বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য বাবু গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেছেন, ‌‌‌‌কে কে যেন ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের কথা বলছে। এটা কতটুকু সত্য আমি জানি না। মাঝখানে জামায়াতে ইসলামী ঢুকে স্থানীয় সরকার নির্বাচন চায়। ডিসেম্বরের মধ্যে স্থানীয় সরকার নির্বাচন হবে, না জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে সেটা বিরাট প্রশ্ন। আমরা ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা পরিষদ ও পৌরসভা নির্বাচনের জন্য আন্দোলন করিনি। আমরা আন্দোলন করেছি জনগণের ভোটের অধিকারের মধ্য দিয়ে স্বচ্ছতার সঙ্গে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের একটি পার্লামেন্ট, একটি সরকার। সেটি এখনও হয়নি। আমরা আন্দোলন করেছি একটি জনপ্রতিনিধিত্বমূলক সরকারের জন্য। জনগণের ভোটের অধিকার আদায়ের জন্য। মঙ্গলবার বিকেলে গাজীপুর জেলা শহরের রাজবাড়ি ময়দানে জেলা বিএনপির সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। 

তিনি বলেন, আমরা নির্বাচনের কথা শুনি না। সকাল-বিকাল সংস্কারের কথা শুনি। ১৭ বছর যাবৎ সংস্কারের কথা শুনছি। মইনুদ্দিন-ফখরুদ্দিন সংস্কার শুরু করেছে। সে সংস্কারের যা অসমাপ্ত আছে সেটা সমাপ্ত করার দায়িত্ব কি এ সরকার নিয়েছে কিনা আমি জানি না। আমরা ১৭ বছর ধরে আন্দোলন করছি নির্বাচনের জন্য। এটা নতুন কোনো দাবি না। এ নির্বাচনটা এখনও দেয়নি। 

গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, শান্তিপূর্ণ অবস্থায় আমরা একটি সঠিক নির্বাচন চাই। নিরপেক্ষ, নির্দলীয় নির্বাচন। যে নির্বাচনে জনগণ হাসতে হাসতে ভোট কেন্দ্রে যাবে। একটা উৎসবের মধ্যে যার যার ভোট সে সে দেবে। যার ভোট সে দেবে। যাকে খুশি তাকে দেবে এবং দিনের ভোট দিনে দেবে রাতে দেবে না। 

তিনি বলেন, নতুন রাজনৈতিক দল আত্মপ্রকাশ করবে শুক্রবার। সেটা ভালো। দলটা করে মাঠে নামেন আর আপনার দলের যারা মন্ত্রিসভায় আছেন তাদেরকে নামিয়ে আনেন। গাছেরটাও খাবেন আর নিচেরটাও খাবেন দুইটা এক সাথে খেতে পারবেন না। একটা খাবেন। হয় রাজনৈতিক দল করবেন রাস্তায় নামবেন আর না হয় সরকারেরটা খাচ্ছেন খান, চুপ করে বসে থাকেন। ডিক্লারেশন অব ৫ আগস্ট তাদের লেখাটা পড়লাম, কোনো জায়গায় মুক্তিযুদ্ধের কথাটা নেই। একাত্তরে নাকি জনযুদ্ধ হয়েছে, মুক্তিযুদ্ধ হয়নি। অর্থাৎ যারা ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধকে স্বীকার করে না তারা রাষ্ট্রীয়ভাবে রাষ্ট্রদ্রোহী। 

জেলা বিএনপির আহ্বায়ক সাবেক এমপি একেএম ফজলুল হক মিলনের সভাপতিত্বে সদস্য সচিব চৌধুরী ইশরাক আহমেদ সিদ্দিকীর সঞ্চালনায় সমাবেশে গয়েশ্বর চন্দ্র রায় আরও বলেন, ড.

ইউনুস বলেছেন, ছাত্ররা তাকে ক্ষমতায় এনেছে। উনি এখন ছাত্রদের খেদমত নিয়ে ব্যস্ত। জনগণ জাহান্নামে যাক। তাদের মাত্র দায়বদ্ধতা আছে ছাত্রদের কাছে। ছাত্রদের প্রতিনিধি ডানে বামে তিনজন বসিয়ে নিয়েছেন আর সারা রাত বসে তারা দল বানাচ্ছেন। এখন প্রশাসনে যাবেন, যেখানেই যাবেন সব আওয়ামী লীগ জামায়াত হয়ে গেছে। মনে করে জামায়াত ক্ষমতায় এসে গেছে। আজকে বর্তমান সরকারের প্রধান উপদেষ্টা এবং সকল উপদেষ্টার কাছে বিনীতভাবে বলবো, জনগণের আকাঙ্খা এবং প্রত্যাশার বাইরে আপনারা পথ চললে আপনারা হোঁচট খেতে পারেন। 

সমাবেশে বক্তব্য রাখেন বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক কাজী ছাইয়্যেদুল আলম বাবুল, বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য ওমর ফারুক শাফিন, জেলা বিএনপির যুগ্ন আহবায়ক  অধ্যাপক ডা. রফিকুল ইসলাম বাচ্চু, শাহ রিয়াজুল হান্নান, আক্তারুল আলম মাস্টার, আবু তাহের মুসল্লী, বিল্লাল হোসেন বেপারী প্রমুখ।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে গয়েশ্বর রায় আরও বলেন, ২৪ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট ছাত্ররা কোটা বাতিলের দাবিতে নেমেছিল আমরা তাদের প্রথম দিনই নৈতিক সমর্থন দিয়েছি। তারপর আমরা সর্বাত্বক সমর্থন দিয়েছি। তারপর আমরা ছদ্ববেশে সে আন্দোলনে ঢুকে গেছি। জুলাই বিপ্লবের বিজয়ের ফসলের শিরোপা তোমাদের মাথায় তুলে দিয়েছি। অবহেলা, অযত্ন, অহংকার বোধে সে শিরোপা যেন মাথা থেকে না পড়ে যায়। তোমরা কষ্ট না পেলেও জাতি কষ্ট পাবে। সম্প্রতি যে অহমিকাসুলভ কথাবার্তা, রাজনৈতিক নেতাদের নিয়ে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করা এটা অত্যন্ত গর্হিত কাজ। তিনি বলেন, এ মূহূর্তে দরকার নির্বাচিত সরকার। নির্বাচিত সরকার ছাড়া জনগণের কাছে কেউ দায়বদ্ধ থাকে না। বর্তমান অন্তবর্তীকালীন সরকার জনগণের কাছে দায়বদ্ধ না। 
 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব এনপ ব এনপ র জনগণ র র জন য সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

জুলাই সনদের বাস্তবায়নে দেরি হলে জনগণ আবারও রাস্তায় নামবে: জামায়াত নেতা রফিকুল

জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি এখন দেশের ১৮ কোটি মানুষের দাবি বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশের জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল রফিকুল ইসলাম খান। তিনি বলেন, ‘এই সনদ নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে জারি করা হোক এবং প্রয়োজনে গণভোটের আয়োজন করা হোক। তবে এই গণভোট অবশ্যই জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেই হতে হবে, নির্বাচনের পরে নয়।’

আজ বুধবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে জুলাই সনদের বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া নিয়ে তৃতীয় ধাপে তৃতীয় দিনের আলোচনা শেষে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন রফিকুল ইসলাম খান। এ সময় উপস্থিত ছিলে জামায়াতের আরেক সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আযাদ।

জুলাই সনদের বাস্তবায়নে দেরি হলে জনগণ স্বাভাবিকভাবেই আবারও রাস্তায় নেমে আসবে বলে মন্তব্য করেন রফিকুল ইসলাম খান। তিনি বলেন, ১৯৯০ সালের গণ-অভ্যুত্থানের পর সে সময়কার দলগুলোর ঐকমত্য থাকা সত্ত্বেও ক্ষমতায় থাকা দলগুলো সেটি (তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা) যথাসময়ে বাস্তবায়ন করেনি। পরে আন্দোলনের মাধ্যমেই তা সংবিধানে যুক্ত হয়।

জামায়াতের এই নেতা আরও বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল হয়েছিল বিচারপতি খায়রুল হকের রায়ের মাধ্যমে। আদালতের ওপর প্রভাব বিস্তার করে এ রায় দেওয়ানো হয়েছিল। তাই বিচার বিভাগকে আবার বিতর্কের মুখে না ফেলে সংবিধানিক আদেশের মাধ্যমে জুলাই সনদ বাস্তবায়নের পক্ষে জামায়াত।

জামায়াতের আরেক সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আযাদ বলেন, ঐকমত্য কমিশন একটি বিশেষজ্ঞ কমিটির মাধ্যমে চারটি বিকল্প নিয়ে কাজ করেছে, যার মধ্যে কমিশন সংবিধানিক আদেশের প্রস্তাবটি সমর্থন করেছে। এই আদেশের মাধ্যমে জুলাই সনদের ২২টি আর্টিকেল বাস্তবায়িত হতে পারে। এটি আইনিভাবে সবচেয়ে শক্তিশালী ভিত্তি।

এক প্রশ্নের জবাবে হামিদুর রহমান বলেন, সংবিধানের মৌলিক কাঠামো পরিবর্তন করার এখতিয়ার সংসদের নেই, এবং এ ধরনের পরিবর্তন করতে হলে অবশ্যই গণভোটের প্রয়োজন হয়।

জামায়াতে ইসলামী জনগণের অভিপ্রায়কে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয় উল্লেখ করে জামায়াতের এ সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল বলেন, জনগণের ইচ্ছা ও আকাঙ্ক্ষাই হচ্ছে দেশের সর্বোচ্চ আইন।

জুলাই সনদের যে আদর্শ ও চেতনা, তা বাস্তবায়ন হওয়া উচিত এবং যারা এই আদর্শের পথে হাঁটবে না, জনগণ তাদের ব্যাপারে সঠিক সিদ্ধান্ত নেবে বলে মনে করেন হামিদুর রহমান আযাদ। উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, ডাকসু নির্বাচনে বিপুল ভোটে জয়লাভ এটি প্রমাণ করে যে এ দেশের তরুণসমাজ ও জনগণ নতুন রাজনৈতিক ব্যবস্থা চায় এবং জুলাই বিপ্লবের যোদ্ধাদের পক্ষেই রয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • পিআরেরও দু–একটা সাইড এফেক্ট আছে, কিন্তু অধিকাংশই ভালো দিক: ইসলামী আন্দোলন
  • আস্থা রাখতে চাই, ফেব্রুয়ারির মধ্যে নির্বাচন হবে: টুকু
  • ‘আমরা ভুগছি আর রাজনীতিবিদেরা ধনী হচ্ছেন, তাই ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে সরকার ফেলে দিয়েছি’
  • জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি এখন ১৮ কোটি মানুষের দাবি: জামায়াত
  • ‘ভোটারদের আস্থা নিশ্চিত করা বিএনপির দায়িত্ব’
  • পটুয়াখালীতে সালিস বৈঠকে অংশ নিলে নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে বিএনপি
  • জুলাই সনদের বাস্তবায়নে দেরি হলে জনগণ আবারও রাস্তায় নামবে: জামায়াত নেতা রফিকুল
  • রোহিঙ্গা সমস্যায় রাজনৈতিক সমাধান খুঁজে বের করতে হবে
  • জামায়াত কীভাবে জাতীয় পার্টিকে নিষিদ্ধ করার দাবি তোলে: আনিসুল ইসলাম মাহমুদ
  • ফরিদপুরে সীমানা নিয়ে ডিসির চিঠি, এলাকাবাসীর ৫ দাবি