অন্তর্বর্তী সরকার নিয়ে জনগণের মনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে: তারেক রহমান
Published: 25th, February 2025 GMT
বাংলাদেশে কিছুদিন ধরে অস্থিরতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে জানিয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, ‘‘যারা দেশ পরিচালনার দায়িত্বে আছেন, সেই অন্তর্বর্তী সরকারকে নিয়ে জনগণের মনে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।’’
মঙ্গলবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে কুমিল্লা মহানগর বিএনপির সম্মেলনে লন্ডন থেকে প্রধান অতিথি হিসেবে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে এ কথা বলেন তিনি।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘‘অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের সময় থেকেই তাদের আমরা সমর্থন দিয়ে এসেছি। কারণ, আমরা চেয়েছি এই সরকার একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে মানুষের হারিয়ে যাওয়া ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দেবে। কিন্তু লক্ষ্য করছি, সরকারের বিভিন্নজন জনগণের অধিকার ফিরিয়ে দেওয়ার প্রশ্নে ভিন্ন ভিন্ন কথা বলছেন।’’
আরো পড়ুন:
তর্ক-বিতর্কে যেন স্বৈরাচার সুযোগ পেয়ে না যায়: তারেক রহমান
বিএনপি ক্ষমতায় গেলে দেশ পুনর্গঠন করবে: তারেক রহমান
বিগত স্বৈরাচারী সরকার দেশের প্রত্যেকটি সেক্টর ধ্বংস করে দিয়েছে বর্ণনা করে তারেক রহমান বলেন, ‘‘দেশের মানুষের ভাগ্য ফিরিয়ে আনতে হলে দেশে স্থিতিশীলতা আনা প্রয়োজন। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকারের কিছু কিছু লোকের বক্তব্যে দেশে অস্থিতিশীল অবস্থা সৃষ্টি হচ্ছে। স্পষ্ট করে বলতে চাই, আমরা এখনো এই সরকারকে সাহায্য করব। আমরা আশা করব, অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে মানুষ যে নিরপেক্ষতা আশা করে, তারা যেন সেই নিরপেক্ষতা বজায় রাখে।’’
তিনি বলেন, ‘‘রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতপার্থক্য থাকতেই পারে। কিন্তু মতপার্থক্যের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করা যাবে না। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হবে দেশ ও গণতান্ত্রিক দলগুলো। তাই আমাদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। যত বেশি ঐক্যবদ্ধ থাকব, তত বেশি গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে পরিকল্পনাকারীদের ষড়যন্ত্র ভেস্তে যাবে।’’
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘‘বাংলাদেশে এই মুহূর্তে নির্বাচন বিলম্বিত হলে কারা সুবিধাপ্রাপ্ত হবে, এটা দেখার বিষয়। বিএনপি বিশ্বাস করে, জনগণই সকল ক্ষমতার উৎস। বাংলাদেশে যদি গণতন্ত্রের চর্চা অব্যাহত রাখা যায়, তবে বাংলাদেশের মানুষকে ষড়যন্ত্রের হাত থেকে নিরাপদ রাখতে পারব। দেশে যদি ভোটের অধিকার নিশ্চিত থাকে, তাহলে বিএনপি সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী হবে।’’
তিনি বলেন, ‘‘৪৫-৪৬ বছর ধরে ছয়টি নির্বাচনের মধ্য দিয়ে বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রামের মধ্য দিয়ে, গায়েবি ও মিথ্যা মামলার মধ্য দিয়ে বিএনপি আজ এই জায়গায় এসে দাঁড়িয়েছে। কোনো নির্বাচনে বিএনপি জনগণের সমর্থন নিয়ে সরকার গঠন করেছিল, কোনো নির্বাচনে বিএনপি বিরোধীদলীয় সরকার গঠন করেছে। বিএনপি আজ জনগণের রাজনৈতিক দল হয়েছে। তবে আরো বেশি কীভাবে জনগণের প্রত্যাশা লাভ করা যায়, সেই চেষ্টা আগামীতে আমাদের থাকবে।’’
তারেক রহমান বলেন, ‘‘বিএনপি জনগণের কথা বলে। একটি রাজনৈতিক দলের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যই হলো কীভাবে জনগণকে নিজের দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত রাখবে। পরিকল্পনা থাকে, কীভাবে সরকার গঠন করবে। এর একমাত্র উপায় হচ্ছে ভোটের মাধ্যমে জনগণের সরকার গঠন করা। একটি রাজনৈতিক দল হিসেবে আমাদের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে, জনগণের কাছে যাওয়া। আমরা যেহেতু জনগণের শাসনে বিশ্বাস করি, ভোটের রাজনীতিতে বিশ্বাস করি, তাই আমরা ভোট চাইব, নির্বাচন চাইব- এটিই স্বাভাবিক ব্যাপার। কিন্তু এই স্বাভাবিক বিষয়টিই অনেকে নিতে পারেন না।’’
মহানগর বিএনপির নবগঠিত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক আবু টিপুকে উদ্দেশ্য করে তারেক রহমান বলেন, ‘‘তোমাদের মূল ও অন্যতম দায়িত্ব হচ্ছে কুমিল্লা মহানগরীর সাধারণ মানুষের আস্থা দলের ওপর আনতে কাজ করতে হবে। এই সম্মেলনের উদ্দেশ্য ছিল সঠিক নেতৃত্ব বের করে আনা। কুমিল্লা মহানগরীর প্রতিটি মানুষের কাছে আমাদের দলের আদর্শ ও নীতি পৌঁছে দিতে কাজ করতে হবে।’’
তিনি বলেন, ‘‘আমরা কাউন্সিলের কাছে অনুরোধ করবো, শুধু কুমিল্লা মহানগরী নয়, সমগ্র বাংলাদেশে যে দাবি আদায়ের জন্য আমাদের শত শত, হাজার হাজার সহকর্মী গুম, খুন, হত্যা ও গায়েবি মামলার শিকার হয়েছেন, সেই দাবি আমাদের আদায় করতে হবে। এটাই হোক আমাদের প্রতিজ্ঞা।’’
তারেক রহমান বলেন, ‘‘ভোটের অধিকার নিশ্চিত করলেই হবে না, যে ভোটের জন্য মানুষ জীবন দিয়েছে সেটা অধিকারও আমাদের নিশ্চিত করতে হবে।’’
সর্বশেষ সম্মেলনে উপস্থিত সকল নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে তারেক রহমান বলেন, ‘‘আমাদের দেশের মানুষের অধিকার আদায়ে আন্দোলন চালিয়ে যেতে হবে। দেশের মানুষের কল্যাণে বিভিন্ন পরিকল্পনা মানুষের সামনে তুলে ধরতে হবে। অন্যান্য দলও একই কাজ করবে। জনগণ সিদ্ধান্ত নেবেন, কাকে দায়িত্ব দেবেন আগামীর দেশ পরিচালনা করার। এখন হচ্ছে দেশ গড়ার পালা। দেশের রাষ্ট্র কাঠামোকে গড়ে তুলতে আমাদের চেষ্টা অব্যাহত থাকতে হবে। এই হোক আমাদের প্রতিজ্ঞা।’’
এর আগে বেলা ৩টার দিকে জাতীয় পতাকা উত্তোলন ও বেলুন উড়িয়ে বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্যাহ বুলু সম্মেলনের উদ্বোধন ঘোষণা করেন। পরে শোক প্রস্তাব উপস্থাপন করেন কুমিল্লা মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক ভিপি নজরুল। সাংগঠনিক প্রতিবেদন পেশ করেন মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব ইউসুফ মোল্লা টিপু।
এ সময় কুমিল্লা নগর বিএনপির আহ্বায়ক উদবাতুল বারি আবুর সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় বিএনপির কুমিল্লা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যক্ষ মো.
সম্মেলনে আরো বক্তব্য দেন জাতীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট সাবেরা আলাউদ্দিন, সদস্য জাহাঙ্গীর আলম, কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক আমিরুজ্জামান আমির, সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক ভিপি নজরুলসহ প্রমুখ।
ঢাকা/রুবেল/এনএইচ
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ত র ক রহম ন ত র ক রহম ন ব জনগণ র ব স কর আম দ র
এছাড়াও পড়ুন:
জনগণের ঐক্য থাকলে ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থাকে কবর দিতে পারব: সাকি
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেছেন, ‘যদি জনগণের ঐক্য থাকে, তাহলে এই দেশে ফ্যাসিবাদ যেমন পালিয়েছে, ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থাকেও আমরা কবর দিতে পারব। আর যে লুটপাটের রাজত্ব, দুর্নীতির রাজত্ব কায়েম হয়েছে, সেটাকেও আমরা কবর দিতে পারব।’
আজ শুক্রবার বিকেলে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে জুলাই গণসমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে এসব কথা বলেন জোনায়েদ সাকি। সমাবেশের আয়োজন করে গণসংহতি আন্দোলন। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ জুলফিকার আহমেদ শাকিলের মা আয়েশা বেগম সমাবেশ উদ্বোধন করেন।
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী বলেন, ‘লুটপাট, দুর্নীতি আমরা বন্ধ করতে না পারলে দেশে নতুন ক্ষমতাব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা হবে না। শহীদদের স্বপ্নপূরণে নতুন রাজনৈতিক এবং ক্ষমতাব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে হবে।’
জোনায়েদ সাকি বলেন, ক্ষমতা দিয়ে টাকাপয়সা ধনসম্পদ আহরণ করা বাংলাদেশে গুম–খুন, অত্যাচার, ত্রাসের রাজত্বের ভিত্তি ছিল ফ্যাসিবাদী শাসন। ক্ষমতা দিয়ে টাকাপয়সা, ধনসম্পদ আহরণ করতে গিয়ে ব্যাংক, বিমা, ব্যবসা-বাণিজ্য, সব উন্নয়ন প্রকল্প—সব খেয়ে ফেলেছিল তারা।
এ সময় জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহীদদের পরিবার এবং আহতদের দায়িত্ব নিতে অন্তর্বর্তী সরকার কেন ব্যর্থ হয়েছে, তার ব্যাখ্যা ৫ আগস্টের মধ্যে জানানোর দাবি জানিয়েছেন জোনায়েদ সাকি। তিনি বলেন, ‘আমরা অনেক লক্ষণ দেখছি, যেন পুরোনো ব্যবস্থাই আবার আমাদের মধ্যে জায়গা করে নিচ্ছে। আমরা দেখলাম শহীদদের রাষ্ট্রীয় মর্যাদা এখনো হয়নি। আহতদের চিকিৎসা এখনো হয়নি।’
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহীদদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালনের মধ্য দিয়ে সমাবেশের কার্যক্রম শুরু হয়। আজ শুক্রবার বিকেলে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে