দুই বছরের মাথায় যন্ত্র বিকল: একেকটি ট্রেন ধুতে গচ্চা ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা
Published: 16th, March 2025 GMT
বাংলাদেশ রেলওয়ে ট্রেন ধোয়ার জন্য ৩৮ কোটি টাকায় দুটি স্বয়ংক্রিয় ধৌতকরণ ব্যবস্থা বা ওয়াশিং প্ল্যান্ট কিনেছিল। একটি স্থাপন করা হয় ঢাকার কমলাপুরে, অন্যটি রাজশাহীতে। ২০ মাসের মাথায় প্ল্যান্ট দুটি বন্ধ হয়ে যায়।
রেলওয়ে সূত্র জানিয়েছে, দুটি প্ল্যান্ট দিয়ে ২ হাজার ৯২৯ বার ট্রেন ধোয়া সম্ভব হয়েছিল। হিসাব করে দেখা যায়, প্ল্যান্ট দুটি স্থাপনে যে ব্যয় হয়েছে, তাতে প্রতিটি ট্রেন ধোয়ার পেছনে সরকারের খরচ হয়েছে প্রায় ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা। প্রচলিত ব্যবস্থায় হাতে ট্রেন ধুতে খরচ হয় ১ হাজার টাকার মতো।
ওয়াশিং প্ল্যান্ট নামে যে ব্যবস্থা তৈরি করা হয়েছিল, তাতে মূলত কিছু স্বয়ংক্রিয় ব্রাশ, সাবানপানি ও সাধারণ পানি ছিটানোর ব্যবস্থা এবং কয়েকটি বৈদ্যুতিক পাখা ছিল। সাধারণ এই ব্যবস্থা তৈরিতে এত ব্যয় নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল তখনই। রেলওয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, অনেক দিন ধরে প্ল্যান্ট দুটি বন্ধ। সেগুলো পুনরায় চালু করতে আরও বিনিয়োগ দরকার, যা কোনোভাবেই যৌক্তিক নয়।
প্ল্যান্ট দুটি চালানো হতো বিদ্যুতের সাহায্যে। ট্রেন ধোয়ার কাজে পানি ও ডিটারজেন্ট ব্যবহার করা হতো। এর পরিচালনায় থাকা লোকবলসহ সব খরচ ধরলে প্রতিটি ট্রেন ধোয়ার পেছনে দেড় লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে। রেলওয়ে সব সময় চুক্তিভিত্তিক শ্রমিক দিয়ে ট্রেন ধোয়ার কাজ করে থাকে। শ্রমিক, পানির ব্যবহারসহ সামগ্রিকভাবে একটি ট্রেন ধোয়ার পেছনে এক হাজার টাকাও খরচ হয় না। অন্যদিকে ওয়াশিং প্ল্যান্ট দুটি কেনা হয়েছিল কোচ কেনার একটি প্রকল্পের আওতায়। রেলের দায়িত্বশীল একাধিক কর্মকর্তার মত, শুধু প্রকল্প বড় করার জন্যই এই যন্ত্র কেনা হয়েছিল। রেলের কিছু কর্মকর্তা এবং বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সংসদ সদস্য এ বি এম ফজলে করিম চৌধুরীর আগ্রহে যন্ত্র দুটি কেনা হয়।
চট্টগ্রামের সাবেক সংসদ সদস্য ফজলে করিম চৌধুরী দুই মেয়াদে রেলপথ মন্ত্রণালয়–সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ছিলেন। ওয়াশিং প্ল্যান্ট সরবরাহে যুক্ত প্রতিষ্ঠানের বাংলাদেশ প্রতিনিধির পক্ষে ফজলে করিম কাজ করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। ফজলে করিম চৌধুরী এখন কারাগারে।
বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সাড়ে ১৫ বছরে রেলের উন্নয়নে বিভিন্ন প্রকল্পের আওতায় এক লাখ কোটি টাকার বেশি খরচ করা হয়েছে। এর বেশির ভাগই বিদেশি ঋণ। ২০০৯-১০ অর্থবছরে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার সময় রেলের বার্ষিক লোকসান ছিল ৬৯১ কোটি টাকা। এরপরই নতুন রেললাইন নির্মাণসহ নানা প্রকল্পে বিপুল বিনিয়োগ শুরু করে সরকার। বাড়ানো হয় ভাড়া। এরপরও বাড়তে থাকে লোকসান। ২০২২-২৩ অর্থবছরে রেলের আয় ছিল ১ হাজার ৭৮৩ কোটি টাকা। ব্যয় ছিল ৩ হাজার ৩০৭ কোটি টাকা। লোকসান ১ হাজার ৫২৪ কোটি টাকা। অর্থাৎ এক টাকা আয় করতে রেল দুই টাকার মতো ব্যয় করছে।
রেলের দায়িত্বশীল একাধিক কর্মকর্তার মত, শুধু প্রকল্প বড় করার জন্যই এই যন্ত্র কেনা হয়েছিল। রেলের কিছু কর্মকর্তা এবং বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সংসদ সদস্য এ বি এম ফজলে করিম চৌধুরীর আগ্রহে যন্ত্র দুটি কেনা হয়।ওয়াশিং প্ল্যান্ট দেখতে যুক্তরাষ্ট্র ভ্রমণওয়াশিং প্ল্যান্ট দুটির যন্ত্রপাতি যুক্তরাষ্ট্র থেকে কেনা হয়েছিল। এই যন্ত্রের কার্যকারিতা দেখতে ২০১৯ সালে তিনজন কর্মকর্তা যুক্তরাষ্ট্র সফর করেন। এর মধ্যে রেলের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (এডিজি রোলিং স্টক) সৈয়দ ফারুক আহমেদ যন্ত্র কেনার কিছুদিন পরই অবসরে যান। প্রকল্প পরিচালক ফকির মো.
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ফকির মো. মহিউদ্দিন রেলওয়েতে বৈষম্যবিরোধী ফোরাম প্রতিষ্ঠা করে এর মুখ্য সমন্বয়ক হয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রে ভ্রমণ করা আরেকজন হচ্ছেন রেলপথ মন্ত্রণালয়ের তৎকালীন উপসচিব মাহাবুবুল হক।
রেলওয়েতে রক্ষিত দুটি ওয়াশিং প্ল্যান্ট পরিচালনা–সংক্রান্ত তথ্য অনুসারে, ২০২১ সালের নভেম্বরে ওয়াশিং প্ল্যান্টগুলো ঘটা করে উদ্বোধন করেছিলেন তৎকালীন রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন। ঢাকার প্ল্যান্টটি ২০২৩ সালের জুলাই পর্যন্ত মোটামুটি চালু ছিল। এরপরই সমস্যা শুরু হয়। গত বছর মে মাসে মাত্র দুটি ট্রেন ধোয়া হয়। এরপর এর কোনো ব্যবহার হচ্ছে না।
ওয়াশিং প্ল্যান্ট দুটির যন্ত্রপাতি যুক্তরাষ্ট্র থেকে কেনা হয়েছিল। এই যন্ত্রের কার্যকারিতা দেখতে ২০১৯ সালে তিনজন কর্মকর্তা যুক্তরাষ্ট্র সফর করেন। এর মধ্যে রেলের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (এডিজি রোলিং স্টক) সৈয়দ ফারুক আহমেদ যন্ত্র কেনার কিছুদিন পরই অবসরে যান। প্রকল্প পরিচালক ফকির মো. মহিউদ্দিন এখনো রেলে কর্মরত। তিনি এখন ২০টি মিটারগেজ ইঞ্জিন ও ১৫০টি মিটারগেজ কোচ কেনার প্রকল্পের পরিচালক। এই প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ২ হাজার ১৫৮ কোটি টাকা।রাজশাহীর প্ল্যান্টটি গত বছর এপ্রিল পর্যন্ত চালু ছিল। এ সময় মাসে গড়ে ৮টি ট্রেন ধোয়া হয়েছে। সব মিলিয়ে ঢাকার প্ল্যান্টটিতে ২ হাজার ৬৮৯টি এবং রাজশাহীর প্ল্যান্টে ২৪০টি ট্রেন ধোয়া হয়। দুই প্ল্যান্টে ধোয়া কোচের সংখ্যা ৩৩ হাজার ৯৬২টি। অর্থাৎ প্রতিটি কোচ বা কামরা ধোয়ার পেছনে গড়ে ব্যয় হয়েছে ১১ হাজার ১২৪ টাকা।
কমলাপুরে গত বুধবার গিয়ে দেখা যায়, ওয়াশিং প্ল্যান্টটিতে ধুলা পড়ে গেছে। ওয়াশিং প্ল্যান্টে প্রবেশের মুখে অন্য ট্রেন রেখে দেওয়া হয়েছে। এখানে আর কোনো কর্মকাণ্ড হয় না। পাশের সারি সারি লাইনে পুরোনো পদ্ধতিতে শ্রমিকদের ট্রেন ধোয়ার কাজ করতে দেখা গেছে।
ট্রেন ধোয়ার কাজে যুক্ত একজন কর্মী নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, যত দিন ওয়াশিং প্ল্যান্ট চালু ছিল, সেখানে ট্রেন ধোয়ার পর পুনরায় শ্রমিকদের পরিষ্কার করতে হতো। কারণ, ওয়াশিং প্ল্যান্টে ট্রেনের ভেতরে পরিষ্কার করা হতো না। শুধু বাইরের অংশ ধোয়া হতো। যন্ত্র দিয়ে ট্রেন ধোয়ার পরে পানের পিক, চুইংগামসহ কোচের গায়ে লেগে থাকা অন্যান্য দাগ ব্রাশ দিয়ে ঘষে ঘষে পরিষ্কার করতে হতো। ট্রেনের ভেতর ও শৌচাগারে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ করতে হয় পুরোনো পদ্ধতিতেই।
কমলাপুরে গত বুধবার গিয়ে দেখা যায়, ওয়াশিং প্ল্যান্টটিতে ধুলা পড়ে গেছে। ওয়াশিং প্ল্যান্টে প্রবেশের মুখে অন্য ট্রেন রেখে দেওয়া হয়েছে। এখানে আর কোনো কর্মকাণ্ড হয় না। পাশের সারি সারি লাইনে পুরোনো পদ্ধতিতে শ্রমিকদের ট্রেন ধোয়ার কাজ করতে দেখা গেছে।অপ্রয়োজনীয় কেনাকাটারেলওয়ের নথিপত্র অনুযায়ী, ২০১৫ সালে ২০০টি মিটারগেজ ও ৫০টি ব্রডগেজ কোচ এবং দুটি স্বয়ংক্রিয় ধৌতকরণ–ব্যবস্থা কিনতে ১ হাজার ৩৭৪ কোটি টাকার প্রকল্প নেওয়া হয়েছিল। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) অর্থায়নে বাস্তবায়ন করা এই প্রকল্পের আওতায় ইন্দোনেশিয়া থেকে কোচ কেনা হয়। ওয়াশিং প্ল্যান্ট কেনা হয় যুক্তরাষ্ট্রের এনএস করপোরেশন থেকে।
বাংলাদেশে সহযোগী ঠিকাদার নেক্সট জেনারেশন গ্রাফিকস লিমিটেড। সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, এই নেক্সট জেনারেশনের পেছনে ছিলেন রেলপথ মন্ত্রণালয়–সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির তৎকালীন সভাপতি ফজলে করিম চৌধুরী। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর গত বছর ১২ সেপ্টেম্বর ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টাকালে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ফজলে করিম চৌধুরীকে গ্রেপ্তার করে।
সাড়ে ৬০০ কোটি টাকা খরচ করে কেনা ডেমু ট্রেন কাজে লাগল না। এরপরও এ ধরনের কেনাকাটার ক্ষেত্রে রেলের কর্মকর্তাদের কেন হুঁশ হলো না? যাঁরা বিদেশে ভ্রমণ করে যন্ত্রগুলো কিনেছিলেন, তাঁদের এখন জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে।পরিবহনবিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক সামছুল হকরেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, দুটি ওয়াশিং প্ল্যান্ট কেনার জন্য শুরুতে ঠিকাদারের সঙ্গে চুক্তি হয়েছিল প্রায় ৩৩ কোটি ৬৪ লাখ টাকার। পরে ব্যয় বাড়ানোর তোড়জোড় শুরু হয়। শুরুতে প্রকল্প পরিচালকের দায়িত্বে থাকা হারুনুর রশিদ জানিয়ে দেন এই কেনাকাটায় বাড়তি খরচ (ভ্যারিয়েশন) সম্ভব নয়। পরে ফকির মো. মহিউদ্দিন প্রকল্প পরিচালক হয়ে ৪ কোটি ১৪ লাখ টাকার বাড়তি ব্যয় যোগ করেন। সব মিলিয়ে দুটি ওয়াশিং প্ল্যান্ট কেনা ও স্থাপনে ব্যয় হয় ৩৭ কোটি ৭৮ লাখ টাকা।
ফকির মো. মহিউদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, তখন রেলের প্রয়োজনেই ওয়াশিং প্ল্যান্ট কেনা হয়েছিল। এখন নতুন কিছু যন্ত্রপাতি স্থাপন করলে আবারও চালু করা যাবে। এর জন্য আরও কিছু বিনিয়োগ করতে হবে। নতুন করে বিনিয়োগের ব্যাপারে আলোচনা চলছে বলে জানান তিনি।
রেলওয়ে সূত্র বলছে, তাদের সব বড় প্রকল্পে কিছু যন্ত্র কেনার জন্য বরাদ্দ রাখা হয়, যা তেমন প্রয়োজনীয় নয়। কিন্তু ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বা প্রভাবশালীদের ইচ্ছা বাস্তবায়ন করতে গিয়েই এসব কেনাকাটা করা হয়। যেমন বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বিভিন্ন প্রকল্পের অধীনে চারটি ‘ট্যাম্পিং মেশিন’ (লাইন মেরামতে ব্যবহৃত) কেনা হয়েছে। এসব যন্ত্রের প্রতিটির দাম ১৫ থেকে ৩০ কোটি টাকা। এখন মোটামুটি সব কটিই বিকল।
গালগল্প শুনিয়ে কেনা হয়স্বয়ংক্রিয় ওয়াশিং প্ল্যান্ট কেনার সময় বলা হয়েছিল, সনাতন পদ্ধতিতে ট্রেন ধোয়ার কাজে যে পরিমাণ পানি খরচ হয়, এর চেয়ে প্রায় ৯০ শতাংশ কম পানি লাগবে। তা ছাড়া একবার ব্যবহৃত পানি শোধন করে আবার কাজে লাগানো যাবে। কিন্তু এই ব্যবস্থা কখনোই ছিল না।
রেলে আন্তনগর ট্রেনের কোচ হাজারখানেক। এগুলো দিয়ে ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে শতাধিক ট্রেন নানা গন্তব্যে চলাচল করে। এর বাইরে আছে মেইল, কমিউটার ও লোকাল ট্রেন। এর মধ্যে আন্তনগর ট্রেনই প্রতিনিয়ত ধোয়া হয়। কাজটি করা হয় যাত্রা শুরুর স্টেশনে।
রেলের কোচ ধোয়ার কাজে নিয়োজিত কর্মীদের তথ্যমতে, গড়ে ১০ জনের একটা দল দিনে চারটি ট্রেন ধোয়ার কাজ করতে পারেন। তাঁদের একেকজনের মাসিক বেতন ৮ থেকে ১২ হাজার টাকার মধ্যে। সব মিলিয়ে কমলাপুরে ৭০ জনের মতো কর্মী কাজ করেন। তাঁদের পেছনে বছরে ব্যয় ১ কোটি টাকার কম। একেকটি স্বয়ংক্রিয় ওয়াশিং প্ল্যান্টের পেছনে ১৮ কোটি টাকা খরচ হয়েছে। ফলে যন্ত্র কেনার সমপরিমাণ টাকা দিয়ে সনাতন ব্যবস্থায় প্রায় ১৮ বছর শ্রমিকদের বেতন দেওয়া সম্ভব।
স্বয়ংক্রিয় ওয়াশিং প্ল্যান্ট কেনার সময় বলা হয়েছিল, সনাতন পদ্ধতিতে ট্রেন ধোয়ার কাজে যে পরিমাণ পানি খরচ হয়, এর চেয়ে প্রায় ৯০ শতাংশ কম পানি লাগবে। তা ছাড়া একবার ব্যবহৃত পানি শোধন করে আবার কাজে লাগানো যাবে। কিন্তু এই ব্যবস্থা কখনোই ছিল না।পরিবহনবিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক সামছুল হক প্রথম আলোকে বলেন, সাড়ে ৬০০ কোটি টাকা খরচ করে কেনা ডেমু ট্রেন কাজে লাগল না। এরপরও এ ধরনের কেনাকাটার ক্ষেত্রে রেলের কর্মকর্তাদের কেন হুঁশ হলো না? যাঁরা বিদেশে ভ্রমণ করে যন্ত্রগুলো কিনেছিলেন, তাঁদের এখন জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে। দায়ী ব্যক্তিদের ছেড়ে দিলে পরিবর্তন আসবে না।
সামছুল হক বলেন, রাজনীতিকেরা বিগত সরকারের আমলে নানা ভাগ-বাঁটোয়ারার প্রকল্প নিয়েছেন। কিন্তু কর্মকর্তারা কেন সহযোগী হলেন? এর জবাব চাইতে হবে।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ট র ন ধ য় র ক জ কর ল গ সরক র র কর মকর ত র কর ম চ ধ র প রকল প র র ক জ করত র প রকল প পর ষ ক র ম ট রগ জ ব যবস থ র আওত য় কমল প র র পর চ র জন য হয় ছ ল ব যবহ র লওয়
এছাড়াও পড়ুন:
দোষ বিয়ারিং প্যাডের নয়, যারা লাগিয়েছে কিংবা বুঝে নিয়েছে, তাদের: ডিএমটিসিএল এমডি
মেট্রোরেল চালুর আগে নিরাপত্তার পূর্ণাঙ্গ নিরীক্ষা (সেফটি অডিট) ছাড়াই যাত্রা শুরু হয়েছিল ঢাকার মেট্রোরেলের। এর মধ্যে বিয়ারিং প্যাড নিচে পড়ে একজন পথচারী মারা গেছেন। এবার নতুন করে নিরাপত্তার নিরীক্ষা করার উদ্যোগ নিয়েছে ঢাকা মাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল)।
বিয়ারিং প্যাড পড়ে পথচারীর মৃত্যুর এক সপ্তাহ পর আজ সোমবার সকালে উত্তরার দিয়াবাড়িতে মেট্রোরেলের প্রধান কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান ডিএমটিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ফারুক আহমেদ। তিনি বলেন, ‘মেট্রোরেলের আগে সেফটি অডিট হয়নি। তাই সেফটি অডিট করতে চাইছি। যত দ্রুত করা যায়, সেটা আমরা করব। থার্ড পার্টিকে (তৃতীয় পক্ষ) দিয়ে এই অডিট করানো হবে। ইউরোপীয় কোনো প্রতিষ্ঠান দিয়েই করানো হবে। আমাদের কাছে ফ্রান্সের দুটি প্রতিষ্ঠান আবেদন করেছে। সেফটি অডিট করার জন্য আমরা খুব শিগগির টেন্ডারের প্রক্রিয়ায় যাব।’
এক বছর আগে ঢাকার মেট্রোরেলের স্তম্ভের একটি বিয়ারিং প্যাড খুলে পড়ার পর গত ২৬ অক্টোবর ফার্মগেটে আরেকটি বিয়ারিং প্যাড খুলে পড়ে এক পথচারীর মৃত্যু হয়। এরপর ২৪ ঘণ্টার বেশি সময় শাহবাগ থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত মেট্রোরেল চলাচল বন্ধ ছিল।
বিয়ারিং প্যাড পড়ে যাওয়ার পর এগুলোর নিরাপত্তা সম্পর্কে জানতে চাইলে ডিএমটিসিএলের এমডি বলেন, ‘বিয়ারিং প্যাড হঠাৎ করে পড়ে যায়নি। এটা হঠাৎ করে পড়ে যাওয়ার জিনিস নয়। যেহেতু এটা নিয়ে তদন্ত চলছে, ফলে এ বিষয়ে আমি জাজমেন্টাল হতে চাই না। তবে যেটা হতে পারে, সেটা বলতে পারি, ডিজাইন ফল্ট হতে পারে। যে জিনিসের ওপর বসানোর কথা বলা হয়েছিল, যা যা দেওয়ার কথা ছিল, সেটা বসানো হয়নি। যে ডিজাইনে হওয়ার কথা ছিল, সেটা হয়তো ঠিকাদার করেনি। যে পরামর্শককে বুঝে নেওয়ার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল, তারা হয়তো ঠিক করে জিনিসটা বুঝে নেয়নি। এই চারটা কারণে হতে পারে অথবা এর মধ্যে কোনো একটা কারণেও হতে পারে।’
ফারুক আহমেদ আরও বলেন, ‘দোষ কিন্তু বিয়ারিংয়ের নয়। বিয়ারিং যে লাগিয়েছে, সেটি বাজেভাবে লাগানো হয়েছে কি না? যার আসলে বুঝে নেওয়ার দায়িত্ব ছিল, সে বুঝে নিয়েছে কি না, সেগুলো এখন দেখতে হবে।’
আরও পড়ুনবৃষ্টির পানি ঢোকে, এসি বিকল হয়, মেট্রোরেল ব্যবস্থায় ৪৫ সমস্যা০২ নভেম্বর ২০২৫এসব কাজ বুঝে নেওয়ার জন্য হাজার কোটি টাকায় বিদেশি পরামর্শক নিয়োগ করা আছে জানিয়ে ফারুক আহমেদ বলেন, ‘প্রথম ঠিকাদারের কাছ থেকে বুঝে নেবেন পরামর্শক। আমাদের বুঝিয়ে দেওয়ার দায়িত্ব পরামর্শকদের। তখন এই কাজগুলো কিছুটা তাড়াহুড়া হয়েছে। কেন হয়েছে, সেটার উত্তর তো আমি দিতে পারব না। যেখানে দুর্ঘটনা ঘটেছিল, সেই অংশে অনেক ডিফেক্ট আছে। ফলে সেটা এখনো আমরা বুঝে নিইনি।’
ডিএমটিসিএলের এমডি বলেন, যেখানে বিয়ারিং প্যাড পড়ে গিয়েছিল, ওই অংশের ত্রুটি সারিয়ে দেওয়ার সময়সীমা (ডিফেক্ট লায়াবেলিটি) গত জুন পর্যন্ত ছিল। কিন্তু ডিএমটিসিএল তাদের এই সময়সীমা গ্রহণ করেনি। কারণ, এখনো অনেক বড় ত্রুটি রয়ে গেছে। যত সমস্যা আছে, এগুলো ঠিকাদারকে মেরামত করতে হবে। এ জন্য ‘ডিফেক্ট লায়াবেলিটি’ দুই বছর বাড়ানোর জন্য ঠিকাদারকে বলা হয়েছে।
দুর্ঘটনার পর মেট্রোরেলের সব কটি পিলার পরিদর্শন ও পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে জানিয়ে ফারুক আহমেদ বলেন, এর আগে পুরো পথের বিয়ারিং প্যাডের ছবি ড্রোন ক্যামেরা দিয়ে তোলা হয়েছে। এরপর কর্মকর্তারা সরেজমিনে নিরীক্ষা করেছেন। যেসব স্থানে ত্রুটি শনাক্ত করা হয়েছে, সেগুলোর বিষয়ে পরামর্শক প্রতিষ্ঠানকে জানানো হয়েছে। ডিএমটিসিএলের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হলো, যেখানে ত্রুটি বা সমস্যা পাওয়া যাবে, সেখানে বিয়ারিং প্যাড অবশ্যই পরিবর্তন করা হবে।
আরও পড়ুনমেট্রোরেলের বিয়ারিং প্যাড কী, খুলে পড়ার কারণ কী হতে পারে২৬ অক্টোবর ২০২৫চার বছর আগে তাড়াহুড়া করে ঢাকার মেট্রোরেল চালু করা হয়েছিল দাবি করে ফারুক আহমেদ বলেন, প্রকল্পটি চালুর আগে ন্যূনতম ছয় থেকে নয় মাসের পরীক্ষামূলক চলাচল নিশ্চিত করার প্রয়োজন ছিল। তিন বছরে মেট্রোরেল চালু হবে বা পাঁচ বছরে মেট্রোরেল সম্পূর্ণ হবে—এ ধরনের ধারণা আসলে ভুল। কোনো মেট্রোরেল নির্মাণের জন্য সব ঠিকাদার নিয়োগ দেওয়ার পর ছয় থেকে সাত বছর লাগে। এর আগে প্রকল্প প্রণয়ন, সম্ভাব্যতা যাচাই ও অন্যান্য প্রস্তুতিতে চলে যায় তিন বছর।
২০৩০ সালের মধ্যে ঢাকায় ছয়টি মেট্রোরেল লাইন নির্মাণের যে লক্ষ্যমাত্রা আগে নেওয়া হয়েছিল, তা কিসের ভিত্তিতে হয়েছে, তা তার বোধগম্য নয় বলে মন্তব্য করেন ডিএমটিসিএলের এমডি।
নতুন মেট্রোরেল লাইন নির্মাণ প্রকল্প তাহলে মুখ থুবড়ে পড়ছে কি না, এমন প্রশ্ন করা হলে ফারুক আহমেদ বলেন, ‘মেট্রোরেল প্রকল্প মুখ থুবড়ে পড়েনি। মেট্রোরেল আমাদের লাগবে। আমাদের লক্ষ্য হলো, দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম যেন এই প্রকল্পের ঋণ পরিশোধ করতে সক্ষম হয়। সরকারের উদ্দেশ্য হলো একটি প্রতিযোগিতামূলক বাজার তৈরি করা, যাতে একাধিক প্রতিষ্ঠান অংশ নিতে পারে এবং কম খরচে উন্নত মানের মেট্রোরেল নির্মাণ সম্ভব হয়। মেট্রোরেল আমাদের করতেই হবে; তবে তা হবে স্মার্ট ফাইন্যান্সিংয়ের মাধ্যমে।’
আরও পড়ুনবিয়ারিং প্যাড খুলে পড়ে ফার্মগেটে একজন নিহত, মেট্রোরেল চলাচল বন্ধ ২৬ অক্টোবর ২০২৫