো সই…লিচুরও বাগানে …(ঐ)
পাখি খাইছ না লিচু, বন্দে খাইবো
বন্দে লিচু খাইয়া, খুশি হইবো
আমার কাছে আইসা কইবো
কত শান্তি দিবো আমার মনেপ্রাণে (ঐ)
ছোট ছোট লিচুগুলি, বন্দে তুলে আম্বো তুলি
বন্দে দেয় গো আমার মুখে,
আমি দিতে চাই বন্ধুর মুখের পানে…(ঐ)
মিষ্টি লিচু খাইয়া বন্দে, বাঁশি বাজায় মন আনন্দে
আমার মনে লাগে সন্দে বন্ধু সম্ভব জাদু জানে (ঐ)
বাঁশি হাতে পলায় মালা, তারে চায় ছত্তার পাগলা,
করব লইয়া উলামেলা, (২) প্রাণবন্ধুর সনে…(ঐ)

সরল অর্থে ‘বেড়া’ হচ্ছে  প্রতিবন্ধকতা তথা বাধা তৈরির উপকরণ। আর ‘পিরিতের বেড়া’ মানে ভালোবাসায় বাধা। কিন্তু ভালোবাসার এই বাধা তথা প্রতিবন্ধকতা ‘লিচুর বাগানে’ কেন? কবিতা তথা গানে অর্থের তারতম্য অর্থের অনুগত না হয়ে বোধ কিংবা ভাবনার পরবশে প্রস্ফুটিত হয়। ব্যক্তিবিশেষে তা ভিন্ন ভিন্ন অর্থ লাভ করে, ভিন্ন ভিন্ন মূল্য পায়।

আরও পড়ুন‘লিচুর বাগানে’ গানটি দিয়ে আলোচিত, কে এই ছত্তার পাগলা ০৬ জুন ২০২৫

‘কে দিল পিরিতের বেড়া, লিচুরও বাগানে’ একটি ‘ঘাটু গান’ বা ‘ঘেটু গান’। এই গান প্রসঙ্গে জানা যায়, এই গানের অন্যতম অনুষঙ্গ ছিল নৃত্য। অল্প বয়সী একটি ছেলেকে মেয়ে সাজিয়ে তার নৃত্যের মধ্য দিয়ে ঘেটু গান পরিবেশিত হতো। সঙ্গে থাকত ঢোল, হারমোনিয়াম, বাঁশি ইত্যাদি বাদ্যযন্ত্র। কয়েকটি ‘ঘেটু গানে’র দৃষ্টান্ত দেখা যাক।
(১)
‘তুই আমারে চিনলে নারে
আমি তো রসের কমলা।
বন্ধুর বাড়ি আমার বাড়ি
মধ্যে নলের বেড়া।’
(২)
ঘুমাইলা ঘুমাইলারে বন্ধু
পান খাইলায়না
এক বালিশে দুইটি মাথা
সুন্দর কইরা কওরে কথা।
গানগুলো থেকে উপলব্ধি করতে কষ্ট হয় না যে ‘ঘেটু গানে’ যেমন ভাষার সারল্য আছে, তেমনিভাবে রূপকল্প হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে যাপিত জীবনের সঙ্গে আষ্টেপৃষ্ঠে থাকা নানা উপকরণ। আর এ ক্ষেত্রে গান রচনার সময় রচয়িতা তাঁর আশপাশ থেকেই গান নির্মাণের উপকরণগুলো যে নিয়ে থাকবেন, সেই ধারণাও পাওয়া যায়। ‘লিচুর বাগানে’ গানের ক্ষেত্রেও বোধ করি এটা ঘটেছে। তাই এই গানে যেমন ‘লিচু বাগানে’র কথা আছে, একইভাবে আছে ‘পাখি’, ‘বাঁশি’ ও ‘লিচু’র কথাও। পাখিকে লিচু না খাওয়ার অনুরোধ করলেও পাখি যেন খেতে না পারে সে কারণেই যে বেড়া দেওয়া হয়েছে; সেই ব্যথাও গানটিতে ফুটে উঠেছে। সব মিলিয়ে ‘লিচুর বাগান’ শেষ পর্যন্ত ‘লিচুর বাগানে’ সীমাবদ্ধ থাকেনি। হয়ে উঠেছে ভালোবাসার প্রতীক।

কথায় আছে, ভালোবাসা জয় করে নিতে হয়। জিতে নেওয়ার মধ্যেই আছে অপার আনন্দ। ভালোবাসায় প্রতিবন্ধকতা থাকাটা মোটেও দোষের নয়। বরং বাধা না থাকাটাই যেন আশ্চর্যের। একইভাবে ভালোবাসা জিতে নেওয়ার পরও পেয়ে গেছি বলে হাল ছেড়ে দিলে চলে না। ‘লিচুর বাগান’কে এ ক্ষেত্রে ভালোবাসার প্রতীক হিসেবে বিবেচনা করলে, ‘লিচুর বাগানে’ ‘পিরিতের বেড়া’ তথা ভালোবাসার বেষ্টনী দেওয়াটাই যুক্তিযুক্ত। কেননা ‘ভালোবাসা’কে ভালোবাসা দিয়েই আগলে রাখতে হয়। প্রবল যত্নে আঁকড়ে রাখতে হয়। যেন কোনো কৌতূহলেই তা দুলে না ওঠে, হারিয়ে না যায়।

আরও পড়ুনসাবিলা তো ‘লিচুর বাগানে’ দিয়ে কী যে আগুন লাগিয়ে দিল...০৫ জুন ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • মজাদার ডেজার্ট রেভানির রেসিপি
  • পেশোয়ারি বিফের রেসিপি
  • চিকেন বটি মাসালার রেসিপি
  • ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ২ পক্ষের সংঘর্ষ, আহত ২০
  • ‘লিচুর বাগানে’ যে কারণে ‘পিরিতের বেড়া’ দিতে হয়
  • সালিশে বেত্রাঘাত করায় সংঘর্ষ, ছাত্রদল নেতাসহ আহত ৬