এক কার্গো এলএনজি ক্রয়ে ব্যয় হবে ৭৮৭ কোটি ৯৯ লাখ টাকা
Published: 25th, February 2025 GMT
দেশের জ্বালানি চাহিদা মেটাতে ‘পাবলিক প্রকিউরমেন্ট বিধিমালা, ২০০৮ অনুযায়ী স্পট মার্কেট থেকে ১ কার্গো এলএনজি সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে ক্রয়ের একটি প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি। এতে মোট ব্যয় হবে ৭৮৭ কোটি ৯৯ লাখ ৩৩ হাজার ১৫২ টাকা।
মঙ্গলবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সম্মেলন কক্ষে অর্থ উপদেষ্টা ড.
সভা সূত্রে জানা যায়, দেশের বিদ্যুৎ, সার, শিল্পখাতসহ বিভিন্ন খাতে গ্যাসের চাহিদা মেটানোর লক্ষ্যে স্পট মার্কেট থেকে ১ কার্গো (৫-৬ মার্চ ২০২৫ সময়ে ৯ম কার্গো) এলএনজি ক্রয়ের জন্য ৪ বার পুনঃকোটেশনসহ ৫ম বার আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করা হলে ২টি কোটেশন জমা পড়ে। তাই সরসারি ক্রয় পদ্ধতিতে ১ কার্গো এলএনজি ক্রয়ের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। সরাসরি ক্রয় প্রক্রিয়ায় আগামী ৫-৬ মার্চ ২০২৫ তারিখের মধ্যে এলএনজি কার্গো ক্রয় করার পর্যাপ্ত সময় না থাকায় ৫ম বার কোটেশন আহ্বান করে প্রাপ্ত সর্বনিম্ন দরদাতা মেসার্স টোটাল এনার্জিস গ্যাস অ্যান্ড পাওয়ার, সুইজারল্যান্ড-এর কাছ থেকে ১ কার্গো এলএনজি ক্রয় করা হবে।
সরাসরি ক্রয় প্রক্রিয়া অনুসরণ করে প্রতি এমএমবিটিইউ ১৬.৪৩ মা.ডলার হিসেবে এক কার্গো (৩৩ লাখ ৬০ হাজার এমএমবিটিইউ) ক্রয়ে ব্যয় হবে ৭৮৭ কোটি ৯৯ লাখ ৩৩ হাজার ১৫২ টাকা।
এরআগে অর্থ উপদেষ্টার সভাপতিত্বে অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় ‘গ্যাসের জরুরি প্রয়োজন মেটানোর জন্য স্পট মার্কেট হতে ১ কার্গো এলএনজি সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে ক্রয়ের নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়।
সূত্র জানায়,বিদ্যুৎ, সার, শিল্পখাতসহ বিভিন্ন খাতে দেশে গ্যাসের চাহিদা মেটানোর লক্ষ্যে স্পট মার্কেট থেকে ১ কার্গো এলএনজি ক্রয়ের জন্য ৪ বার পুনঃকোটেশনসহ ৫ বার আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করা হলেও গ্রহণযোগ্য সাশ্রয়ী দরদাতা পাওয়া যায়নি। আসন্ন রমজান মাস বিবেচনায় দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদন, শিল্প ও সার কারখানার উৎপাদন স্বাভাবিক রাখার জন্য এবং পুনরায় কোটেশন আহ্বানের জন্য পর্যাপ্ত সময় না থাকায় আগামী ৫-৬ মার্চ, ২০২৫ তারিখে ১ কার্গো এলএনজি জরুরিভিত্তিতে ক্রয় করা প্রয়োজন। তাই রাষ্ট্রীয় জরুরি প্রয়োজনে স্পট মার্কেট থেকে ১ কার্গো এলএনজি পিপিআর-২০০৮ এর বিধি ৭৬(২) অনুযায়ী সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে ক্রয়ের নীতিগত অনুমোদনের জন্য জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে প্রস্তাবটি উপস্থাপন করা হলে কমিটি তাতে অনুমোদন দেয়।
সূত্র জানায়, জরুরি ভিত্তিতে ১ কার্গো এলএনজি ক্রয় করা না হলে ১-৫ মার্চ ২০২৫ সময়ে দেশে দৈনিক আরএলএনজি সরবরাহ ৯০০ এমএমসিএফ হতে কমে ৬০০ এমএমসিএফ এবং ৬-১০ মার্চ ২০২৫ পর্যন্ত সময়ে ৮০০ এমএমসিএফ হতে কমে ৫০০ এমএমসিএফ হবে।
ঢাকা/হাসনাত/টিপু
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ম র চ ২০২৫ উপদ ষ ট র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
বিদ্যুৎ খাতে সরবরাহ বাড়ায় শিল্পে গ্যাস–সংকট
গ্রীষ্ম মৌসুমে বিদ্যুৎ চাহিদা সর্বোচ্চ পর্যায়ে থাকে। চাহিদামতো বিদ্যুৎ উৎপাদন করা না গেলে লোডশেডিং দিতে হয়। এবার লোডশেডিং সীমিত রাখার চেষ্টা করছে সরকার। তাই বিদ্যুৎ সরবরাহ অব্যাহত রাখতে বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়ানো হয়েছে। এই উৎপাদন ধরে রাখতে বিদ্যুৎ খাতে বাড়ানো হয়েছে গ্যাস সরবরাহ। কমানো হয়েছে শিল্প ও আবাসিক খাতের সরবরাহ।
বাংলাদেশ তেল, গ্যাস, খনিজ সম্পদ করপোরেশন (পেট্রোবাংলা) সূত্র বলছে, দেশে দিনে গ্যাসের চাহিদা ৩৮০ কোটি ঘনফুট। ৩০০ কোটি ঘনফুট সরবরাহ পেলে মোটামুটি চাহিদা মেটানো যায়। রেশনিং করে (এক খাতে কমিয়ে, আরেক খাতে বাড়ানো) পরিস্থিতি সামাল দেওয়া হয়। এখন সরবরাহ হচ্ছে ২৭০ কোটি ঘনফুট। এর মধ্যে ১০৫ কোটি ঘনফুট যাচ্ছে বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোয়। বিদ্যুৎ খাত এখন সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার পাচ্ছে। তাই আবাসিক ও শিল্প গ্রাহকের গ্যাস–সংকট বেড়েছে।
বিদ্যুৎ খাতে গ্যাস সরবরাহ বাড়ানো হয়েছে। এতে কিছুটা ঘাটতি তৈরি হয়েছে। দু-এক দিনের মধ্যে দেশীয় গ্যাস উৎপাদন কিছুটা বাড়তে পারে। আর এলএনজি আমদানিও বাড়ানোর চিন্তা করা হচ্ছে।পেট্রোবাংলার পরিচালক (অপারেশন অ্যান্ড মাইনস) মো. রফিকুল ইসলামবৃহত্তম গ্যাস বিতরণ সংস্থা তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন ঢাকা, গাজীপুর, ময়মনসিংহ ও নারায়ণগঞ্জ এলাকায় গ্যাস সরবরাহ করে। এ কোম্পানির দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা বলছেন, তাঁদের দিনে চাহিদা ১৯০ কোটি ঘনফুট। এখন সরবরাহ পাচ্ছেন ১৫২ থেকে ১৫৩ কোটি ঘনফুট। এমন সরবরাহের সময় তাঁরা বিদ্যুৎ খাতে সর্বোচ্চ ২৩ কোটি ঘনফুট দিতে পারতেন। এখন দিতে হচ্ছে ৩৬ থেকে ৩৭ কোটি ঘনফুট। এতে শিল্প ও আবাসিক খাতে ১৩ থেকে ১৪ কোটি ঘনফুটের ঘাটতি তৈরি হয়েছে। স্বাভাবিক সময়েও শিল্পে গ্যাসের ঘাটতি থাকে। এখন এটি আরও বেড়েছে।
পেট্রোবাংলার পরিচালক (অপারেশন অ্যান্ড মাইনস) মো. রফিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, বিদ্যুৎ খাতে গ্যাস সরবরাহ বাড়ানো হয়েছে। এতে কিছুটা ঘাটতি তৈরি হয়েছে। দু-এক দিনের মধ্যে দেশীয় গ্যাস উৎপাদন কিছুটা বাড়তে পারে। আর এলএনজি আমদানিও বাড়ানোর চিন্তা করা হচ্ছে।
দেশে একসময় দিনে ২৭০ কোটি ঘনফুট গ্যাস উৎপাদন হতো। ২০১৮ সালে উৎপাদন কমতে থাকলে এলএনজি আমদানি শুরু হয়। উৎপাদন কমে এখন ১৮৪ কোটি ঘনফুটে নেমে এসেছে। আগের চেয়ে এলএনজি আমদানি বাড়ানো হলেও তা পর্যাপ্ত নয়। আমদানি করা এলএনজি থেকে দিনে সরবরাহ করা হচ্ছে ৮০ থেকে ৮৫ কোটি ঘনফুট।
পেট্রোবাংলার একজন কর্মকর্তা বলেন, প্রতি ইউনিট গ্যাস বিক্রি করে পেট্রোবাংলা পায় ২২ টাকা ৮৭ পয়সা। তাদের এখন খরচ হচ্ছে গড়ে ২৭ টাকার বেশি। যদিও শিল্পে প্রতি ইউনিট গ্যাস বিক্রি হয় ৩০ টাকায়। কিন্তু বিদ্যুৎ খাতে গ্যাসের দাম ১৪ টাকা ৭৫ পয়সা। শিল্প গ্রাহকেরা বাড়তি দাম দিলেও গ্যাস সরবরাহে বিদ্যুৎ খাতকে অগ্রাধিকার দিতে হচ্ছে। চাহিদামতো সরবরাহ করতে হলে আরও দুই কার্গো এলএনজি জাহাজ বাড়তি আমদানি করতে হবে। এতে পেট্রোবাংলার লোকসান বাড়বে। কিন্তু পিডিবি যদি ২৭ টাকা করে দাম দেয়, তাহলে আরও কার্গো আনা যাবে।
ঢাকার পাশের দুই জেলা নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুর মূলত শিল্প এলাকা হিসেবে পরিচিত। রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাকের অধিকাংশ কারখানা এখানে। গ্যাসের অভাবে দীর্ঘদিন ধরে কারখানাগুলোতে উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। দুই সপ্তাহ ধরে গ্যাস–সংকট আরও বেড়েছে। গাজীপুর তিতাস গ্যাসের ব্যবস্থাপক (সঞ্চালন ও বিতরণ) মো. রেদওয়ান প্রথম আলোকে বলেন, গাজীপুরে গ্যাসের চাহিদা এখন ৬০ কোটি ঘনফুট, পাওয়া যাচ্ছে ৩৫ কোটি ঘনফুট।
দেশে একসময় দিনে ২৭০ কোটি ঘনফুট গ্যাস উৎপাদন হতো। ২০১৮ সালে উৎপাদন কমতে থাকলে এলএনজি আমদানি শুরু হয়। উৎপাদন কমে এখন ১৮৪ কোটি ঘনফুটে নেমে এসেছে। আগের চেয়ে এলএনজি আমদানি বাড়ানো হলেও তা পর্যাপ্ত নয়।শিল্প পুলিশের তথ্যমতে, গাজীপুর জেলায় মোট কারখানার সংখ্যা ২ হাজার ১৭৬। এর মধ্যে পোশাক কারখানা রয়েছে ১ হাজার ১৮৭টি। লাইসেন্সবিহীন কারখানাসহ সব মিলিয়ে পাঁচ হাজারের মতো ছোট-বড় কারখানা রয়েছে। বেশির ভাগই গ্যাসের ওপর নির্ভরশীল।
গাজীপুরের মৌচাক এলাকার সাদমা গ্রুপের পরিচালক সোহেল রানা প্রথম আলোকে বলেন, কারখানা চালাতে গ্যাসের চাপ ১০ থেকে ১৫ পিএসআই (প্রতি বর্গ ইঞ্চিতে চাপ) থাকতে হয়। ১৫ দিন ধরে ২ থেকে ৩ পিএসআইয়ের বেশি গ্যাসের চাপ পাওয়া যায়নি। এতে আমাদের উৎপাদন ৩০ থেকে ৪০ ভাগ কমে গেছে।
তিতাস গ্যাস নারায়ণগঞ্জ অফিসের উপমহাব্যবস্থাপক মামুনার রশিদ প্রথম আলোকে বলেন, সরবরাহ কম থাকায় অনেক জায়গায় শিল্প ও আবাসিক গ্রাহক গ্যাস কম পাচ্ছেন।
জ্বালানি সরবরাহে ঘাটতি ব্যবস্থাপনা সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক দিক বিবেচনায় রাখতে হয়। গ্যাস সরবরাহে ভারসাম্য আনতে গিয়ে বেশি হারে এলএনজি আমদানির দিকে যাওয়া যাবে না। দেশীয় গ্যাস অনুসন্ধান ও উৎপাদনে জোর দিতে হবে। সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেমনারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার বিসিক শিল্পনগরীতে এম এস ডাইং প্রিন্টিং অ্যান্ড ফিনিশিং লিমিটেডের উৎপাদন ক্ষমতা ৪০ টন। উৎপাদন নেমেছে ১০ টনে। গ্যাসের চাপস্বল্পতার কারণে ব্যবসায়িক ক্ষতির বিষয়টি জানিয়ে ২৩ এপ্রিল তিতাসকে চিঠি দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। গতকাল রোববার দুপুরে প্রতিষ্ঠানটিতে গিয়ে দেখা যায়, বয়লার মেশিন বন্ধ, গ্যাসের চাপ শূন্য পিএসআই। বিসিকের অপর প্রতিষ্ঠান ফেয়ার অ্যাপারেলস লিমিটেডে সকাল থেকে উৎপাদন বন্ধ। শ্রমিকেরা বসে অলস সময় কাটাচ্ছেন।
বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম প্রথম আলোকে বলেন, জ্বালানি সরবরাহে ঘাটতি ব্যবস্থাপনা সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক দিক বিবেচনায় রাখতে হয়। গ্যাস সরবরাহে ভারসাম্য আনতে গিয়ে বেশি হারে এলএনজি আমদানির দিকে যাওয়া যাবে না। দেশীয় গ্যাস অনুসন্ধান ও উৎপাদনে জোর দিতে হবে।
[তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন প্রতিনিধি, গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জ]