টাঙ্গাইল শহরে ছাত্র প্রতিনিধি পরিচয়ে সাবেক এমপি ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট জোয়াহেরুল ইসলাম জোয়াহেরের ছয়তলা বাড়ি দখলের অভিযোগ উঠেছে। গতকাল শনিবার  মারইয়াম মুকাদ্দাস মিষ্টি নামের ছাত্র প্রতিনিধি তালা ভেঙে শহরের ছোট কালীবাড়ি রোডের বাড়িতে ‘মানসিক ভারসাম্যহীন’ ২০ ব্যক্তিকে রেখেছেন।

জানতে চাইলে সদর থানার ওসি তানভীর আহম্মেদ জানান, বিষয়টি তিনি লোকমুখে শুনেছেন। ছাত্র-জনতার আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া শিক্ষার্থীরা নতুন দল করেছেন, এখানে ছাত্র প্রতিনিধি বা সমন্বয়ক বলতে আর কিছু থাকে বলে তাঁর মনে হয় না।

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগের পতনের পর থেকে সপরিবারে আত্মগোপনে জোয়াহেরুল ইসলাম। এর মধ্যে ৬ ফেব্রুয়ারি তাঁর বাড়িতে ভাঙচুর ও লুটপাট চালানো হয়। সম্প্রতি সামাজিক মাধ্যমে জোয়াহেরের বাড়িটি দখল করে আশ্রম করার ঘোষণা দেওয়া হয়।

স্থানীয়রা জানান, সকালে মিষ্টি তালা ভেঙে আল মুকাদ্দাস ফাউন্ডেশনের মানসিক ভারসাম্যহীন ২০ ব্যক্তিকে নিয়ে জোয়াহেরের বাড়িতে প্রবেশ করেন। জানতে চাইলে মিষ্টি বলেন, এটি জবরদখল নয়। কারণ কোনো ব্যক্তিবিশেষের ব্যবহারে বাড়িটি নেওয়া হয়নি। ফেসবুকে আগেই আওয়ামী লীগের সব নেতার বাড়িতে পাগলদের জন্য ‘আশ্রম’ গড়ে তোলার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। তারই অংশ হিসেবে শনিবার ছয়তলা ভবনে ২০ পাগল রাখা হয়েছে। এ কাজে তাঁকে অন্যান্য ছাত্র প্রতিনিধি সমর্থন দিয়েছেন বলে জানান।

মিষ্টি বলেন, জোয়াহেরের পক্ষ থেকে এক ব্যক্তি এসে বাড়ি না ভেঙে আশ্রম করার প্রস্তাব দেন। তাঁর প্রস্তাব অনুযায়ী পাগলদের আশ্রম করা হয়েছে। তবে এ কথা কে বলেছেন, তাঁর নাম-পরিচয় জানাননি তিনি।

তবে আবাসিক এলাকায় মানসিক ভারসাম্যহীনদের আশ্রম তৈরি করায় স্থানীয়রা অস্বস্তি প্রকাশ করেছেন। অনেকে ক্ষোভের কথা জানালেও প্রকাশ্যে প্রতিবাদের সাহস পাচ্ছেন না। এ বিষয়ে মিষ্টি বলেন, ‘আবাসিক এলাকার মানুষের জীবনযাত্রায় প্রভাব পড়লে বেশি মাত্রায় পাগলদের অন্য কোনো আওয়ামী লীগ নেতার বাসায় স্থানান্তর করা হবে। এখানে কম মাত্রার পাগল রাখা হবে।’

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের টাঙ্গাইলের আহ্বায়ক আল আমিন জানান, মারইয়াম মুকাদ্দাস মিষ্টি নামে এক ছাত্র প্রতিনিধি আওয়ামী লীগ নেতার বাড়িতে পাগলের আশ্রম করেছেন বলে তিনি শুনেছেন। তবে তারা এটি সমর্থন করেন না।

আল আমিন বলেন, ‘মিষ্টি বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ভূমিকা রেখেছিলেন। তাই বলে তিনি বিশেষ সুবিধা নেবেন, তা কাম্য নয়। এটি ফ্যাসিস্টবিরোধী আন্দোলনের মূল চেতনার সঙ্গে যায় না। তা ছাড়া বর্তমানে কেউ সমন্বয়ক পরিচয় দিতে পারবেন না। বাড়ি দখলের মতো অপরাধ করলে অবশ্যই তাঁর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।’

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: দখল আওয় ম

এছাড়াও পড়ুন:

খুলনায় এক মাসে ১৩ লাশ উদ্ধার, বাড়ছে উদ্বেগ

বাড়িতে ঝগড়া চলছিল বড় ভাই ও ভাবির। ছোট ভাই এসে ঝগড়া থামানোর চেষ্টা করেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে বড় ভাই ছোট ভাইয়ের মাথায় শাবল দিয়ে আঘাত করেন। মাটিতে লুটিয়ে পড়লে ধারালো বঁটি দিয়ে ছোট ভাইকে হত্যা করেন। পরে বড় ভাই শহিদুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তিনি এখন কারাগারে। ঘটনাটি ঘটেছে গত ৩০ মে, খুলনার কয়রা উপজেলার বাগালী ইউনিয়নের উলা গ্রামে।

এর আগে ২৭ মে কয়রার ইসলামপুর গ্রামের কয়রা নদীর চর থেকে শিকলে বাঁধা অবস্থায় আবদুল মজিদ (৬২) নামের এক বৃদ্ধের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ছাড়া ৮ জুন কয়রার কাছারিবাড়ি বাজার-সংলগ্ন পুকুর থেকে নমিতা (৪০) নামের এক নারীর লাশ উদ্ধার করা হয়।

১০ জুন কয়রা সদরের গোবরা সড়কে এক ভ্যানচালকের সঙ্গে এক মোটরসাইকেলচালকের কথা-কাটাকাটিকে কেন্দ্র করে দুই গ্রামের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এতে আহত হন অন্তত ১৫ জন। ঘটনায় ১২ জনকে আসামি করে থানায় মামলাও হয়েছে। এ ছাড়া কথা-কাটাকাটির জেরে কয়রার পল্লীমঙ্গল গ্রামে গত তিন দিনে কয়েক দফা মারামারি, হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে।

অসন্তোষ-দ্বন্দ্বের জেরে কয়রা উপজেলাসহ বিভিন্ন এলাকায় হত্যা–সংঘর্ষের ঘটনা ঘটছে। ১০ মে থেকে ৯ জুন পর্যন্ত এক মাসে খুলনার ১০টি থানা এলাকায় হত্যাকাণ্ডের ঘটনাসহ ১৩টি লাশ উদ্ধার হয়েছে। এ নিয়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বাড়ছে।

কয়রা কপোতাক্ষ মহাবিদ্যালয়ের সমাজকর্ম বিভাগের শিক্ষক বিদেশ রঞ্জন মৃধা বলেন, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক উপাদান কমে যাওয়ায় মানুষ অসহিষ্ণু হয়ে উঠছে। মূল্যবোধ ও ভারসাম্য নষ্ট হয়ে মানুষের মধ্যে মনুষ্যত্ব ও ভালোবাসা কমে যাচ্ছে। এতে খুনখারাবি বাড়ছে। একসময় সমাজের একজনের ভালোতে সবাই আনন্দ পেতেন। নেতিবাচক দিকগুলো ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিরোধ করতেন। এখন সেই ব্যবস্থা উঠেই গেছে বলা যায়। পাশাপাশি রাজনৈতিক আধিপত্যের লড়াইয়ে প্রভাববলয় সৃষ্টি করতেও সহিংসতার ঘটনা ঘটছে।

৩ জুন খুলনা শহরে দুর্বৃত্তের ছুরিকাঘাতে সবুজ হাওলাদার (৩০) নামের এক যুবকের মৃত্যু হয়। ৪ জুন খুলনা সদর থানার মতিয়াখালী খালের মধ্যে আটকে ছিল এক নারীর মরদেহ। পরে পুলিশ গিয়ে মরদেহ উদ্ধার করে। ওই নারীর পরিচয় না পেয়ে বেওয়ারিশ হিসেবে আঞ্জুমান মুফিদুলে দাফন করা হয়। গত ৯ জুন বিকেলে রূপসা উপজেলার আঠারোবেকী নদীতে পাওয়া যায় অজ্ঞাতনামা যুবকের মরদেহ। মরদেহের শ্বাসনালিতে গভীর ক্ষতচিহ্ন ছিল। রূপসা নৌ পুলিশের ওসি আবুল খায়ের বলেন, ধারণা করা হচ্ছে, এটি একটি হত্যাকাণ্ড।

এ বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে রহস্য উদ্‌ঘাটন ও অপরাধী শনাক্তে দীর্ঘসূত্রতার কারণেই অপরাধ বেড়ে চলেছে বলে মনে করেন বাংলাদেশ মানবাধিকার ব্যুরোর কয়রা উপজেলা শাখার সভাপতি তরিকুল ইসলাম। তাঁর ভাষ্য, প্রতিটি ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত শেষে দোষীদের আইনের আওতায় এনে উপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা করতে পারলে অপরাধপ্রবণতা কমে আসবে। আইনি প্রক্রিয়ায় দীর্ঘসূত্রতার কারণে অপরাধ বেড়ে চলেছে।

কয়রা উপজেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রুলী বিশ্বাস বলেন, সম্প্রতি ঘটে যাওয়া কয়েকটি ঘটনায় এলাকার মানুষের মধ্যে উৎকণ্ঠা বাড়ছে, এটা ঠিক। তবে প্রতিটি ঘটনায় পুলিশও তাৎক্ষণিকভাবে আইনি ব্যবস্থা নিয়েছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। যে বিষয়গুলো পারস্পরিক সৌহার্দ্য ও সামাজিক ভ্রাতৃত্ববোধের মধ্য দিয়ে সমাধান করা যায়, সেখানে খুনাখুনি, অস্থিরতা, মামলা-হামলার মধ্য দিয়ে একধরনের বিভীষিকাময় পরিবেশ সৃষ্টি করা হচ্ছে; যা সবার জন্যই অকল্যাণকর ও ভয়ানক।

সম্পর্কিত নিবন্ধ