‘শাহবাগী’ বলে যে কাউকে ফ্যাসিবাদী ও ইসলামবিদ্বেষী বলে তকমা দেওয়া যাবে না। শাহবাগ গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলনে ছিলেন, এমন অনেক ব্যক্তি কয়েক বছর ধরে শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন। তাঁদের অনেকে আহত ও নিহত হয়েছেন। শাপলা-শাহবাগের কর্মীরা কমরেডস [সহযোদ্ধা] হয়েছিলেন বলেই শেখ হাসিনার পতন ঘটেছিল। তাঁরা ইতোমধ্যে তাঁদের রাজনৈতিক ভুলের প্রায়শ্চিত্ত তথা কাফফারা আদায় করেছেন। তাই অভ্যুত্থান–পরবর্তী বাংলাদেশে শাহবাগ ও শাপলা—এই দুই ভাগে জনগণকে বিভক্ত না করে সবাইকে গণতন্ত্র, আইনের শাসন এবং সহনাগরিকদের সঙ্গে মর্যাদাপূর্ণ সংলাপ ও সংহতির দিকে এগোনোর আহ্বান জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলম।

বুধবার রাতে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে দেওয়া এক পোস্ট মাহফুজ আলম এ কথাগুলো বলেছেন। দীর্ঘ পোস্টের শুরুতে মাহফুজ আলম লেখেন, ‘জামায়াত যুদ্ধাপরাধের সহযোগী ছিল। কিন্তু নাহিদ ইসলাম যেভাবে বলেছেন এ অভ্যুত্থানের মাধ্যমে তাঁরা কাফফারা দিয়েছেন। আমিও বলেছি, জামায়াতের যাঁরা বাংলাদেশপন্থী, তাঁরা এ দেশে রাজনীতি করার অধিকার রাখেন। জামায়াতের নতুন প্রজন্মের অল্প কিছু ব্যতিক্রম বাদে কেউই পাকিস্তানপন্থী নন। ফলে স্বাধীনতাবিরোধী ট্যাগ [তকমা] দিয়ে জামায়াত-শিবিরের রাজনৈতিক অধিকার ক্ষুণ্ন করা যাবে না। রাজনৈতিক ও আদর্শিক লড়াই করেই তাদের বিরুদ্ধে জিততে হবে। তাদের প্রোপাগান্ডা ওয়ারের [অপপ্রচারমূলক লড়াই] জবাব দিতে হবে সত্য দিয়ে।’

রাজধানীর শাহবাগে ২০১৩ সালে গণজাগরণ মঞ্চের নেতৃত্বে আন্দোলন প্রসঙ্গে মাহফুজ আলম লিখেছেন, ‘শাহবাগে যারা গিয়েছিল [তাদের] একটা বড় অংশ “চেতনা”র অন্ধতায় পড়ে গিয়েছিল। অনেক ছাত্র-তরুণ ইসলামবিদ্বেষ থেকে না; বরং নিছক যুদ্ধাপরাধীর বিচারের দাবিতে গিয়ে উপস্থিত ছিল। তরুণ প্রজন্মের আবেগকে আওয়ামী লীগ ও বামপন্থীদের মুজিববাদী অংশ কাজে লাগিয়ে এ দেশে মবোক্রেসি [মবতন্ত্র] কায়েম করেছিল। যার ফসল ছিল দীর্ঘ এক দশকের ফ্যাসিবাদী দুঃশাসন—বিরোধীদলীয় কর্মীদের গুম, খুন, ধর্ষণ ও নিপীড়ন।’

কিন্তু শাহবাগে অংশ নেওয়া অনেক ছাত্র-তরুণই তাঁদের ভুল বুঝতে পেরে মুজিববাদী বয়ানের বাইরে যেতে চেয়েছেন উল্লেখ করে মাহফুজ আলম লিখেছেন, ‘গত কয়েক বছর ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে তাঁরা অংশীজন ছিলেন। আহত ও নিহত হয়েছেন। তাঁরা আমাদের সহযোদ্ধা। তাঁরা আমাদের কমরেডস বটে! এ অভ্যুত্থানে শক্তিশালী ভূমিকা রেখে তাঁরা লীগ ও মুজিববাদের পরাজয় নিশ্চিত করেছেন। তাঁরা ইতিমধ্যে তাঁদের রাজনৈতিক ভুলের প্রায়শ্চিত্ত, তথা কাফফারা আদায় করেছেন।’

২০১৩ সালের মে মাসে হেফাজতে ইসলামের কর্মসূচির সঙ্গে নিজের অভিজ্ঞতার প্রসঙ্গে টেনে মাহফুজ আলম লেখেন, ‘আমি নিজে শাপলায় এসেছিলাম লংমার্চে নবীজির প্রতি ভালোবাসায়। ৫ মে-তে আমি আসতে পারিনি। কিন্তু যুদ্ধাপরাধের বিচার ও জামায়াত নেতাদের ভূমিকা নিয়ে আমাদের আগ্রহ ছিল না। আমরা মূলত নবীজির সম্মান ও ভালোবাসা সামনে রেখে ঢাকায় এসেছিলাম। আমি শর্ষিণাপন্থী যে মাদ্রাসায় পড়েছি, সেখানে জামায়াত নেতাদের ভ্রান্ত আকিদার অনুসারী হিসেবে গণ্য করা হতো। আর জামায়াত নেতাদের ফাঁসিকে দেখা হতো তাদের আলেম ও সহি ইসলাম বিরোধিতার ফসল হিসেবে। জামায়াতকে আমরা ছোটবেলা থেকে আলেম-ওলামাবিরোধী হিসেবেই জেনে এসেছি।’

মাহফুজ আলম লিখেছেন, ‘অনেকেই হয়তো খেয়াল করেন না, অধিকাংশ শাপলার কর্মীরাই আসলে জামায়াতের আকিদা (বিশ্বাস ও কর্মপন্থা) ও নেতৃত্ববিরোধী। শাপলার অনেক নেতৃত্বই জামায়াতের আলেম ও পীরপন্থা বিরোধিতার শিকার। এমনকি অনেকেই জামায়াত ও শিবির নেতাদের কর্তৃক নিগৃহীত ও নিপীড়িত হয়েছেন। কিন্তু জামায়াত সফলভাবেই তাদের প্রক্সি হিসেবে ব্যবহার করতে পেরেছে। যেমন লীগ “শাহবাগী”দের ব্যবহার করেছে।’

তিনি লিখেছেন, ‘আমরা অভ্যুত্থান-উত্তর সময়ে উপনীত হয়েছি। এখানে জামায়াতকে বা শিবিরের কর্মীদের “রাজাকার”,  “স্বাধীনতাবিরোধী” বলে বধযোগ্য করার যে বয়ান সেটার বিরোধী আমরা। তেমনি শাহবাগের ইসলামফোবিয়ার [ইসলামবিদ্বেষ] বিরুদ্ধেও আমাদের অবস্থান। এ ইসলামফোবিয়ার শিকার আমি নিজে হয়েছি। পাঞ্জাবি–টুপি পরলেই জঙ্গিবাদী বলা থেকে শুরু করে মাদ্রাসাছাত্রদের ও আলেমদের বিমানবিকীকরণের জন্য শাহবাগ দায়ী। শাহবাগের সাংস্কৃতিক বন্দোবস্ত বিএনপি-জামায়াতসহ বিরোধীদলীয় নেতা–কর্মীদের ঊনমানুষে পরিণত করেছিল।’

শাপলা-শাহবাগের কর্মীরা কমরেডস হয়েছিলেন বলেই শেখ হাসিনার পতন ঘটেছিল উল্লেখ করে অন্তর্বর্তী সরকারের তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ লিখেছেন, ‘অভ্যুত্থান-উত্তর সময়ে একটি সংলাপমুখর সময় এসে উপস্থিত হয়েছে। শাপলা- শাহবাগের বাইনারির বাইরে এসে শাহবাগের প্রাণভোমরা—মুজিববাদ, ভারতপন্থা ও শেখ পরিবারের বিরুদ্ধে পুরাতন শাপলা ও শাহবাগের কর্মীদের “কমরেডস” হয়ে ওঠার সুযোগ তৈরি হয়েছিল। আসলে শাপলা-শাহবাগের কর্মীরা কমরেডস হয়েছিলেন বলেই শেখ হাসিনার পতন ঘটেছিল। এদিকে শাপলার নেতৃত্বের জন্যও কারও প্রক্সি না হয়ে রাষ্ট্রে ইজ্জত ও শরিকানা দাবির সুন্দর সুযোগ উপস্থিত হয়েছিল।’

চরমপন্থী কোনো গোষ্ঠীর হাতে তৌহিদি জনতার নেতৃত্ব ছেড়ে না দিতে আহ্বান জানিয়েছেন মাহফুজ আলম। এ প্রসঙ্গে তিনি লেখেন, ‘আমি আমার আগের দুটি পোস্টে আলেম-ওলামাদের ধন্যবাদ দিয়েছিলাম, তাঁদের শক্তিশালী ভূমিকার জন্য।

তৌহিদবাদী জনতার নেতৃত্ব যেন ফ্রিঞ্জ এলিমেন্টের (চরমপন্থী গোষ্ঠী) হাতে না গিয়ে মূলধারার হকপন্থী আলেমদের হাতে থাকে, এ আশা রাখি। মূলধারার আলেমরা আশা করি গণ-অভ্যুত্থানের পক্ষে, দেশের পক্ষে দাঁড়িয়ে শাহবাগের মবোক্রেসি ও বিচারহীনতার সংস্কৃতির বিরুদ্ধে দাঁড়াবেন। নিজেরা সে সংস্কৃতির অনুকরণ করবেন না। এ ক্ষেত্রে আমরা মজলুম ও গণতান্ত্রিক মূলধারার আলেমদের পক্ষেই থাকব।’

উপদেষ্টা মাহফুজ আলম লিখেছেন, ‘বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার শাপলার গণহত্যার বিচারের উদ্যোগ নিয়েছে। মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা শাপলার হত্যাযজ্ঞ ডকুমেন্টেশনের [নথিপত্র সংগ্রহের] কথা বলেছেন। আশা করি, শাপলায় শহীদ মাদ্রাসাছাত্র ও আলেমদের বিরুদ্ধে যে নির্বিচার হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে বর্বর শেখ হাসিনা, তার সুষ্ঠু তদন্ত, ডকুমেন্টেশন ও বিচার নিশ্চিত হবে।’

আরও পড়ুনপুলিশকে সহযোগিতার আহ্বান জানিয়ে মাহফুজ বললেন, ‘কোনো ফাঁদে পা দেওয়া যাবে না’১১ মার্চ ২০২৫

গণজাগরণ মঞ্চ–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের হত্যার পটভূমি তৈরি না করতে আহ্বান জানিয়ে মাহফুজ আলম লিখেছেন, ‘সাবেক “শাহবাগী” যাঁরা অভ্যুত্থানের ভেতর দিয়ে নিজেদের ন্যায্য অবস্থান ব্যক্ত করেছেন, লড়াই করেছেন, তাঁদের কোনোভাবেই বধযোগ্য করে তোলা যাবে না। যাকে তাকে “শাহবাগী” ট্যাগ দিয়ে অভ্যুত্থান-উত্তর সময়ে বৃহত্তর সংহতির সম্ভাবনাকে নস্যাৎ করা যাবে না। শাপলাপন্থী কেউ যদি ভাবেন, লীগবিরোধী ও অভ্যুত্থানের পক্ষের সাবেক “শাহবাগী”দের শত্রু ও বধযোগ্য বানিয়ে তাঁরা সফল হবেন, তা কিন্তু হবে না। আপনি শাপলার হয়ে মবোক্রেসি ও বিচারহীনতার দাবি করলে আপনিও তো “শাহবাগী” হয়ে উঠবেন, নাকি? বামপন্থীদের মধ্যে যাঁরা মুজিববাদবিরোধী, তাঁরা কিন্তু অনেক আগে থেকেই শাপলার হত্যাযজ্ঞের বিরুদ্ধে উচ্চকণ্ঠ ছিলেন। ফলে,শত্রু-মিত্র ফারাক করা আমাদের জন্য খুবই জরুরি।’

মাহফুজ আলম আরও লিখেছেন, ‘তবে পুরোনো “শাহবাগী”, যারা এখনো  শাহবাগের প্রাণভোমরা—মুজিববাদ, ভারতপন্থা ও শেখ পরিবারের প্রতি আনুগত্যকে নিজেদের আদর্শ বলে মনে করে, তাদের বিন্দুমাত্র ছাড় দেওয়া উচিত হবে না। এরাই গুম ও গণহত্যার উসকানি দিয়েছিল ও ন্যায্যতা তৈরি করেছিল। জুলাই গণহত্যার সময়ও এরা চুপ ছিল, কেউ কেউ বৈধতা উৎপাদনে ব্যস্ত ছিল। বিদেশ থেকে এখনো যারা ফ্যাসিবাদের পক্ষে সাফাই গাইছে, এদের একটা বড় অংশ শাহবাগের ফ্যাসিবাদী। এরা জনগণের শত্রু, ন্যায়বিচার ও গণতন্ত্রের শত্রু, গণ-অভ্যুত্থানের শত্রু। এদের বিচার শুরু হয়েছে, শেষও হবে।’

পোস্টের শেষ অংশে দেশে চলমান পরিস্থিতিতে করণীয় সম্পর্কে কথা বলেছেন মাহফুজ আলম। তিনি লিখেছেন, ‘অভ্যুত্থান-উত্তর বাংলাদেশে শাহবাগে বেড়ে ওঠা মবোক্রেসি ও বিচারহীনতার সংস্কৃতি সব পক্ষকেই বাদ দিতে হবে। গণতন্ত্র, আইনের শাসন ও সহনাগরিকদের সঙ্গে মর্যাদাপূর্ণ সংলাপ ও সংহতির দিকে সবাইকে এগোতে হবে। শাহবাগের ছাত্র-তরুণ যাঁরা মুজিববাদের বিরুদ্ধে, ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়েছেন, “শাহবাগী” ট্যাগ দিয়ে তাঁদের বিরুদ্ধে মব উসকে দেওয়া বা বিভেদ তৈরি সবাইকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। রাজনৈতিক ভেন্ডাটা [প্রতিহিংসা] থেকে হরে-দরে সবাইকে শাহবাগী বলা বন্ধ করতে হবে। গণ-অভ্যুত্থানের শক্তিগুলোর মধ্যে আদর্শিক ও সাংস্কৃতিক লড়াই থাকবেই। কিন্তু গণ-অভ্যুত্থানের শহীদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা রেখে আমাদের নিজেদের মধ্যে বোঝাপড়া ও মৈত্রী বাড়াতে হবে, শত্রু কমাতে হবে এবং চিহ্নিত শত্রুর দীর্ঘ মেয়াদে পরাজয় নিশ্চিত করতে হবে।’

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: মব ক র স র জন ত ক কর ম দ র র কর ম র উপদ ষ ট র জন য বল ছ ন র শত র আল ম ও আম দ র র আল ম হয় ছ ল ত হয় ছ কর ছ ন ইসল ম

এছাড়াও পড়ুন:

যে ‘ধর্মীয় অনুপ্রেরণায়’ ইরানে এই হামলা চালাল ইসরায়েল

ইসরায়েল আবারও ইরানে বড় রকমের হামলা করেছে। হামলায় ইরানের বেশ কয়েকজন উচ্চপদস্থ সামরিক কর্মকর্তা ও পরমাণুবিজ্ঞানী নিহত হয়েছেন। হামলা হয়েছে গুরুত্বপূর্ণ সামরিক ঘাঁটি ও আবাসিক এলাকায়। একদিন পর পাল্টা হামলা চালায় ইরান। এতে কয়েকজন ইসরায়েলি নিহত হয়। ধ্বংস হয় তেলআবিবের কিছু গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা।

ইসরায়েল তার ইরানবিরোধী এ হামলার নাম দিয়েছে ‘রাইজিং লায়ন’। এ নাম রাখা হয়েছে হিব্রু বাইবেলের একটি চরণ থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে। যে নাম ইসরায়েলের একটি শক্তিশালী ও বিজয়দীপ্ত ভবিষ্যতের প্রতিশ্রুতি দেয়।

ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বৃহস্পতিবার ইহুদিদের সবচেয়ে পবিত্র উপাসনাস্থল জেরুজালেমের ওয়েস্টার্ন ওয়ালের একটি ফাটলে হাতে লেখা একটি চিরকুট রেখে আসার সময় ছবি তোলেন। এটি ছিল মূলত ইরানে ইসরায়েলের হামলার ইঙ্গিত।

শুক্রবার তার অফিস থেকে সেই চিরকুটে একটি ছবি প্রকাশ করা হয়। সেখানে লেখা ছিল: ‘জনগণ সিংহের মতো উঠে দাঁড়াবে।’

এই বাক্যাংশটি হিব্রু বাইবেলের গ্রন্থ বুক অব নাম্বারস (গণনা পুস্তক) ২৩:২৪ পদ থেকে এসেছে। যেখানে বলা হয়েছে: ‘দেখো, এই জাতি একটি মহান সিংহের মতো উঠে দাঁড়াবে এবং একটি তরুণ সিংহের মতো নিজেকে উদ্দীপ্ত করবে; সে শিকার না খাওয়া পর্যন্ত বিশ্রাম নেবে না এবং নিহতদের রক্ত না পান করা পর্যন্ত থামবে না।’

এই চরণটি হিব্রু বাইবেলের অ-ইসরায়েলীয় একজন নবী ও ভবিষ্যদ্বক্তা বালামের প্রথম ভবিষ্যদ্বাণীর অংশ। সেখানে তিনি ইসরায়েলের শক্তি ও ক্ষমতার কথা বলেন। তাদের এমন এক সিংহের সঙ্গে তুলনা করেন যে নিজের ক্ষুধা না মেটানো পর্যন্ত বিশ্রামে যায় না।

অনেকেই মনে করেন, এই অভিযানের নাম ইরানের শেষ শাহ-এর পুত্রের প্রতি ইঙ্গিত হতে পারে। কারণ পারস্য রাজপরিবারের প্রতীক হিসেবেও সিংহ ব্যবহৃত হতো।

ইসরায়েলের ঐশ্বরিক অধিকারের দাবি

ইসরায়েল প্রায়শই তার সামরিক অভিযানের নাম হিব্রু বাইবেল বা ওল্ড টেস্টেমেন্ট থেকে নেয় বা ধর্মীয় অনুপ্রেরণা থেকে গ্রহণ করে। ফিলিস্তিনি ভূমির উপর ইহুদিদের তথাকথিত ঐশ্বরিক অধিকারের দাবি এবং মধ্যপ্রাচ্যে তাদের যুদ্ধকে ন্যায্যতা দিতে ইসরায়েল এসব ধর্মীয় বিষয় ব্যবহৃত করে বলে অনেকে মনে করে থাকেন।

উদাহরণস্বরূপ, ইসরায়েলি সেনাবাহিনী সিরিয়ার সামরিক স্থাপনা লক্ষ্য করে চালানো এক অভিযানের নাম দিয়েছিল, ‘অ্যারো অব বাশান।’ ‘বাশান’ শব্দটি ইসরায়েলিদের ধর্মগ্রন্থ ওল্ড টেস্টামেন্টে ব্যবহৃত হয়েছে। এটি দিয়ে মূলত সিরিয়ার দক্ষিণ ও জর্ডান নদীর পূর্বে অবস্থিত একটি অঞ্চলকে নির্দেশ করা হয়। বাশানের রাজাকে পরাজিত করে ইসরায়েলিরা সেই অঞ্চলকে দখল করেছিল।

গাজা উপত্যকার ওপর হামলা চালাতেও অস্ত্র ও অভিযানের জন্য হিব্রু বাইবেলীয় প্রতীক বা অনুষঙ্গ ব্যবহার করছে ইসরায়েল। নেতানিয়াহু অন্তত তিনবার গাজায় আক্রমণের জন্য হিব্রু বাইবেলীয় আমালেক কাহিনি ব্যবহার করেছেন।

২০২৩ সালের ২৮ অক্টোবর এক বিবৃতিতে নেতানিয়াহু হিব্রু বাইবেল ও ওল্ড টেস্টামেন্টের গ্রন্থ ‘বুক অব ডিউটেরনমি’(২৫:১৭) এর থেকে উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন:

‘আমালেক তোমার সঙ্গে যা করেছিল তা মনে রেখো, আমরা মনে রাখি এবং আমরা যুদ্ধ করি।’

এর মধ্য দিয়ে গাজাবাসীদের উপর পূর্ণাঙ্গ হামলা করা উচিত বলে নেতানিয়াহু ইঙ্গিত করেন। কারণ ডিউটেরনমির এই উদ্ধৃতি বাইবেলের স্যামুয়েল গ্রন্থে বর্ণিত আমালেকীয়দের বিরুদ্ধে সম্পূর্ণ ধ্বংসের আহ্বান হিসেবে বিবেচিত হয়।

বাইবেলের এ কাহিনিতে ইসরায়েলিদের ওপর আক্রমণকারীদের সম্পূর্ণরূপে নির্মূল করার আহ্বান জানানো হয়েছে। গাজার গোটা জনসংখ্যাকে সম্পূর্ণরূপে নিশ্চিহ্ন করে দিতে বাইবেলের এ কাহিনিকে হাজির করেছেন নেতানিয়াহু।

গণহত্যার মামলায় নেতানিয়াহুর বক্তব্য

ইসরায়েলের বিরুদ্ধে দক্ষিণ আফ্রিকার দায়ের করা গণহত্যার মামলায় আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের (আইসিজে) প্রথম শুনানিতে দক্ষিণ আফ্রিকার পক্ষের আইনজীবী হিব্রু বাইবেলের উদ্ধৃতির মাধ্যমে নেতানিয়াহুর এই বক্তব্যকে গাজার জনগণের বিরুদ্ধে গণহত্যায় প্ররোচনা হিসেবে তুলে ধরেন।

আইনজীবী আরও জানান, নেতানিয়াহু ৩ নভেম্বর সেনাদের উদ্দেশ্যে লেখা আরেকটি চিঠিতে একই আমালেকীয় গল্প পুনরাবৃত্তি করেন।

ধর্মীয় নাম ব্যবহার করে সামরিক প্রযুক্তি

ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর যে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি গাজায় বোমাবর্ষণে সহায়তা করছে, তাদের নাম ‘ল্যাভেন্ডার’ এবং ‘দ্য গসপেল’, যা উভয়ই হিব্রু বাইবেলীয় ধর্মগ্রন্থে উল্লেখ রয়েছে।

টিআরটি ওয়ার্ল্ডের বিশ্লেষক রাভালে মহিদিনের মতে, প্রায়ই ধর্মীয় ধর্মগ্রন্থ থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে ইসরায়েলের অস্ত্রের নামকরণ করা হয়। যেমন, স্যামসন রিমোট কন্ট্রোলড ওয়েপন স্টেশন।

জেরিকো ব্যালিস্টিক মিসাইল-এর নাম রাখা হয়েছে জেরিকো শহরের নামে। হিব্রু বাইবেল ও ওল্ড টেস্টামেন্টের একটি গ্রন্থ ‘বুক অব যশুয়া’ অনুসারে ইসরায়েলিরা এই শহর ফিলিস্তিনিদের কাছ দখল করেছিল।

ডেভিড’স স্লিং নামক আরেকটি ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থার নাম রাখা হয়েছে বাইবেলের মেষপালক ডেভিড ও বিশাল যোদ্ধা গোলিয়াথের মধ্যকার বিখ্যাত সেই লড়াইয়ের স্মরণে, যেখানে ডেভিডের বিজয় হয়েছিল। এই কাহিনী আছে হিব্রু বাইবেল ও ওল্ট টেস্টামেন্টের একটি গ্রন্থ ‘বুক অব স্যামুয়েল’-এ।

*দ্য নিউ আরব, মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকা বিষয়ক লন্ডনভিত্তিক সংবাদমাধ্যম। টিআরটি ওয়ার্ল্ডের বিশ্লেষক ও হার্ভার্ডের গবেষক রাভালে মহিদিনের একটি লেখার অবলম্বনে দ্য নিউ আরব এ বিশ্লেষণটি প্রকাশ করেছে। অনুবাদ করেছেন: রাফসান গালিব

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বাংলাদেশের দুর্ভাগ্য, ভালো উদ্যোগ নিলেও বিরোধিতা আসে
  • যে ‘ধর্মীয় অনুপ্রেরণায়’ ইরানে এই হামলা চালাল ইসরায়েল
  • তেহরানে ইসরায়েলের বিমান হামলার নিন্দা জানিয়েছে জাতীয় মুক্তি কাউন্সিল