শিক্ষা ও স্বাস্থ্যখাতে সুষম উন্নয়ন নিশ্চিত করতে পারলে কোনো রাষ্ট্রই কখনো পিছিয়ে থাকতে পারে না বলে মন্তব্য করেছেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার।

তিনি বলেন, ‘শিক্ষা ও স্বাস্থ্য- এ দুটি খাতকে সঠিকভাবে অ্যাড্রেস না করে কখনোই একটি সুষম বিকশিত রাষ্ট্র গড়ে তোলা সম্ভব নয়। এ দুটি খাত কোনো গোষ্ঠীর জন্য নয়। এগুলো রাষ্ট্রের সম্পদ, জনগণের সম্পদ।’

বুধবার (২৬ মার্চ) রাজধানীর মিরপুরে প্রাথমিক শিক্ষক প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে (পিটিআই) ‘মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস ২০২৫’ উদযাপন উপলক্ষে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

চীনের উদাহরণ টেনে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা বলেন, ‘খেয়াল করে দেখেন, চীন এত বিশাল জনগোষ্ঠীর একটি দেশ। তারা আজ অর্থনীতিতে এত উন্নয়ন করছে। সেটার পেছনেও দুটি বিষয়কে তারা গুরুত্ব দিয়েছে। একটি হলো শিক্ষা, আরেকটি স্বাস্থ্য।

বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার বলেন, ‘সুনাগরিক মানে কী? তাকে ফিজিক্যালি ফিট ও শিক্ষিত হবে। যদি এমন জনগোষ্ঠী পাওয়া যায় যে, শারীরিকভাবে সুস্থ, শিক্ষিত ও দক্ষ, তাহলে সে রাষ্ট্র কখনোই পিছিয়ে থাকতে পারে না। চীন এটার বড় প্রমাণ।

তিনি বলেন, স্বাস্থ্য এমন একটি প্রসঙ্গ যে, এটা কখনো আমার চয়েসের প্রসঙ্গ হতে পারে না। এটা একটা অধিকারের প্রসঙ্গ হওয়া উচিত। তদ্রূপ শিক্ষাও এমন একটি প্রসঙ্গ যেটা সার্বজনীন হওয়া উচিত। এটা অধিকারের প্রসঙ্গ হওয়া উচিত। এ বিষয়গুলোর স্বীকৃতি আমাদের সংবিধান রয়েছে। এখন কার্যকর করতে হবে। সত্যিই যদি আমরা বাংলাদেশকে সুখী ও সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে চাই, তাহলে এর কোনো বিকল্প নেই।

কোটা আন্দোলন প্রসঙ্গ তুলে গণশিক্ষা উপদেষ্টা বলেন, কোটা নিয়ে আন্দোলনটা অনেকটা সংকীর্ণ আন্দোলন ছিল। সরকারি চাকরি কতগুলো পদে, কোটায় কতজন সুবিধা পাবে? কিন্তু এটা ঠিক যারা আন্দোলন করলেন, তাদের বাধ্য করা হলো বৃহত্তর পরিপ্রেক্ষিতে যাওয়ার জন্য। কারণ তারা সেই শাসনে অতিষ্ঠ ছিলেন, অসন্তুষ্ট ছিলেন। সেজন্যই যোগ দিলেন। তারা মনে করলেন, এ শাসনের পরিবর্তন করতে হবে। তাহলে আমরা শান্তিপূর্ণ সুখী জীবনযাপন করতে পারবো।

অধ্যাপক বিধান রঞ্জন রায় বলেন, যতক্ষণ না আমরা আমাদের বৈষম্য কমিয়ে আনতে না পারছি, যতক্ষণ না আমরা আমাদের আদর্শ; যেটা স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে (প্রোক্লেমেশন) আছে, সংবিধানে রয়েছে; সবার জন্য মৌলিক চাহিদাগুলো অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা ও শিক্ষা যতক্ষণ পর্যন্ত নিশ্চিত না হচ্ছে, ততক্ষণ পর্যন্ত আমরা দেশে দীর্ঘদিনের জন্য শান্তি আশা করতে পারি না। আমাদের প্রত্যেকের কর্তব্য হচ্ছে নিজের অবস্থান থেকে সেটার জন্য কাজ করে যাওয়া। আমাদের নিজেদের স্বার্থেই সেটা প্রয়োজন।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব আবু তাহের মো.

মাসুদ রানার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ইউনিটের মহাপরিচালক এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (বাজেট ও অডিট) মো. সাখাওয়াৎ হোসেন, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবু নূর মোহাম্মদ শামসুজ্জামান, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে অতিরিক্ত মহাপরিচালক (পিইডিপি-৪) আতিকুর রহমান, উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোর মহাপরিচালক (দায়িত্বপ্রাপ্ত) দেবব্রত চক্রবর্তী, শিশু কল্যাণ ট্রাস্টের পরিচালক সুরাইয়া খান এবং পিটিআই ইনস্ট্রাক্টর আবু বকর সিদ্দিক।

ঢাকা/আসাদ/এনএইচ

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর প রসঙ গ র জন য আম দ র

এছাড়াও পড়ুন:

চাকরি খেয়ে ফেলব, কারারক্ষীকে কারাবন্দী আ’লীগ নেতা

‘চাকরি খেয়ে ফেলব, দেখে নেব তোমাকে, চেন আমি কে?’ কারবন্দী কুড়িগ্রাম জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান সাজু (৪৯) মঙ্গলবার বিকেল ৪টার দিকে ২ কারারক্ষীকে এভাবে হুমকি দেন বলে অভিযোগ উঠেছে। 

জানা যায়, কুড়িগ্রাম জেলা কারাগারে জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান সাজুকে দেখতে যান তার কয়েকজন স্বজন। কারা নিয়মানুযায়ী সাক্ষাৎ কক্ষে বেঁধে দেওয়া সময়ে কথা শেষ করার কথা থাকলেও তিনি তার মানতে রাজি নন। তিনি দীর্ঘ সময় কথা বলতে চাইলে সাক্ষাৎ কক্ষে দায়িত্বরত মহিলা কারারক্ষী পপি রানী কারাবন্দী নেতার স্বজনদের সময়ের মধ্যে কথা শেষ করতে বলেন। এতে ক্ষিপ্ত হন আওয়ামী লীগ নেতা সাজু। তখন তিনি বলেন, ‘এই আপনি কে? ডিস্টার্ব করছেন কেন? চিনেন আমাকে? চাকরি খেয়ে ফেলব।’

এ সময় সাক্ষাৎ কক্ষে সাজুর স্বজনরাও পপি রানীর সঙ্গেও আক্রমণাত্মক আচরণ করেন। পপি রানীকে নিরাপদ করতে সুমন নামের আরেকজন কারারক্ষী এগিয়ে এলে তাকে লাথি দিয়ে বের করে দেওয়ার হুমকি দেন সাজু। উত্তেজনার একপর্যায়ে ঘটনাস্থলে দ্রুত উপস্থিত হন প্রধান কারারক্ষী আব্দুর রাজ্জাক। তিনি সাজুর স্বজনদের সাক্ষাৎ কক্ষ থেকে চলে যেতে বলেন। তারাও চলে যাওয়ার সময়ে কারারক্ষীদের গালিগালাজ করেন। 

এ ব্যাপারে কারারক্ষী পপি রানী  বলেন, ‘আমি ডিউটিরত অবস্থায় তিনি আমাকে প্রভাব দেখিয়ে চাকরি খাওয়ার হুমকি দেন ও গালিগালাজ করেন। আমি জেলার স্যারের কাছে বিচার প্রার্থনা করছি।’

প্রত্যক্ষদর্শী কারারক্ষী মো. সুমন বলেন, ‘আমরা তো ছোট পদে চাকরি করি, আমাদের নানান নির্যাতন সহ্য করতে হয়। আমি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া আর কিছু বলতে পারব না।’

প্রধান কারারক্ষী আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘সাক্ষাৎ কক্ষের ভেতরে পুলিশ সদস্যকে গালিগালাজ করা হয়। পরে আমি গিয়ে পরিবেশ শান্ত করি।’ 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কুড়িগ্রাম কারাগারের জেলার এ জি মো. মামুদ বলেন, ‘বিষয়টি আমি শুনেছি। বন্দীরা আমাদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করলেও আমরা মানবিকতা প্রদর্শন করি। কেউ অতিরিক্ত কিছু করলে জেলের নিয়ম অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

উল্লেখ্য, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান সাজুকে গত ৩ ফেব্রুয়ারি বিকেলে রংপুর শহরের সড়ক ও জনপথ কার্যালয়ের কাছ থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)। তার বিরুদ্ধে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে ছাত্র-জনতার ওপর হামলা ও শিক্ষার্থী আশিক হত্যা মামলাসহ একাধিক মামলা রয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ