এবার পানামা খালের নিয়ন্ত্রণ নিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র, ট্রাম্পের কৌশলগত বিজয়
Published: 6th, March 2025 GMT
ক্ষমতায় আসার পরই পানামা খাল নিয়ে কথা বলেছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এবার এই গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য পথে মার্কিন কোম্পানির নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে। হংকংভিত্তিক মালিকের কাছ থেকে পানামা খালের দুটি প্রধান বন্দর কিনতে সম্মত হয়েছে মার্কিন বহুজাতিক বিনিয়োগ সংস্থা ব্ল্যাকরক। ফলে বৈশ্বিক বন্দর ব্যবস্থাপনায় নতুন মেরুকরণ ঘটতে চলেছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।
ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের প্রতিবেদন অনুসারে, হংকংভিত্তিক কোম্পানি সিকে হাচিসন ২ হাজার ২৮০ কোটি ডলারের বিনিময়ে বন্দর দুটির সিংহভাগ হিস্যা বিক্রি করতে রাজি হয়েছে। মূলত পানামা খালে চীনা প্রভাব নিয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্পের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সৃষ্ট চাপের প্রতিক্রিয়ায় এ হস্তান্তর।
চুক্তি অনুযায়ী, হংকংভিত্তিক সিকে হাচিসন তাদের ব্যবসা ব্ল্যাকরক, গ্লোবাল ইনফ্রাস্ট্রাকচার পার্টনার্স (জিআইপি) ও টার্মিনাল ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডের একটি কনসোর্টিয়ামের কাছে বিক্রি করছে। কোম্পানির বিবৃতিতে গত মঙ্গলবার জানানো হয়েছে, এই গোষ্ঠী পানামায় দুটি বন্দরের মালিকানা ও পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠানের ৯০ শতাংশ শেয়ার অধিগ্রহণ করবে।
সমুদ্র বাণিজ্যের গুরুত্বপূর্ণ পথের এই অধিগ্রহণকে যুক্তরাষ্ট্রের বিজয় হিসেবে দেখছেন ওয়াশিংটনের সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের আমেরিকাস প্রোগ্রামের পরিচালক রায়ান বার্গ। তাঁর মতে, এর মধ্য দিয়ে খালের নিরাপত্তা নিয়ে বিতর্কের অবসান ঘটাবে। রয়টার্সকে রায়ান বার্গ বলেন, আমেরিকা মহাদেশে চীনের সঙ্গে কৌশলগত প্রতিযোগিতায় এটি যুক্তরাষ্ট্রের বিশাল বিজয়।
ট্রাম্প বারবার অভিযোগ করেছেন, পানামা খালের নিয়ন্ত্রণ চীনের হাতে। বছরের শুরুতেই তাঁর হুমকি ছিল, যুক্তরাষ্ট্র গুরুত্বপূর্ণ জলপথটি আবারও নিয়ন্ত্রণে নিতে পারে। ট্রাম্প প্রশাসন পানামাকে চীনা প্রভাব কমানোর জন্য চাপ দেওয়ার পাশাপাশি দাবি করে, বন্দরে বেইজিংয়ের সম্পৃক্ততা খালের নিরপেক্ষতাসংক্রান্ত চুক্তি লঙ্ঘনের শামিল।
সিকে হাচিসন আশা করছে, এ চুক্তি থেকে তারা ১ হাজার ৯০০ কোটি ডলারের বেশি অর্থ পাবে। ফলে তাদের পক্ষে শেয়ারহোল্ডারদের ঋণ পরিশোধ করা সম্ভব হবে। বর্তমানে কোম্পানিটির বাজার মূলধন ১ হাজার ৯০০ কোটি ডলার। চুক্তির ঘোষণার পর গতকাল বুধবার সকালে হংকংয়ের পুঁজিবাজারে সিকে হাচিনসনের শেয়ারের দাম ২২ শতাংশ বেড়েছে।
গত নভেম্বরে প্রেসিডেন্ট হিসেবে জয়ের পর কানাডা, গ্রিনল্যান্ড ও পানামাকে যুক্তরাষ্ট্রের অংশ বলে দাবি করেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। তখনই বন্দর ব্যবসার ভবিষ্যৎ নিয়ে নতুন করে ভাবতে শুরু করে সিকে হাচিসন। চুক্তি আলোচনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এক ব্যক্তি বলেন, ‘ডোনাল্ড ট্রাম্প নির্বাচনে জেতার পর যখন কানাডা, গ্রিনল্যান্ড ও পানামা দখলের কথা বলা শুরু করেন, তখন পানামার ওপর চাপ সৃষ্টি হয়। সিকে হাচিসন বুঝতে পারে, এটি রাজনৈতিক সমস্যা এবং তারা সেখানে থেকে বেরিয়ে আসার চিন্তা শুরু করে।
সিকে হাচিসন যুক্তরাজ্য, জার্মানিসহ বিশ্বের ২৩টি দেশের ৪৩টি বন্দর পরিচালনা করে। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য, মেক্সিকো ও অস্ট্রেলিয়াও তারা বন্দর পরিচালনা করে। অর্থাৎ নতুন এই চুক্তির ফলে শুধু পানামা খালের বন্দর নয়, সিকে হাচিসনের বৈশ্বিক বন্দর কার্যক্রমের বড় অংশ ব্ল্যাকরক ও তার সহযোগী প্রতিষ্ঠানগুলোর মালিকানায় চলে যাচ্ছে।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, এই চুক্তি বন্দর ব্যবসায় বড় ধরনের পরিবর্তনের ইঙ্গিতবাহী। বৈশ্বিক বাণিজ্যে এর বড় প্রভাব পড়তে পারে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র ব যবস
এছাড়াও পড়ুন:
ইরান যে তিন কারণে পারমাণবিক অস্ত্র বানাবে না
বিশ্বরাজনীতিতে ইরানের পরমাণু কর্মসূচি একটি বহুল আলোচিত ও বিতর্কিত ইস্যু। পশ্চিমা শক্তিগুলো, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল, বহু বছর ধরে অভিযোগ করে আসছে, ইরান নাকি গোপনে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করতে চাইছে। কিন্তু আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা (আইএইএ) বা যুক্তরাষ্ট্রের নিজস্ব গোয়েন্দা সংস্থাগুলো আজ পর্যন্ত এমন কোনো প্রমাণ দেখাতে পারেনি, যা এ দাবিকে প্রতিষ্ঠিত করে। অন্যদিকে ইরান শুরু থেকেই বলে আসছে যে তাদের পরমাণু কর্মসূচি সম্পূর্ণরূপে শান্তিপূর্ণ ও বেসামরিক উদ্দেশ্যে পরিচালিত।
প্রশ্ন হলো, যদি ইরান সত্যিই পারমাণবিক অস্ত্র বানাতে চাইত, তাহলে গত দুই দশকে তা তৈরি করেনি কেন? আর যদি তা না-ই চায়, তাহলে উচ্চমাত্রায় ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ চালিয়ে যাচ্ছে কেন? এই প্রশ্নগুলোর উত্তর পেতে হলে ইরানের ধর্মীয় অবস্থান, কৌশলগত চিন্তা, রাজনৈতিক বাস্তবতা এবং আন্তর্জাতিক রাজনীতির দ্বিচারিতা একত্রে বিশ্লেষণ করতে হবে।
আরও পড়ুনইরান এবার বড় যুদ্ধের জন্য যেভাবে প্রস্তুত হবে০৬ জুলাই ২০২৫ধর্মীয় নিষেধাজ্ঞা ও নৈতিক অবস্থান২০০৩ সালে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি একটি ঐতিহাসিক ফতোয়া জারি করেন। সেখানে স্পষ্টভাবে বলা হয়, ‘পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি, মজুত কিংবা ব্যবহার ইসলামের দৃষ্টিতে সম্পূর্ণ হারাম।’ এ সিদ্ধান্ত শুধুই ধর্মীয় নয়, বরং একটি নৈতিক অবস্থানও, যেখানে নিরীহ মানুষ হত্যাকে ইসলাম কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করেছে। পারমাণবিক বোমা শুধু সামরিক লক্ষ্যবস্তু ধ্বংস করে না, বরং শহর, জনপদ ও লাখ লাখ নিরীহ মানুষের প্রাণ হরণ করে। ইসলামের যুদ্ধনীতিতে বেসামরিক নাগরিকদের হত্যা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ।
ইরান মনে করে, পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার শুধু মানবতার বিরুদ্ধে নয়, পরিবেশ ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের বিরুদ্ধে চরম অন্যায়। হিরোশিমা-নাগাসাকির দৃষ্টান্ত এ বিষয়ে যথেষ্ট প্রমাণ দেয়।
কৌশলগত ও সামরিক বাস্তবতাঅনেকের ধারণা, পারমাণবিক অস্ত্র থাকলেই একটি দেশ নিরাপদ থাকে। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। পাকিস্তান ১৯৯৮ সালে পারমাণবিক অস্ত্র অর্জন করলেও ২০০১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের চাপের মুখে আফগানিস্তানে মার্কিন অভিযানে অংশ নিতে বাধ্য হয়। উত্তর কোরিয়া পারমাণবিক অস্ত্রধারী হওয়া সত্ত্বেও আন্তর্জাতিকভাবে একঘরে। এমনকি রাশিয়া, যাদের বিশ্বের সর্বোচ্চ পারমাণবিক অস্ত্র মজুত রয়েছে, ইউক্রেন যুদ্ধে ন্যাটোর সঙ্গে কৌশলগতভাবে চাপে পড়েছে। ইসরায়েলও অঘোষিত পারমাণবিক অস্ত্রধারী হওয়া সত্ত্বেও ইরানের ‘অপারেশন ট্রু প্রমিজ’-এ বড় ধরনের সামরিক ক্ষয়ক্ষতির শিকার হয়েছে।
এ বাস্তবতা ইরানকে বুঝিয়ে দিয়েছে, পারমাণবিক অস্ত্র নয়, কার্যকর প্রতিরোধক্ষমতা ও প্রযুক্তিগত অগ্রগতিই নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারে। তাই তারা শক্তিশালী ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র, চালকবিহীন বিমান বা ড্রোন এবং কৌশলগত অস্ত্র নির্মাণে জোর দিয়েছে।
সামরিক মহড়া চলাকালে ইরানের দক্ষিণাঞ্চলের অজ্ঞাত স্থান থেকে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করা হয়েছে। ২০২৪ সালের ১৯ জানুয়ারি ছবিটি প্রকাশ করে ইরান