‘থানা থেকে বলছি, তোমার নামে মামলা হচ্ছে। নাম বাদ দিতে হলে আজ রাতের মধ্যেই দুই লক্ষ টাকা দিতে হবে। নইলে পুলিশ তোমাকে বাড়ি থেকে ধরে আনবে’– এমন কথা শুনে ভয়ে রাতে বাড়ি থেকে বের হবার পর ভোরে গ্রামের ড্রেনে পাওয়া গেছে সেই ব্যক্তির লাশ। ঘটনাটি ঘটেছে ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে। 

নিহত ব্যক্তির নাম আমিনুল ইসলাম (৫০)। তিনি স্থানীয় সিমলা রোকনপুর ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য ছিলেন। গত ১৬ মার্চ তাঁর মরদেহ পাওয়া যায়। তবে মঙ্গলবার রাতে বিষয়টি জানাজানি হয়।
পরিবারের সদস্যরা জানান, লাশ উদ্ধারের পর ১৭ মার্চ কালীগঞ্জ থানায় তারা অভিযোগ দিলেও পুলিশ ভিন্ন কথা বলছে। পুলিশ বলছে, অভিযোগটি দেওয়ার পরই আবার ফেরত নিয়ে গেছে। আর চাঁদার বিষয়ে পুলিশের ভাষ্য, একটি প্রতারক চক্র ঈদ সামনে রেখে বিভিন্ন কৌশলে চাঁদা চেয়ে মানুষকে হয়রানি করছে।

নিহত আমিনুলের মেয়ে আফরোজা খাতুন তাঁর অভিযোগে উল্লেখ করেছেন, গত ১৫ মার্চ রাত ১০টা ২ মিনিটে আমিনুল ইসলামের ব্যবহৃত মোবাইল ফোনে ০১৩১৪-৮৯২০২১ নম্বর থেকে কল আসে। ফোনের অপর প্রান্ত থেকে বলে– আমি থানার পুলিশ বলছি। আপনার নামে মামলা হচ্ছে। মামলা থেকে নাম খারিজ করতে দুই লাখ টাকা দিতে হবে। ফোনে এমন কথা শুনে আমিনুল টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে অপর প্রান্তের অজ্ঞাত ব্যক্তি তাঁকে গালাগাল, হুমকিসহ বাড়ি থেকে তুলে নেওয়ার হুমকি দেয়। 
আফরোজা জানান, বিষয়টি পরিবারকে জানিয়ে তাঁর পিতা রাত সাড়ে ১০টার দিকে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান। রাতে আর ফিরে আসেনি তিনি। পরদিন ১৬ মার্চ ভোরে পুকুরিয়া গ্রামের মাঠের একটি ড্রেনের মধ্য থেকে মৃতদেহ পাওয়া যায়। 

পরিবার ও গ্রামবাসীর ধারণা, অজ্ঞাত চাঁদাবাজদের ভয়ে বাড়ি ছেড়ে পালাতে গিয়ে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যেতে পারেন। 

সিমলা রোকনপুরের ইউপি সদস্য ইউনুচ আলী বলেন, একই রাতে একই মোবাইল নম্বর থেকে এএসআই মাসুদ পরিচয়ে তাঁকে কল দিয়ে দুই লাখ টাকা দাবি করা হয়। তাঁর মতো আরও ৬ জন ইউপি সদস্যকে মোবাইল ফোনে হুমকি দিয়েছে চক্রটি।

জানতে চাইলে কালীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম হাওলাদার বলেন, আমিনুলের স্বজন থানায় একটি অভিযোগ দিয়েছিলেন। কিন্তু কিছু সময় পরই আবার অভিযোগটি নিয়ে গেছেন। তিনি বলেন, পুলিশ পরিচয়ে চাঁদা দাবি করার বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ঝ ন ইদহ মরদ হ আম ন ল সদস য

এছাড়াও পড়ুন:

ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ইসরায়েলের হামলা

রবিবার বিকেল থেকে ইরানজুড়ে নতুন করে ব্যাপক বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। সামরিক স্থাপনার পাশাপাশি ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কেও লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে।

রবিবার রাতে ইরানের উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাইদ খাতিবজাদেহ ইসরায়েলি হামলার তথ্য নিশ্চিত করেছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ একটি পোস্টে তিনি জানান, রবিবার রাজধানী তেহরানে ইসরায়েলি হামলায় ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। খবর তুরস্কের বার্তা সংস্থা আনাদোলুর।

এক্স-পোস্টে সাইদ বলেছেন, “ইসরায়েলের অপরাধী শাসকগোষ্ঠী রাজনৈতিক ও আন্তর্জাতিক গবেষণা ইনস্টিটিউটের ঠিক বিপরীতে অবস্থিত ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি ভবনে ইচ্ছাকৃত এবং নির্মম হামলা চালিয়েছে।”

আরো পড়ুন:

ইসরায়েলের নতুন হামলায় ইরানের আইআরজিসির গোয়েন্দা প্রধান নিহত

ইসরায়েলে ৫০টি ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ল ইরান, তেল আবিব ও হাইফাতে সরাসরি আঘাত

উপ-মন্ত্রী আরো বলেন, “এই হামলায় বেশ কয়েকজন বেসামরিক ব্যক্তি আহত হয়েছেন, আমার বেশ কয়েকজন সহকর্মীও আহত হয়েছেন, যাদের চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।”

সাইদ বলেন, “এটি আরো একটি স্পষ্ট যুদ্ধাপরাধ, ইরানের বিরুদ্ধে ইসরায়েলি শাসকগোষ্ঠীর চলমান ও নিয়মতান্ত্রিক আগ্রাসন অভিযানের অংশ।”

এর আগে শনিবার ইরানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সদর দপ্তরে হামলা চালিয়েছিল ইসরায়েল।

ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, তারা তেহরানের অস্ত্র উৎপাদন ক্ষমতা ধ্বংস করার লক্ষ্যে ইরানের আইআরজিসি ও সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে রবিবার নতুন করে ব্যাপক বিমান হামলা চালিয়েছে।

বিবৃতিতে  বলা হয়, এই হামলায় ইসলামিক রেভোলিউশনারি গার্ড কর্পস (আইআরজিসি), গার্ডস কুদস ফোর্স এবং ইরানের সশস্ত্র বাহিনীর অবকাঠামো লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে।

ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী আরো জানিয়েছে, ইরানজুড়ে অসংখ্য অস্ত্র উৎপাদন কেন্দ্রে হামলা চালানো হয়েছে। 

ইরানি বার্তাসংস্থা তাসনিম নিউজ জানিয়েছে, ইসরায়েলের এই হামলায় আইআরজিসিরি গোয়েন্দা প্রধান মোহাম্মদ কাজেমি এবং তার সহকারী হাসান মোহাকিক নিহত হয়েছেন। এছাড়া মোহসেন বাঘারি নামে আইআরজিসির আরো একজন জেনারেল নিহত হয়েছেন। এর প্রতিশোধ নিতে রবিবার রাতে ইসরায়েলে ৫০টি ব্যালেস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ও শতাধিক ড্রোন ছুড়েছে ইরান।

ইসরায়েলের ফায়ার ও রেসকিউ সার্ভিসের বরাত দিয়ে টাইমস অব ইসরায়েল জানিয়েছে, উত্তর ইসরায়েলে দুটি এবং হাইফায় একটি আবাসিক ভবনে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র সরাসরি আঘাত হানার খবর পেয়েছে তারা।

ইসরায়েলি জাতীয় জরুরি সেবা সংস্থা জানিয়েছে, হাইফায় ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে সাতজন আহত হয়েছেন। এছাড়া কিরিয়াত গাটের কাছে দক্ষিণাঞ্চলীয় একটি শহরে একজন আহত হয়েছেন।

এ ঘটনায় ইসরায়েলি সেনাপ্রধান ইয়াল জামির ইরানের ওপর আক্রমণ আরো তীব্র করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। একটি বিবৃতি জারি করে ইসরায়েরি সেনাপ্রধান বলেছেন, “আমরা আমাদের অভিযান তীব্রতর করে যাব এবং এটি করে, আগামী বছরগুলোতে আমাদের নিরাপত্তা জোরদার করব। আমরা জানতাম এর একটি মূল্য দিতে হবে এবং এটিই বোঝায় যে, আমরা কেন এখনই পদক্ষেপ নিয়েছি, তা অনেক দেরি হওয়ার আগেই।”

ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, শুক্রবার থেকে ইসরায়েলি হামলায় ২২৪ জন নিহত এবং ৯০০ জন আহত হয়েছেন।

ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় কমপক্ষে ১৩ জন নিহত এবং ৩৭০ জনেরও বেশি আহত হয়েছেন।

ঢাকা/ফিরোজ

সম্পর্কিত নিবন্ধ