১৮ বছর আগে তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে চাকরিচ্যুত ৮৫ জন উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তার মধ্যে ৮৩ জনের চাকরিতে পুনর্বহালের পথ খুলেছে। আর ৮৫ জনের মধ্যে মারা যাওয়া তিনজনের উত্তরাধিকারীরা আইন অনুযায়ী প্রাপ্য সুবিধাদি পাবেন। ২০০৭ সালের ৩ সেপ্টেম্বর এই ৮৫ কর্মকর্তাকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছিল।

এ-সংক্রান্ত রায়ের বিরুদ্ধে চাকরিচ্যুতদের করা আপিল মঞ্জুর ও পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন নিষ্পত্তি করে আজ মঙ্গলবার রায় দেন সর্বোচ্চ আদালত। প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন পাঁচ সদস্যের আপিল বিভাগ সর্বসম্মতিতে এ রায় দেন।

রায়ের পর আপিলকারীদের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী সালাহ উদ্দিন দোলন প্রথম আলোকে বলেন, ৮৫ জনের মধ্যে জীবিত ৮২ জন বকেয়া সব বেতন-ভাতা, আইনে প্রাপ্য সব সুবিধা ও জেষ্ঠ্যতাসহ চাকরিতে পুনর্বহাল হবেন। চাকরিচ্যুতির কারণে যে সময়টা তাঁরা অফিসে উপস্থিত ছিলেন না, সেই সময়টা অসাধারণ ছুটি হিসেবে গণ্য হবে বলে রায়ে এসেছে। যে তিনজন মারা গেছেন, তাঁদের উত্তরাধিকারীরা নির্বাচন কমিশনে দরখাস্ত সাপেক্ষে আইন অনুসারে সব সুবিধাদি পাবেন, যা আবেদনকারী জীবিত থাকলে পেতেন। সর্বসম্মতিতে আপিল মঞ্জুর করে রায় দিয়েছেন আপিল বিভাগ। এই রায়ের আলোকে পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদনগুলো নিষ্পত্তি করা হয়েছে।

আজকের রায়ে ৮৫ জনকে চাকরিতে পুনর্বহালের করতে দেওয়া সিদ্ধান্ত বাতিল করে আপিল বিভাগ ২০২২ সালের ১ সেপ্টেম্বর যে রায় দিয়েছিলেন, তা বাতিল করা হয়েছে। প্রশাসনিক আপিল ট্রাইব্যুনালের সিদ্ধান্ত বাতিল করে আপিল বিভাগ ওই রায় দিয়েছিলেন। আপিল বিভাগের ২০২২ সালের ১ সেপ্টেম্বর দেওয়া রায়কে কেন্দ্র করে চাকরিচ্যুত ব্যক্তিরা একটি আপিল ও চারটি পুনর্বিবেচনার আবেদন করেন। যার ওপর ২০ ফেব্রুয়ারি শুনানি শেষ হয়। সেদিন আদালত রায়ের জন্য ২৫ ফেব্রুয়ারি তারিখ রাখেন। সে অনুসারে আজ রায় ঘোষণা করা হলো।

এর আগে ২০১০ সালের ১২ এপ্রিল প্রশাসনিক আপিল ট্রাইব্যুনাল ৮৫ কর্মকর্তার আপিল মঞ্জুর করে তাঁরা চাকরিতে আছেন ধরে নিয়ে পাওনা পরিশোধসহ আইনে প্রাপ্য সব সুবিধা দিয়ে অবিলম্বে তাঁদের চাকরিতে পুনর্বহাল করতে রায় দিয়েছিলেন।

আদালতে আপিলকারী পক্ষে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী সালাহ উদ্দিন দোলন শুনানি করেন। পুনর্বিবেচনার আবেদনের পক্ষে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী প্রবীর নিয়োগী ও মো.

রুহুল কুদ্দুস শুনানি করেন। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল অনীক আর হক, সঙ্গে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল জহিরুল ইসলাম। নির্বাচন কমিশনের (ইসি) পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মোহাম্মদ খালেকুজ্জামান ভূঁইয়া।

মামলার পূর্বাপর

আইনজীবীদের তথ্যমতে, ২০০৫ সালের ৩ সেপ্টেম্বর সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) মাধ্যমে ৩২৭ জনকে উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা হিসেবে অস্থায়ীভাবে নির্বাচিত করা হয়।

বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময়ের এই নিয়োগ নিয়ে বিতর্ক ওঠার পর ২০০৭ সালের তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে ৩২৭ জনের মূল্যায়ন পরীক্ষা নেওয়া হয়। তাঁদের মধ্যে ৮৫ জনকে ওই বছরের ৩ সেপ্টেম্বর চাকরিচ্যুত করা হয়। এর বিরুদ্ধে চাকরিচ্যুত প্রার্থীরা মামলা করলে ২০০৯ সালের ২৩ মার্চ তা খারিজ করে রায় দেন প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনাল। এর বিরুদ্ধে তাঁরা আপিল করেন। ২০১০ সালের ১২ এপ্রিল প্রশাসনিক আপিল ট্রাইব্যুনাল ৮৫ কর্মকর্তার আপিল মঞ্জুর করে চাকরিতে পুনর্বহালের পক্ষে রায় দেন।

প্রশাসনিক আপিল ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ পৃথক চারটি লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) করে। এর পরিপ্রেক্ষিতে আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত ২০১০ সালের ২৯ এপ্রিল আপিল ট্রাইব্যুনালের রায়ের কার্যকারিতা স্থগিত করে বিষয়টি আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে শুনানির জন্য পাঠান। এর ধারাবাহিকতায় ২০১১ সালে সরকারপক্ষ পৃথক আপিল করে। সরকারপক্ষের করা আপিলগুলো মঞ্জুর করে ২০২২ সালের ১ সেপ্টেম্বর রায় দেন আপিল বিভাগ। এই রায়ে প্রশাসনিক আপিল ট্রাইব্যুনালের ২০১০ সালের ১২ এপ্রিল দেওয়া রায় (৮৫ কর্মকর্তাকে চাকরিতে পুনর্বহালের পক্ষে) বাতিল করা হয়।

আপিল বিভাগের ২০২২ সালের ১ সেপ্টেম্বর দেওয়া রায় পুনর্বিবেচনা (রিভিউ) চেয়ে ২০২৩ সালে পৃথক পাঁচটি আবেদন করেন চাকরিচ্যুতরা। শুনানি নিয়ে একটি রিভিউ আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আপিল বিভাগ গত বছরের ৬ নভেম্বর লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি) মঞ্জুর করে আদেশ দেন। একই সঙ্গে এই আপিলের (রিভিউ আবেদনের প্রেক্ষিতে উদ্ভূত) সারসংক্ষেপ চার সপ্তাহের মধ্যে দায়ের করতে আবেদনকারীপক্ষকে নির্দেশ দেওয়া হয়। এই আপিলের সঙ্গে অপর চারটি রিভিউ আবেদন শুনানিতে থাকবে বলে আদেশে উল্লেখ করা হয়। পৃথক আবেদনের শুনানি শেষে আজ রায় দেন আপিল বিভাগ।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ২০১০ স ল র চ কর চ য ত ব ত ল কর আইনজ ব কর ত র চ কর ত র চ কর রপক ষ সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

মাওলানা রইস হত্যার বিচার দাবি জানিয়ে ১০২ নাগরিকের বিবৃতি

বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রসেনার কেন্দ্রীয় সদস্য ও ঢাকা নগরীর সাবেক সভাপতি মাওলানা মুহাম্মদ রইস উদ্দিনকে নির্যাতন ও পরে হত্যার ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন দেশের ১০২ জন নাগরিক। আজ বুধবার এক বিবৃতিতে ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের দাবি জানিয়েছেন তাঁরা। বিবৃতিদাতাদের মধ্যে শিক্ষক, আইনজীবী, রাজনীতিবিদ, কথাসাহিত্যিক, লেখক, কবি, সাংবাদিক ও সংস্কৃতিকর্মীরা রয়েছেন।

বিবৃতিতে বলা হয়, স্বৈরাচার পতনের পর থেকে দেশবাসী ‘মব ভায়োলেন্সে’র একটি উল্লম্ফন দেখেছে। এর ধারাবাহিকতায় গত ২৭ এপ্রিল গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ৩৯ নম্বর ওয়ার্ড হায়দারাবাদ এলাকার আখলাদুল জামে মসজিদের ইমাম ও খতিব মাওলানা র‌ইস উদ্দিনকে দুই মাস আগের একটি অভিযোগের ভিত্তিতে মব ভায়োলেন্সের মাধ্যমে অকথ্য নির্যাতন করা হয়। নির্যাতনের পর সকাল ১০টায় পুলিশের কাছে সোপর্দ করা হলে তাঁকে মৌলিক অধিকার হিসেবে খাদ্য ও চিকিৎসা কিছুই সরবরাহ করা হয়নি। ভোর চারটায় কারাগারেই তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

বিবৃতিতে সুপ্রিম কোর্টের অধীনে দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে এই মামলার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার নিশ্চিতের দাবি জানানো হয়। পাশাপাশি এ মামলার তদন্ত ও বিচারের মাধ্যমে মব ভায়োলেন্স নামে রাহাজানি এবং নির্মম পুলিশি ব্যবস্থার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আশাবাদ জানানো হয়।

বিবৃতিতে স্বাক্ষরদাতাদের মধ্যে রয়েছেন অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সামিনা লুৎফা, আইনজীবী জ্যোতির্ময় বড়ুয়া, কথাসাহিত্যিক রাখাল রাহা, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আর রাজী, রাজনৈতিক বিশ্লেষক জাহেদ উর রহমান, লেখক ও অ্যাকটিভিস্ট পারভেজ আলম, কবি ও অধিকারকর্মী ফেরদৌস আরা রুমী, শিল্পী ও লেখক দেবাশিস চক্রবর্তী, অনুবাদক ও শিক্ষক জি এইচ হাবীব, লেখক ও রাজনৈতিক কর্মী বাকী বিল্লাহ, চলচ্চিত্রকার রাফসান আহমেদ, কবি ও সাংবাদিক সৈকত আমীন, রাজনৈতিক সংগঠক হাসান মারুফ রুমি, মুক্তিযোদ্ধা আবদুল্লাহ মহিউদ্দিন প্রমুখ।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • মাগুরায় শিশু ধর্ষণ-হত্যা মামলায় সাক্ষ্য ৩ চিকিৎসকের
  • শ্রম আদালতে ঝুলছে ২২ হাজার মামলা
  • মাওলানা রইস হত্যার বিচার দাবি জানিয়ে ১০২ নাগরিকের বিবৃতি
  • নিট রিজার্ভও ২২ বিলিয়ন ডলার ছাড়াল
  • ২০১০ সালের স্মৃতি ফিরিয়ে আনতে পারবে ইন্টার?
  • নতুন কারিকুলাম বাস্তবায়নে বাধা মাধ্যমিকে সংযুক্ত প্রাথমিক শাখা
  • ভিটামিনসমৃদ্ধ ভোজ্যতেল পাওয়ায় বাধা খোলা ড্রাম
  • খাল-ফসলি জমির মাটি ইটভাটায়
  • আইপিএলে আরও ম্যাচ বাড়ানোর পরিকল্পনা
  • ভিটামিনসমৃদ্ধ নিরাপদ ভোজ্যতেল প্রাপ্তির বাধা দূর করতে হবে