সমন্বয়ক পরিচয়ে পুলিশকে মেরে আসামি ছিনতাই
Published: 11th, March 2025 GMT
ঢাকার কেরানীগঞ্জে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক পরিচয় দিয়ে দুই পুলিশকে মারধর করে এক আসামিকে ছিনিয়ে নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এ ঘটনায় দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার এসআই পিযুষ সরকার ও কনস্টেবল রাজীব সিকদার আহত হয়েছেন। সোমবার রাতে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানাধীন বেগুনবাড়ি সেতুর ঢালে জমিদার সিটি এলাকায় কালু বেপারীর বাড়ির সামনে এ ঘটনা ঘটে।
জানা গেছে, সোমবার রাত সাড়ে ১১টায় বেগুনবাড়ি এলাকায় দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার এসআই পিযুষ সরকার দু’জন কনস্টেবল নিয়ে ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি আসিফ উল্লাহকে (২৫) গ্রেপ্তার করেন। এ সময় আসিফের ছোট ভাই মারুফ হোসেন পুলিশের কাছে এসে নিজেকে সমন্বয়ক পরিচয় দেন। মারুফ পুলিশের কাছে ওয়ারেন্টের কাগজ দেখতে চান। পুলিশ ওয়ারেন্টের কাগজ বের করে দেখালে মারুফ পুলিশের হাত থেকে ওয়ারেন্টের কাগজ নিয়ে ছিঁড়ে ফেলেন। মারুফ ফোনে কল করে বন্ধু-বান্ধব আত্মীয়-স্বজনসহ ২০-২৫ জনকে জড়ো করেন। এ সময় তারা দুই পুলিশকে মারধর করে হাতকড়া পরা অবস্থায় আসামি আসিফকে ছিনিয়ে নেন। এ ঘটনা এসআই পিযুষ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানালে অতিরিক্ত পুলিশ গিয়ে ঘটনাস্থল থেকে তাদের উদ্ধার করেন। তাদের মিটফোর্ড মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। পরে রাত সাড়ে ৩টার দিকে অভিযান চালিয়ে শুভাঢ্যা সাবান ফ্যাক্টরি এলাকা থেকে হাতকড়া পরা অবস্থায় আসামি আসিফ ও পুলিশের কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগ মারুফসহ পাঁচজনকে আটক করা হয়। এ ঘটনায় দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানায় মামলা হয়েছে।
কেরানীগঞ্জ সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জাহাঙ্গীর আলম জানান, পুলিশের কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানায় মামলা হয়েছে। এ ঘটনায় ছিনিয়ে নেওয়া আসামিসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তিনি সমন্বয়ক পরিচয়ে আসামি ছিনিয়ে নেওয়া প্রসঙ্গে বলেন, আসামির আত্মীয়-স্বজনরা পুলিশকে মারধর করে আসামি ছিনিয়ে নিয়েছেন। সেখানে সমন্বয়ক পরিচয় ব্যবহার করা হয়েছে কিনা বিষয়টি তিনি নিশ্চিত নন।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: সমন বয়ক ম রধর ছ নত ই এ ঘটন
এছাড়াও পড়ুন:
রাজশাহীতে যুবদল–ছাত্রদলের চাঁদাবাজির মামলার এজাহার ফাঁস, এসআইকে বদলি
রাজশাহীতে যুবদল ও ছাত্রদলের নেতাদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির মামলা রুজুর আগে এজাহার ফাঁসের ঘটনায় এবার এক উপপরিদর্শককে (এসআই) বদলি করা হয়েছে। ওই পুলিশ কর্মকর্তার সঙ্গে ছাত্রদলের এক নেতার ফোনালাপ ফাঁস হওয়ার পর বিষয়টি নিয়ে রাজশাহীতে তুমুল আলোচনা চলছে।
নগরের বোয়ালিয়া থানা থেকে বদলি হওয়া ওই পুলিশ কর্মকর্তার নাম এস এম রকিবুল ইসলাম। চাঁদাবাজির মামলার এজাহার থানায় রেকর্ড হওয়ার আগেই তিনি সেটি হোয়াটসঅ্যাপে পাঠিয়ে দেন ছাত্রদল নেতা এমদাদুল হক ওরফে লিমনের কাছে। এমদাদুল হক রাজশাহী সরকারি সিটি কলেজ ছাত্রদলের সদস্যসচিব। ২৩ জুলাই রাতে আবাসন ব্যবসায়ী মোস্তাফিজুর রহমান তাঁর বিরুদ্ধে দুই লাখ টাকা চাঁদা দাবির অভিযোগে বোয়ালিয়া থানায় মামলা করেন। মামলায় এমদাদুল হকসহ ৩৬ জনের নাম উল্লেখ করা হয়।
এজাহার ফাঁসের ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর গতকাল সোমবার এসআই রকিবুলকে থানার দায়িত্ব থেকে সরিয়ে রাজশাহী পুলিশ লাইনসে সংযুক্ত করা হয়।
এসআই রকিবুলের সঙ্গে সেই রাতে হওয়া কথোপকথনের রেকর্ড ফাঁস করে দেন এমদাদুল হক নিজেই। হোয়াটসঅ্যাপের ওই কথোপকথন ভিডিও করে রেখেছিলেন তিনি। ভিডিওতে দেখা যায়, এমদাদুল হক সালাম দিয়ে কথা শুরু করেন। এসআই রকিবুল তাঁর উত্তর না দিয়ে বলেন, ‘মামলা রেকর্ড হচ্ছে, হচ্ছে...রেকর্ডটা করতে দে।’ এমদাদুল জানতে চান, ‘আচ্ছা, ওর (মোস্তাফিজুর রহমানের) মামলাডা হলো, কে কে ভাই বলেন তো একটু। বলা যাবে?’ এসআই বলেন, ‘তুই ফোন দিছিস তোর পরে আমি গেছি। যায়ে এজাহার নিসি, তোরে দিসি। আমি জানি? কমিশনার অফিস থেকে এজাহার লিখিসে।’ এমদাদুল প্রশ্ন করেন, ‘ওখানেই এজাহার লিখেছে? কমিশনার অফিসে?’ এসআই বলেন, ‘হ্যাঁ, ওখান থাইকা অফিসে থেকে এজাহার পাঠায়ে দিসে। অপারেটর তাই কলো যে স্যার, পেনড্রাইভে করে এজাহার পাঠায় দিসে ফোর্স দিয়ে।’
ভিডিওতে আরও দেখা যায়, এমদাদুল বলেন, ‘ও, কমিশনার নিজেই লিখেছে?’ এসআই বলেন, ‘তা জানি না। সে (পুলিশ কমিশনার) তো আর নিজে লেখে না। ওই অফিস (আরএমপি সদর দপ্তর) থেকে পাঠায়ছে। আমি কাজ করতেছি, ফ্রি হয়ে ফোন দিচ্ছি। রাখো।’
পরে মামলাটি প্রত্যাহারের দাবি ও বাদীকে গ্রেপ্তারের দাবিতে রাজশাহীতে মানববন্ধন করেন বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতা–কর্মীরা। সেখানে মাইকে বাজিয়ে শোনানো হয় এসআই রকিবুল ও এমদাদুলের এই কল রেকর্ড।
এরপর বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়ে পুলিশ। বিষয়টি বোয়ালিয়া জোনের উপকমিশনারকে তদন্ত করতে বলা হয়। প্রাথমিক তদন্ত শেষে এসআই রকিবুল ইসলামকে থানার দায়িত্ব থেকে সরিয়ে গতকাল পুলিশ লাইনসে সংযুক্ত করা হয়।
রাজশাহী মহানগর পুলিশের গণমাধ্যম শাখার অতিরিক্ত উপকমিশনার গাজিউর রহমান বলেন, ‘রকিবুল ইসলামের গত তিন মাসের চাকরির পারফরম্যান্স খারাপ হওয়ায় তাকে থানা থেকে বদলি করা হয়েছে। এর সঙ্গে ওই কল রেকর্ডের কোনো সম্পর্ক নেই। আর কল রেকর্ডে সে যা বলেছে, তার ব্যাপারে অবশ্য ডিপার্টমেন্ট তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করবে।’
পুলিশ কমিশনার কার্যালয় থেকে কোনো মামলার এজাহার পাঠানোর প্রসঙ্গে গাজিউর রহমান বলেন, ‘এটা কখনো হয় না। মামলার বাদী থানায় এসে লিখিত এজাহার ওসির কাছে জমা দেন অথবা লিখতে না পারলে অন্য কাউকে দিয়ে লিখে তা বাদীকে পড়ে শোনানো হয়। তিনি তাতে সায় দিলে টিপসই নেওয়া হয়।’ কমিশনার কার্যালয় থেকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে মামলা পাঠানো হতে পারে কি না, এমন প্রশ্নে গাজিউর রহমান বলেন, ‘এটা কখনোই সম্ভব নয়। রাতে কমিশনার অফিসে কেউ থাকে না। তা ছাড়া আমি রেকর্ডটি শুনেছি। বলেছে, কমিশনার অফিস থেকে। এখন কমিশনার তো আরও আছে। সেটা ঠিক নয়।’