বিশ্বের সবচেয়ে বড় আইসবার্গ (হিমশৈল) যুক্তরাজ্যের প্রত্যন্ত দ্বীপ ‘সাউথ জর্জিয়ার’ অগভীর পানিতে আটকে গেছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে, দ্বীপের সঙ্গে এটির সংঘর্ষ ঘটবে এবং এতে এ অঞ্চলে বিচরণকারী লাখ লাখ পেঙ্গুইন ও সিলের মতো প্রাণীগুলো ঝুঁকিতে পড়বে।

‘এ২৩এ’ নামের এ হিমশৈল আকারে গ্রেটার লন্ডনের দ্বিগুণ। অগভীর পানিতে আটকে থেকে একসময় দ্বীপের দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলে এটি টুকরা হয়ে যাওয়া শুরু করতে পারে।

স্থানীয় মৎস্যজীবীদের আশঙ্কা, হিমশৈলটি টুকরা হয়ে গেলে এ অঞ্চলে মাছ শিকারের সময় বিশাল আকারের সব বরফের চাঁই মোকাবিলা করতে হবে তাঁদের। তা ছাড়া এ ঘটনা কিছু ম্যাকরনি পেঙ্গুইনের খাবার সংস্থানকেও প্রভাবিত করতে পারে।

অ্যান্টার্কটিকার বিজ্ঞানীরা বলছেন, হিমশৈলর বরফে বিপুল পরিমাণে পুষ্টি উপাদান আটকে আছে। এটি গলতে শুরু করলে মহাসাগরে প্রাণের বিস্ফোরণ ঘটাতে পারে।

যুক্তরাজ্যের জাতীয় মেরু গবেষণাপ্রতিষ্ঠান ব্রিটিশ অ্যান্টার্কটিক সার্ভের অধ্যাপক নাদিন জনস্টন বলেন, ‘এ যেন শূন্য মরুভূমির মধ্যে কোনো পুষ্টি বোমা ফেলার ঘটনা’।

সমুদ্রবিষয়ক গবেষক মার্ক বেলচিয়ার সাউথ জর্জিয়া সরকারকে বুদ্ধি-পরামর্শ দিয়ে থাকেন। তিনি বলেন, ‘হিমশৈলটি ভেঙে গেলে বিশাল বিশাল বরফখণ্ড স্থানীয় স্রোতের সঙ্গে চলাচল করে নৌযানগুলোর জন্য বিপদ তৈরি করতে পারে। নৌযানগুলোর জন্য স্থানীয় মাছ ধরা এলাকায় প্রবেশের পথও সীমাবদ্ধ করতে পারে এটি।’

হিমশৈলটি ভেঙে গেলে বিশাল বিশাল বরফখণ্ড স্থানীয় স্রোতের সঙ্গে চলাচল করে নৌযানগুলোর জন্য বিপদ তৈরি করতে পারে। নৌযানগুলোর জন্য স্থানীয় মাছ ধরা এলাকায় প্রবেশের পথও সীমাবদ্ধ করতে পারে এটি।মার্ক বেলচিয়ার, পরিবেশবিদ

সম্প্রতি এই পরিবেশবিদ বিবিসিকে বলেছেন, ‘সাউথ জর্জিয়া আইসবার্গ অ্যালিতে অবস্থিত। তাই মৎস্য ও বন্য প্রাণী—উভয়ের ওপরই এর (হিমশৈলটির সংঘর্ষ) প্রভাব পড়ার আশঙ্কা আছে এবং উভয়েরই পরিবেশগত পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়ার দুর্দান্ত ক্ষমতা রয়েছে।’

এ২৩এ পৃথিবীর সবচেয়ে পুরোনো হিমশৈলগুলোরও একটি। ১৯৮৬ সালে এটি অ্যান্টার্কটিকার ফিলচনার বরফ সোপান (আইসশেলফ) থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় ও সমুদ্রতলে আটকে পড়ে। পরে আবার একটি সামুদ্রিক ঘূর্ণিতে আটকা পড়ে এটি। শেষ পর্যন্ত গত বছরের ডিসেম্বর মাসে হিমশৈলটি সামুদ্রিক ঘূর্ণি থেকে মুক্ত হয়ে দ্রুতগতিতে বিলীন হওয়ার পথে এগিয়ে যাচ্ছে।

এ২৩এ পৃথিবীর সবচেয়ে পুরোনো হিমশৈলগুলোরও একটি। ১৯৮৬ সালে এটি অ্যান্টার্কটিকার ফিলচনার বরফ সোপান (আইসশেলফ) থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় ও সমুদ্রতলে আটকে পড়ে। পরে আবারও একটি সামুদ্রিক ঘূর্ণিতে আটকা পড়ে এটি। শেষ পর্যন্ত গত বছরের ডিসেম্বর মাসে হিমশৈলটি সামুদ্রিক ঘূর্ণি থেকে মুক্ত হয়ে দ্রুতগতিতে বিলীন হওয়ার পথে এগিয়ে যাচ্ছে।

সামুদ্রিক ঘূর্ণি থেকে হিমশৈলটি মুক্ত হয়ে চলতে শুরু করলে স্যাটেলাইটে এর যাত্রাপথ শনাক্ত করতে সক্ষম হন বিজ্ঞানীরা। সাউথ জর্জিয়া সরকারের পরিচালিত জাহাজ ফারোসের ক্যাপ্টেন সাইমন ওয়ালেস সম্প্রতি বিবিসিকে বলেন, ‘হিমশৈলগুলো স্বভাবতই বিপজ্জনক। যদি এটা ধারেকাছে না আসত, তাহলে আমি অত্যন্ত খুশি হতাম।’

বিশ্বের বিজ্ঞানী, নাবিক ও জেলেদের দল হিমশৈল ‘এ২৩এ’র দৈনন্দিন অবস্থা পর্যবেক্ষণ করছে। স্যাটেলাইটে ধারণ করা ছবিগুলো যাচাই করার মধ্য দিয়ে এর দিকে নজর রাখছেন তাঁরা।

অ্যান্টার্কটিকার উত্তর দিকের উষ্ণ জলরাশি হিমশৈলটির উঁচু চূড়াগুলো দুর্বল করছে ও গলিয়ে দিচ্ছে। এগুলো ১ হাজার ৩১২ ফুট (৪০০ মিটার) পর্যন্ত উঁচু হতে পারে; যে উচ্চতা যুক্তরাজ্যের সবচেয়ে উঁচু ভবন দ্য শার্ডের চেয়ে বেশি।

এ২৩এ পৃথিবীর সবচেয়ে বড় হিমশৈল.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব র সবচ য়

এছাড়াও পড়ুন:

দেশবাসী দ্রুত নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্রে উত্তরণ চায়: আমীর খসরু

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, দেশের মানুষ ২০ বছর ধরে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেনি এবং নতুন প্রজন্মও ভোট দিতে পারেনি। তাই, তারা দ্রুততম সময়ের মধ্যে নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্রে উত্তরণ চায়। 

সোমবার (১৬ জুন) দুপুরে লন্ডন থেকে দেশে ফিরে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন তিনি।

আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, বিএনপি গণতান্ত্রিক পথেই এগিয়ে যাবে। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য দীর্ঘদিনের আন্দোলন-সংগ্রামে জনগণের যে ত্যাগ, সে পথেই দেশ অগ্রসর হবে।

প্রধান উপদেষ্টার মতো বিএনপিও রোজার আগে বিচার ও সংস্কারের অগ্রগতি চায় কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে দলটির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, সংস্কারের বিষয়টি ঐকমত্যের ওপর নির্ভরশীল। এ বিষয়ে ড. ইউনূস, তারেক রহমান এবং বিএনপির সকল নেতৃবৃন্দ আগেই বলেছেন।

তিনি মনে করেন, ঐকমত্য হতে এক থেকে দেড় মাসের বেশি সময় লাগার কথা নয়।

বিচার প্রক্রিয়া প্রসঙ্গে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, এটি চলমান প্রক্রিয়া এবং বিচার বিভাগের ওপর নির্ভর করে। বিচার বিভাগ বিচার করবে এবং বিচারের আওতায় আনারও বিষয় আছে। যারা বিচারের আওতায় আসবে, তার জন্য আরো প্রায় ছয় মাস সময় আছে। আর যারা এর মধ্যে আসবে না, তাদের জন্য তো আগামী সরকার আছে।

সরকারের কি এখন নির্বাচনমুখী কর্মকাণ্ডের দিকে এগিয়ে যাওয়া দরকার আছে, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নির্বাচন ছাড়া গণতান্ত্রিক, রাজনৈতিক এবং জনগণের সাংবিধানিক অধিকার ফিরিয়ে দেওয়ার আর কোনো পথ নেই। এ বিষয়ে সবাই ঐকমত্য পোষণ করছেন।

জামায়াতে ইসলামী ও এনসিপির অভিযোগ, একটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সরকার বিশেষ সম্পর্ক করছে, বিএনপি বিষয়টি কীভাবে দেখছে? এ প্রশ্নের জবাবে আমীর খসরু বলেন, “আমি একটা জিনিস মনে করি, আমরা যদি গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি, তাহলে এখানে সবার মতামত নেওয়ার সুযোগ আছে। সুতরাং, সবাই তাদের মতামত দিতে পারে। আমার মনে হয়, এটাই আমাদের গণতন্ত্রের বড় পাওয়া, সবাই নিজেদের মতামত দেবে। এর মধ্যে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে।”

বিএনপি এত দিন ডিসেম্বরে নির্বাচনের কথা বললেও এখন কেন ফেব্রুয়ারিতে গেল? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নির্বাচনের জন্য ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত অনেক সময়। এবং এত সময়ও লাগার কোনো কারণ নেই। বিএনপি আগে ডিসেম্বরের মধ্যেই এসব সমস্যার সমাধান করে নির্বাচনের কথা বলেছে। সুতরাং, ফেব্রুয়ারি আরো দীর্ঘ সময়। তবে, যদি ফেব্রুয়ারির মধ্যে নির্বাচন হয়, তাতেও কোনো সমস্যা নেই।

আমীর খসরু বলেন, “আমি আগেও বলেছি, যত বেশি ঐকমত্যের মাধ্যমে আমরা নিজেদের মধ্যে সিদ্ধান্ত নিতে পারব, সেটা জাতির জন্য তত ভালো। আমরা যে ঐকমত্যের মধ্যে এসেছি, এটাই হচ্ছে সবচেয়ে বড় বিষয়।”

তিনি আরো বলেন, “ঐকমত্য থাকার ফলেই আমরা স্বৈরাচারকে বিদায় করতে পেরেছি। সুতরাং, আমরা চেষ্টা করব, যেখানেই সম্ভব ঐকমত্যের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেব।”

তারেক রহমানের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার ওয়ান-টু-ওয়ান বৈঠকে নির্বাচনে নিরপেক্ষতার বিষয়ে কোনো আলোচনা বা বার্তা আছে কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, যখনই নির্বাচন শুরু হবে, তখনই সরকার নিরপেক্ষতার বিষয়টি নিশ্চিত করবে। কেয়ারটেকার গভর্নমেন্টের ধারণা হলো— একটি নিরপেক্ষ সরকার। সুতরাং, নির্বাচনে সেই নিরপেক্ষতা সরকার নিশ্চিত করবে বলে আমরা বিশ্বাস করি।

বৈঠকে সংস্কারের বিষয়ে কোনো সুনির্দিষ্ট আলোচনা হয়েছে কি না, জানতে চাইলে আমীর খসরু বলেন, ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও তারেক রহমান বলেছেন, এখানে যতটুকু ঐকমত্য হবে, সংস্কারও ততটুকুই হবে। বাকি অংশটা নির্বাচনের মাধ্যমে জাতির কাছে নিয়ে যেতে হবে।

তিনি বলেন, সংস্কার তো চলমান প্রক্রিয়া। এটি এখানেই শেষ হয়ে যাচ্ছে না, নির্বাচনের পরেও এটি চলমান থাকবে।

ঢাকা/রায়হান/রফিক 

সম্পর্কিত নিবন্ধ