আওয়ামী লীগ নেতাকে গ্রেপ্তার নিয়ে রাজশাহীতে বিএনপির দুই পক্ষের সংঘর্ষ, আহত ৪
Published: 8th, March 2025 GMT
রাজশাহীতে বিএনপির দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। শুক্রবার সন্ধ্যায় শুরু হওয়া এ সংঘর্ষ রাত সাড়ে ১১টা পর্যন্ত চলে। সংঘর্ষ চলাকালে কয়েকটি হাতবোমার বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। পুড়িয়ে দেওয়া হয় তিনটি মোটরসাইকেল। এ ঘটনায় পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) একজন সদস্যসহ চারজন আহত হয়েছেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার রাতে মহানগর যুব মহিলা দলের সহ–ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক লাভলীসহ তাঁর অনুসারীরা কাদিরগঞ্জ এলাকায় একটি বহুতল ভবন ঘেরাও করেন। ভবনটির একটি ফ্ল্যাটে নগরের বোয়ালিয়া (পশ্চিম) থানা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক মোস্তাক আহমেদ বাবু ওরফে ব্যাটারি বাবু পরিবারসহ থাকেন। আওয়ামী সরকারের পতনের পর ব্যাটারি বাবু ও তাঁর ভাই সাব্বির বাবুর বিরুদ্ধে ছাত্র-জনতার ওপর হামলার অভিযোগে মামলা হয়েছে।
লাভলীর দাবি, তাঁরা ভবনটি ঘিরে রাখলে যৌথ বাহিনী অভিযানে আসে। রাত সাড়ে ১১টার দিকে অভিযান চালিয়ে ভবনে মোস্তাককে পাওয়া যায়নি। যদিও ভবনের নিরাপত্তা প্রহরীর খাতায় প্রবেশকারী হিসেবে মোস্তাকের নাম দেখা গেছে। এছাড়া সিসিটিভির ফুটেজেও মোস্তাককে তাঁর স্ত্রী ও সন্তানদের সঙ্গে ভবনে ঢুকতে দেখা গেছে।
মোস্তাক আহমেদকে না পেয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ভবনটি ঘিরে রাখে। পরে সেখান থেকে মোস্তাক আহমেদের ভাই সাব্বির বাবুকে গ্রেপ্তার করে।
স্থানীয় সূত্র জানিয়েছে, মোস্তাককে না পাওয়ার জন্য সাবেক যুবদল নেতা মারুফ হোসেন জীবনকে দায়ী করেন লাভলী। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে মারুফের লোকজন শুক্রবার সন্ধ্যায় দড়িখড়বোনা এলাকায় লাভলীর বাড়িতে হামলা করেন। পরে লাভলীর অনুসারীরা দড়িখড়বোনা রেল লাইনের পাশে মারুফের ব্যক্তিগত কার্যালয় ভাঙচুর করেন। এরপর দুইপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়।
হামলায় মহিলা দলের নেত্রী লাভলী, তাঁর আড়াই বছরের মেয়ে, এসবি সদস্য তোফাজ্জল হোসেন ও রেলওয়ের কর্মচারী মো.
এদিকে সংঘর্ষের সময় দড়িখড়বোনা এলাকায় তিনটি মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দেওয়া হয়। এর মধ্যে একটি মোটরসাইকেল আজকের পত্রিকার রাজশাহীর মাল্টিমিডিয়া রিপোর্টার জাহিদ হাসানের। তিনি ঘটনাস্থলে সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়েছিলেন।
দীর্ঘ সময় ধরে দড়িখড়বোনা, উপশহর মোড়, রেলগেট, সপুরা ও শালবাগান এলাকায় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া চলে। এ সময় অনেকের হাতে ধারালো অস্ত্র দেখা গেছে। কয়েকটি হাতবোমারও বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। সংঘর্ষ চলার অনেক সময় পরেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তেমন উপস্থিতি দেখা যায়নি।
এদিকে সংঘর্ষের পর রাত সাড়ে ১১টায় নগরের মিয়াপাড়া এলাকায় আত্মীয়ের বাড়িতে সংবাদ সম্মেলন করেন মহিলা দলের নেত্রী লাভলী। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ নেতা মোস্তাক আহমেদের ভবন ঘেরাও করা এবং তাঁর ভাইকে পুলিশে তুলে দেওয়ায় বিএনপির লোকজন তাঁর বাড়িতে হামলা চালিয়েছেন।
লাভলী আরও বলেন, সাব্বিরকে পুলিশে তুলে দেওয়ার পর মহানগর যুবদলের সাবেক সদস্যসচিব মারুফ হোসেন তাকে ৫ লাখ টাকা দেওয়ার প্রস্তাব দেন। বিনিময়ে তিনি যেন এটা নিয়ে ঝামেলা না করেন। কিন্তু তিনি সেই প্রস্তাব ফিরিয়ে দেন। শুক্রবার সন্ধ্যায় তাঁর বাসায় একই প্রস্তাব আনা হয়েছিল। সেটি ফিরিয়ে দেওয়ার পর তাঁর বাসায় হামলা এবং ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে।
বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে মারুফ হোসেনের মোবাইলে কল করা হলে তিনি রিসিভ করেননি। তাঁর ছোটভাই পরিচয় দিয়ে সনি নামের এক ব্যক্তি ফোন ধরেন। তিনি বলেন, লাভলীর ভাই তাঁতী লীগ আর ছেলে যুবলীগ করত। তাদের ধরার জন্য ছাত্রদলের ছেলেরা গিয়েছিল। তারপর মারামারির ঘটনা ঘটেছে। আওয়ামী লীগ নেতা মোস্তাক আহমেদকে কেন্দ্র করে এমন ঘটনা ঘটেনি।
রাজশাহী মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার (মিডিয়া) সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, বিএনপির দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। পুলিশ ও সেনাবাহিনী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করছে। এলাকার পরিস্থিতি এখন থমথমে আছে।
এ বিষয়ে বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মিজানুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, এটা বিএনপির দুই গ্রুপের কোনো সংঘর্ষের ঘটনা নয়। যারা এই ঘটনা ঘটিয়েছে তারা সন্ত্রাসী। সন্ত্রাসীদের কোনো দল নেই।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ম স ত ক আহম দ ব এনপ র দ ই স ঘর ষ র এল ক য় র ঘটন আওয় ম
এছাড়াও পড়ুন:
গুলিতে আহত ব্যবসায়ীর মৃত্যু, ছুরিকাঘাতে যুবক খুন
রাজধানীর বাড্ডায় সন্ত্রাসীদের গুলিতে আহত ব্যবসায়ী আনোয়ার হোসেন (৪০) মারা গেছেন। গতকাল রোববার দুপুরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়। এদিন শাহবাগে ছুরিকাঘাতে এক যুবক নিহত এবং নীলক্ষেত এলাকার একটি হোস্টেল থেকে এক নারী ব্যাংক কর্মকর্তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।
বাড্ডায় নিহত আনোয়ারের গ্রামের বাড়ি বরিশালের হিজলা উপজেলায়। তিনি পরিবারের সঙ্গে বাড্ডার আনন্দনগর এলাকায় থাকতেন। স্বজনের অভিযোগ, গত ৮ মে রাত ১১টার দিকে বাড্ডার ভূঁইয়াবাড়ি টেকপাড়ায় শুটার সালাউদ্দিন, নুরা পাগলা, মাহিন, নয়ন, ইউসুফসহ কয়েকজন আনোয়ারকে মারধর করেন এবং পেটে গুলি করেন।
বাড্ডা থানার ওসি সাইফুল ইসলাম সমকালকে বলেন, গুলির ঘটনার পর আনোয়ারের পরিবারকে মামলা করতে বলা হয়েছিল। কিন্তু তারা মামলা করেননি। গতকাল মারা যাওয়ার পর হত্যা মামলা করা হয়েছে।
এদিকে, শাহবাগে ছুরিকাঘাতে মো. মোবারক (১৮) নামে এক যুবক নিহত হয়েছেন। গতকাল বিকেল সোয়া ৫টার দিকে শাহবাগ শিশুপার্কের সামনে ফুট ওভারব্রিজের নিচে এই ঘটনা ঘটে। মোবারক শাহবাগ মেট্রো স্টেশনের নিচে থাকতেন।
নিহতের চাচাতো ভাই রবিউল জানান, মোবারক শাহবাগ এলাকার এক মাদক কারবারি নবীর কাছ থেকে মাদক নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় বিক্রি করত। সপ্তাহখানেক আগে তার কাছ থেকে মোবারক বাকিতে ৪ হাজার টাকার মাদক নিয়েছিল। নবী গতকাল বিকেলে রাতুল, রাজুসহ কয়েকজনকে মোবারকের কাছে টাকা আনতে পাঠায়। শিশুপার্ক ওভারব্রিজের নিচে মোবারকের কাছে টাকা চাইলে সে দিতে পারবে না বলে জানায়। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে রাজু ও রাতুল মোবারককে ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যায়। পরে মোবারককে হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
শাহবাগ থানার ওসি খালিদ মনসুর বলেন, মরদেহ ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে পাঠানো হয়েছে। হত্যার ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
অন্যদিকে, নীলক্ষেত এলাকার একটি নারী হোস্টেল থেকে গতকাল দুপুরে রিয়া আক্তার শান্তা (৩০) নামে এক ব্যাংক কর্মকর্তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। শান্তার গ্রামের বাড়ি বরিশাল সদরের পলাশপুরে। তিনি অগ্রণী ব্যাংকে চাকরি করতেন।
ডিএমপির নিউমার্কেট জোনের জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ কমিশনার তারিক লতিফ বলেন, দুপুর ১টার দিকে নীলক্ষেত নারী কর্মজীবী হোস্টেলে পুরাতন বিল্ডিং ৩০৭ নম্বর কক্ষ থেকে সিলিংফ্যানে ঝুলন্ত অবস্থায় শান্তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়। তিনি গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।