পুলিশের হামলা প্রমাণ করেছে ‘ফ্যাসিবাদী কায়দা’ অব্যাহত, গণসংহতি আন্দোলনের বিবৃতি
Published: 11th, March 2025 GMT
‘ধর্ষণ ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ’–এর কর্মসূচিতে পুলিশের হামলার ঘটনায় নিন্দা ও ক্ষোভ জানিয়েছে গণসংহতি আন্দোলন। একই সঙ্গে একে ‘ন্যক্কারজনক হামলা’ উল্লেখ করে জড়িত পুলিশ সদস্যদের বিচার ও শাস্তির দাবি জানিয়েছে দলটি।
মঙ্গলবার গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি ও নির্বাহী সমন্বয়কারী আবুল হাসান রুবেল এক যৌথ বিবৃতিতে এ ঘটনাকে ‘জুলাই অভ্যুত্থানের জনগণের আকাঙ্ক্ষার পরিপন্থি’ বলে উল্লেখ করেছেন।
গণমাধ্যমে পাঠানো ওই বিবৃতিতে জোনায়েদ সাকি ও আবুল হাসান রুবেল বলেন, সারা দেশে নারীর ওপর অব্যাহত নিপীড়ন, ধর্ষণ, ধর্ষণ–পরবর্তী খুনের বিরুদ্ধে দেশজুড়ে বিক্ষোভের অংশ হিসেবে শিক্ষার্থীদের মঞ্চ ‘ধর্ষণ ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ’ পূর্বঘোষিত প্রধান উপদেষ্টার কাছে স্মারকলিপি পেশের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে পুলিশের ন্যক্কারজনক হামলা প্রমাণ করেছে, অন্তর্বর্তী সরকার আগের মতোই মানুষের ন্যায্য আন্দোলন দমনে ‘ফ্যাসিবাদী কায়দা’ অব্যাহত রেখেছে।
এ ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে জোনায়েদ সাকি ও আবুল হাসান রুবেল বলেন, ‘জনগণের জানমালের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থতার দায় স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার ওপর বর্তায়। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার ব্যর্থতা জনগণের মধ্যে হতাশার সঞ্চার করবে।’
সরকারের ব্যর্থতা দেশকে বড় বিপদের দিকে নিয়ে যেতে পারে জানিয়ে বিবৃতিতে তাঁরা বলেন, অপরাধমূলক মব কর্মকাণ্ড এবং বিশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে সরকারকে শক্ত ও দৃঢ় ভূমিকা নিতে হবে। অবিলম্বে হামলাকারী পুলিশ সদস্যদের চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ও অব্যাহত নিপীড়ন প্রতিরোধে কার্যকর ভূমিকা নিতে হবে।
এর আগে দুপুরে ধর্ষণ ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের গণপদযাত্রায় বাধা দেয় পুলিশ। রাজধানীর ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলের সামনে পদযাত্রায় অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের সঙ্গে এ ঘটনা ঘটে।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
আন্দোলন অব্যাহত রাখার ঘোষণা ইশরাকের
বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনকে মেয়রের দায়িত্ব দেওয়ার দাবিতে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) নগর ভবনে ঈদের বিরতির পর ফের অবস্থান নিয়েছেন সংস্থাটির কর্মচারীরা। এর সঙ্গে ঢাকাবাসীর ব্যানারে নগরভবনে একত্রিত হয়েছেন ইশরাকের অনুসারীরা। সেখানে উপস্থিত হয়ে আন্দোলন অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছেন ইশরাক হোসেন।
আজ রোববার সকাল থেকে ইশরাকের অনুসারীরা ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নগরভবনে একত্রিত হয়ে অবস্থান কর্মসূচি পালন করলেও। সকাল ১১ টার দিকে নগরভবনে প্রবেশ করেন ইশরাক হোসেন এবং আন্দোলনকারীদের উদ্দেশ্যে আন্দোলন অব্যাহত রাখার ঘোষণা দেন তিনি।
ইশরাক হোসেন বলেন, সরকারকে আহ্বান জানাচ্ছি, আপনারা দ্রুততম সময়ের মধ্যে নিষ্পত্তি করেন। তাহলে অচল অবস্থা কেটে যাবে। এই সমস্যা সুরাহা না করা পর্যন্ত এই কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে।
তিনি আরও বলেন, আমাদের এই আন্দোলন চলমান থাকবে। স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা সংবিধান লংঘন করেছেন। আন্দোলন চলমান থাকবে। এখান থেকে ফিরে আসার কোনো সুযোগ নেই। এই লড়াই থেকে ফিরে আসার কোনো সুযোগ নেই। প্রধান উপদেষ্টাকে আহ্বান জানাবো, তিনি যেন বিষয়টি সরাসরি নিজে তত্ত্বাবধান করেন। আমরা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। আমরা নিয়মতান্ত্রিক রাষ্ট্র পরিচালনায় বিশ্বাস করি। এখন আমাদের আন্দোলন যেভাবে চলছে কোনো অবস্থাতেই আমরা এখান থেকে ফিরে যেতে পারি না। আদালতের রায় জনগণের রায়কে আপনারা মেনে নিন।
ইশরাক বলেন, আমরা যদি এখান থেকে পেছনের দিকে চলে যাই, তাহলে জনগণের প্রত্যাশা পূরণ হবে না। সরকারকে আহ্বান জানাবো, আপনারা দ্রুততম সময়ের মধ্যে এটা নিষ্পত্তি করেন। নইলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের এই সংকটে চলবেই। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের যেসব দৈনন্দিন কার্যক্রম চলবে, জনগণের জন্য ভোগান্তি না হয়। এগুলো আমাদের তত্ত্বাবধানে চলমান থাকবে।
এদিকে তারা ‘শপথ শপথ শপথ চাই, ইশরাক ভাইয়ের শপথ চাই’, ‘মেয়র নিয়ে তালবাহানা, সহ্য করা হবে না’, ‘চলছে লড়াই চলবে, ইশরাক ভাই লড়বে’, ‘নগর পিতা ইশরাক ভাই, আমরা তোমায় ভুলি নাই’- এমন নানা স্লোগান দিয়ে যাচ্ছেন আন্দোলনকারীরা। তাদের স্লোগানে উত্তাল ছিল পুরো নগরভবন। তাদের আন্দোলনের ফলে বিরতির আগে ১৫ মে থেকে ৩ জুন পর্যন্ত নগর ভবন থেকে দেওয়া সব নাগরিক সেবা বন্ধ ছিল। ঈদের ছুটির পর আজ থেকে ফের তারা আন্দোলনে যোগ দিয়েছেন ইশরাকের অনুসারীরা।
প্রসঙ্গত, ২০২০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নির্বাচন হয়। সে সময় আওয়ামী লীগের প্রার্থী শেখ ফজলে নূর তাপসকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। নির্বাচনে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ তুলে ফল বাতিল চেয়ে ২০২০ সালের ৩ মার্চ মামলা করেন ইশরাক।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গত ২৭ মার্চ ঢাকার নির্বাচনী ট্রাইব্যুনাল সেই ফল বাতিল করে অবিভক্ত ঢাকা সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার ছেলে ইশরাককে মেয়র ঘোষণা করে। এরপর ২৭ এপ্রিল ইশরাককে ডিএসসিসি মেয়র ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশন। কিন্তু তাকে যেন শপথ পড়ানো না হয়; সেজন্য গত ১৪ মে হাইকোর্টে রিট আবেদন করা হয়। এমন পরিস্থিতিতে মেয়রের দায়িত্ব বুঝিয়ে দিতে গত ১৫ মে থেকে আন্দোলন নামেন ইশরাক সমর্থকরা। তাদের আন্দোলনের কারণে ডিএসসিসি নগর ভবন কার্যত অচল হয়ে পড়ে। কিন্তু আইনি জটিলতার কথা বলে ইশরাকের শপথের আয়োজন থেকে বিরত থাকে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়।
এরপর এ রিট মামলার ওপর কয়েক দফা শুনানির পর তা খারিজ করে আদেশ দেন হাইকোর্টের বেঞ্চ।