৫ আগস্টের ৫-৬ মাস পর অর্জন কিছুটা ফিকে হয়ে যাচ্ছে: জামায়াত নেতা আবদুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের
Published: 6th, March 2025 GMT
অতুলনীয় ঐক্যের মাধ্যমে গত ৫ আগস্ট ‘দ্বিতীয় স্বাধীনতা’ অর্জনের কথা বলা হলেও পাঁচ-ছয় মাসের ব্যবধানে সেই অর্জন ফিকে হয়ে যাচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের। আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর ইস্কাটন গার্ডেনের লেডিস ক্লাবে এক ইফতার মাহফিলে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। সাংবাদিকদের সম্মানে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ঢাকা মহানগর দক্ষিণ শাখা এই ইফতার মাহফিলের আয়োজন করে।
ইফতার মাহফিলে আবদুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের বলেন, ‘২০০ বছর ব্রিটিশ বেনিয়াদের সঙ্গে সংগ্রাম করে ১৯৪৭ সালে স্বাধীন হয়েছিলাম, কিন্তু স্বাধীনতা ভোগ করতে পারিনি। ১৯৭১ সালে লাখো মানুষের আত্মত্যাগ এবং রক্তের বিনিময়ে আরেকটি ভূখণ্ড-পতাকা-দেশ পেয়েছিলাম, স্বাধীনতা অর্জন করেছিলাম, কিন্তু স্বাধীন হইনি। আমরা ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ঠিক সে রকম আত্মত্যাগ এবং অতুলনীয় ঐক্যের মাধ্যমে দ্বিতীয় স্বাধীনতা পেয়েছি। কিন্তু পাঁচ-ছয় মাসের ব্যবধানে মনে হয় সেই অর্জনও কিছুটা ফিকে হয়ে যাচ্ছে।’
ইতিহাসকে মনোযোগ দিয়ে বিশ্লেষণ করা প্রয়োজন উল্লেখ করে জামায়াতের এই নেতা বলেন, ‘আমরা আত্মত্যাগ করি, আমরা জীবন দিই, আমরা সাহসিকতা এবং ঐক্য গড়লেও লক্ষ্যে যেতে পারি না। আমরা বারবার রক্ত-জীবন দিয়ে ব্যর্থ হই কেন? কারণ, আমাদের দুর্ভাগ্য হচ্ছে আমরা অসৎ এবং কম যোগ্য নেতৃত্ব দ্বারা বারবার পরিচালিত হয়েছি এবং প্রতারিত হয়েছি।’
একটি টেকসই গণতন্ত্র নিশ্চিতের প্রত্যয় ব্যক্ত করে আবদুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের বলেন, ‘বাংলাদেশে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করেই আগামী দিনে আমাদের অগ্রসর হতে হবে।’
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ জামায়াতের আমির নুরুল ইসলাম বুলবুলের সভাপতিত্বে এবং ঢাকা মহানগর দক্ষিণ জামায়াতের সেক্রেটারি শফিকুল ইসলামের সঞ্চালনায় ইফতার মাহফিলে আরও বক্তব্য দেন দৈনিক নয়াদিগন্ত পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সালাউদ্দিন বাবার, দৈনিক সংগ্রামের সাবেক সম্পাদক আবুল আসাদ, পত্রিকাটির বর্তমান সম্পাদক আজম মীর, নিউ নেশন পত্রিকার সাবেক সম্পাদক মোস্তফা কামাল মজুমদার, সাংবাদিক নেতা কাদের গনি চৌধুরী, শহিদুল ইসলাম, ওবায়দুর রহমান শাহীন, এম আবদুল্লাহ প্রমুখ।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ইসল ম
এছাড়াও পড়ুন:
এই সরকারও আমলাতন্ত্রের চাপে!
চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থান নতুন যে জন-আকাঙ্ক্ষা তৈরি করেছে, সেখানে নিশ্চিত করেই জনপ্রশাসন সংস্কারের প্রশ্নটি নাগরিকদের কেন্দ্রীয় একটি চাহিদা। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকার যেভাবে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের মতোই পদ ছাড়া পদোন্নতি দিচ্ছে, তাতে উদ্বিগ্ন না হওয়ার কোনো কারণ নেই। কেননা, আগের সরকার কর্তৃত্ববাদী ও স্বৈরাচারী হয়ে উঠেছিল যে কয়টা স্তম্ভের ওপর দাঁড়িয়ে, তার অন্যতম আমলাতন্ত্র।
জনপ্রশাসনকে রাজনীতিকরণের বৃত্ত ভেঙে জনবান্ধব করার একটা বড় সুযোগ এনে দিয়েছিল অভ্যুত্থান। কিন্তু শুরু থেকেই অন্তর্বর্তী সরকার আমলাতন্ত্রের ওপর অতিনির্ভরশীল হয়ে ওঠায় সেই সুযোগ অনেকটাই হাতছাড়া হয়েছে। সরকারি কর্মকর্তাদের বিরোধিতার কারণে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের বড় কোনো সুপারিশ বাস্তবায়ন করতে পারেনি সরকার। অন্যদিকে বেতন বাড়াতে গঠন করা হয়েছে বেতন কমিশন। কিছু মুখকে সরিয়ে দেওয়া ছাড়া জনপ্রশাসনে সেই পুরোনো চর্চা অব্যাহত রয়েছে। বিশেষ করে পদ ছাড়া পদায়নের ক্ষেত্রে জনপ্রশাসনে যেভাবে আগের সরকারের চর্চার ধারাবাহিকতা বজায় রাখা হয়েছে, সেটা যারপরনাই দুঃখজনক।
প্রথম আলোর খবর জানাচ্ছে, উপসচিব স্তরে যেখানে আগে থেকেই পদের চেয়ে ৬০০ কর্মকর্তা বেশি রয়েছেন, সেখানে আগস্ট মাসে নতুন করে ২৬৮ জনকে এই পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। অতিরিক্ত সচিব পদেও পদোন্নতির আলোচনা শুরু হয়েছে। রাজনৈতিক সরকারের আমলে জনপ্রশাসনে হরেদরে পদোন্নতি দেওয়ার অনেক নজির আছে। এর কারণ একটাই, আমলাতন্ত্রকে তুষ্ট রাখা। অন্তর্বর্তী সরকার এই চর্চায় ছেদ ঘটাতে পারবে, সেটাই সবাই প্রত্যাশা করেছিল।
পরিহাসের বিষয় হচ্ছে, জনপ্রশাসনে পদ ছাড়া পদোন্নতি দেওয়ার পর বেশির ভাগ কর্মকর্তাকে আগের জায়গাতেই রেখে দেওয়া হয়। এর মানে হচ্ছে তাঁরা আগের দায়িত্বই পালন করেন, কিন্তু মাঝখান থেকে বেতন-ভাতা বাড়ে। উপসচিব পর্যায়ের কর্মকর্তারা তিন বছর চাকরি পাওয়ার পর বিনা সুদে গাড়ি কেনার জন্য ঋণসুবিধা পান। অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে অবসরে যাওয়া সরকারি কর্মকর্তাদের যেভাবে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে, তার দৃষ্টান্তও খুব বেশি নেই। অবসরে যাওয়া প্রশাসন ক্যাডারের ‘বঞ্চিত’ ৭৬৪ জন কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে ও অন্য ক্যাডারের ‘বঞ্চিত’ ৭৮ জন অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে ভূতাপেক্ষ পদোন্নতির সুপারিশ করা হয়েছে।
জনপ্রশাসনের মেধাবী ও যোগ্য কর্মকর্তারা পদোন্নতি পেয়ে পরের ধাপে যাবেন, সেটা স্বাভাবিক বিষয়। কিন্তু পদ না থাকার পরও কেন পদায়ন করা হবে? এ ক্ষেত্রে সরকারকে পর্যালোচনা করে দেখা প্রয়োজন, জনপ্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে পদ বাড়ানো যায় কি না। আবার যেখানে এমনিতেই পদের বিপরীতে নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সংখ্যা বেশি, সেখানে অবসরে যাওয়া কর্মকর্তাদের নিয়োগ দেওয়া কতটা যৌক্তিক?
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ও জনপ্রশাসনবিশেষজ্ঞ সালাউদ্দিন এম আমিনুজ্জামান বলেছেন, জনপ্রশাসনে পদ ছাড়া পদোন্নতি দেওয়া যায় না। তবে বিশেষ ক্ষেত্রে মেধাবীদের পদোন্নতি দেওয়ার সুযোগ রয়েছে। এরপরও কেন এমন পদোন্নতি—সেই ব্যাখ্যায় তিনি বলেছেন, সরকার সম্ভবত আমলাতন্ত্রের চাপে রয়েছে। এই ধারণা শুধু তাঁর একার নয়, নাগরিক পরিসরের
বিস্তৃত একটি ধারণাও। অন্তর্বর্তী সরকারকে অবশ্যই এর পরিষ্কার ব্যাখ্যা হাজির করা উচিত।
মাথাভারী আমলাতন্ত্র সরকারি সেবা নাগরিকের কাছে ঠিকভাবে পৌঁছানোর ক্ষেত্রে বড় একটা বাধা। অন্যদিকে সরকারকে এখানে বিশাল ব্যয়ের বোঝা বহন করতে হয়। ফলে মাঠ প্রশাসন থেকে শুরু করে সিনিয়র সচিব পর্যন্ত একটি সামঞ্জস্যপূর্ণ ও গতিশীল জনপ্রশাসনই সবাই প্রত্যাশা করে। জনপ্রশাসনের সব স্তরে পদোন্নতি রাজনৈতিক বিবেচনায় নয়, মেধার ভিত্তিতেই হতে হবে।