মানুষ যেভাবে বিমূর্ত চিন্তাভাবনা করে
Published: 11th, March 2025 GMT
কালো রঙের হাতি দেখে অভ্যস্ত আমরা। আর তাই সামনে দেখা না গেলেও সহজে হাতিকে কল্পনা করা সম্ভব। এবার হলুদ রঙের হাতির কথা ভাবুন তো! দেখবেন, আপনি মনে মনে ঠিকই হলুদ রঙের হাতি দেখছেন। এমন বিমূর্ত চিন্তা প্রাণিকুলের মধ্যে শুধু মানুষই করতে পারে বলে মনে করেন বিজ্ঞানীরা। মানুষের মনের মধ্যে অনেক কিছু চলতে থাকে। নানা চিন্তাভাবনা সব সময়ই মানুষের মস্তিষ্ককে ব্যস্ত রাখে। মানুষের বিমূর্ত চিন্তাভাবনার কৌশল অন্য সব প্রাণী থেকে আলাদা। শারীরিকভাবে দৃশ্যমান নয় এমন সব ভাবনা বা বস্তু সম্পর্কে ধারণা চিন্তাভাবনার একটি উচ্চ স্তরের রূপ বলা হয়।
প্রথমবারের মতো মানুষের মস্তিষ্কের কোষের কার্যকলাপ পর্যবেক্ষণ করে বিজ্ঞানীরা বিমূর্ত চিন্তাভাবনা করার কৌশল বের করেছেন। মস্তিষ্কের নিউরন কীভাবে এমন কৌশলে কাজ করেছে তা বের করার চেষ্টা করছেন তাঁরা। স্পেনের হসপিটাল ডেল মার রিসার্চ ইনস্টিটিউটের গবেষকেরা নিউরনের এই কৌশল বের করেছেন। সেল রিপোর্টস জার্নালে একটি গবেষণাপত্রে নিউরনের বিমূর্ত চিন্তার কৌশল সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। একটি পৃথক নিউরনের এমন আচরণ মস্তিষ্কে উচ্চতর ও বিমূর্ত ধারণা গঠনের অনুমতি দেয় বলে জানিয়েছেন তাঁরা। এই নিউরন মানুষের বুদ্ধিমত্তার ভিত্তি গঠন করে বলেও ধারণা করা হচ্ছে।
আরও পড়ুনমানুষের মস্তিষ্ক কতটা দ্রুত কাজ করে২৬ ডিসেম্বর ২০২৪স্নায়ুবিজ্ঞানী রদ্রিগো কুইয়ান কুইরোগা বলেন, মানুষের নিউরোনাল কোডিংয়ের মূল নীতি অন্যান্য ক্ষেত্রে যা দেখা গেছে তার বিপরীত। এই নিউরনের উল্লেখযোগ্য প্রভাব দেখতে পাই আমরা। আমরা বিভিন্ন কাজে একই ধারণার প্রতি একই রকম একক-নিউরন প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করেছি। গবেষণার জন্য আর্জেন্টিনা ও যুক্তরাজ্যের নয়জন মৃগীরোগীর মস্তিষ্কে ইলেকট্রোড স্থাপন করা হয়েছিল। এরপর তাদের নিউরনের পৃথক আচরণ শনাক্ত করার পাশাপাশি নিউরনের বিভিন্ন প্রতিক্রিয়ার সুনির্দিষ্ট আচরণ ধারণ করা হয়। রোগীদের গবেষণার অংশ হিসেবে দুটি গল্প উপস্থাপন করা হয়। দুটি গল্পের জন্য রোগীদের মস্তিষ্কে একটি নিউরনের প্রতিক্রিয়া একই দেখা গেছে।
আরও পড়ুনমানুষের মস্তিষ্কের পূর্ণাঙ্গ মানচিত্র প্রকাশ করেছেন বিজ্ঞানীরা১৭ অক্টোবর ২০২৩অন্যান্য প্রাণীর তুলনায় মানুষের মধ্যে স্মৃতি অনেক বেশি বিমূর্তভাবে সংরক্ষিত হয়। আপনি যে প্রেক্ষাপটে যা শিখছেন, তার ওপর নির্ভর করে আপনি কেমন ধারণা রাখেন। এই নিউরন মানব বুদ্ধিমত্তার ভিত্তি হতে পারে। এই ক্ষমতা আমাদের নির্দিষ্ট ও সুনির্দিষ্ট প্রেক্ষাপটের মধ্যে বিভিন্ন ধারণা সম্পর্কে ভাবতে বাধ্য করার চেয়ে বেশি বিমূর্ত ধারণা বুঝতে সহায়তা করে। বিভিন্ন জটিল সম্পর্ক ও অনুমান করার সুযোগ পায়।
সূত্র: এনডিটিভি
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: চ ন ত ভ বন
এছাড়াও পড়ুন:
নারীদের নিয়ে বারে ‘অগ্রহণযোগ্য’ আচরণ, আমিরাতের ক্ষোভে রাষ্ট্রদূতকে ফেরত নিচ্ছে ইসরায়েল
সংযুক্ত আরব আমিরাতের (ইউএই) এক পানশালায় ‘অমর্যাদাকর’ আচরণের জেরে ইসরায়েলের রাষ্ট্রদূতকে দেশে ফেরত পাঠানো হচ্ছে বলে হিব্রু সংবাদমাধ্যমের এক খবরে জানা গেছে।
ইসরায়েলের চ্যানেল ১২ টেলিভিশনের প্রতিবেদনে গতকাল মঙ্গলবার বলা হয়েছে, আবুধাবি কর্তৃপক্ষ স্পষ্ট করে জানিয়েছে যে তারা আর ওই রাষ্ট্রদূতকে গ্রহণ করতে প্রস্তুত নয়। এরপরই তেল আবিব সরকার উপসাগরীয় অঞ্চলের দেশটি থেকে রাষ্ট্রদূত ইয়োসি আব্রাহাম শেলিকে ফিরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
এর আগে হিব্রু সংবাদমাধ্যম এন১২ বলেছে, শেলি কয়েকজন ইসরায়েলিকে নিয়ে আমিরাতের একটি বারে হাজির হন এবং এমন আচরণ করেন, যা আরব আমিরাতের কর্মকর্তারা ‘অগ্রহণযোগ্য ও মর্যাদাহানিকর’ বলে ইসরায়েলকে জানান। রাষ্ট্রদূতের সঙ্গীদের মধ্যে নারীরাও ছিলেন।
২০২০ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় স্বাক্ষরিত আব্রাহাম চুক্তির আওতায় সংযুক্ত আরব আমিরাত ও ইসরায়েলের মধ্যে সম্পর্ক স্বাভাবিক হয়। গাজা যুদ্ধ ঘিরে বিশ্বজুড়ে ইসরায়েলের তুমুল সমালোচনা চললেও আবুধাবি এখনো দেশটির ঘনিষ্ঠতম আরব মিত্র হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলোর অভিযোগ, গাজায় গণহত্যা চালাচ্ছে ইসরায়েল।
গাজা যুদ্ধ শুরুর পর এখন পর্যন্ত ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী যে একমাত্র আরব দেশে সফর করতে পেরেছেন, তা হলো আরব আমিরাত। গত জানুয়ারিতে গাজায় এক সাময়িক যুদ্ধবিরতির আগে ইসরায়েলি পররাষ্ট্রমন্ত্রী গিডিওন সার আমিরাত সফর করেন।
শেলির বিরুদ্ধে এমন পদক্ষেপ আমিরাতের নজিরবিহীন এক পদক্ষেপ হিসেবেই বিবেচিত হচ্ছে। মাত্র এক কোটি জনসংখ্যার এ দেশের ৯০ শতাংশ মানুষই আমিরাতি নন। দেশটিতে দক্ষিণ এশিয়ার শ্রমিক, ব্রিটিশ অভিবাসী, রুশ ধনকুবের ও অন্য প্রভাবশালীদের উপস্থিতি রয়েছে। আর দুবাই উপসাগরীয় অঞ্চলের নৈশকালীন বিনোদনকেন্দ্র হিসেবে পরিচিত।
গত সপ্তাহে হিব্রু গণমাধ্যমে প্রকাশিত এক খবরে বলা হয়, গত শুক্রবার রাতে আবুধাবিতে বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে বেড়াতে গিয়ে শেলি এমন ‘অমর্যাদাকর’ আচরণ করেন, যা ব্যক্তি পরিসরের সীমা অতিক্রম করে। এর আগে তিনি ব্রাজিলে ইসরায়েলের রাষ্ট্রদূত হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন এবং সেখানে দুটি বিতর্কিত ঘটনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলেন।
এক ঘটনায় শেলি ব্রাজিলের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জইর বলসোনারোর সঙ্গে নৈশভোজে অংশ নেন। ইনস্টাগ্রামে পোস্ট করা সেই ডিনারের ছবিতে দেখা যায়, টেবিলে একটি লবস্টার কালো মার্কার দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়েছে। উল্লেখ্য, ইহুদি খাদ্যবিধি অনুযায়ী ঝিনুক–জাতীয় খাবার নিষিদ্ধ।
২০২৩ সালে হারেৎজ পত্রিকার এক প্রতিবেদনে উঠে আসে, এক ব্রাজিলীয় নারীর ভিসা–সংক্রান্ত আবেদনের জবাবে শেলি নিজে ই-মেইল ও ভিডিও কলে যোগাযোগ করেন। তিনি জানান, ইসরায়েলের ভিসা পেতে হলে ওই নারীকে তাঁর সঙ্গে ব্যক্তিগতভাবে দেখা করতে হবে। পরে ওই নারী বলেন, এক ভিডিও কলে তিনি দেখেন, শেলি বিছানায় অর্ধনগ্ন অবস্থায় শুয়ে আছেন।
‘আমি যখন ক্যামেরা চালু করলাম, দেখি তিনি বিছানায় শুয়ে ঘামছেন। বললেন, তিনি হাঁটাহাঁটি করে ফিরেছেন। খুবই অনুচিত ছিল ব্যাপারটা। আমি বলি, পরে কথা বললে হয় না? উনি বলেন, ‘‘না, এখনই বলি।’’ এরপর ব্যক্তিগতভাবে দেখা করার কথা বলেন ও ব্রাসিলিয়ায় রাতের খাবারের আমন্ত্রণ জানান। আমি ভীষণ চাপে ও অস্বস্তিতে পড়ে যাই’, বলেন ওই নারী।
পরে শেলিকে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের মহাপরিচালক পদে নিযুক্ত করা হয়। ২০২৪ সালের নভেম্বরে তাঁকে আমিরাতে রাষ্ট্রদূত হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়।
তখন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছিলেন, ‘ইয়োসি ব্রাজিলে অত্যন্ত দক্ষ রাষ্ট্রদূতের ভূমিকা পালন করেছেন। তিনি শুধু ব্রাজিলের প্রেসিডেন্টের সঙ্গেই নন, স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের সঙ্গেও ভালো সম্পর্ক গড়ে তুলেছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরেও তিনি গুরুত্বপূর্ণ ও কঠিন দায়িত্ব পালন করেছেন।’