রাসেল রায়হান কবি ও কথাশিল্পী। কথাসাহিত্য ও কবিতা—দুই মাধ্যমেই সমানতালে লিখে চলেছেন। জীবনযুদ্ধে পরাজিত মানুষের সুখ, দুঃখ, আনন্দ, বেদনারা রাসেল রায়হানের ভাব ও ভাষায় অনায়াসে প্রাণ প্রচুর্য পেয়ে যায়। তার লেখা পাঠকের হৃদয়ে বৃষ্টির মতো রিন রিন দুঃখের বুঁদবুঁদ তুলে দিতে সক্ষম। রাসেল রায়হান কবিতায় অর্জন করেছেন ‘জীবনানন্দ দাশ পাণ্ডুলিপি পুরস্কার ১৪২২’ এবং ‘মাহবুবুল হক শাকিল পদক ২০১৭’। চলতি বইমেলায় রাসেল রায়হানের নতুন কবিতার বই প্রকাশিত হয়েছে। নতুন বইয়ের প্রেক্ষাপটসহ বিভিন্ন বিষয়ে রাইজিংবিডির সঙ্গে কথা বলেছেন রাসেল রায়হান। সাক্ষাৎকার গ্রহণে স্বরলিপি।

রাইজিংবিডি: কথাসাহিত্য এবং কবিতা—দুই মাধ্যমেই লিখছেন। সৃজনে কথাসাহিত্য কবিতায় কীভাবে প্রভাব ফেলে আর কবিতা কীভাবে কথাসাহিত্যে প্রভাব ফেলে? নাকি কোনো প্রভাব ফেলে না?
রাসেল রায়হান:
প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কম-বেশি প্রভাব তো অবশ্যই ফেলে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই প্রভাবটা পড়ে ভাষায়। চিন্তাতেও পড়ে অনেকটা। আমি ব্যক্তিগতভাবে চেষ্টা করি, কথাসাহিত্যে কবিতার প্রভাব এড়িয়ে যেতে। যদিও এমন কথাসাহিত্যিকও আছে, যাদের সাহিত্যের ভাষা কাব্যিক, ক্ষেত্রবিশেষে বেশি। তবে যেহেতু কবিতায় টানাগদ্য ফর্ম আছে, দীর্ঘ কবিতা হতে পারে, এবং সেগুলো নিয়ে কিছু কাজও আছে আমার, ফলে আমি ব্যক্তিগতভাবে কথাসাহিত্যে এটা পুরোপুরিই এড়াতে চাই। খুব সতর্ক থাকি। বিপরীতভাবে কথাসাহিত্যের প্রভাব কবিতায় পড়লে কবিতা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে।

রাইজিংবিডি: চলতি বইমেলায় আপনার নতুন প্রকাশিত কবিতার বই ‘মূকাভিনেতার ডায়েরি’ সম্পর্কে জানতে চাই।
রাসেল রায়হান:
নাম থেকেই কিছুটা আন্দাজ করতে পারবেন, এটা এমন একজনের লেখা কবিতা, যে স্বাভাবিকভাবে অন্য 'আমজনতার' মতো কথা বলতে পারেনি। তাকে কথা বলতে হয়েছে ইশারায়, অভিব্যক্তিতে। অনেকটা মূকাভিনেতার ভূমিকায় প্রকাশ করতে হয়েছে নিজের বক্তব্যগুলোকে, দীর্ঘদিন ধরে। দিনের পর দিন বহু কৌশল নিতে হয়েছে। ৫৭ ধারার ভয় তো ছিলই। ফলে তাকে আশ্রয় নিতে হয়েছে নিজের মতো একটি ভাষার। সেই ভাষায় নিজের আনন্দ আছে, বেদনা আছে, প্রেম-প্রতিবাদ, প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তি আছে; অন্যেরটাও আছে। সেসবেরই সংকলন এই কবিতার বই।

আরো পড়ুন:

প্রসঙ্গ: আত্মকথা ইতিকথা

বইমেলায় ঝুমকি বসুর তৃতীয় গল্পগ্রন্থ ‘ছাতিম ফুলের গন্ধ’

রাইজিংবিডি:  সম্প্রতি কোন কোন কবির কবিতা পড়েছেন, সমকালীন কাদের কবিতা ভালো লাগে?
রাসেল রায়হান:
সম্প্রতি পড়েছি সিকদার আমিনুল হকের শ্রেষ্ঠ কবিতা, জব্বার আল নাঈমের কবিতার বই 'আত্মার আওয়াজ'। সমকালীন কবিদের আমি প্রায় অর্ধশত কবির কবিতা নিয়মিত পড়ি। ভালো লাগার তালিকা করলে অন্তত ৩০ জন কবির নাম বলতে হবে।

রাইজিংবিডি:  কবিতা কখন গদ্যময়তা দাবি করে?
রাসেল রায়হান:
বর্তমানে বেশির ভাগ কবিতাই গদ্যময়। এর বড় একটা কারণ হিসেবে বলতে পারি, বর্তমান সময়ের কবিরা কবিতার অন্যান্য কলকব্জার চেয়ে বোধে বেশি গুরুত্ব দেয়। গদ্যে সেই বোধের প্রকাশ তুলনামূলক সহজ। এবং স্মার্ট। পাঠ্যপুস্তক থেকে আমাদের সময়ে এসে কবিতা যোজন যোজন দূরে এগিয়ে গেছে। ফলে এই সময়ের কবিতা গদ্যময়তাই বেশি দাবি করে।

রাইজিংবিডি:  বিব্রত ময়ূর-এর পাণ্ডুলিপির জন্য ‘জীবনানন্দ দাশ পাণ্ডুলিপি পুরস্কার ১৪২২’ পেয়েছেন। একই গ্রন্থের জন্য পরবর্তীকালে পেয়েছেন ‘মাহবুবুল হক শাকিল পদক ২০১৭’। এরপরে আপনার আরও বেশ কয়েকটি বই প্রকাশ হয়েছে। স্বীকৃতি এবং স্বীকৃতিহীনতাকে কীভাবে মূল্যায়ন করেন?
রাসেল রায়হান
: স্বীকৃতি ভালো লাগা তৈরি করে। সহজে অন্য পাঠকের দৃষ্টি আকর্ষণ করায় সহায়তা করে। এতটুকুই। এরপর পাঠক নিজেই বেছে নেন, পড়বেন কি পড়বেন না। অন্তত পাঠক পাতা উলটে দেখবেন, এটুকু প্ররোচনা দেয় স্বীকৃতি। স্বীকৃতিহীনতা এক অর্থে লাভজনক যে লেখকের সামনে অন্যের প্রত্যাশা থাকে না, ফলে লেখক অনেকটা চাপহীন থাকেন।

রাইজিংবিডি: প্রকাশনীগুলোর সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতা কেমন?
রাসেল রায়হান:
আমার অভিজ্ঞতা বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ভালো। তবে দেশের বেশির ভাগ প্রকাশনীকেই পেশাদার হতে হবে। বিশেষ কিছু প্রকাশনীকে 'আরও পেশাদার' হতে হবে। আর বাকিদের বন্ধ করে দেওয়াই উত্তম।

রাইজিংবিডি: একজন লেখকের বই প্রচার কৌশল কেমন হওয়া উচিত?
রাসেল রায়হান:
প্রচারের মূল (হয়তো একমাত্র) দায়িত্ব নেওয়া উচিত প্রকাশনীর। লেখকের প্রচারের একমাত্র কৌশল তো হওয়া উচিত, নিজের টেক্সটে মনোযোগ দেওয়া। কেউ লিখতে এলো মানেই তার প্রতিদ্বন্দ্বী বিশ্বের তাবৎ মহান লেখককুল। এটুকু মাথায় নিয়েই লেখকের লেখা উচিত। প্রচার-প্রচারণার সমূহ ভার ছেড়ে দেওয়া উচিত সময়ের হাতে। যদিও বাস্তবতা ভিন্ন। সে-কথা আর না-ই বললাম। চর্বিত চর্বণ হয়ে যেতে পারে।

ঢাকা/লিপি

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর

এছাড়াও পড়ুন:

চুয়েটে দিনভর তারুণ্যের ‘তর্ক-যুদ্ধ’

তীব্র উত্তেজনা চলছে তাইওয়ান ও চীনের মধ্যে। একদিকে তাইওয়ানের স্বাধীনতা রক্ষার আকাঙ্ক্ষা, অন্যদিকে চীনের ভূখণ্ডগত অখণ্ডতা রক্ষার দৃঢ় অবস্থান। এর মাঝখানে যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা ঘিরে তৈরি হচ্ছে বৈশ্বিক কূটনৈতিক টানাপোড়েন। সামরিক মহড়া, যুদ্ধজাহাজের টহল আর রাজনৈতিক হুমকিতে যখন অঞ্চলজুড়ে উত্তেজনা বাড়ছে, ঠিক তখনই এসব জটিল আন্তর্জাতিক ইস্যু নিয়ে তর্ক-যুদ্ধে মেতে ওঠেন তরুণ বিতার্কিকেরা।

আজ শুক্রবার চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) পুরকৌশল ভবনে বিতার্কিকদের দেখা গেল। তাইওয়ান ও চীনের সাম্প্রতিক উত্তেজনায় যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা, অন্তর্বর্তী সরকারে ছাত্র ও সমন্বয়কের অন্তর্ভুক্তির ভালো-মন্দ—এমন আরও নানা আলোচিত বিষয় নিয়ে বিতার্কিকেরা যুক্তি, পাল্টা যুক্তি উপস্থাপন করেন। এই বিতর্ক প্রতিযোগিতার আয়োজন করে চুয়েট ডিবেটিং সোসাইটি। আয়োজনের সহযোগী পৃষ্ঠপোষক হিসেবে রয়েছে প্রথম আলো।

এবারের আয়োজনের নাম ছিল ‘তারুণ্য উৎসব’। এতে দেশের ২৮ বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩২ দল অংশ নেয়। তিন দিনের আয়োজনে গতকাল ছিল দ্বিতীয় পর্ব। সকাল ৯টায় শুরু হয়ে এ প্রতিযোগিতা চলে বিকেল ৫টা পর্যন্ত। যুক্তির এই লড়াই চলে চারটি ধাপে। প্রতিটি ধাপ শুরুর ১৫ মিনিট আগে প্রতিযোগীদের বিতর্কের বিষয় সম্পর্কে জানিয়ে দেওয়া হয়। এরপর চটপট যুক্তি সাজাতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন বিতার্কিকেরা। পরে তাঁদের মধ্য থেকে বাছাই করা ৮টি দল নিয়ে অনুষ্ঠিত হয় কোয়ার্টার ফাইনাল।

আয়োজকেরা জানান, কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে বিজয়ী চারটি দল নিয়ে আজ শনিবার অনুষ্ঠিত হবে সেমিফাইনাল রাউন্ড। এরপর সেমিফাইনালের বিজয়ী দুটি দল সরাসরি অংশগ্রহণ করবে চূড়ান্ত পর্বে। চূড়ান্ত পর্বে বিজয়ী দলের হাতে পুরস্কার তুলে দেবেন অতিথিরা। এর আগে গত বৃহস্পতিবার প্রতিযোগিতা শুরু হয়। এদিন বিকেল ৫টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক মিলনায়তনে বই বিনিময়, ক্যাম্পাসে বৃক্ষরোপণ ও গুপ্তধন খোঁজা প্রতিযোগিতার মাধ্যমে শুরু হয় আয়োজন।

চুয়েট ডিবেটিং সোসাইটির সভাপতি গোলাম মুরাদ প্রথম আলোকে বলেন, বিতর্কের মাধ্যমে নানা বিষয়ে জানার সুযোগ সৃষ্টি হয়। বিতর্ক আমাদের চিন্তা, চেতনা ও মেধা বিকশিত করে। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিতার্কিকদের অংশগ্রহণের ফলে নতুন সম্পর্ক গড়ে ওঠে। শিক্ষার্থীদের এ সুযোগ তৈরি করে দিতেই নবমবারের মতো এই বিতর্ক উৎসব বা প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছে।

প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে এসেছিলেন প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটির চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী জান্নাতুল ফেরদৌস। আলাপকালে তিনি বলেন, এ রকম প্রতিযোগিতায় সমসাময়িক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বিতর্ক করার ফলে জ্ঞানের পরিধি সমৃদ্ধ হয়। পাশাপাশি অনেকের সঙ্গে পরিচিত হওয়ার সুযোগ তৈরি হয়।

দিনভর বিতর্ক শেষে সন্ধ্যায় আয়োজন করা হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এতে নাচ, গান, আবৃত্তি, নাটকসহ বিভিন্ন পরিবেশনায় অংশগ্রহণ করেন শিক্ষার্থীরা। পাশাপাশি কনসার্টে মঞ্চ মাতায় জনপ্রিয় গানের দল ‘সহজিয়া’ ও ‘লেভেল ফাইভ’।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • চুয়েটে দিনভর তারুণ্যের ‘তর্ক-যুদ্ধ’
  • ওয়েস্ট ইন্ডিজকে আবারও হতাশায় ডুবিয়ে এগিয়ে গেল পাকিস্তান
  • জুলাই অভ্যুত্থানের সময় ভিপিএনও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল
  • রূপ নয়, সাহস দিয়ে জয় করা এক নায়িকা
  • টানা দুই জয়ের পর এবার হার বাংলাদেশের যুবাদের
  • ভারতের অর্থনীতি মৃত, ট্রাম্প ঠিকই বলেছেন: রাহুল
  • হেনরির ৬ উইকেটের পর দুই ওপেনারে নিউজিল্যান্ডের দিন
  • অসুখবিসুখে কষ্ট পেয়ে, বিছানায় পড়ে বাঁচতে চাই না: ববিতা
  • নিশ্ছিদ্র দাপটে উরুগুয়েকে উড়িয়ে ফাইনালে ও অলিম্পিকে ব্রাজিল
  • যে জীবন মানুষের উপকারে আসে না, সে জীবন সার্থক নয়: ববিতা