মানহা বিবি মরিয়মের দুরন্তপনা যেন থেমে গেছে। শিশুটি কেবল ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে, কিছুই বলে না। নরম শরীরে গরম ছুরির ছ্যাঁকার ভয় যেন তাড়া করছে চার বছরের এ অবুঝ শিশুটিকে। মায়ের প্রেমিকের অমানবিক নির্যাতনে শিশু মানহা ছটফট করছে অসহ্য যন্ত্রণায়। দিনের পর দিন মানহা ও তার মায়ের ওপর প্রেমিক শামসুজ্জামান নির্যাতন চলেছে। কখনও জ্বলন্ত চুলায় ছুরি গরম করে তার শরীরে ছ্যাঁকা দিয়েছে, কখনও বেত্রাঘাত। 

ছোট্ট মানহার শরীর জুড়েই শামসুজ্জামানের নির্যাতনের চিহ্ন। অসংখ্য পোড়া দাগ। প্রতিবাদ করলেই মানহার মাকে পেটাত শামসুজ্জামান। গাজীপুরে শ্রীপুর উপজেলার মাওনা চৌরাস্তা সংলগ্ন কলাবাগান এলাকার ফজলুল হকের বাড়িতে ভাড়া থেকে এভাবেই মা-মেয়ের ওপর চালত শামসুজ্জামানের নির্যাতন। 

অবশেষে শামসুজ্জামানের নির্যাতন থেকে মুক্তি পেয়েছে শিশুটি। শ্রীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও শ্রীপুর থানা পুলিশ মানহা ও তার মাকে উদ্ধার করেছে। রোববার রাতে তাদেরকে উদ্ধারের পর শামসুজ্জামানকে আটক করে ৬ মাসের কারাদণ্ড দিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। 
 
জানা যায়, স্বামী মনির হোসেনের সঙ্গে বিচ্ছেদের পর রুমি আক্তার মেয়ে মানহাকে নিয়ে বেশ ভালো দিন কাটাচ্ছিলেন। এরই মধ্যে ফেসবুকে পরিচয় হয় নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলায় তলিয়াচাঁদপুর গ্রামের ইউসূফ আলীর ছেলে শামসুজ্জামানের সঙ্গে। একপর্যায়ে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে মাস চার আগে মাওনার চৌরাস্তার এলাকার ফজলুল হকের বাড়ির একটি রুম ভাড়া নেন তারা। সঙ্গে ছিল মানহাও। রুমি তার মেয়েকে বাবা বলে শামসুজ্জামানকে পরিচয় করিয়ে দেন। এরপর থেকে মেয়েটি শামসুজ্জামানকে আব্বু আব্বু বলে পুরো ঘর মাতিয়ে রাখত।

এ দিকে বিয়ে না করেই সংসার করছিল রুমি ও শামসুজ্জামান। কিছুদিন যেতে না যেতেই বেরিয়ে আসে শামসুজ্জামানের আসল চরিত্র। নেশায় বুঁদ হয়ে থাকতো বাসায়। ঘুম থেকে উঠেই শিশুটির ওপর চালাতো নির্যাতন। 

রুমি আক্তার বলেন, প্রতিবাদ করলেই আমাকে মারধর করে অজ্ঞান অবস্থায় ফেলে রাখত। গত চার মাস ধরে শিশুটির ওপর নিষ্ঠুর নির্যাতন চলেছে। গত শুক্রবার রাতেও গ্যাসের চুলায় ছুরি গরম করে শিশু মানহার কাঁধ, হাত, ঘাড়, গলা, গাল ও কানে ছ্যাঁকা দেয় শামসুজ্জামান। ঘরেই আটকে রাখা হয় তাকে। রোববার সন্ধ্যার পর প্রতিবেশীরা বিষয়টি টের পান। রাতেই পুলিশে খবর দেওয়া হয়। জানানো হয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকেও। খবর পেয়ে পুলিশ শিশুকে উদ্ধার করে নিয়ে যায়। 

মানহার মা রুমি আরও বলেন, শুক্রবার রাত ১১টার দিকে মেয়েকে পাশের কক্ষে দরজা বন্ধ করে ছুরি গরম করে শরীরে ছ্যাঁকা দেয়। আমাকে ঘরে আটকে রাখে। কাউকে কিছু বলতে পারিনি। পাশের ভাড়াটিয়ারা জেনে আমাদের উদ্ধার করে। 

শ্রীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ব্যারিস্টার সজীব আহমেদ বলেন, স্বামীর সঙ্গে বিচ্ছেদের পর শামসুজ্জামানের সঙ্গে পরিচয় হয় রুমির। পরে তারা বিয়ে না করেই এক সঙ্গে বসবাস শুরু করেন। মাদকাসক্ত শামসুজ্জামান শিশুটির ওপর অমানবিক নির্যাতন করেছে। রোববার রাতেই তাকে পুলিশ আটক করে নিয়ে আসে। পরে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আতাহার শাকিলের ভ্রাম্যমাণ আদালত তার ৬ মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেন।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: উপজ ল র ওপর

এছাড়াও পড়ুন:

‘ক্ষুদে ম্যারাডোনা’ জিসানের দায়িত্ব নিলেন তারেক রহমান

কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী উপজেলার জালালপুর ইউনিয়নের ফেকামারা ডুলিকান্দা গ্রামের ক্ষুদে ফুটবলার জিসানের পাশে দাঁড়িয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। স্থানীয়রা ফুটবলে জিসানের দক্ষতায় মুগ্ধ হয়ে তাকে ‘ক্ষুদে ম্যারাডোনা’ বলে ডাকেন। 

তারেক রহমানের পক্ষে সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর) বিকেলে জিসানের গ্রামের বাড়িতে যান বিএনপির ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক এবং জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক আমিনুল হক। তিনি জিসানের বাবা ও এলাকাবাসীকে এ খবরটি জানিয়ে আসেন।

উপজেলার জালালপুর ইউনিয়নের ফেকামারা ডুলিকান্দা গ্রামের অটোরিকশাচালক জজ মিয়ার ছেলে জিসান। মাত্র ১০ বছর বয়সী এই প্রতিভাবান ফুটবলারের অসাধারণ দক্ষতার ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়। স্থানীয় চর ঝাকালিয়া মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৫ম শ্রেণির ছাত্র সে। 

কখনও এক পায়ে, কখনও দু’পায়ে, কখনও পিঠে ফুটবল রেখে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কসরত করে জিসান। দেখে মনে হবে, ফুটবল যেনো তার কথা শুনছে। এসব কসরতের ভিডিও নেট দুনিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে।

অনলাইনে জিসানের ফুটবল নৈপুণ্য দেখে মুগ্ধ হন তারেক রহমান। তিনি জিসানের ভবিষ্যৎ গড়ার দায়িত্ব নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। তার পক্ষে গতকাল সোমবার বিকেলে জিসানের বাড়িতে যান বিএনপির ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক এবং জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক আমিনুল হক। 

জিসানকে উপহার হিসেবে বুট, জার্সি ও ফুটবলসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম তুলে দেন তিনি। এছাড়া জিসানের পরিবারকে আর্থিক সহায়তাও দেওয়া হয়।

জিসানের ফুটবল খেলা নিজ চোখে দেখে মুগ্ধ আমিনুল হক বলেন, “জিসান ফুটবলে ন্যাচারাল ট্যালেন্ট। তারেক রহমান জিসানের প্রশিক্ষণ, লেখাপড়া ও ভবিষ্যতের সকল দায়িত্ব নিয়েছেন। তাছাড়া প্রতিমাসে জিসানের লেখাপড়া, ফুটবল প্রশিক্ষণ ও পরিবারের ব্যয়ভারের জন্য টাকা পাঠানো হবে।”

জিসান জানায়, মোবাইলে ম্যারাডোনা, মেসি ও রোনালদোর খেলা দেখে নিজেই ফুটবলের নানা কৌশল শিখেছে। নিজ চেষ্টায় সে এসব রপ্ত করেছে।

জিসানের বাবা জজ মিয়া বলেন, “আমি বিশ্বাস করতাম, একদিন না একদিন কেউ না কেউ আমার ছেলের পাশে দাঁড়াবে। আজ আমার সেই বিশ্বাস পূর্ণ হয়েছে।”

ঢাকা/রুমন/এস

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • মুখের অবাঞ্ছিত লোম দূর  করতে ডায়েটে যে পরিবর্তন আনতে পারেন
  • অনুষ্ঠান করে স্ত্রীকে বিয়ে দিলেন স্বামী
  • ‘ক্ষুদে ম্যারাডোনা’ জিসানের দায়িত্ব নিলেন তারেক রহমান