কলকাতায় হাড়হিম করা ঘটনা ঘটেছে। ব্যাগ ভর্তি টুকরো করা মানবদেহ গঙ্গায় ফেলার আগে কুমোরটুলি ঘাট থেকে দুই নারীকে হাতেনাতে আটক করেছে স্থানীয়রা। এরপর ব্যাগ খুলতেই আঁতকে ওঠেন পুলিশ ও স্থানীয়রা।

প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, মঙ্গলবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) সকাল ৭টার দিকে ট্যাক্সিতে করে গঙ্গার ঘাটে আসেন মাস্ক পরা দুই নারী। ভারী ব্যাগ টেনে ঘাটে আনতে দেখে স্থানীয়দের সন্দেহ হয়। তারা দাবি করেন, ব্যাগে পোষ্য কুকুরের মরদেহ রয়েছে। খবর দেয়া হয় পুলিশকে। পুলিশ এসে ট্রলি ব্যাগ খুলতেই ভিতরে মেলে পচাগলা রক্তাক্ত দেহ।

এ ঘটনায় পুলিশ ওই দুই নারীকে আটক করেছে। আটককৃতরা হলেন, ফাল্গুনি ঘোষ ও আরতি ঘোষ। সম্পর্কে তারা মা ও মেয়ে। ট্রলি ব্যাগে করে যার দেহ ফেলা হচ্ছিল তিনি সম্পর্কে ফাল্গুনির পিসি শাশুড়ি। নাম সুমিতা ঘোষ।

আরো পড়ুন:

ভূমিকম্পে কাঁপল পশ্চিমবঙ্গ-ওড়িশা

ভারতের সঙ্গে সম্পর্কে টানাপড়েন, বাংলাদেশকে কাছে টানছে চীন

মা ও মেয়ের পরিকল্পনা ছিল, সকালের দিকে সবার চোখ এড়িয়ে ওই ব্যাগ গঙ্গায় ভাসিয়ে দেবেন। কিন্তু কুমোরটুলি ঘাট ভোর থেকেই জনবহুল থাকে। প্রাতঃভ্রমণকারীদের চোখে পড়ে যায় ওই মা এবং মেয়ে। তাদের হাবেভাবে সন্দেহ হয় ঘাটে থাকা অন্যান্যদের। ট্রলি খুলে ভেতরে কী আছে তা দেখানোর কথা বললে বেঁকে বসেন ফাল্গুনি এবং আরতি। আর এতেই সাধারণ মানুষের সন্দেহ বাড়ে।

উত্তর বন্দর থানার পুলিশ ওই দেহের টুকরাগুলো উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য হাসপাতালে পাঠিয়েছে। ফাল্গুনি এবং আরতিকে জিজ্ঞাসাবাদ করে আরো তথ্য পাওয়ার চেষ্টা করছে পুলিশ।

কুমোরটুলি ঘাটে উপস্থিত প্রাতঃভ্রমণকারীদের দাবি, এই দুই নারীর সঙ্গে এক ব্যক্তিও ছিলেন। তিনি পালিয়ে গেছেন। এই দাবির সত্যতাও খতিয়ে দেখছে পুলিশ। 

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ শেষে মঙ্গলবার দুপুরে পুলিশ জানায়, ঝগড়ার মুহূর্তে ইট দিয়ে থেঁতলে পিসি শাশুড়িকে খুন করে ফাল্গুনি। এরপর মা আরতি ঘোষের সহায়তায় মৃত শাশুড়ির গোড়ালি কাটা হয় বঁটি দিয়ে। এরপর সেই টুকরো করা দেহ ট্রলিতে ভরে গঙ্গার ঘাটের উদ্দেশে রওনা দেয় মা ও মেয়ে।

ঘটনার তদন্তে নেমে আরো চাঞ্চল্যকর তথ্য ও পুলিশ। জানা গেছে, ফাল্গুনির সঙ্গে দীর্ঘদিন বনিবনা ছিল না তার স্বামীর। তার শ্বশুরবাড়ি পূর্ব বর্ধমানের নাদনঘাটে। গত কয়েক বছর ধরে মধ্যমগ্রাম পৌরসভার বীরেশ পল্লিতে বাড়ি ভাড়া নিয়ে আলাদা থাকছিলেন ফাল্গুনি। গত ১১ ফেব্রুয়ারি মেয়ের কাছে এসেছিল মা আরতি।

পুলিশ জানিয়েছে, সোমবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) ফাল্গুনির বাড়িতে গিয়েছিলেন তার পিসি শাশুড়ি সুস্মিতা। কেন তিনি সেখানে গিয়েছিলেন, তা স্পষ্ট নয়। তবে তদন্তকারীদের অনুমান, ফাল্গুনিই হয়তো ফোন করে তাকে ডেকেছিল। 

সোমবার বিকেল ৪টার দিকে শাশুড়ি সুস্মিতার সঙ্গে বিবাদে জড়িয়ে পড়েন ফাল্গুনি। সেসময় দেওয়ালে ধাক্কা লেগে অজ্ঞান হয়ে যান সুস্মিতা। পরে তার জ্ঞান ফেরার পরে ফের ফাল্গুনির সঙ্গে তার হাতাহাতি হয়। সেই সময়েই ইট দিয়ে শাশুড়ির ঘাড়ে এবং মুখে আঘাত করেন ফাল্গুনি। তাতে তার মৃত্যু হলে দেহটি ফেলে দেয়ার জন্য পরিকল্পনা করে মা-মেয়ে।

ফাল্গুনির প্রতিবেশীদের দাবি, অচেনা লোকজনের আনাগোনা ছিল ফাল্গুনির বাড়িতে। এই নিয়ে প্রতিবাদও করেছিলেন পাড়ার লোকজন। বাড়ি ভাড়ার চুক্তির মেয়াদ চলতি বছরের মার্চে শেষ হয়ে যাওয়ার পর সেখান থেকে চলে যাওয়ার কথা ছিল ফাল্গুনির।

ঢাকা/সুচরিতা/ফিরোজ

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর

এছাড়াও পড়ুন:

রোজার আগেই নির্বাচন, এরপর আগের কাজে ফিরে যাবেন

অন্তর্বর্তী সরকার সময়মতো ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন আয়োজনের জন্য অঙ্গীকারবদ্ধ বলে উল্লেখ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন, আগামী ফেব্রুয়ারিতে পবিত্র রমজানের আগেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনের পর তিনি তাঁর আগের কাজে ফিরে যাবেন।

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভাকে এসব কথা বলেছেন প্রধান উপদেষ্টা। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ওয়াশিংটন থেকে ভিডিও ফোনকলে অধ্যাপক ইউনূসের সঙ্গে কথা বলেন জর্জিয়েভা।

এ সময় তাঁরা বাংলাদেশের চলমান অর্থনৈতিক সংস্কার, আঞ্চলিক পরিস্থিতি এবং আগামী ফেব্রুয়ারিতে সাধারণ নির্বাচনের পূর্ববর্তী চ্যালেঞ্জ নিয়ে আলোচনা করেন।

আলোচনায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বের ভূয়সী প্রশংসা করেন ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা। তিনি বলেন, অধ্যাপক ইউনূস দায়িত্ব গ্রহণের পর বাংলাদেশের অর্থনীতি উল্লেখযোগ্যভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছে এবং এই কৃতিত্ব তাঁর নিজের।

অর্থনীতির সংকটকালীন পরিস্থিতি স্মরণ করে আইএমএফ প্রধান বলেন, ‘আপনার অর্জন আমাকে মুগ্ধ করেছে। অল্প সময়ে আপনি অনেক কিছু করেছেন। যখন অবনতির ঝুঁকি অত্যন্ত বেশি ছিল, তখন আপনি দেশের দায়িত্ব নিয়েছেন। আপনি সঠিক সময়ে সঠিক ব্যক্তি।’

ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা বিশেষভাবে বৈদেশিক মুদ্রা বাজারের স্থিতিশীলতা এবং রিজার্ভ পুনরুদ্ধারের জন্য সরকারের সাহসী পদক্ষেপ, বাজারভিত্তিক বিনিময় হার প্রবর্তনের প্রশংসা করেন।

অধ্যাপক ইউনূস বাংলাদেশের এক সংকটময় সময়ে আইএমএফ প্রধানের অবিচল সহায়তার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, ‘চমৎকার সহায়তার জন্য ধন্যবাদ।’ তিনি স্মরণ করিয়ে দেন, গত বছর নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে তাঁদের প্রথম সাক্ষাৎ বাংলাদেশের অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের পথ সুগম করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল।

কথোপকথনে আইএমএফ প্রধান অভ্যন্তরীণ রাজস্ব আয় বৃদ্ধি এবং ব্যাংকিং খাতে গভীর সংস্কার বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি বলেন, ‘শক্ত অবস্থানে থাকতে হলে সংস্কার অনিবার্য। এটি বাংলাদেশের ইতিহাসের এক অমূল্য মুহূর্ত।’

অধ্যাপক ইউনূস জানান, তাঁর সরকার ইতিমধ্যে ব্যাংকিং খাত পুনর্গঠন এবং রাজস্ব সংগ্রহ জোরদারের জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। তিনি বলেন, ‘আমরা এক বিধ্বস্ত ও সম্পূর্ণ ভেঙে পড়া অর্থনীতি উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়েছি। কিছু ব্যক্তি আক্ষরিক অর্থে ব্যাগভর্তি টাকা ব্যাংক থেকে নিয়ে পালিয়ে গেছে।’

এ ছাড়া আঞ্চলিক পরিস্থিতি নিয়েও আলোচনা হয়। এর মধ্যে ছিল নেপালে চলমান যুব আন্দোলন এবং আসিয়ানভুক্তির জন্য বাংলাদেশের আকাঙ্ক্ষা। অধ্যাপক ইউনূস আঞ্চলিক কানেক্টিভিটি জোরদারের লক্ষ্যে ঢাকার বৃহৎ অবকাঠামো উদ্যোগ—যেমন নতুন বন্দর ও টার্মিনাল প্রকল্প—সম্পর্কেও অবহিত করেন।

আলোচনাকালে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ এবং অর্থসচিব খায়রুজ্জামান মজুমদার উপস্থিত ছিলেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ফের রিজার্ভ ৩১ বিলিয়ন ডলার 
  • আমার স্বামীর উপরে কু-নজর পড়েছে: অঙ্কিতা
  • সম্পদ বৃদ্ধি নিয়ে প্রশ্ন করায় সাংবাদিকের ওপর ক্ষেপলেন ট্রাম্প
  • ‘আমি থানার ওসি, আপনার মোবাইল হ্যাকড হয়েছে’
  • অস্ট্রেলীয় সাংবাদিকের প্রশ্নে কেন চটে গেলেন ট্রাম্প, আলবানিজের কাছে নালিশেরও হুমকি দিলেন
  • কালিয়াকৈরে এক মাসে ২০ ডাকাত গ্রেপ্তার 
  • বাঁশির সুরে বিরহের কষ্ট ভুলতে চান রিকশাচালক শফিকুল
  • রোজার আগেই নির্বাচন, এরপর আগের কাজে ফিরে যাবেন
  • ট্রেন থেকে পড়ে ৮ দিন ধরে হাসপাতালে ছেলে, ফেসবুকে ছবি দেখে ছুটে এলেন মা
  • ভাড়া বাসায় একা থাকতেন বৃদ্ধা, তার অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার