ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধ গতকাল সোমবার তিন বছর পূর্ণ হয়ে চার বছরে পড়ছে। এই যুদ্ধে রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর হয়ে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধে গিয়ে এখন পর্যন্ত ৯৫ হাজারের বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। বিবিসির তথ্য বিশ্লেষণে এই তথ্য উঠে এসেছে।

এই পরিসংখ্যানে দনবাসে স্বঘোষিত দুটি প্রজাতন্ত্রের সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর নিহত মানুষের সংখ্যা ধরা হয়নি। এসব সশস্ত্র গোষ্ঠীর হয়ে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে লড়তে গিয়ে মারা গেছেন আরও ২১ থেকে সাড়ে ২৩ হাজার যোদ্ধা।

২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে বিবিসি রাশিয়া, স্বাধীন সংবাদমাধ্যম গোষ্ঠী মিডিয়াজোনা এবং স্বেচ্ছাসেবকেরা মৃত্যুর খবর রাখছিলেন। তাঁদের তালিকায় কেবল রাশিয়ার সরকারি প্রতিবেদন, সংবাদমাধ্যম, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, নতুন স্মৃতিসৌধ এবং সমাধির তথ্য যাচাই-বাছাই করে নিশ্চিত হওয়া নিহত ব্যক্তিদের নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

আরও পড়ুনইউক্রেন যুদ্ধের ৩ বছর: ‘ট্রাম্প একজন অপ্রত্যাশিত বিজয়ী’২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫নিয়োগ ও ছুড়ে ফেলা

ড্যানিল দুদনিকভ (২১) দোনেৎস্ক জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী ছিলেন। পড়ছিলেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক নিয়ে। সাঁতার ছিল তাঁর শখ।

রাশিয়ার পূর্ণমাত্রায় হামলার প্রথম দিন ২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি স্বঘোষিত দোনেৎস্ক গণপ্রজাতন্ত্রের (ডিপিআর) কর্তৃপক্ষ ড্যানিলকে জোর করে সেনাবাহিনীতে নিয়োগ দেয়। তাঁকে খারকিভ অঞ্চলে পাঠানো হয়।

নিয়োগের ঠিক এক মাসের মাথায় ২৫ মার্চ ড্যানিল লড়াই চলাকালে নিখোঁজ হন। তাঁর ইউনিটে ১৮ জন সেনাসদস্য ছিলেন, তাঁদের কেউ ফিরে আসেননি। এই লড়াইয়ে ১৩ জন নিহত হন এবং পাঁচজন বন্দী হন। চার মাস পরে এক বন্দিবিনিময়ের মাধ্যমে জীবিত সেনারা ফেরত আসেন। নিহত ১৩ জনের মধ্যে ড্যানিলও ছিলেন বলে তাঁরা নিশ্চিত করেন।

স্বঘোষিত দোনেৎস্ক ও লুহানস্ক গণপ্রজাতন্ত্রের (এলপিআর) হাজার হাজার মানুষের ভাগ্যে কী ঘটেছে, ড্যানিলের গল্প থেকে সেটার একটি প্রতিচ্ছবি পাওয়া যায়। ইউক্রেনের পূর্ব দিকের প্রধানত রুশ ভাষাভাষী কিছু অঞ্চল নিয়ে মস্কোর সহায়তাপুষ্ট বিচ্ছিন্নতাবাদীরা ২০১৪ সালে এই দুই প্রজাতন্ত্র গঠন করেন।

রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর ইউক্রেনের উদ্ধারকর্মীদের তৎপরতা। ইউক্রেনের জাপোরিঝঝিয়ায়, ১০ অক্টোবর, ২০২২.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ইউক র ন র

এছাড়াও পড়ুন:

বিদেশি বিনিয়োগ বেড়েছে 

বাংলাদেশে বৈদেশিক প্রত্যক্ষ বিনিয়োগ (এফডিআই) গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী এক বছরে ১৯ দশমিক ১৩ শতাংশ বেড়েছে। এর মধ্যে দিয়ে দেশে বিনিয়োগের অনুকূল পরিবেশের প্রতি আন্তর্জাতিক আস্থার প্রতিফলন দেখা গেছে।

বিশ্বব্যাংকের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, সম্প্রতি যেসব দেশে গণঅভ্যুত্থান ঘটেছে, সেসব দেশে পরবর্তী এক বছরে এফডিআই উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে। এর মধ্যে শ্রীলঙ্কায় ২০২২ সালের পর এফডিআই কমেছে ১৯.৪৯ শতাংশ, চিলিতে ২০১৯ সালের পর কমেছে ১৫.৬৮ শতাংশ, সুদানে ২০২১ সালের পর ২৭.৬০ শতাংশ, ইউক্রেনে ২০১৪ সালের পর ৮১.২১ শতাংশ, মিশরে ২০১১ সালের পর ১০৭.৫৫ শতাংশ এবং ইন্দোনেশিয়ায় ১৯৯৮ সালের পর ১৫১.৪৯ শতাংশ কমেছে। এই ধারাবাহিক হ্রাসের মধ্যে বাংলাদেশে এফডিআইর ১৯.১৩ শতাংশ বৃদ্ধির চিত্র বিশেষভাবে নজরকাড়া।

বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী বলেছেন, “বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় গুণ হলো—শত প্রতিকূলতা সত্ত্বেও অর্থনীতিকে পুনরায় চালু করার অদ্ভুত ক্ষমতা। এই পরিসংখ্যান তার দারুন একটা প্রতিফলন। সাধারণত, গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে বিদেশি বিনিয়োগ কমে যায়, কিন্তু আমরা উল্টা দেখছি। সঠিক নীতি নির্ধারণ, বাংলাদেশ ব্যাংক, এনবিআরসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থার আন্তরিকতা এবং প্রাইভেট সেক্টরের অদম্য স্পৃহা কারণে এটি সম্ভব হয়েছে। আমরা সব সময় বিনিয়োগকারীদের সাহায্য করার চেষ্টা করেছি। সব সমস্যার সমাধান হয়নি, তবে সদিচ্ছার কোনো ত্রুটি ছিল না। শিগগিই সারা বছরের একটি আমলনামা (রিপোর্ট কার্ড) প্রকাশ করা হবে।”

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২১ সালে বিদেশি বিনিয়োগ ছিল ৪৮৮ দশমিক ৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, ২০২২ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৬৭০ দশমিক ৭ মিলিয়ন ডলারে। ২০২৩ সালে বিনিয়োগের পরিমাণ হয় ৯২৪ দশমিক ৪ মিলিয়ন ডলার, তবে ২০২৪ সালে কিছুটা কমে দাঁড়ায় ৬৭৬ দশমিক ৬ মিলিয়ন ডলারে। ২০২৫ সালের প্রথম ছয় মাসে বিদেশি বিনিয়োগ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৯২ দশমিক ৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে।

অর্থনীতিবিদদের মতে, বর্তমান বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে এই ধারা বজায় থাকা অত্যন্ত ইতিবাচক। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, দীর্ঘমেয়াদি নীতি সহায়তা ও অবকাঠামোগত উন্নয়নের মাধ্যমে বাংলাদেশ ভবিষ্যতে আরো বড় পরিসরে বৈদেশিক বিনিয়োগ আকর্ষণ করতে পারবে বলে মনে করছেন তারা।

ঢাকা/নাজমুল/রফিক

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বিদেশি বিনিয়োগ বেড়েছে