ঢাকার আশুলিয়ায় দোকান বন্ধ করে বাসায় ফেরার পথে স্ত্রীর সামনেই এক স্বর্ণ ব্যবসায়ীকে কুপিয়ে তার সঙ্গে থাকা স্বর্ণালংকার দুর্বৃত্তরা লুট করে নিয়ে গেছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

রবিবার (৯ মার্চ) রাত সাড়ে ৮টার দিকে আশুলিয়ার নয়ারহাট বাজার এলাকায় এই ঘটনা ঘটে। গুরুতর আহতাবস্থায় ওই ব্যবসায়ীকে উদ্ধার করে সাভার এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিলে সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাত পৌনে ১১টার দিকে তার মৃত্যু হয়।

নিহত ব্যবসায়ীর নাম দিলীপ দাস (৪৭)। তিনি আশুলিয়ার পাথালিয়া ইউনিয়নের গোপিনাথপুর এলাকার দয়াল চন্দ্র দাসের ছেলে এবং আশুলিয়ার নয়ারহাট বাজার এলাকার দিলীপ স্বর্ণালয়ের মালিক।

আরো পড়ুন:

চৌগাছায় ছেলের দায়ের কোপে বাবা নিহত

আবরার ফাহাদ মসজিদ সম্প্রসারণের উদ্বোধন করলেন উপদেষ্টা আসিফ

নিহতের মামাতো ভাই খোকন সরকার বলেন, ‘‘প্রতিদিনের মতো গত রাত সাড়ে ৮টার দিকে দিলীপ দোকান বন্ধ করে বাসায় যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। এ সময় তার স্ত্রীও সঙ্গে ছিলেন। দোকানের শাটার বন্ধ করার সময় তিন দুর্বৃত্ত তার সঙ্গে থাকা স্বর্ণের ব্যাগ টান দেয়। এ সময় ব্যাগ নিতে না পেরে দুর্বৃত্তরা দিলীপকে চাপাতি দিয়ে এলোপাথাড়ি কুপিয়ে তার কাছ থেকে স্বর্ণের ব্যাগ ছিনিয়ে নিয়ে দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করে।’’

নিহতের স্ত্রী সরস্বতী দাস বলেন, ‘‘বাসায় যাওয়ার জন্য দোকান বন্ধ করছিলেন তিনি। আমি সাথেই ছিলাম। এ সময় পেছন থেকে একজন তার স্বর্ণের ব্যাগ টান দেয়। তারা তিন জন ছিল, প্রত্যেকেই অল্প বয়সী। প্রথম চেষ্টায় ব্যাগ নিতে না পেরে তারা দিলীপকে এলোপাথাড়ি চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে তার সঙ্গে থাকা ব্যাগ ছিনিয়ে নেয়। এ সময় আমি ডাক-চিৎকার শুরু করলে দুর্বৃত্তরা দুটি ককটেল ফাটিয়ে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়।’’

তিনি আরো বলেন, “ব্যাগে ২০ থেকে ২৫ ভরির মতো স্বর্ণ ছিল। কিছু নগদ টাকাও ছিল।” তবে, পরিমাণ জানাতে পারেননি তিনি।

এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের মেডিকেল অফিসার মেরাজুর রেহান পাভেল বলেন, ‘‘রাত সাড়ে ১০টার দিকে দিলীপ দাসকে হাসপাতালে আনা হয়। তার বুক, মুখে, পিঠে গভীর ধারালো অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন ছিল। আমরা চিকিৎসা শুরু করেছিলাম, পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।’’

আশুলিয়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো.

কামাল হোসেন বলেন, ‘‘সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গেছে, দিলীপ যখন দোকান থেকে বের হচ্ছিলেন তখন চার জন লোক পেছন থেকে তাকে আঘাত করে। পরে তিনি সামনে ঘুরলে আবারো তাকে আঘাত করা হয়। পরে দুর্বৃত্তরা দিলীপের সঙ্গে থাকা ব্যাগ নিয়ে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়।’’

তিনি আরো বলেন, ‘‘ফুটেজে ধোয়া দেখা গেছে, সম্ভবত তারা পালিয়ে যাওয়ার সময় ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটায়। পুলিশ বিষয়টি নিয়ে গুরুত্বসহকারে কাজ করছে।’’

ঢাকা/সাব্বির/রাজীব

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব যবস য় স বর ণ এ সময়

এছাড়াও পড়ুন:

চাকরি খেয়ে ফেলব, কারারক্ষীকে কারাবন্দী আ’লীগ নেতা

‘চাকরি খেয়ে ফেলব, দেখে নেব তোমাকে, চেন আমি কে?’ কারবন্দী কুড়িগ্রাম জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান সাজু (৪৯) মঙ্গলবার বিকেল ৪টার দিকে ২ কারারক্ষীকে এভাবে হুমকি দেন বলে অভিযোগ উঠেছে। 

জানা যায়, কুড়িগ্রাম জেলা কারাগারে জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান সাজুকে দেখতে যান তার কয়েকজন স্বজন। কারা নিয়মানুযায়ী সাক্ষাৎ কক্ষে বেঁধে দেওয়া সময়ে কথা শেষ করার কথা থাকলেও তিনি তার মানতে রাজি নন। তিনি দীর্ঘ সময় কথা বলতে চাইলে সাক্ষাৎ কক্ষে দায়িত্বরত মহিলা কারারক্ষী পপি রানী কারাবন্দী নেতার স্বজনদের সময়ের মধ্যে কথা শেষ করতে বলেন। এতে ক্ষিপ্ত হন আওয়ামী লীগ নেতা সাজু। তখন তিনি বলেন, ‘এই আপনি কে? ডিস্টার্ব করছেন কেন? চিনেন আমাকে? চাকরি খেয়ে ফেলব।’

এ সময় সাক্ষাৎ কক্ষে সাজুর স্বজনরাও পপি রানীর সঙ্গেও আক্রমণাত্মক আচরণ করেন। পপি রানীকে নিরাপদ করতে সুমন নামের আরেকজন কারারক্ষী এগিয়ে এলে তাকে লাথি দিয়ে বের করে দেওয়ার হুমকি দেন সাজু। উত্তেজনার একপর্যায়ে ঘটনাস্থলে দ্রুত উপস্থিত হন প্রধান কারারক্ষী আব্দুর রাজ্জাক। তিনি সাজুর স্বজনদের সাক্ষাৎ কক্ষ থেকে চলে যেতে বলেন। তারাও চলে যাওয়ার সময়ে কারারক্ষীদের গালিগালাজ করেন। 

এ ব্যাপারে কারারক্ষী পপি রানী  বলেন, ‘আমি ডিউটিরত অবস্থায় তিনি আমাকে প্রভাব দেখিয়ে চাকরি খাওয়ার হুমকি দেন ও গালিগালাজ করেন। আমি জেলার স্যারের কাছে বিচার প্রার্থনা করছি।’

প্রত্যক্ষদর্শী কারারক্ষী মো. সুমন বলেন, ‘আমরা তো ছোট পদে চাকরি করি, আমাদের নানান নির্যাতন সহ্য করতে হয়। আমি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া আর কিছু বলতে পারব না।’

প্রধান কারারক্ষী আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘সাক্ষাৎ কক্ষের ভেতরে পুলিশ সদস্যকে গালিগালাজ করা হয়। পরে আমি গিয়ে পরিবেশ শান্ত করি।’ 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কুড়িগ্রাম কারাগারের জেলার এ জি মো. মামুদ বলেন, ‘বিষয়টি আমি শুনেছি। বন্দীরা আমাদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করলেও আমরা মানবিকতা প্রদর্শন করি। কেউ অতিরিক্ত কিছু করলে জেলের নিয়ম অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

উল্লেখ্য, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান সাজুকে গত ৩ ফেব্রুয়ারি বিকেলে রংপুর শহরের সড়ক ও জনপথ কার্যালয়ের কাছ থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)। তার বিরুদ্ধে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে ছাত্র-জনতার ওপর হামলা ও শিক্ষার্থী আশিক হত্যা মামলাসহ একাধিক মামলা রয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ