তুরস্কে চলমান বিক্ষোভ গতকাল মঙ্গলবার সপ্তম রাত পেরিয়েছে। এই রাতেও হাজারো মানুষ ইস্তাম্বুলের মেয়র একরেম ইমামোগলুর মুক্তির দাবিতে রাজপথে প্রতিবাদে শামিল হয়েছেন। বিক্ষোভে অংশ নেওয়ায় দেশটিতে এখন পর্যন্ত শিক্ষার্থী, সাংবাদিক, আইনজীবীসহ ১ হাজার ৪০০ জনের বেশি মানুষকে আটক করা হয়েছে।

তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তায়েপ এরদোয়ান গতকাল বিক্ষোভকারীদের সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, দেশে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টিকারীদের কোথাও জায়গা হবে না।

বিক্ষোভের সূচনা হয় গত বুধবার। ওই দিন ইস্তাম্বুলের মেয়র একরেম ইমামোগলুকে গ্রেপ্তার করা হলে তাঁর সমর্থকেরা রাজপথে নেমে এসে আন্দোলন শুরু করেন। তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ানের প্রধান রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী ইমামোগলুর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ আনা হয়েছে।

আরও পড়ুনইস্তাম্বুলের মেয়র আনুষ্ঠানিকভাবে গ্রেপ্তার, চলছে ব্যাপক বিক্ষোভ২৪ মার্চ ২০২৫

জাতিসংঘ ও অধিকার সংগঠনগুলো বিক্ষোভ দমনে পুলিশের শক্তি প্রয়োগ ও ব্যাপক ধড়পাকড়ের নিন্দা জানিয়েছে।

মেয়র একরেম ইমামোগলু দাবি করেছেন, তাঁর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। তবে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান এ দাবি নাকচ করে দিয়েছেন।

গতকাল রাজধানী আঙ্কারায় তরুণদের সঙ্গে ইফতারে অংশ নিয়ে প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান বলেন, দেশ খুবই নাজুক সময় পার করছে। তিনি সবাইকে ধৈর্য আর কাণ্ডজ্ঞান বিবেচনা করে পরিস্থিতি মোকাবিলা করার আহ্বান জানান।

এরদোয়ান বলেন, যাঁরা দেশকে অস্থিতিশীলতার দিকে ঠেলে দিচ্ছেন, তাঁদের কোথাও জায়গা হবে না। বিক্ষোভকারী ব্যক্তিরা করুণ পরিণতির পথ বেছে নিয়েছেন।

আরও পড়ুনএরদোয়ানের পদত্যাগ দাবি, তুরস্কে ৩৪৩ বিক্ষোভকারী আটক২২ মার্চ ২০২৫

গতকাল ইস্তাম্বুলের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা রাজপথে মিছিলে শামিল হন। তাঁরা সরকার পতনের দাবিতে স্লোগান দেন। বিক্ষোভকারী ব্যক্তিদের হাতে থাকা ব্যানার ও পতাকায় এরদোয়ান সরকারের পতনসংক্রান্ত দাবির কথা লেখা ছিল।

শিক্ষার্থীদের মিছিল যাতে উচ্ছৃঙ্খল হয়ে না উঠে, সে জন্য ইস্তাম্বুলে বিপুল পরিমাণ দাঙ্গা পুলিশ মোতায়েন করা হয়। শহর কর্তৃপক্ষ সেখানে যেকোনো বিক্ষোভ নিষিদ্ধ করেছে। মূলত উসকানি প্রতিরোধ ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রক্ষার স্বার্থে বিক্ষোভ প্রদর্শনে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। বন্ধ করে দেওয়া হয় বেশকিছু সড়ক। এ পরিস্থিতিতে পুলিশের কাছে পরিচয় আড়াল রাখতে মুখে মাস্ক পরে বহু শিক্ষার্থী মিছিলে অংশ নেন।

তুরস্কের প্রধান বিরোধী দল রিপাবলিকান পিপলস পার্টি (সিএইচপি) গতকাল ইস্তাম্বুলে সিটি হলের সামনে বিক্ষোভ করেছে। আগামী শনিবার শহরে বড়সড় বিক্ষোভ মিছিল করার পরিকল্পনা করেছে দলটি।

আরও পড়ুনতুরস্কের এরদোয়ানবিরোধী আন্দোলন কত দূর যেতে পারে২১ ঘণ্টা আগে

সপ্তাহজুড়ে রাজধানী আঙ্কারা, বৃহত্তম শহর ইস্তাম্বুলসহ তুরস্কের বিভিন্ন শহরে বিক্ষোভ চলছে।

তুরস্কের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আলি ইয়ারলিকায়া সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া এক পোস্টে জানান, গত বুধবারের পর থেকে ‘বেআইনি’ বিক্ষোভে অংশ নেওয়ায় ১ হাজার ৪১৮ জনকে আটক করা হয়েছে।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আলি ইয়ারলিকায়া বলেন, ‘যাঁরা রাজপথে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করার চেষ্টা করবেন, তাঁদের ছাড় দেওয়া হবে না। আমাদের জাতীয় ও নৈতিক মূল্যবোধের ওপর আঘাত হানা যাবে না। পুলিশ সদস্যদের ওপরও আঘাত মেনে নেওয়া হবে না।’

২০২৮ সালে অনুষ্ঠেয় প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে একরেম ইমামোগলু ইতিমধ্যে প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে নিজ দলসহ বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর অনেকের সমর্থন আদায় করেছেন। মুক্ত হলে তিনি যে এরদোয়ানের বিপক্ষে প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হচ্ছেন, তাতে কোনো সন্দেহ নেই।

আরও পড়ুনতুরস্কে বিরোধীদের আন্দোলন নিয়ে যা বলছেন এরদোয়ান২০ ঘণ্টা আগে.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ত রস ক র প র এরদ য় ন র জপথ গতক ল

এছাড়াও পড়ুন:

চাকরি খেয়ে ফেলব, কারারক্ষীকে কারাবন্দী আ’লীগ নেতা

‘চাকরি খেয়ে ফেলব, দেখে নেব তোমাকে, চেন আমি কে?’ কারবন্দী কুড়িগ্রাম জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান সাজু (৪৯) মঙ্গলবার বিকেল ৪টার দিকে ২ কারারক্ষীকে এভাবে হুমকি দেন বলে অভিযোগ উঠেছে। 

জানা যায়, কুড়িগ্রাম জেলা কারাগারে জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান সাজুকে দেখতে যান তার কয়েকজন স্বজন। কারা নিয়মানুযায়ী সাক্ষাৎ কক্ষে বেঁধে দেওয়া সময়ে কথা শেষ করার কথা থাকলেও তিনি তার মানতে রাজি নন। তিনি দীর্ঘ সময় কথা বলতে চাইলে সাক্ষাৎ কক্ষে দায়িত্বরত মহিলা কারারক্ষী পপি রানী কারাবন্দী নেতার স্বজনদের সময়ের মধ্যে কথা শেষ করতে বলেন। এতে ক্ষিপ্ত হন আওয়ামী লীগ নেতা সাজু। তখন তিনি বলেন, ‘এই আপনি কে? ডিস্টার্ব করছেন কেন? চিনেন আমাকে? চাকরি খেয়ে ফেলব।’

এ সময় সাক্ষাৎ কক্ষে সাজুর স্বজনরাও পপি রানীর সঙ্গেও আক্রমণাত্মক আচরণ করেন। পপি রানীকে নিরাপদ করতে সুমন নামের আরেকজন কারারক্ষী এগিয়ে এলে তাকে লাথি দিয়ে বের করে দেওয়ার হুমকি দেন সাজু। উত্তেজনার একপর্যায়ে ঘটনাস্থলে দ্রুত উপস্থিত হন প্রধান কারারক্ষী আব্দুর রাজ্জাক। তিনি সাজুর স্বজনদের সাক্ষাৎ কক্ষ থেকে চলে যেতে বলেন। তারাও চলে যাওয়ার সময়ে কারারক্ষীদের গালিগালাজ করেন। 

এ ব্যাপারে কারারক্ষী পপি রানী  বলেন, ‘আমি ডিউটিরত অবস্থায় তিনি আমাকে প্রভাব দেখিয়ে চাকরি খাওয়ার হুমকি দেন ও গালিগালাজ করেন। আমি জেলার স্যারের কাছে বিচার প্রার্থনা করছি।’

প্রত্যক্ষদর্শী কারারক্ষী মো. সুমন বলেন, ‘আমরা তো ছোট পদে চাকরি করি, আমাদের নানান নির্যাতন সহ্য করতে হয়। আমি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া আর কিছু বলতে পারব না।’

প্রধান কারারক্ষী আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘সাক্ষাৎ কক্ষের ভেতরে পুলিশ সদস্যকে গালিগালাজ করা হয়। পরে আমি গিয়ে পরিবেশ শান্ত করি।’ 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কুড়িগ্রাম কারাগারের জেলার এ জি মো. মামুদ বলেন, ‘বিষয়টি আমি শুনেছি। বন্দীরা আমাদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করলেও আমরা মানবিকতা প্রদর্শন করি। কেউ অতিরিক্ত কিছু করলে জেলের নিয়ম অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

উল্লেখ্য, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান সাজুকে গত ৩ ফেব্রুয়ারি বিকেলে রংপুর শহরের সড়ক ও জনপথ কার্যালয়ের কাছ থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)। তার বিরুদ্ধে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে ছাত্র-জনতার ওপর হামলা ও শিক্ষার্থী আশিক হত্যা মামলাসহ একাধিক মামলা রয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ